বিদআত কি ও বিদআতীদের পরিনাম
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেনঃ
"তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে বিরত থাক। নিঃশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত ও প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী।" (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাতঃ ১৬৫)
----------------------
প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।" (নাসাঈঃ ১৫৭৮)
----------------------
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যারোপ করার পাপ
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমার নামে তোমরা নাম রেখ; কিন্তু আমার উপনামে (কুনিয়াতে) তোমরা নাম রেখ না। আর যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে ঠিক আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতির ন্যায় আকৃতি ধারণ করতে পারে না। যে ইচ্ছা করে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার আসন বানিয়ে নেয়।’ (৩৫৩৯, ৬১৮৮, ৬১৯৭, ৬৯৯৩; মুসলিম মুকাদ্দামা, দ্বিতীয় অধ্যায়, হাঃ ৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১১)
সহীহ বুখারী-হাদিস নম্বরঃ ১১০-হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) ------------------------------------------- হাদীস ,বিদআতীদের পরিনাম ,
আল্লাহ বলেছেনঃ
"আপনি বলে দিন, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে জানিয়ে দিব (দুনিয়াবী জীবনে) যাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আমলই করে যাচ্ছে।"
***সুরাহ কাহফঃ আয়াতঃ ১০৩-১০৪।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেনঃ
"তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে বিরত থাক। নিঃশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত ও প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী।" (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাতঃ ১৬৫)
"বিদআতীর উপর আল্লাহ এবং ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা‘নত বর্ষিত হয় এবং বিদআতীর কোন আমলই কবুল হয় না।" (বুখারীঃ ৩১৮০)
"প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।" (নাসাঈঃ ১৫৭৮)
"বিদআতিরা হাউযে কাওছারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হবে।" (মুসলিমঃ ৪২৪৩)
"যে ব্যক্তি কোন বিদ‘আতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের লা‘নত পতিত হয়" (মুত্তাফাক্ব আলাইহ,মিশকাত হা/২৭২৮ )
আল্লাহ বলেছেনঃ
"তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না।" (সুরাহ কাহফঃ আয়াতঃ ৫৭ )
নবীজী(সঃ) বলেছেন:
ﻭَﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﻣُﺤْﺪَﺛَﺎﺕِ ﺍﻷُﻣُﻮْﺭِ ﻓَﺈِﻥَّ ﻛُﻞَّ ﻣُﺤْﺪَﺛَﺔٍ ﺑِﺪْﻋَﺔٌ ﻭَﻛُﻞَّ ﺑِﺪْﻋَﺔٍ ﺿَﻼَﻟَﺔٌ ‏) ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﻗﺎﻝ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ “তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা”।[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬, তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম তাঁর এক খুতবায় বলেছেন:
ﺇِﻥَّ ﺃَﺻْﺪَﻕَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻛِﺘَﺎﺏُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺃَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻬَﺪْﻱِ ﻫَﺪْﻱُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﺷَﺮُّ ﺍﻷُﻣُﻮْﺭِ ﻣُﺤْﺪَﺛَﺎﺗُﻬَﺎ ﻭَﻛُﻞُّ ﻣُﺤْﺪَﺛَﺔٍ ﺑِﺪْﻋَﺔٌ ﻭَﻛُﻞُّ ﺑِﺪْﻋَﺔٍ ﺿَﻼَﻟَﺔٌ ﻭَﻛُﻞُّ ﺿَﻼَﻟَﺔٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻰ ﻭﺍﻟﻠﻔﻆ ﻟﻠﻨﺴﺎﺋﻰ “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। সুত্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।
“যে কেউই আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর কোন অংশ নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)  ------------------------------------
বিদআত সৃষ্টি - শয়তানের এক সফল মিশন"
বিদআত সৃষ্টিকারীরা শয়তানের দূত হিসাবে কাজ করে আসছে। তারা অযথা তর্ক করে যাতে আমরা মুশরিক হয়ে যাই(আসতাগফিরুল্লাহ)।
আল্লাহ বলেছেনঃ
"নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে-যেন তারা তোমাদের সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরেক হয়ে যাবে।"
***সুরা আল-আনআমঃ আয়াত-১২১।
যেমনঃ
রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি সালাতে সুরা ফাতিহা পড়লো না, তার সালাত হবে অসম্পূর্ণ। ইমামের পিছনেও মনে মনে পড়তে হবে।" এই কথা তিনি তিনবার বলেছেন।
***হাদিস বর্ণনায়ঃ আবু হুরায়রা(রাদিঃ)।
***হাদিস সংগ্রহে ইমাম মুসলিমঃ ৭৭৫।
যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সালাতে "উম্মুল কুরআন" পাঠ করতে - সেখানে বিদআতিরা শয়তানের দূত হিসাবে সালাত/নামাযকে বাতিল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কারন, শয়তানের বড় মিশন হলঃ সালাত/নামায বাতিল করে দেওয়া।
শয়তানের বড় টার্গেট হল আমাদের সালাত/নামায নষ্ট করে দেওয়া। আর নামাযের মধ্যেই শয়তান সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে। আমাদেরকে অন্য মনস্ক করে দেয়- নামাযে আমাদের খুশুখুযু আসেনা। এবং শয়তান তার টার্গেট নিয়েই কিয়ামত অবধি কাজ করবে।
অতএব, কোন আলেম কি বললেন তাতে কিছুই যায় আসে না। আমরা মুহাম্মাদ(সাঃ)-এর নির্দেশ মেনে চলবো।
"কুল্লু বিদাতিন দলালা"
অর্থঃ প্রতিটা বিদআত'ই পথভ্রষ্টতা।
বিদআত কি, বিদআতে হাসানা(ভাল) আর বিদআতে সাইয়্যা(খারাপ)- এই দুই ভাগে ভাগ করাও আরেক বিদআত!!! বিদআতের এমন দুই ভাগ সাহাবায়ে কিরামদের নিকট অপরিচিত ছিল! তাঁদের কাছে যেটা পরিচিত ছিল তা হলোঃ "কুল্লু বিদাতিন দলালা"- অর্থঃ প্রতিটা বিদআত'ই পথভ্রষ্টতা। কারন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিটা খুতবার শুরুতেই বলতেনঃ ''সর্বোত্তম বানী আল্লাহ্র কিতাবের বানী, সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মাদ(সাঃ)-এর আদর্শ আর সর্ব নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় সৃষ্টি; সব নতুন বিষয় সমুহই বিদআত, সব বিদআত'ই পথভ্রষ্টতা।"
***হাদিস সংগ্রহে ইমাম মুসলিমঃ ২/৫৯৩।
"আলেমদের অনুসরন করা যাবে না"
আলেমদের অনুসরন করা যাবে না- বরং তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। অনুসরন করতে হবে দুইটি। যথাঃ
১) আল্লাহর কুরআন এবং
২) মুহাম্মদ(সাঃ)-এর সুন্নাহ।
আল্লাহ বলেছেনঃ
"আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।"
***সুরাহ আন-নাহলঃ আয়াত-৪৩।
"তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না।"
***সুরাহ আল-আ'রাফঃ আয়াত-৩।
"তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।"
***সুরাহ আল-আহযাবঃ আয়াত-৬৭।
রাসূল মুহাম্মদ(সাঃ) বলেছেনঃ
"আমি তোমাদের জন্য দুইটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যত দিন তোমরা তা আকড়ে থাকবে গোমরাহ হবে না। আর তা হলঃ আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।"
***হাদিস সংগ্রহে সিলসিলাতূল আহাদিস আস-সাহিয়াঃ ৪:৩৬।
"পূর্ব-পুরুষদের/বাপ-দাদাদের অনুসারীরা জাহান্নামী"
কারন, তারা বিদআতী।
আমাদের পূর্ব-পুরুষরা বা বাপ-দাদারা যা অনুসরন করেছে আমরাও তাই করেছি বা করি। আমাদের বাপ-দাদারা যদি কুরআনের বিধান এবং রাসুল(সাঃ)-এর সহিহ হাদিসকে বাদ দিয়ে দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু(বিদআত) সৃষ্টি করে তা অনুসরন করে থাকে- যেখানে রাসুল(সাঃ)-এর কোন নির্দেশনা নাই এবং আমাদেরকেও সেই পথ দেখিয়ে থাকে; তাহলে কি তা পালন করতে হবে? কখনোই তা করা যাবে না। কারন, আল্লাহ বলেছেনঃ
"আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন; তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব- যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদিও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও।"
***সুরাহ বাকারাহঃ আয়াত-১৭০।
"যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের দিকে এস, তখন তারা বলে, আমাদের জন্যে তাই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবুও কি তারা তাই করবে?"
***সুরাহ আল-মায়েদাহঃ আয়াত-১০৪।
"তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তোমরা তার অনুসরণ কর; তখন তারা বলে, বরং আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি- তারই অনুসরণ করব। শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে দাওয়াত দেয়, তবুও কি?"
***সূরাহ লুকমানঃ আয়াত-২১।
"বিদআতীর তাওবা কবুল হবে না"
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“আল্লাহ তায়ালা বিদআতীর তওবা গ্রহণ করবেন না বা কবুল হবে না, যতক্ষণ না বিদআত সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দেয়।”
***হাদিস সংগ্রহে ত্বাবারানী, সহীহ তারগীব: ৫১ , সিলসিলাহ সহীহাহ: ১৬২০।
"বিদআতীদের পরিনাম"
বিদআতীদের পরিনতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। কারন, আল্লাহ বলেছেনঃ
"আপনি বলে দিন, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে জানিয়ে দিব? (দুনিয়াবী জীবনে) যাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আমলই করে যাচ্ছে।"
***সুরাহ কাহফঃ আয়াতঃ ১০৩-১০৪।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেনঃ
"তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে বিরত থাক। নিঃশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত ও প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী।"
***হাদিস সংগ্রহে ইমাম আহমাদ, ইমাম আবু দাঊদ, ইমাম তিরমিযী, মিশকাতঃ ১৬৫।
"বিদআতীর উপর আল্লাহ এবং ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা‘নত বর্ষিত হয় এবং বিদআতীর কোন আমলই কবুল হয় না।"
***হাদিস সংগ্রহে ইমাম বুখারীঃ ৩১৮০।
"প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।"
***হাদিস সংগ্রহে ইমাম নাসাঈঃ ১৫৭৮।
"বিদআতিরা হাউযে কাওছারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হবে।"
***হাদিস সংগ্রহে ইমাম মুসলিমঃ ৪২৪৩।
"বিদআতীরা সাবধান হয়ে যাও"
“দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও"
বিদআতীদের ভয়াবহতা/অসহায়তা সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে বলেছেনঃ
"কিয়ামতের দিন কিছু লোক এমন হবে যারা আমল করে ক্লান্ত হয়ে গেছে; কিন্তু জলন্ত আগুনে তাদেরকে নিক্ষেপ করা হবে।"
***সূরাহ আল-গাশিয়াহঃ আয়াতঃ ৩-৪।
কিয়ামতের দিন যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম "হাউযে কাওসারে" আসবেন যাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মত মনে করবেন। কিন্তু ফেরেশ্তাগণ বলবেন, এরা হলো সে সকল ব্যক্তি যারা আপনার দুনিয়া থেকে বিদায়ের পরে বিদআত শুরু করে দিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বলবেন, “সুহকান, সুহকান” - “দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও, সে সকল লোক যারা আমার পরে দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ।”
***হাদিস সংগ্রহে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম।
"ইচ্ছা হয় বিদআতিদের বধ করি"
আমার ইচ্ছা হয় বিদআতিদের বধ করি। কারন, বিদআতিরা - মুনাফিক, কাফের ও মুশরিকদের চেয়েও ভয়ংকর। এরা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে সর্বদাই নতুন বিষয় সৃষ্টি করে।
==============================
বিদ’আত থেকে সাবধান!-১
সুপ্রিয় ভাই, দ্বীনের মধ্যে যখন বিদআতের প্রার্দূভাব দেখা দেয় তখন দ্বীন ধীরে ধীরে দূর্বল হতে থাকে। এক পযার্যে তা মৃত্যু বরণ করে। তাই বিষয়টির গুরুত্বের কারণে এই ব্লগে ধারাবাহিকভাবে বিদ’আত সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হবে। আলোচনায় আপনাদের যদি কোন বিষয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয় তবে অনুগ্রহ পূর্বক প্রশ্ন করবেন। ইনশআল্লাহ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হবে। তাহলে সবাইকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি। আশাকরি আপনাদেরকে সঙ্গে পাব। আজকের পোষ্টে যে সকল বিষয় আলোচিত হয়েছে সেগুলো হল:
১) বিদআতের সংজ্ঞা (শাব্দিক অর্থ ও ইসলামের পরিভাষায় বিদআত কাকে বলে)
২) বিদআতের প্রকারভেদ।
৩) দ্বীনের মধ্যে বিদআতের বিধান।
৪) একটি সর্তকতা (বিদআতকে ভাল ও খারাপ এ দুভাগে ভাগ করা প্রসঙ্গে)।
বিদআতের সংজ্ঞাঃ
বিদআত শব্দটি আরবী ﺍﻟﺒﺪﻉ শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ হল পূর্বের কোন দৃষ্টান্ত ও নমুনা ছাড়াই কোন কিছু সৃষ্টি ও উদ্ভাবন করা। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
ﺑَﺪِﻳﻊُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ
অর্থঃ পূর্বের কোন নমুনা ব্যতীত আল্লাহ তায়া’লা আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাক্বারাঃ ১১৭)
তিনি আরো বলেন:
ﻗُﻞْ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺖُ ﺑِﺪْﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺮُّﺳُﻞِ
“হে নবী! আপনি বলে দিন, আমি প্রথম রাসূল নই। (সূরা আহ্ক্বাফঃ ৯)
অর্থাৎ মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে আমিই প্রথম রেসালাতের দায়িত্ব নিয়ে আসিনি বরং আমার পূর্বে আরো অনেক রাসূল আগমণ করেছেন।”
ইসলামের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় দ্বীনের মধ্যে এমন বিষয় তৈরী করা, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগে ছিলনা বরং পরবর্তীতে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বিদআতের প্রকারভেদঃ
বিদআত প্রথমতঃ দু’প্রকারঃ-
(১) পার্থিব বিষয়ে বিদআত
(২) দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত।
পার্থিব বিষয়ে বিদআতের অপর নাম নতুন আবিষ্কৃত বিষয়। এ প্রকার বিদআত বৈধ। কেননা দুনিয়ার সাথে সম্পর্কশীল সকল বিষয়ের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা বৈধ। তবে শর্ত হল তাতে শরঈ কোন নিষেধ না থাকা। দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত তথা নতুন কিছু উদ্ভাবন করা হারাম। কারণ দ্বীনের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা অহীর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দ্বীনের সমস্ত বিধান কুরআন ও সুন্নাহ থেকে গ্রহণ করতে হবে। রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
ﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺪَﺙَ ﻓِﻲ ﺃَﻣْﺮِﻧَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﻬُﻮَ ﺭَﺩٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় তৈরী করবে যা তার অন-র্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।
তিনি আরও বলেন,
ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﻣْﺮُﻧَﺎ ﻓَﻬُﻮَ ﺭَﺩٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে, যে বিষয়ে আমাদের অনুমোদন নেই, তা আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে।
দ্বীনের ব্যাপারে বিদআতের প্রকারভেদঃ
দ্বীনের মধ্যে বিদআত দু’প্রকার। (১) বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত এবং (২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত।
১) বিশ্বাসের ভিতরে বিদআত। যেমন যাহমীয়া, মু’তাযেলা, রাফেযী এবং অন্যান্য সকল বাতিল ফির্কার আকীদা সমূহ।
২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত। যেমন আল্লাহ আদেশ দেন নি, এমন বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা। এটা আবার কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যেমনঃ- (১) নতুন কোন ইবাদত আবিষ্কার করা, (২) শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে বৃদ্ধি করা, (৩) শরীয়ত সম্মত ইবাদত বিদআতী নিয়মে পালন করা এবং (৪) শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করা, যা শরীয়তে নির্ধারিত নয়।
প্রথম প্রকারঃ
এমন নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা, ইসলামী শরীয়তের মাঝে যার কোন ভিত্তি নেই। যেমন নতুন কোন নামায, রোজা এবং ঈদে মীলাদুন্ নবী ও অন্যান্য নামে বিভিন্ন ঈদের প্রচলন করা।
দ্বিতীয় প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি করা অথবা হ্রাস করা। যেমন কোন ব্যক্তি আছর কিংবা যোহরের নামায এক রাকাত বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে আদায় করল।
তৃতীয় প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদাত বিদআতী নিয়মে পালন করা। যেমন হাদীছে বর্ণিত জিকিরের বাক্যগুলি দলবদ্ধভাবে সংগীতাকারে। উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করা। কিংবা ইবাদত পালনে নফসের উপর এমন কষ্ট দেয়া, যা রাসূল (সাঃ)এর সুন্নাতের বিরোধী।
চতুর্থ প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে এমন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে আদায় করা, যা শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। যেমন শাবান মাসের ১৫তারিখ দিনের বেলা রোজা রাখা এবং রাতে নির্দিষ্ট নামায আদায় করা। মূলতঃ রোজা ও নামায শরীয়ত সম্মত ইবাদত। কিন্তু ইহাকে নির্দিষ্ট সময়ের সাথে খাছ করার কোন দলীল নেই। রোজা নির্দিষ্ট মাস এবং নামায নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিটি ইবাদত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হবে। কিন্তু শাবান মাসের ১৫তারিখে দিনের বেলা রোজা রাখা এবং সারা রাত নফল নামায আদায় করা নিশ্চিত ভাবে বিদআত। কারণ এ সম্পর্কে কোন সহীহ দলীল নেই।
----------------------------------
বিদআত বলা হয় দ্বীন ও ইবাদতে নব আবিষ্কৃত কাজকে। অর্থাৎ দ্বীন বা ইবাদত মনে করে করা এমন কাজকে বিদআত বলা হবে, যে কাজের কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর কোন দলীল নেই। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
“তোমরা (দ্বীন) নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” ৮১ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)
“যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কিছু উদ্ভাবন করল--- যা তাঁর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” ৮২ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যাক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যপারে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।”
বলা বাহুল্য, নব আবিষ্কৃত পার্থিব কোন বিষয়কে বিদআত বলা যাবে না। যেমন শরীয়াতে নিষিদ্ধ কোন কাজকে বিদআত বলা হয় না। বরং তাকে অবৈধ, হারাম বা মাকরূহ বলা হয়।
বিদআত বলা হয় দ্বীন বিষয়ক কোন নতুন কর্মকে, যার কোন দলীল শরীয়তে নেই। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ অবশ্যই তোমাদের মধ্যে যারা আমার বিদায়ের পর জীবিত থাকবে তাঁরা অনেক রকমের মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব তোমরা আমার ও আমার সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো, তা দাঁত দ্বারা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো। (তাতে যা পাও মান্য কর এবং অন্য কোনও মতের দিকে আকৃষ্ট হয়ো না।) আর (দ্বীনে) নবরচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান! কারণ, নিশ্চয় প্রত্যেক বিদআত (নতুন আমল) হল ভ্রষ্টতা।”(আবু দাঊদ ৪৪৪৩, তিরমিযী ২৮১৫, ইবনে নাজাহ ৪২ নং)
আর নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, “ আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে(নিয়ে যায়)।” উক্ত হাদিস থেকে এ কথাও প্রমাণ হয় যে, বিদআতে হাসানাহ (ভাল বিদআত) বলে কোন বিদআত নেই। কারণ মহানবী (সঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা।”
‘বিদআতে হাসানাহ’ (ভাল বিদআত) বলে কোন বিদআত নেই। বরং প্রত্যেক বিদআতই ‘সাইয়্যিআহ’ (মন্দ)। মহানদি (সঃ) বলেছেন,
“প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” ৮৫ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)
আর হাদীসে যে ভাল রীতি চালু করার কথা বলা হয়েছে, তা নতুন কোন রীতি নয়। বরং যে রীতি শরীয়ত সম্মত কিন্তু কোন জায়গায় তা চালু ছিল না। কোন ব্যক্তি তা চালু করলে তাঁর ঐ সওয়াব হয়। পূর্ণ হাদিসটি পড়লে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, কোন শ্রেণীর রীতির কথা বলা হয়েছে।
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রঃ) বলেন, “একদা আমরা দিনের প্রথম ভাগে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকটে ছিলাম। অতঃপর তাঁর নিকট কিছু লোক এল, যাঁদের দেহ বিবস্ত্র ছিল, পশমের ডোরা কাটা চাদর (মাথা প্রবেশের মত জায়গা মাঝে কেটে) পরে ছিল অথবা ‘আবা’ (আংরাখা) পরে ছিল, তরবারি তাঁরা নিজেদের গর্দানে ঝুলিয়ে রেখেছিল। তাঁদের অধিকাংশ মুযার গোত্রের (লোক) ছিল; বরং তাঁরা সকলেই মুযার গোত্রের ছিল। তাঁদের দারিদ্রতা দেখে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। সুতরাং তিনি (বাড়ীর ভেতরে) প্রবেশ করলেন এবং পুনরায় বের হলেন। তারপর তিনি বেলালকে (আযান দেওয়ার) আদেশ করলেন। ফলে তিনি আযান দিলেন এবং ইকামত দিলেন। অতঃপর তিনি নামায পরে লোকেদেরকে (সম্বোধন করে) ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, “হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তা হতে তাঁর সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাঁদের দুজন থেকে বহু নরনারী (পৃথিবীতে) বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞা কর এবং জ্ঞাতি-বন্ধন ছিন্ন করারকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা নিসা ১ আয়াত) অতঃপর দ্বিতীয় আয়াত যেটি সূরা হাশর এর শেষে আছে সেটি পাঠ করলেন, “যে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, আর প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামিকালের (কিয়ামতের) জন্য সে অগ্রিম কি পাঠিয়ে�

Post a Comment

0 Comments