হাদিসের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ কি কি জানতে এখানে ক্লিক করুন
হাদীস (ﺣَﺪِﻳْﺚ ) এর শাব্দিক অর্থ: নতুন, প্রাচীন ও পুরাতন এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্ত্ত পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদীস। এর আরেক অর্থ হলো: কথা। ফক্বীহগণের পরিভাষায় নাবী কারীম (ﷺ ) আল্লাহ্র রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদীস বলা হয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) সম্পর্কিত বর্ণনা ও তার গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ হিসেবে হাদীসকে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
১। ক্বওলী হাদীস: কোন বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) যা বলেছেন, অর্থাৎ যে হাদীসে তাঁর কোন কথা বিবৃত হয়েছে তাকে ক্বওলী (বাণী সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।
২। ফে’লী হাদীস: মহানাবী (ﷺ )-এর কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচরণের ভেতর দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও রীতিনীতি পরিস্ফুট হয়েছে। অতএব যে হাদীসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফে’লী (কর্ম সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।
৩। তাকরীরী হাদীস: সাহাবীগণের যে সব কথা বা কাজ নাবী কারীম (ﷺ )-এর অনুমোদন ও সমর্থন প্রাপ্ত হয়েছে, সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরণ হতেও শরীয়াতের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। অতএব যে হাদীসে এ ধরনের কোন ঘটনার বা কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় তাকে তাকরীরী (সমর্থন মূলক) হাদীস বলে।
সুন্নাহ (ﺍﻟﺴﻨﺔ): হাদীসের অপর নাম সুন্নাহ্ (ﺍﻟﺴﻨﺔ) সুন্নাত শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি নাবী কারীম (ﷺ ) অবলম্বন করতেন তাকে সুন্নাত বলা হয়। অন্য কথায় রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) প্রচারিত উচ্চতম আদর্শই সুন্নাত। কুরআন মাজিদে মহত্তম ও সুন্দরতম আদর্শ ( ﺃُﺳْﻮَﺓٌ ﺣَﺴَﻨَﺔٌ ) বলতে এই সুন্নাতকেই বুঝানো হয়েছে।
খবর (ﺧﺒﺮ): হাদীসকে আরবী ভাষায় খবরও (ﺧﺒﺮ ) বলা হয়। তবে খবর শব্দটি হাদীস ও ইতিহাস উভয়টিকেই বুঝায়।
আসার (ﺃﺛﺮ ): আসার শব্দটিও কখনও কখনও রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) এর হাদীসকে নির্দেশ করে। কিন্তু অনেকেই হাদীস ও আসার এর মধ্যে কিছু পার্থক্য করে থাকেন। তাঁদের মতে- সাহাবীগণ থেকে শরীয়াত সম্পর্কে যা কিছু উদ্ধৃত হয়েছে তাকে আসার বলে।
ইলমে হাদীসের কতিপয় পরিভাষা
সাহাবী (ﺻﺤﺎﺑﻰ): যিনি ঈমানের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ ( ﷺ) এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ )-এর সাহাবী বলা হয়।
তাবেঈ (ﺗﺎﺑﻌﻰ) : যিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ )-এর কোন সাহাবীর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবেঈ বলা হয়।
তাবে-তাবেঈ ( ﺗﺎﺑﻌﻰ ﺗﺎﺑﻊ ) : যিনি কোন তাবেঈ এর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবে-তাবেঈ বলা হয়।
মুহাদ্দিস (ﻣﺤﺪﺙ) : যিনি হাদীস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাঁকে মুহাদ্দিস বলা হয়।
শাইখ (ﺷﻴﺦ) : হাদীসের শিক্ষাদাতা রাবীকে শায়খ বলা হয়।
শাইখান (ﺷﻴﺨﺎﻥ ) : সাহাবীগনের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)- কে একত্রে শাইখান বলা হয়। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রে ইমাম বুখারী (রাহি.) ও ইমাম মুসলিম (রাহি.)-কে এবং ফিক্বহ-এর পরিভাষায় ইমাম আবূ হানীফা (রাহি.) ও আবূ ইউসুফ (রাহি.)-কে একত্রে শাইখান বলা হয়।
হাফিয (ﺣﺎﻓﻆ ) : যিনি সনদ ও মতনের বৃত্তান্ত সহ এক লাখ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাফিয বলা হয়।
হুজ্জাত (ﺣﺠﺔ ) : অনুরূপভাবে যিনি তিন লক্ষ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হুজ্জাত বলা হয়।
হাকিম ( ﺣﺎﻛﻢ ) : যিনি সব হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাকে হাকিম বলা হয়।
রিজাল (ﺭﺟﺎﻝ) : হাদীসের রাবী সমষ্টিকে রিজাল বলে। যে শাস্ত্রে রাবীগণের জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে তাকে আসমাউর-রিজাল বলা হয়।
রিওয়ায়াত (ﺭﻭﺍﻳﺔ ): হাদীস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়াত বলে। কখনও কখনও মূল হাদীসকেও রিওয়ায়াত বলা হয়। যেমন- এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়াত (হাদীস) আছে।
সনদ (ﺳﻨﺪ ): হাদীসের মূল কথাটুকু যে সূত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে সনদ বলা হয়। এতে হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।
মতন (ﻣﺘﻦ ): হাদীসে মূল কথা ও তার শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।
মারফূ ( ﻣﺮﻓﻮﻉ): যে হাদীসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মারফূ হাদীস বলে।
মাওকূফ (ﻣﻮﻗﻮﻑ ) : যে হাদীসের বর্ণনা- সূত্র ঊর্ধ্ব দিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে , অর্থাৎ যে সনদ -সূত্রে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাওকূফ হাদীস বলে। এর অপর নাম আসার।
মাকতূ (ﻣﻘﻄﻮﻉ): যে হাদীসের সনদ কোন তাবেঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মাকতূ হাদীস বলা হয়।
তা’লীক ( ﺗﻌﻠﻴﻖ): কোন কোন গ্রন্থকার হাদীসের পূর্ণ সনদ বাদ দিয়ে কেবল মূল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এরূপ করাকে তা’লীক বলা হয়।
মুদাল্লাস (ﻣﺪﻟﺲ ): যে হাদীসের রাবী নিজের প্রকৃত শাইখের (উস্তাদের) নাম উল্লেখ না করে তার উপরস্থ শাইখের নামে এভাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে মনে হয় যে, তিনি নিজেই উপরস্থ শাইখের নিকট তা শুনেছেন অথচ তিনি তাঁর নিকট সেই হাদীস শুনেন নি- সে হাদীসকে মুদাল্লাস হাদীস এবং এইরূপ করাকে ‘তাদ্লীস’ আর যিনি এইরূপ করেন তাকে মুদালস্নীস বলা হয়।
মুযতারাব (ﻣﻀﻄﺮﺏ ): যে হাদীসের রাবী হাদীসের মতন ও সনদকে বিভিন্ন প্রকারে বর্ণনা করেছেন সে হাদীসকে হাদীসে মুযতারাব বলা হয়। যে পর্যন্ত না এর কোনরূপ সমন্বয় সাধন সম্ভবপর হয়, সে পর্যন্ত এই হাদীসের ব্যাপারে অপেক্ষা করতে হবে অর্থাৎ এই ধরনের রিওয়ায়াত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
মুদ্রাজ (ﻣﺪﺭﺝ): যে হাদীসের মধ্যে রাবী নিজের অথবা অপরের উক্তিকে অনুপ্রবেশ করিয়েছেন, সে হাদীসকে মুদ্রাজ এবং এইরূপ করাকে ‘ইদরাজ’ বলা হয়।
মুত্তাসিল (ﻣﺘﺼﻞ ): যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষক্ষত আছে, কোন সত্মরেই কোন রাবীর নাম বাদ পড়ে নি তাকে মুত্তাসিল হাদীস বলে।
মুনকাতি (ﻣﻨﻘﻄﻊ ): যে হাদীসের সনদে ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় নি, মাঝখানে কোন এক স্তরে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে, তাকে মুনকাতি হাদীস, আর এই বাদ পড়াকে ইনকিতা বলা হয়।
মুরসাল (ﻣﺮﺳﻞ): যে হাদীসের সনদে ইনকিতা শেষের দিকে হয়েছে, অর্থাৎ সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে এবং তাবেঈ সরাসরি রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) এর উল্লেখ করে হাদীস বর্ণনা করেছেন তাকে মুরসাল হাদীস বলা হয়।
মু’আল্লাক ( ﻣﻌﻠﻖ ) : সনদের ইনকিতা প্রথম দিকে হলে, অর্থাৎ সাহাবীর পর এক বা একাধিক রাবীর নাম বাদ পড়লে তাকে মু’আল্লাক হাদীস বলা হয়।
মু‘দাল (ﻣﻌﻀﻞ ): যে হাদীসে দুই বা ততোধিক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বাদ পড়েছে তাকে মু‘দাল হাদীস বলে।
মুতাবি ও শাহিদ ( ﻣﺘﺎﺑﻊ ﻭ ﺷﺎﻫﺪ ): এক রাবীর হাদীসের অনুরূপ যদি অপর রাবীর কোন হাদীস পাওয়া যায় তবে দ্বিতীয় রাবীর হাদীসকে প্রথম রাবীর হাদীসের মুতাবি বলা হয়। যদি উভয় হাদীসের মূল রাবী অর্থাৎ সাহাবী একই ব্যক্তি না হয় তবে দ্বিতীয় ব্যক্তির হাদীসকে শাহিদ বলে। আর এইরূপ হওয়াকে শাহাদাত বলে। মুতাবা’আত ও শাহাদাত দ্বারা প্রথম হাদীসটির শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মা‘রূফ ও মুনকার ( ﻣﻌﺮﻭﻑ ﻭ ﻣﻨﻜﺮ ): কোন দুর্বল রাবীর বর্ণিত হাদীস অপর কোন মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) রাবীর বর্ণিত হাদীসের বিরোধী হলে তাকে মুনকার বলা হয় এবং মাকবূল রাবীর হাদীসকে মা‘রূফ বলা হয়।
সহীহ (ﺻﺤﻴﺢ ) : যে মুত্তাসিল হাদীসের সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যাবত (ধারণ ক্ষমতা) গুণ সম্পন্ন এবং হাদীসটি যাবতীয় দোষত্রুটি ও শায মুক্ত তাকে সহীহ হাদীস বলে।
হাসান (ﺣﺴﻦ ) : যে হাদীসের মধ্যে রাবীর যাবত (ধারণ ক্ষমতা) এর গুণ ব্যতীত সহীহ হাদীসের সমস্ত শর্তই পরিপূর্ণ রয়েছে তাকে হাসান হাদীস বলা হয়। ফক্বীহগণ সাধারণত সহীহ ও হাসান হাদীসের ভিত্তিতে শরীয়াতের বিধান নির্ধারণ করেন।
যঈফ (ﺿﻌﻴﻒ ) : যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।
মাওযূ‘ ( ﻣﻮﺿﻮﻉ ) : যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ )-এর নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদীসকে মাওযূ‘ হাদীস বলে।
রাবীর সংখ্যা বিচারে হাদীস প্রধানত দু‘প্রকার। যথা: ১. মুতওয়াতির (ﻣﺘﻮﺍﺗﺮ ) ও ২. আহাদ (ﺃﺣﺎﺩ )।
১. মুতওয়াতির (ﻣﺘﻮﺍﺗﺮ ): বৃহৎ সংখ্যক রাবীর বর্ণিত হাদীস, মিথ্যার ব্যাপারে যাদের উপর একাট্টা হওয়া অসম্ভব, সনদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা বিদ্যমান থাকলে হাদীসকে মুতওয়াতির (ﻣﺘﻮﺍﺗﺮ ) বলা হয়।
২. আহাদ ( ﺃﺣﺎﺩ ‏) : ﺃﺣﺎﺩ তিন প্রকার। যথা:
মাশহুর (ﻣﺸﻬﻮﺭ): যে কোন স্তরে হাদীস বর্ণনা কারীর সংখ্যা যদি দুই এর অধিক হয়, কিন্তু মুতওয়াতির এর পর্যায়ে পৌঁছে না তাকে মাশহুর (ﻣﺸﻬﻮﺭ) বলে।
আযীয (ﻋﺰﻳﺰ): যে কোন স্তরে হাদীস বর্ণনা কারীর সংখ্যা যদি দু‘জন হয় ।
গরীব (ﻏﺮﻳﺐ ): যে কোন স্তরে হাদীস বর্ণনা কারীর সংখ্যা যদি এক জন হয় ।
শায (ﺷﺎﺫ): একাধিক নির্ভরযোগ্য রাবীর বিপরীত একজন নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনাকে শায হাদীস বলে।
কিয়াস (ﻗﻴﺎﺱ ): অর্থ অনুমান, পরিমাপ, তুলনা ইত্যাদি। পরিভাষায়: শাখাকে মূলের সঙ্গে তুলনা করা, যার ফলে শাখা ও মূল একই হুকুমের অমত্মর্ভুক্ত হয়ে যায়।
তাক্বলীদ ( ﺗﻘﻠﻴﺪ): দলীল উল্লেখ ছাড়াই কোন ব্যক্তির মতামতকে গ্রহণ করা।
ইজতিহাদ (ﺍﺟﺘﻬﺎﺩ ): উদ্দিষ্ট জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টা চালানোকে ইজতিহাদ বলে।
শরীয়াত ( ﺷﺮﻳﻌﺔ): অর্থ: আইন, বিধান, পথ, পন্থা ইত্যাদি। পরিভাষায়: মহান আল্লাহ্ স্বীয় দীন হতে বান্দার জন্য যা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন তাকে শরীয়াত বলে।
মাযহাব (ﻣﺬﻫﺐ ): অর্থ- মত, পথ, মতবাদ ইত্যাদি। ফিক্বহী পরিভাষায়: ইবাদাত ও মু‘আমালাতের ক্ষেত্রে শারঈ হুকুম পালনের জন্য বান্দা যে পথ অনুসরণ করে এবং প্রত্যেক দলের জন্য একজন ইমামের উপর অথবা ইমামের ওসীয়ত কিংবা ইমামের প্রতিনিধির উপর নির্ভর করে তাকে মাযহাব বলে।
নাযর (ﻧﺬﺭ ): কোন বিষয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য চিন্তা-ভাবনা করাকে নাযর বলে।
আম (ﻋﺎﻡ ): সীমাবদ্ধ করা ছাড়াই যা দুই বা ততোধিক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে তাকে আম বলে।
খাস (ﺧﺎﺹ ): আম এর বিপরীত, যা নির্দিষ্ট বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
ইজমা (ﺍﺟﻤﺎﻉ ): কোন এক যুগে আলিমদের কোন শারঈ বিষয়ের উপর এক মত পোষণ করাকে ইজমা বলে।
মুসনাদ (ﻣﺴﻨﺪ ): যার সনদগুলো পরস্পর এমনভাবে মিলিত যে, প্রত্যেকের বর্ণনা সুস্পষ্ট।
ফিক্বহ (ﻓﻘﻪ ): ইজতিহাদ বা গবেষণার পদ্ধতিতে শারঈ হুকুম সম্পর্কে জানার বিধানকে ফিক্বহ বলে।
আসল বা মূল (ﺍﺻﻞ ): এমন প্রথম বিষয়, যার উপর ভিত্তি করে কোন কিছু গড়ে উঠে। যেমন- দেয়ালের ভিত্তি।
ফারা বা শাখা (ﻓﺮﻉ ): আসলের বিপরীত যা কোন ভিত্তির উপর গড়ে উঠে।
ওয়াজিব (ﻭﺍﺟﺐ ): যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি পাওয়া যাবে।
মানদূব (ﻣﻨﺪﻭﺏ ): যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি হবে না।
মাহযূর (ﻣﺤﻈﻮﺭ ): যা পরিত্যাগ করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর আমল করলে শাস্তি পাওয়া যাবে।
মাকরূহ (ﻣﻜﺮﻭﻩ ): যা পরিত্যাগ করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর আমল করলে শাস্তি হবে না।
ফাৎওয়া (ﻓﺘﻮﻯ ): জিজ্ঞাসিত ব্যক্তির নিকট থেকে দলীল ভিত্তিক শারঈ হুকুম সুস্পষ্ট বর্ণনা করে নেয়াকে ফাৎওয়া বলে।
নাসিখ ( ﻧﺎﺳﺦ): পরিবর্তিত শারঈ দলীল যা পূববর্তী শারঈ হুকুমকে রহিত করে দেয় তাকে নাসিখ বলে।
মানসূখ (ﻣﻨﺴﻮﺥ): আর যে হুকুমটি রহিত হয়ে যায় সেটাই মানসূখ।
মুতলাক্ব (ﻣﻄﻠﻖ ): যা প্রকৃতিগত দিক থেকে জাতির সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে কিন্তু অনির্দিষ্টভাবে একটি অর্থকে বুঝায়।
মুকাইয়্যাদ (ﻣﻘﻴﺪ): যা মুতলাক্বের বিপরীত অর্থাৎ জাতির সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে না। বরং নির্দিষ্ট একটি অর্থকে বুঝায়।
হাক্বীকাত (ﺣﻘﻴﻘﺔ ): শব্দকে আসল অর্থে ব্যবহার করাকে হাক্বীকত বলে। যেমন- সিংহ শব্দটি এক প্রজাতির হিংস্র প্রাণীকে বুঝায়।
মাজায (ﻣﺠﺎﺯ): শব্দ যখন আসল অর্থকে অতিক্রম করে তার সাথে সাদৃশ্য রাখে এমন অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে মাজায বলে। যেমন- সাহসী লোককে সিংহের সাথে তুলনা করা।
========================
প্রশ্নঃ সহীহ হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যে হাদীসের মধ্যে ৫টি শর্ত পূরণ হয়েছে তাকে সহীহ হাদীস বলা হয় -
১) আদালত : হাদীসের সকল রাবী পরিপূর্ণ সত ও বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত ।
২)যাবত : সকল রাবীর “নির্ভুল বর্ণনার ক্ষমতা’ পূর্ণরুপে বিদ্যমান বলে প্রমাণিত
৩)ইত্তিসাল : সনদের প্রত্যেক রাবী তাঁর উর্দ্ধতন রাবী থেকে স্বকর্ণে শুনেছেন বলে প্রমাণিত ।
৪)শুযুয মুক্তি বা শায না হওয়া : হাদীসটি অন্যান্য প্রামাণ্য বর্ণনার বিপরীত নয় বলে প্রমাণিত ।
৫)ইল্লাত মুক্তি : হাদীসটির মধ্যে সূক্ষ্ণ কোন সনদগত বা অর্থগত ত্রুটি নেই বলে প্রমাণিত।
========================
========================
প্রশ্নঃ হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ নবী (সাঃ)এর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদীছ বলে।
প্রশ্নঃ হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ হাদীছ দুপ্রকারঃ মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) হাদীছ ও (মারদূদ) অগ্রহণযোগ্য হাদীছ।
প্রশ্নঃ মাকবূল হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ মাকবূল হাদীছ দুপ্রকারঃ ছহীহ ও হাসান।
প্রশ্নঃ মারদূদ বা অগ্রহণযোগ্য হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ দুপ্রকারঃ যঈফ (দুর্বল) ও জাল (বানোয়াট)।
প্রশ্নঃ সহীহ হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে হাদীছটি নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, উহার সনদ পরস্পর সম্পৃক্ত, তার মধ্যে গোপন কোন ত্রুটি নেই এবং উহা শাযও (তথা অন্য কোন অধিকতর নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিরোধী) নয় তাকে সহীহ হাদীছ বলে।
প্রশ্নঃ প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ ৬টি। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ।
প্রশ্নঃ সিহাহ সিত্তা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ হাদীছের ছয়টি গ্রন্থকে বুঝানো হয়। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ। (বুখারী ও মুসলিমের সবগুলো এবং অন্য কিতাবগুলোর অধিকাংশ হাদীছ বিশুদ্ধ, তাই এগুলোকে একসাথে সিহাহ সিত্তা বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ বলা হয়)
প্রশ্নঃ হাদীছ গ্রন্থগুলোর মধ্যে কোন কিতাবে সবচেয়ে বেশী হাদীছ সংকলিত হয়েছে?
উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদে (হাদিস সংখ্যা ২৭৭৪৬টি)।
প্রশ্নঃ ছয়টি প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ ছাড়া আরো ৫টি হাদীছ গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর?
উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদ, মুআত্ত্বা মালেক, দারাকুত্বনী, সুনানে দারেমী, সুনানে বায়হাক্বী।
প্রশ্নঃ রিয়াযুস্ সালেহীন কিতাবটির লিখক কে?
উত্তরঃ ইমাম নববী।
প্রশ্নঃ জাল হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে কথাটি মানুষে তৈরী করেছে, অতঃপর তা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, তাকে জাল হাদীছ বলে।
প্রশ্নঃ আল্লাহর কুরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধতম গ্রন্থ কোনটি?
উত্তরঃ সহীহ বুখারী (বুখারির হাদিস সংখ্যা ৭০০৮টি। মতান্তরেঃ ৭৫৬৩টি)।
প্রশ্নঃ সহীহ বুখারীর একটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ভাষ্য (ব্যাখ্যা) গ্রন্থের নাম কি?
উত্তরঃ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) প্রণীত ফাতহুল বারী।
প্রশ্নঃ কোন দুটি হাদীছ গ্রন্থকে সহীহায়ন বলা হয়?
উত্তরঃ সহীহ বুখারী (হাদিস সংখ্যা ৭০০৮টি। মতান্তরেঃ ৭৫৬৩টি) ও সহীহ মুসলিম (হাদিস সংখ্যা ৩০৩৩টি)
প্রশ্নঃ মুত্তাফাকুন আলাইহে বলতে কি বুঝানো হয়?
উত্তরঃ যে হাদীছটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, সে হাদীছ সম্পর্কে বলা হয় মুত্তাফাকুন আলাইহে।
================
================
হাদিস শাস্ত্রের কতিপয় পরিভাষা সম্পাদনা
-------------------
সাহাবী (ﺻﺤﺎﺑﻰ) সম্পাদনা
যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভ করেছেন বা তাঁকে দেখেছেন ও তাঁর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, অথবা জীবনে একবার তাঁকে দেখেছেন এবং ইমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে এর সাহাবী বলে।
তাবিঈ (ﺗﺎﺑﻌﻰ) সম্পাদনা
যিনি রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো সাহাবীর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসাবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবিঈ বলে।
মুহাদ্দিস (ﻣﺤﺪﺙ) সম্পাদনা
যে ব্যক্তি হাদিস চর্চা করেন এবং বহুসংখ্যক হাদিসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাঁকে মুহাদ্দিস বলে।
শায়খ (ﺷﻴﻴﺦ ) সম্পাদনা
হাদিসের শিক্ষাদাতা রাবিকে শায়খ বলে।
শায়খায়ন (ﺷﻴﺨﻴﻦ ) সম্পাদনা
সাহাবীগণের মধ্যে আবু বকর ও উমর (রা.)-কে একত্রে শায়খায়ন বলা হয়। কিন্তু হাদিসশাস্ত্রে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রহ.)-কে এবং ফিক্হ-এর পরিভাষায় ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও আবু ইউসুফ (রহ.)-কে একত্রে শায়খায়ন বলা হয়।
হাফিজ (ﺣﺎﻓﻆ ) সম্পাদনা
যিনি সনদ ও মতনের বৃত্তান্ত সহ এক লক্ষ হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাফিজ বলা হয়।
হুজ্জাত (ﺣﺠﺔ ) সম্পাদনা
অনুরূপভাবে যিনি তিন লক্ষ হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হুজ্জাত বলা হয়।
হাকিম ( ﺣﺎﻛﻢ ) সম্পাদনা
যিনি সব হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাকিম বলা হয়।
রিজাল (ﺭﺟﺎﻝ) সম্পাদনা
হাদিসের রাবি সমষ্টিকে রিজাল বলে। যে শাস্ত্রে রাবিগণের জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে তাঁকে আসমাউর-রিজাল ( ﺍﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ) বলা হয়।
রিওয়ায়ত ( ﺭﻭﺍﻳﺔ ) সম্পাদনা
হাদিস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়ত বলে। কখনও কখনও মূল হাদিসকেও রিওয়ায়ত বলা হয়। যেমন, এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়ত (হাদিস) আছে।
সনদ (ﺳﻨﺪ ) সম্পাদনা
হাদিসের মূল কথাটুকু যে সূত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে সনদ বলা হয়। এতে হাদিস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।
মতন (ﻣﺘﻦ ) সম্পাদনা
হাদিসের মূল কথা ও তার শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।
মরফু’ ( ﻣﺮﻓﻮﻉ) সম্পাদনা
যে হাদিসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মরফু’ হাদিস বলে।
মাওকুফ (ﻣﻮﻗﻮﻑ ) সম্পাদনা
যে হাদিসের বর্ণনা-সূত্র ঊর্ধ্ব দিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে, অর্থাৎ যে সনদ-সূত্রে কোনো সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাওকুফ হাদিস বলে। এর অপর নাম আসার (ﺍﺛﺎﺭ) ।
মাকতু (ﻣﻘﻄﻮﻉ) সম্পাদনা
যে হাদিসের সনদ কোনো তাবিঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মাকতু’ হাদিস বলা হয়।
মুত্তাফাকুন আলাইহি ( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ) সম্পাদনা
যে হাদিসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উভয়ই একমত এবং তারা উক্ত হাদিস লিপিবদ্ধ করেছেন তাই মুত্তাফাকুন আলাইহি হাদিস।
হাসান (ﺣﺴﻦ ) সম্পাদনা
যে হাদিসের কোনো রাবির জারতগুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে তাকে হাসান হাদিস বলা হয়। ফিকহবিদগণ সাধারণত সহিহ ও হাসান হাদিসের ভিত্তিতে শরিয়তের বিধান নির্ধারণ করেন।
মাওজু’ (ﻣﻮﺿﻮﻉ) সম্পাদনা
যে হাদিসের রাবি জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদিসকে মাওজু’ হাদিস বলে। এরূপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়।
================
================
================
হাদিস কত প্রকার ও কি কি ?

রাসুল (স:) এর নবুয়াতী জীবনের সকল কথা,কাজ এবং অনুমোদনকে হাদীস বলে। মূল বক্তব্য হিসাবে হাদীস তিন প্রকার ১) কাওলী হাদীস : রাসুল(স:) এর পবিত্র মুখের বানীই কাওলী হাদীস। ২) ফিলী হাদীস: যে কাজ রাসূল (স:) স্বয়ং করেছেন এবং সাহাবীগণ তা বর্ণনা করেছেন তাই ফিলী হাদীস। ৩) তাকরীরী হাদীস : সাহাবীদের যে সব কথাও কাজের প্রতি রাসূল (স:) সমর্থন প্রদান করেছেন তাহাই তাকরীরী হাদীস।
রাবীদের সংখ্যা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার:
১। খবরে মুতাওয়াতির: যে হাদীস এত অধিক সংখ্যক রাবী বর্ণনা করেছেন যাদেও মিথ্যার উপর একমত হওয়া অসম্ভব।
২। খবরে মাশহুর: প্রত্যেক যুগে অন্তত: তিনজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন,তাকে খবরে মাশহুর বলে, তাকে মুস্তাফিজ ও বলে।
৩। খবরে ওয়াহেদ বা খবরে আহাদ: হাদীস গরীব আজিজ এবং খবরে মাশহুর এ তিন প্রকারের হাদীদকে একত্রে খবরে আহাদ বলে, প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথকভাবে খবরে ওয়াহিদ বলে।
আযীয হাদীস: যে হাদীস প্রত্যেক যুগে অন্তত: দুজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন, তাকে আযীয হাদীস বলে।
গরীব হাদীস: যে হাদীস কোন যুগে মাত্র একজন রাবী বর্ণনা করেছেন। তাকে গরীব হাদীস বলে।
রাবীদের সিলসিলা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার
১। মারফু হাদীস: যে হাদীসের সনদ রাসুল(স:) পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মারফু হাদীস বলে।
২। মাওকুফ হাদীস : যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাওকুফ হাদীস বলে।
৩। মাকতু হাদীস: যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাকতু হাদীস বলে।
রাবী বাদ পড়া হিসাবে হাদীস দুই প্রকার।
১। মুত্তাছিল হাদীস: যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা সর্বস্তরে ঠিক রয়েছে কোথা ও কোন রাবী বাদ পড়ে না তাকে মুক্তাছিল হাদীস বলে।
২। মুনকাতে হাদীস: যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতে হাদীস বলে।
মুনকাতে হাদীস তিন প্রকার:
১। মুরসাল হাদীস: যে হাদীসে রাবীর নাম বাদ পড়া শেষের দিকে অথাৎ সাহাবীর নামই বাদ পড়েছে তাকে মুরসাল হাদীস বলে।
২। মুয়াল্লাক হাদীস: যে হাদীসের সনদের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অথার্ৎ সাহাবীর পর তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুয়াল্লাক হাদীস বলে।
৩। মুদাল হাদীস: যে হাদীসে দুই বা ততোধীক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বিলুপ্ত হয় তাকে মুদাল হাদীস বলে।
বিশ্বস্ততা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার
১। সহীহ হাদীস: যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে, সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদীস বলে।
২। হাসান হাদীস: সহীহ সবগুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয় তাকে হাসান হাদীস বলে।
৩। যায়ীফ হাদীস: হাসান, সহীহ হাদীসের গুন সমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যায়ীফ হাদীস বলে।
হাদীসে কুদসী:
যে হাদীসের মুল বক্তব্য আল্লাহ সরাসরি রাসূল(স:) কে ইলহাম বা স্বপ্ন যোগে জানিয়ে দিয়েছেন, রাসূল(স:) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীসে কুদসী বলে।
মুদাল্লাছ হাদীস
যে হাদীসের সনদের দোষ ক্রটি গোপন করা হয় তাকে মুদাল্লাছ হাদীস বলে।
সুনান: হাদীসের ঐ কিতাবকে সুনান বলা হয় যা ফিক্হ এর তারতীব অনুয়াযী সাজানো হয়েছে।
সুনানে আরবায়া: আবুদাউদ শরীফ+ নাসায়ী শরীফ+তিরমীযী শরীফ+ ইবনে মাজায় শরীফ এই চার হাদীস গ্রন্থকে এক সাথে সুনানে আরবায়া বলা হয়।
মুসনাদ: হাদীসের ঐ কিতাবকে বলা হয় যা সাহাবায়ে কিরামের তারতীব অনুয়াযী লিখা হয়েছে।
সহীহাইন: বুখারী শরীফ ্ও মুসলীম শরীফকে এক সাথে সহীহাইন বলা হয়।
মুত্তাফাকুন আলাইহি: ইমাম বুখারী (র) ইমাম মুসলিম (র:) উভয়ে একই সাহাবী হতে যে হাদীস স্ব-স্ব প্রান্তে সংকল করেছেন তাকে মুত্তাফাকুন আল্লাইহি বলে।
জামে: যে গ্রন্থে হাদীস সমূহকে বিষয় বস্তু অনুসারে সাজানো হয়েছে এবং যার মধ্যে আকাইদ ছিয়ার তাফসির আহকাম, আদব, ফিতান, রিকাক ও মানাকিব এ আটটি অধ্যায় রয়েছে তাকে জামে বলা হয় যেমন জামে তিরমিযী
সনদ: হাদীস বর্ণনা কারীদের ধারাবাহিকতাকে সনদ বলে,
মতন: হাদীসের মূল শব্দ সমূহকে মতন বলে।
রেওয়ায়েত: হাদীস বর্ণনা করাকে রেওয়ায়েত বলে।
দেরায়েত: হাদীসের মতন বা মূল বিষয়ে আভ্যান্তরীন সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে যুক্তির কষ্টিপাথরে যে সমালোচনা করা হয় তাকে দেরায়েত বলে।
রিজাল: হাদীস বর্ণনাকারীর সমষ্টিকে রিজাল বলে।
শায়খাইন:মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় ইমান বুখারী(র:) ও মুসলিম (র:) কে শায়খাইন বলে।
হাফিজ: যে ব্যাক্তি সনদও মতনের সকল বৃত্তান্ত সহ এক লক্ষ হাদীস মুখস্ত জানেন তাকে হাফিজ বলে।
হুজ্জাত: যে ব্যাক্তি সদন ও মতনের সকল বৃন্তান্ত সহ তিন লক্ষ্য হাদীস মুখস্ত জানেন তাকে হুজ্জাত বলে।
হাকিম: যে ব্যাক্তি সনদ ও মতনের সকল বৃত্তান্ত সহ সকল হাদীস মুখস্থ করেছেন তাকে হাকিম বলে।
সিহাহ্ সিত্তা: সিহাহ্ অর্থ বিশুদ্ব, সিত্তাহ অর্থ ছয়। সিহা সিত্তা এর আভিধানিক অর্থ হল ছয়টি বিশুদ্ব ইসলামী পরিভাষায় হাদীস শাসের ছয়টি নির্ভূল ও বিশুদ্ব হাদীস গ্রন্থকে এক কথায় সিহাহ্ সিত্তা বলা হয়।
সিহাহ্ সিত্তা হাদীস গ্রন্থ গুলো এবং সংকলকদের নাম:
১। সহীহ বুখারী- ইমাম বুখারী (র:)- হাদীস সংখ্যা ৭৩৯৭
২। সহীহ মুসলিম - ইমাম মুসলিম (র:) হাদীস সংখ্যা- ৪০০০
৩। জামি তিরমিযী- ইমাম তিরমিযী (র:) হাদীস সংখ্যা ৩৮১২
৪। সুনানে আবুদাউদ (র:) ইমাম আবুদাউদ (র:) হাদীস সংখ্যা ৪৮০০
৫। সুনানে নাসায়ী – ইমাম নাসাই (র:) হাদীস সংখ্যা ৪৪৮২
৬। সুনানে ইবনে মাজাহ ইমাম ইবনে মাজাহ (র:) হাদীস- ৪৩৩৮
হাদীসের শ্রেণী বিভাগ:
মুল বক্তব্য হিসেবে তিন প্রকার:
১। কাওলী ২। ফেলী ৩। তাকরীর
রাবীদের সংখ্যা হিসেবে তিন প্রকার:
১। খবরে মুতাওয়াতের ২। খবরে মাশহুর ৩। খবরে ওয়াহেদ
রাবীদের সিলসিলা হিসাবে তিন প্রকার :
১। মারফু ২। মাওকুফ ৩। মাকতু
রাবীদের পড়া হিসেবে দুই প্রকার:
১। মুক্তাসিল ২। মুনকাতে
বিশ্বস্ততা হিসেবে তিন প্রকার:
১। ছহীহ্ ২। হাসান। ৩। জয়ীফ
বেশী হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণ:
১। হযরত আবু হুরায়রা (র:)হাদীস সংখ্যা ৫৩৭৪টি মৃত্যু৫৭হিজরী বয়স: ৭৮বছর
২। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (র:) হাদীস সংখ্যা ২২১০টি মৃত্যু ৫৮ হিজরী বয়স: ৬৭বছর
৩। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(র:) হাদীস সংখ্যা ১৬৬০ মৃত্যু ৫৮ হিজরী বয়স: ৭১বছর
৪। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর(র:) হাদীস সংখ্যা ১৬৩০ মৃত্যু ৭০ হিজরী বয়স: ৮৪বছর
৫। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (র:) হাদীস সংখ্যা ১৫৪০ মৃত্যু ৭৪ হিজরী বয়স: ৯৪বছর
৬। হযরত আনাস ইবনে মালেক (র:) হাদীস সংখ্যা ১২৮৬ মৃত্যু ৯৩ হিজরী বয়স: ১০৩বছর
৭। হযরত আবু সাঈদ খুদরী হাদীস সংখ্যা ১১৭০ মৃত্যু ৪৬ হিজরী বয়স: ৮৪বছর
৮। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (র:) হাদীস সংখ্যা ৮৪৮ মৃত্যু ৩২ হিজরী বয়স:-
৯। হযরত আমর ইবনুল আস(র:) হাদীস সংখ্যা ৭০০ মৃত্যু ৬৩ হিজরী বয়স:-

Post a Comment

5 Comments