শিশুর নাম নির্বাচন: ইসলামী দৃষ্টিকোণ
শিশুর নাম নির্বাচন: ইসলামী দৃষ্টিকোণ
---------------------------
শিশুর জন্মের পর তার জন্য একটি সুন্দর ইসলামী নাম রাখা প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার কর্তব্য। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলিমদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ দেখা যায়। এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি কথা বলতে কী এ বিষয়ে আমাদের পড়াশুনা একেবারে অপ্রতুল। তাই ইসলামী নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো আদৌ ইসলামী নামের আওতাভুক্ত নয়। শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই নামটি ইসলামী হবে তাতো নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নাম উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম বা উপনাম রাখা সমীচীন হবে!?
ব্যক্তির নাম তার স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে বর্ণিত আছে।
শাইখ বকর আবু যায়েদ বলেন, “ঘটনাক্রমে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তা‘আলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের অধিকারী লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে। ভাল নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে।”[1]
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো ভাল নাম শুনে আশাবাদী হতেন। হুদাইবিয়ার সন্ধিকালে মুসলিম ও কাফের দুইপক্ষের মধ্যে টানাপোড়নের এক পর্যায়ে আলোচনার জন্য কাফেরদের প্রতিনিধি হয়ে সুহাইল ইবনে ‘আমর নামে এক ব্যক্তি এগিয়ে এল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহাইল নামে আশাবাদী হয়ে বলেন:
“সুহাইল তোমাদের জন্য সহজ করে দিতে এসেছেন।[2]”
সুহাইল শব্দটি সাহলুন (সহজ) শব্দের ক্ষুদ্রতানির্দেশক রূপ। যার অর্থ হচ্ছে- অতিশয় সহজকারী।
বিভিন্ন কবিলার ভাল অর্থবোধক নামে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশাবাদী হওয়ার নজির আছে। তিনি বলেছেন:
“গিফার (ক্ষমা করা) কবিলা তথা গোত্রের লোকদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিন। আসলাম (আত্মসমর্পণকারী/শান্তিময়) কবিলা বা গোত্রের লোকদেরকে আল্লাহ শান্তি দিন।"[3]
• নিম্নে আমরা নবজাতকের নাম রাখার ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য কিছু নীতিমালা তুলে ধরব:
এক: নবজাতকের নাম রাখার সময়কালের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। শিশুর জন্মের পরপরই তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের তৃতীয় দিন তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের সপ্তম দিন তার নাম রাখা। এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম এ বিষয়ে মুসলিমদেরকে অবকাশ দিয়েছে। যে কোনোটির উপর আমল করা যেতে পারে।[4] এমনকি কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা কোনো কোনো নবীর নাম তাঁদের জন্মের পূর্বে রেখেছেন মর্মে উল্লেখ আছে।[5]
দুই: আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -
ﺇِﻥَّ ﺃَﺣَﺐَّ ﺃَﺳْﻤَﺎﺋِﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ
অর্থ-“তোমাদের নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।”[6]
এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সম্বন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা বা দাস) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম।[7]
তিন: যে কোনো নবীর নামে নাম রাখা ভাল।[8] যেহেতু তাঁরা আল্লাহর মনোনীত বান্দা। হাদিসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“তোমরা আমার নামে নাম রাখ। আমার কুনিয়াতে (উপনামে) কুনিয়ত রেখো না।”[9]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কুনিয়ত ছিল- আবুল কাসেম। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবী-রাসূলের নাম বর্ণিত আছে মর্মে আলেমগণ উল্লেখ করেছেন।[10] এর থেকে পছন্দমত যে কোনো নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।
চার: নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর ফলে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাবচরিত্র নবজাতকের মাঝে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। এটাকে তাফাউল (ﺗَﻔَﺎﺅُﻝٌ ) বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে-তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ।[11]
পাঁচ: আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পর নাম রাখা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দাদা এক নাম রাখলে নানা অন্য একটা নাম পছন্দ করেন। বাবা-মা শিশুকে এক নামে ডাকে। খালারা বা ফুফুরা আবার ভিন্ন নামে ডাকে। এভাবে একটা বিড়ম্বনা প্রায়শঃ দেখা যায়। এ ব্যাপারে শাইখ বাকর আবু যায়দ বলেন, “নাম রাখা নিয়ে পিতা-মাতার মাঝে বিরোধ দেখা দিলে শিশুর পিতাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
“তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।”[সূরা আহযাব ৩৩:৫]
শিশুর পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে আত্মীয়স্বজন বা অপর কোনো ব্যক্তি শিশুর নাম রাখতে পারেন। তবে যে নামটি শিশুর জন্য পছন্দ করা হয় সে নামে শিশুকে ডাকা উচিত। আর বিরোধ দেখা দিলে পিতাই পাবেন অগ্রাধিকার।[12]
ছয়: কোনো ব্যক্তির প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য তাকে তার সন্তানের নাম দিয়ে গঠিত কুনিয়ত বা উপনামে ডাকা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বড় সন্তানের নামের পূর্বে আবু বা পিতা শব্দটি সম্বন্ধিত করে কুনিয়ত রাখা উত্তম। যেমন- কারো বড় ছেলের নাম যদি হয় “উমর” তার কুনিয়ত হবে আবু উমর (উমরের পিতা)। এক্ষেত্রে বড় সন্তানের নাম নির্বাচন করার উদাহরণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল থেকে পাওয়া যায়। এক সাহাবীর কুনিয়াত ছিল আবুল হাকাম। যেহেতু হাকাম আল্লাহর খাস নাম তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তোমার ছেলে নেই? সাহাবী বললেন: শুরাইহ, মুসলিম ও আব্দুল্লাহ। তিনি বললেন: এদের মধ্যে বড় কে? সাহাবী বললেন: শুরাইহ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার নাম হবে: আবু শুরাইহ।”[13]
সাত: যদি কারো নাম ইসলামসম্মত না হয়; বরঞ্চ ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ এমন নাম হয় তাহলে এমন নাম পরিবর্তন করা উচিত।[14] যেমন- ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদিস হতে আমরা জানতে পেরেছি একজন সাহাবীর সাথে ‘হাকাম’ শব্দটি সংশ্লিষ্ট হয়েছিল, কিন্তু হাকাম আল্লাহর খাস নামসমূহের একটি; তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে দিয়ে তাঁর নাম রেখেছেনআবু শুরাইহ।[15] মহিলা সাহাবী যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা এর নাম ছিল বার্রা (ﺑَﺮَّﺓٌ -পূর্ণবতী)। তা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন তুমি কি আত্মস্তুতি করছ? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নামও পরিবর্তন করে ‘যয়নব’ রাখলেন।[16]
আট: সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে বাংলা শব্দে নাম রাখার প্রবণতা দেখা যায়। ইসলামী নীতিমালা লঙ্গিত না হলে এবং এতদ অঞ্চলের মুসলিমদের ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে এমন নাম রাখাতে দোষের কিছু নেই। ‘আল-মাউসু‘আ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া’ তথা ‘কুয়েতস্থ ফিকহ বিষয়ক বিশ্বকোষ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে- “নাম রাখার মূলনীতি হচ্ছে- নবজাতকের যে কোনো নাম রাখা জায়েয; যদি না শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে।”[17] কিন্তু অনন্ত, চিরঞ্জীব, মৃত্যুঞ্জয় এ অর্থবোধক নাম কোনো ভাষাতেই রাখা কোনো অবস্থায় জায়েয নয়। কারণ নশ্বর সৃষ্টিকে অবিনশ্বর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর গুণাবলীতে ভূষিত করা জায়েয নেই।
ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম
এক: আল্লাহর নাম নয় এমন কোনো নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম।[18] যেমন- আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক), আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক), আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক), আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস), আব্দুল কালাম (কথার দাস), আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস), আব্দুন নবী (নবীর দাস), গোলাম রসূল (রসূলের দাস), গোলাম নবী (নবীর দাস), আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস), আব্দুল কামার (চন্দ্রের দাস), আব্দুল আলী (আলীর দাস), আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস), আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস), গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস), গোলাম আবদুল কাদের (আবদুল কাদেরের দাস) গোলাম মহিউদ্দীন (মহিউদ্দীন এর দাস) ইত্যাদি। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত। আর যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়। এমনকি অনেক সময় আল্লাহর নামকে বিকৃত করে ডাকার প্রবণতাও দেখা যায়। এ বিকৃতির উদ্দেশ্য যদি হয় আল্লাহকে হেয় করা তাহলে ব্যক্তির ঈমান থাকবে না। আর এই উদ্দেশ্য না থাকলেও এটি করা অনুচিত।[19]
দুই: অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও হারাম।[20] যেমন- আব্দুল মাবুদ (মাবুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেবে কুরআন ও হাদীছে আসেনি; বরং আল্লাহর বিশেষণ হিসেবে এসেছে), আব্দুল মাওজুদ (মাওজুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেবে কুরআন ও হাদীছে আসেনি)।
তিন: মানুষ যে উপাধির উপযুক্ত নয় অথবা যে নামের মধ্যে মিথ্যাচার রয়েছে অথবা অসার দাবী রয়েছে এমন নাম রাখা হারাম।[21] যেমন- শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) বা মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম বা উপাধি হিসেবে নির্বাচন করা।[22] সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা।[23] একই অর্থবোধক হওয়ার কারণে মহারাজ নাম রাখাকেও হারাম বলা হয়েছে।[24]
চার: যে নামগুলো আল্লাহর জন্য খাস সেসব নামে কোন মাখলুকের নাম রাখা বা কুনিয়ত রাখা হারাম। যেমন- আল্লাহ, আর-রহমান, আল-হাকাম, আল-খালেক ইত্যাদি। তাই এসব নামে কোন মানুষের নাম রাখা সমীচীন নয়।[25] পক্ষান্তরে আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে যেগুলো শুধু আল্লাহর জন্য খাস নয়; বরং সেগুলো আল্লাহর নাম হিসেবেও কুরআন হাদিসে এসেছে এবং মাখলুকের নাম হিসেবেও এসেছে সেসব নাম দিয়ে মাখলুকের নাম রাখা যেতে পারে। কুরআনে এসেছে-
ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓُ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰِ
অর্থ- “আলআযিযের স্ত্রী বলেছেন”[সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫১][26]।
যেসব নাম রাখা মাকরুহ
এক: এমন শব্দে দিয়ে নাম রাখা যার অনুপস্থিতিকে মানুষ কুলক্ষণ মনে করে। যেমন- কারো নাম যদি হয় রাবাহ (লাভবান)। কেউ যদি রাবাহকে ডাকে, আর রাবাহ বাড়ীতে না-থাকে তখন বাড়ীর লোকদেরকে বলতে হবে রাবাহ বাড়ীতে নেই। এ ধরনের বলাকে সাধারণ মানুষ কুলক্ষণ মনে করে। অনুরূপভাবে আফলাহ (সফলকাম), নাজাহ (সফলতা) ইত্যাদির নামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধরনের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। পরবর্তীতে নিষেধ না করে চুপ থেকেছেন।[27]
দুই: যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলা সাহাবীর নাম বার্রা (পূন্যবতী) থেকে পরিবর্তন করে তার নাম দেন যয়নব। এবং বলেন: “তোমরা আত্মস্তুতি করো না। আল্লাহই জানেন কে পূন্যবান।”[28]
তিন: দাম্ভিক ও অহংকারী শাসকদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ। শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি। [29]
চার: যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষের স্বাভাবিক রুচিবোধ যেসব শব্দকে নাম হিসেবে ঘৃণা করে; ভদ্রতা ও শালীনতার পরিপন্থী কোন শব্দকে নাম বা কুনিয়ত হিসেবে গ্রহণ করা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।[30]
পাঁচ: একদল আলেম কুরআন শরীফের মধ্যে আগত অস্পষ্ট শব্দগুলোর নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি।[31]
ছয়: দ্বৈতশব্দে নাম রাখাকে শায়খ বকর আবু যায়দ মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন।[32] যেমন- মোহাম্মদ আহমাদ, মোহাম্মদ সাঈদ। কারণ এতে করে কোনটি ব্যক্তির নিজের নাম ও কোনটি ব্যক্তির পিতার নাম এ বিষয়ে জটিলতা তৈরী হতে পারে এবং দ্বৈতশব্দে নাম রাখা সলফে সালেহীনদের আদর্শ নয়। এতদ অঞ্চলে মুসলিমদের নামকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নাম থেকে চিহ্ণিত করার নিমিত্তে “শ্রী” শব্দের পরিবর্তে “মুহাম্মদ” লেখার প্রচলন সে প্রেক্ষাপটে শুরু হয়েছিল সে প্রেক্ষাপট এখন অনুপস্থিত। তাই মুসলিম শিশুর নামের পূর্বে অতিরিক্ত মুহাম্মদ শব্দ যুক্ত করার কোন প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে নেই।
সাত: অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে আব্দ (দাস) শব্দ বাদে অন্য কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করা। যেমন- রহমত উল্ল্যাহ (আল্লাহর রহমত)। শায়খ বকর আবু যায়দের মতে রাসূল শব্দের সাথে কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও মাকরূহ।[33] যেমন- গোলাম রাসূল (গোলাম শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ হিসেবে ধরা হয় এর অর্থ হবে রাসূলের চাকর বা বাছা তখন এটি মাকরূহ। আর যেসব ভাষায় গোলাম শব্দটি দাস অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব ভাষার শব্দ হিসেবে নাম রাখা হয় তখন এ ধরনের নাম রাখা হারাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।)
আল্লাহর নামের সাথে আব্দ শব্দ সম্বধিত করে কিছু নির্বাচিত নাম
আব্দুল আযীয ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳْﺰِ - পরাক্রমশালীর বান্দা), আব্দুল মালিক ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻤَﺎﻟِﻚِ -মালিকের বান্দা), আব্দুল কারীম ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳْﻢِ -সম্মানিতের বান্দা), আব্দুর রহীম ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢِ -করুণাময়ের বান্দা), আব্দুল আহাদ ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﺄَﺣَﺪِ - একক সত্তার বান্দা), আব্দুস সামাদ (ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺼَّﻤَﺪِ- পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারীর বান্দা), আব্দুল ওয়াহেদ ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻮَﺍﺣِﺪِ -একক সত্তার বান্দা), আব্দুল কাইয়্যুম ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮْﻡِ -অবিনশ্বরের বান্দা), আব্দুস সামী ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺴَّﻤِﻴْﻊِ -সর্বশ্রোতার বান্দা), আব্দুল হাইয়্য ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﺤَﻲِّ -চিরঞ্জীবের বান্দা), আব্দুল খালেক ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﺨَﺎﻟِﻖِ -সৃষ্টিকর্তার বান্দা), আব্দুল বারী ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﺒَﺎﺭِﻱْ -স্রষ্টার বান্দা), আব্দুল মাজীদ ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻤَﺠِﻴْﺪِ -মহিমান্বিত সত্তার বান্দা) ইত্যাদি।
নবী ও রাসূলগণের নাম
সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হচ্ছেন আমাদের নবী মুহাম্মদ (ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ); তাঁর অন্য একটি নাম হচ্ছে- আহমাদ (ﺃَﺣْﻤَﺪُ)। শ্রেষ্ঠতম পাঁচজন রাসূলের নাম হচ্ছে- নূহ (ﻧُﻮْﺡٌ ), ইব্রাহীম (ﺇﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢُ ), মুসা (ﻣُﻮْﺳَﻰ), ঈসা (ﻋِﻴْﺴَﻰ ) ও মুহাম্মদ (ﻣُﺤَﻤَّﺪٌ )। এগুলো ছাড়াও কুরআনে কারীমে আরো কিছু নবী ও রাসূলের নাম এসেছে সেগুলো হচ্ছে- হুদ (ﻫُﻮْﺩٌ ), সালেহ (ﺻَﺎﻟِﺢٌ), শুআইব ( ﺷُﻌَﻴْﺐٌ ), দাউদ ( ﺩَﺍﻭُﺩُ), ইউনুস (ﻳُﻮْﻧُﺲُ), ইয়াকুব (ﻳَﻌْﻘُﻮْﺏٌ ), ইউসুফ (ﻳُﻮْﺳُﻒُ ), ইসহাক (ﺍِﺳْﺤَﺎﻕٌ ), আইয়ুব (ﺃَﻳُّﻮْﺏُ ), যাকারিয়া (ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ ), লূত (ﻟُﻮْﻁٌ), হারুন (ﻫَﺎﺭُﻭْﻥٌ ), ইসমাঈল (ﺍِﺳْﻤَﺎﻋِﻴْﻞُ ), ইয়াহইয়া (ﻳَﺤْﻴﻰ ), যুল-কিফেল ( ﺫُﻭ ﺍﻟْﻜِﻔْﻞِ), আল-ইসাআ (ﺍَﻟْﻴَﺴَﻊ ), আদম ( ﺁﺩﻡ ) ও একজন নেককার বাদশাহ হিসেবে ‘যুলকারনাইন’ ( ﺫُﻭ ﺍﻟْﻘَﺮْﻧَﻴْﻦِ ) ইত্যাদি।
নির্বাচিত কিছু পুরুষ সাহাবীর নাম
সাহাবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন- চারজন খলিফা। মর্যাদা অনুযায়ী তাঁদের সুপরিচিত নাম বা উপনাম হচ্ছে- আবু বকর ( ﺃَﺑُﻮْ ﺑَﻜْﺮ ), উমর (ﻋُﻤَﺮُ ), উসমান (ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ ), আলী ( ﻋَﻠِﻲٌّ)। এর পরের মর্যাদায় রয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত বাকী ৬ জন সাহাবী। তাঁদের নাম হচ্ছে- আব্দুর রহমান ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ), যুবাইর (ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ), তালহা (ﻃَﻠْﺤَﺔُ ), সাদ (ﺳَﻌْﺪٌ ), আবু উবাইদা ( ﺃَﺑُﻮْ ﻋُﺒَﻴْﺪَﺓُ ), সাঈদ (ﺳَﻌِﻴْﺪٌ)। এরপর মর্যদাবান হচ্ছেন- বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণ। বিশিষ্ট সাহাবী যুবাইর ইবনুল আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহ তার ৯ জন ছেলের নাম রেখেছিলেন বদরের যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৯ জন সাহাবীর নামে। তাঁরা হলেন- আব্দুল্লাহ ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪ ), মুনযির (ﻣُﻨْﺬِﺭٌ ), উরওয়া (ﻋُﺮْﻭَﺓُ ), হামযা (ﺣَﻤْﺰَﺓُ), জাফর (ﺟَﻌْﻔَﺮٌ ), মুস‘আব (ﻣُﺼْﻌَﺐٌ ), উবাইদা (ﻋُﺒَﻴْﺪَﺓُ), খালেদ (ﺧَﺎﻟِﺪٌ ), উমর (ﻋُﻤَﺮُ)।[34]
মেয়ে শিশুর আরো কিছু সুন্দর নাম
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীবর্গ তথা উম্মেহাতুল মুমিনীন এর নাম:
খাদিজা (ﺧَﺪِﻳْﺠَﺔُ ), সাওদা ( ﺳَﻮْﺩَﺓُ), আয়েশা (ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ), হাফসা (ﺣَﻔْﺼَﺔُ ), যয়নব (ﺯَﻳْﻨَﺐُ ), উম্মে সালামা (ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔ), উম্মে হাবিবা ( ﺃُﻡِّ ﺣَﺒِﻴْﺒَﺔ ), জুওয়াইরিয়া (ﺟُﻮَﻳْﺮِﻳَﺔُ ), সাফিয়্যা (ﺻَﻔِﻴَّﺔُ )। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যাবর্গের নাম: ফাতেমা (ﻓَﺎﻃِﻤَﺔُ ), রোকেয়া ( ﺭُﻗَﻴَّﺔُ), উম্মে কুলসুম ( ﺃُﻡُّ ﻛﻠْﺜُﻮْﻡ )। আরো কিছু নেককার নারীর নাম- সারা (ﺳَﺎﺭَﺓ ), হাজেরা ( ﻫَﺎﺟِﺮ ), মরিয়ম (ﻣَﺮْﻳَﻢ )।
মহিলা সাহাবীবর্গের নাম:
রুফাইদা ( ﺭُﻓَﻴْﺪَﺓُ -সামান্য দান), আমেনা (ﺁﻣِﻨَﺔُ -প্রশান্ত আত্মা), আসমা (ﺃَﺳْﻤَﺎﺀُ -নাম), রাকিকা (ﺭَﻗِﻴْﻘَﺔٌ -কোমলবতী), নাফিসা (ﻧَﻔِﻴْﺴَﺔُ -মূল্যবান), উমামা (ﺃُﻣَﺎﻣَﺔُ- তিনশত উট), লায়লা (ﻟَﻴْﻠﻰ -মদ), ফারিআ (ﻓَﺮِﻳْﻌَﺔُ -লম্বাদেহী), আতিকা (ﻋَﺎﺗِﻜَﺔُ -সুগন্ধিনী), হুযাফা (ﺣُﺬَﺍﻓَﺔُ -সামান্য বস্তু), সুমাইয়্যা (ﺳُﻤَﻴَّﺔُ -আলামত), খাওলা ( ﺧَﻮْﻟَﺔُ-সুন্দরী), হালিমা (ﺣَﻠِﻴْﻤَﺔُ -ধৈর্য্যশীলা), উম্মে মাবাদ ( ﺃﻡ ﻣَﻌْﺒَﺪ -মাবাদের মা), উম্মে আইমান ( ﺃﻡَّ ﺃَﻳْﻤَﻦ -আইমানের মা), রাবাব ( ﺭَﺑَﺎﺏ-শুভ্র মেঘ), আসিয়া (ﺁﺳِﻴَﺔُ -সমবেদনাপ্রকাশকারিনী), আরওয়া (ﺃﺭْﻭَﻯ -কোমল ও হালকা), আনিসা (ﺃﻧِﻴْﺴَﺔُ -ভাল মনের অধিকারিনী), জামিলা (ﺟَﻤِﻴْﻠَﺔُ -সুন্দরী), দুর্রা (ﺩُﺭَّﺓ -বড় মতি), রাইহানা (ﺭَﻳْﺤَﺎﻧَﺔ -সুগন্ধি তরু), সালমা (ﺳَﻠْﻤﻰ -নিরাপদ), সুআদ (ﺳُﻌَﺎﺩ-সৌভাগ্যবতী), লুবাবা (ﻟُﺒَﺎﺑَﺔ -সর্বোত্তম), আলিয়া (ﻋَﻠِﻴَّﺔُ -উচ্চমর্যাদা সম্পন্না), কারিমা (ﻛَﺮِﻳْﻤَﺔُ – উচ্চবংশী)।
মেয়েদের আরো কিছু সুন্দর নাম:
ছাফিয়্যা (ﺻَﻔِﻴَّﺔُ ), খাওলা (ﺧَﻮْﻟَﺔُ), হাসনা (ﺣَﺴْﻨَﺎﺀ -সুন্দরী), সুরাইয়া (ﺍﻟﺜُّﺮَﻳﺎ-বিশেষ একটি নক্ষত্র), হামিদা (ﺣَﻤِﻴْﺪَﺓُ -প্রশংসিত), দারদা (ﺩَﺭْﺩَﺍﺀُ ), রামলা (ﺭَﻣْﻠَﺔُ- বালিময় ভূমি), মাশকুরা (ﻣَﺸْﻜُﻮْﺭَﺓٌ -কৃতজ্ঞতাপ্রাপ্ত), আফরা (ﻋَﻔْﺮَﺍﺀُ -ফর্সা)।
ছেলে শিশুর আরো কিছু সুন্দর নাম
উসামা ( ﺃﺳﺎﻣﺔ -সিংহ), হামদান (প্রশংসাকারী), লাবীব (ﻟﺒﻴﺐ-বুদ্ধিমান), রাযীন (ﺭﺯﻳﻦ -গাম্ভীর্যশীল), রাইয়্যান (ﺭﻳَّﺎﻥ -জান্নাতের দরজা বিশেষ), মামদুহ (ﻣَﻤْﺪُﻭْﺡ-প্রশংসিত), নাবহান (ﻧَﺒْﻬَﺎﻥ - খ্যাতিমান), নাবীল ( ﻧَﺒِﻴْﻞ-শ্রেষ্ঠ), নাদীম (ﻧَﺪِﻳْﻢ -অন্তরঙ্গ বন্ধু), ইমাদ (ﻋِﻤَﺎﺩ - সুদৃঢ়স্তম্ভ), মাকহুল (ﻣﻜﺤﻮﻝ -সুরমাচোখ), মাইমূন (ﻣَﻴْﻤُﻮْﻥ - সৌভাগ্যবান), তামীম (ﺗَﻤِﻴْﻢ -দৈহিক ও চারিত্রিকভাবে পরিপূর্ণ), হুসাম (ﺣُﺴَﺎﻡ-ধারালো তরবারি), (ﺑَﺪْﺭٌ -পূর্ণিমার চাঁদ), হাম্মাদ (ﺣَﻤَّﺎﺩٌ -অধিক প্রশংসাকারী), হামদান (ﺣَﻤْﺪَﺍﻥُ-প্রশংসাকারী), সাফওয়ান (ﺻَﻔْﻮَﺍﻥُ -স্বচ্ছ শিলা), গানেম (ﻏَﺎﻧِﻢٌ -গাজী, বিজয়ী), খাত্তাব (ﺧَﻄَّﺎﺏٌ-সুবক্তা), সাবেত (ﺛَﺎﺑِﺖٌ -অবিচল), জারীর (ﺟَﺮِﻳْﺮٌ - রশি), খালাফ ( ﺧَﻠَﻒٌ- বংশধর), জুনাদা (ﺟُﻨَﺎﺩَﺓُ- সাহায্যকারী), ইয়াদ (ﺇِﻳَﺎﺩٌ-শক্তিমান), ইয়াস (ﺇِﻳَﺎﺱٌ -দান), যুবাইর (ﺯُﺑَﻴْﺮٌ - বুদ্ধিমান), শাকের (ﺷَﺎﻛِﺮٌ-কৃতজ্ঞ), আব্দুল মুজিব (ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻤُﺠِﻴْﺐِ - উত্তরদাতার বান্দা), আব্দুল মুমিন ( ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ - নিরাপত্তাদাতার বান্দা), কুদামা (ﻗُﺪَﺍﻣَﺔُ- অগ্রণী), সুহাইব (ﺻُﻬَﻴْﺐٌ -যার চুল কিছুটা লালচে) ইত্যাদি।
[1]. বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১০ ও ইবনুল কাইয়্যেম, তুহফাতুল মাওদুদ, পৃষ্ঠা-১/১২১।
[2]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং- ৯১৫; শাইখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান লি গাইরিহি বলেছেন।
[3]. বুখারী, সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৯৫১; মুসলিম, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ১০৯৬।
[4]. বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১০।
[5]. সূরা আলে ইমরানে ৩৯ নং আয়াতে ইয়াহইয়া (আঃ) এর জন্মের পূর্বেই তাঁর নাম উল্লেখ করে আল্লাহ তাঁর জন্মের সুসংবাদ দিয়েছেন।
[6]. মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ৩৯৭৫।
[7]. হাশিয়াতু ইবনে আবেদিন, পৃষ্ঠা- ৫/২৬৮।
[8]. কাশ্শাফুল কিনা, পৃষ্ঠা- ৩/২৬ ও তুহফাতুল মাওদুদ, পৃষ্ঠা- ১০০।
[9]. বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং- ৮৩৭; শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
[10]. দেখুন: জালালুদ্দিন সুয়ুতি, আল-ইতকান ফি উলুমিল কুরআন পৃষ্ঠা-২/ ৩২৪।
[11]. দেখুন: বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১৬।
[12]. দেখুন: বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১২।
[13]. দেখুন: আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং- ৮১১; শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন ।
[14]. দেখুন: সালেহ ফাওযান, ইআনাতুল মুসতাফিদ বি শারহি কিতাবিত তাওহিদ, পৃষ্ঠা- ২/১৮৫।
[15]. ইতিপূর্বে ১৩ নং টীকায় হাদিসটির সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।
[16]. ইবনে মাজাহ, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৩৭৩২, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন ।
[17]. আল-মাউসুআ আলফিকহিয়া আলকুয়েতিয়া, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা- ৩৩১।
[18]. আবু আমীনাহ্ বিলাল ফিলিপস, ভাষান্তর:মুহাম্মদ আবু হেনা, তৌহিদের মূল সূত্রাবলী, পৃষ্ঠা- ২৭, দেখুন: হাশিয়াতু ইবনে আবেদীন, পৃষ্ঠা-৫/২৬৮ ও কাশ্শাফুল কিনা, পৃষ্ঠা- ৩/২৭।
[19]. দেখুন: আল-ফাতাওয়া আলহিন্দিয়া, পৃষ্ঠা- ৫/৩৬২ ও হাশিয়াতু ইবনে আবেদীন, পৃষ্ঠা- ৫/২৬৮।
[20]. তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা-১/২১।
[21]. তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা-১/২৩।
[22]. দেখুন সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদাব, বাব: আবগাদুল আসমা ইনদাল্লাহ, হাদিস নং- ৫৮৫৩।
[23]. তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা-১/২৩ ও ইবনুল কাইয়্যেম, তুহফাতুল মাওদুদ, পৃষ্ঠা-১/ ১১৫।
[24]. দেখুন: মুহায্যাবু মু'জাম মানাহি আল-লাফযিয়া, পৃষ্ঠা- ১৮৩।
[25]. দেখুন: আল-শরহুল মুয়াইসসার লি কিতাবিত তাওহিদ, পৃষ্ঠা- ২৫১ ও মোস্তফা আদাওয়ি, সিলসিলাতুত তাফসির, পৃষ্ঠা- ৬/৬২।
[26] অর্থাৎ আল্লাহর কিছু নাম আছে তা একমাত্র তাঁর জন্যই ব্যবহৃত হয়, যেমন রহমান, রাযযাক, খালেক ইত্যাদি সেগুলোতে কোনো ক্রমেই কাউকে (আব্দ) শব্দ বাদ দিয়ে নাম রাখা বা ডাকা যাবে না। পক্ষান্তরে কিছু নাম রয়েছে যেগুলো ‘আলিফ-লাম’ যুক্ত করে শুধু আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য, ‘আলিফ-লাম’ বাদ অন্যদের গুণবাচক নাম হতে পারে, যেমন রহীম, রাউফ, হামীদ ইত্যাদী। এমতাবস্থায় আল্লাহর নামের সাথে মিল রেখে কারও নাম রাখলে তখন অবশ্যই তার আগে (আব্দ) শব্দ উল্লেখ করে তাকে ডাকতে হবে। আর যদি আল্লাহর নাম উদ্দেশ্য না হয়ে লোকটির কোনো গুণ হিসেবে নাম রাখা হয়, তখন তাকে এসব নামে (আব্দ) শব্দ উল্লেখ করা ব্যতীতই ডাকা যাবে। [সম্পাদক]
[27]. আল-মাওসুআ আলফিকহিয়া আলকুয়েতিয়া, পৃষ্ঠা-১১/৩৩৩ ।
[28]. সহীহ মুসলিম, হাদিস নং - ২১৪২।
[29]. মাতালেবু উলিন্নুহা, পৃষ্ঠা- ২/৪৯৪ ও ইবনুল কাইয়্যেম, তুহফাতুল মাওদুদ, পৃষ্ঠা-১/ ১১৮ ।
[30]. আল-মাওসুআ আল্ফিকহিয়া আলকুয়েতিয়া, পৃষ্ঠা-১১/৩৩৪ ও শারহুল আযকার, পৃষ্ঠা- ৬/১১১।
[31]. বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/২৭।
[32]. বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/২৭।
[33]. তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ২৬।
[34]. বকর আবু যায়দ, তাসমিয়াতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা- ১/১৭।
________________________________________________________________
লেখক : মুহাম্মদ নূরুল্লাহ তারীফ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
=======================================
=======================================
=======================================
শিশুর নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামের যে সকল বিধান মনে রাখা প্রয়োজন
(শিশুর কতিপয় নির্বাচিত নাম সহ)
ভূমিকা: শিশুর জন্মের পর তার জন্য একটি সুন্দর ইসলামী নাম রাখা প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার কর্তব্য। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ দেখা যায়। এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি কথা বলতে কী এ বিষয়ে আমাদের পড়াশুনা অতি অপ্রতুল। তাই ইসলামী নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো আদৌ ইসলামী নামের আওতাভুক্ত নয়। শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই নামটি ইসলামী হবে তাতো নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নাম উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম রাখা সমীচীন হবে!? তাই এ বিষয়ে সঠিক নীতিমালা আমাদের জানা প্রয়োজন।
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।”
এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর উপাসনার স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সমন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম।
আব্দ’ (বান্দা) শব্দ সমন্ধিত করে কয়েকটি নাম:
• আব্দুল আযীয ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ - পরাক্রমশালীর বান্দা),
• আব্দুল মালিক ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﺎﻟﻚ ),
• আব্দুল কারীম ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ - সম্মানিতের বান্দা),
• আব্দুর রহীম ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ - করুণাময়ের বান্দা),
• আব্দুল আহাদ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻷﺣﺪ - এক সত্তার বান্দা),
• আব্দুস সামাদ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺼﻤﺪ - পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারীর বান্দা),
• আব্দুল ওয়াহেদ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ - একক সত্তার বান্দা),
• আব্দুল কাইয়্যুম ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻘﻴﻮﻡ - অবিনশ্বরের বান্দা),
• আব্দুস সামী ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻤﻴﻊ - সর্বশ্রোতার বান্দা),
• আব্দুল হাইয়্য ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺤﻲ - চিরঞ্জীবের বান্দা),
• আব্দুল খালেক ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺨﺎﻟﻖ - সৃষ্টিকর্তার বান্দা),
• আব্দুল বারী ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺒﺎﺭﻱ - স্রষ্টার বান্দা),
• আব্দুল মাজীদ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﺠﻴﺪ - মহিমান্বিত সত্তার বান্দা) ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে এই ‘আব্দ’ শব্দটিকে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন শব্দের সাথে সমন্ধিত করে নাম রাখা হারাম।
যেমন:
• আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক),
• আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক),
• আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক),
• আব্দুল কালাম (কথার উপাসক),
• আব্দুন নবী (নবীর উপাসক),
• আব্দুল আলী (আলী এর উপাসক),
• আব্দুল হোসাইন (হোসাইন এর উপাসক) ইত্যাদি।
তবে আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত। যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়।
তাছাড়া যে কোন নবীর নামে নাম রাখা ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা। নবী করিম (সাঃ) তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ আছে। এর থেকে পছন্দমত যে কোন নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন:
• মুহাম্মদ (ﻣﺤﻤﺪ ),
• আহমাদ (ﺃﺣﻤﺪ),
• ইব্রাহীম (ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ),
• মুসা (ﻣﻮﺳﻰ),
• ঈসা (ﻋﻴﺴﻰ ),
• নূহ (ﻧﻮﺡ ),
• হুদ (ﻫﻮﺩ ), লূত (ﻟﻮﻁ),
• শিছ (ﺷﻴﺚ ),
• হারুন (ﻫﺎﺭﻭﻥ ),
• শুআইব ( ﺷﻌﻴﺐ ),
• আদম (ﺁﺩﻡ ) ইত্যাদি।
নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর মাধ্যমে নবজাতকের মাঝে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রের প্রভাব পড়ার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। আরবীতে এটাকে তাফাউল বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল (সাঃ) এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ। বিশিষ্ট সাহাবী যুবাইর ইবনে আওয়াম তার ৯ জন ছেলের নাম রেখেছিলেন বদনের যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৯ জন সাহাবীর নামে। তারা হলেন-
• আব্দুল্লাহ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ),
• মুনযির (ﻣﻨﺬﺭ),
• উরওয়া (ﻋﺮﻭﺓ ),
• হামযা (ﺣﻤﺰﺓ ),
• জাফর (ﺟﻌﻔﺮ ),
• মুসআব (ﻣﺼﻌﺐ ),
• উবাইদা (ﻋﺒﻴﺪﺓ),
• খালেদ (ﺧﺎﻟﺪ ),
• উমর (ﻋﻤﺮ)। ।[তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১৭]
ব্যক্তির নাম তাঁর স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শাইখ বাকর আবু যায়েদ বলেন, “কাকতালীয়ভাবে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তাআলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রের মধ্যে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে, আর ভাল নামের লোকের চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে।” [তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১০, তুহফাতুল মাওদুদ-ইবনুল কাইয়্যেম ১/১২১]
আমাদের দেশে শিশুর জন্মের পর নাম রাখা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দাদা এক নাম রাখলে নানা অন্য একটা নাম পছন্দ করেন। বাবা-মা শিশুকে এক নামে ডাকে। খালারা বা ফুফুরা আবার ভিন্ন নামে। এভাবে একটা বিড়ম্বনা প্রায়শঃ দেখা যায়। এ ব্যাপারে শাইখ বাকর আবু যায়দ বলেন, “নাম রাখা নিয়ে পিতা-মাতার মাঝে বিরোধ দেখা দিলে শিশুর পিতাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।’[সূরা আহযাব ৩৩:৫]” অতএব শিশুর পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে আত্মীয় স্বজন বা অপর কোন ব্যক্তি শিশুর নাম রাখতে পারেন। তবে যে নামটি শিশুর জন্য পছন্দ করা হয় সে নামে শিশুকে ডাকা উচিত। আর বিরোধ দেখা দিলে পিতাই পাবেন অগ্রাধিকার।
 ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম
আল্লাহর নাম নয় এমন কোন নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমন,
• আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস),
• আব্দুল কালাম (কথার দাস),
• আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস),
• আব্দুন নবী (নবীর দাস),
• গোলাম রসূল (রসূলের দাস),
• গোলাম নবী (নবীর দাস),
• আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস),
• আব্দুল কামার (চন্দ্রের দাস),
• আব্দুল আলী (আলীর দাস),
• আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস),
• আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস),
• গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস),
• গোলাম কাদের (কাদেরের দাস) ইত্যাদি।
অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও হারাম। যেমন- আব্দুল মাবুদ (মাবুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি, বরং আল্লাহর বিশেষণ হিসেবে এসেছে) আব্দুল মাওজুদ (মাওজুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি)
• অনুরূপভাবে শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) নাম রাখা হারাম। [মুসলিম] মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম রাখা হারাম। সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা হারাম। [তুহফাতুল মাওলুদ ১/১১৫]
• সরাসরি আল্লাহর নামে নাম রাখা হারাম। যেমন- আর-রাহমান, আর-রহীম, আল-আহাদ, আস-সামাদ, আল-খালেক, আর-রাজেক, আল- আওয়াল, আল-আখের ইত্যাদি।
যেসব নাম রাখা মাকরুহ
ক) যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে বাররা (পূন্যবতী)।·
খ) শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি।
গ) ফেরাউনদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ।[তুহফাতুল মাওদুদ ১/১১৮]
ঘ) বিশুদ্ধ মতে ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা মাকরুহ। যেমন- জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল।
ঙ) যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষ যে অর্থকে ঘৃণা করে এমন অর্থবোধক কোন নাম রাখা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।
চ) একদল আলেম কুরআন শরীফের নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৭]
ছ) ইসলাম বা উদ্দীন শব্দের সাথে সম্বন্ধিত করে নাম রাখা মাকরূহ। ইসলাম ও দ্বীন শব্দদ্বয়ের সুমহান মর্যাদার কারণে।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৫, তুহফাতুল মাওদুদ ১/১৩৬]·
জ) দ্বৈতশব্দে নাম রাখাকে শায়খ বকর আবু যায়দ মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- মোহাম্মদ আহমাদ, মোহাম্মদ সাঈদ।
ঝ) অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে আব্দ (দাস) শব্দ বাদে অন্য কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করা। যেমন- রহমত উল্লাহ (আল্লাহর রহমত)।
ঞ) শায়খ বকর আবু যায়দের মতে রাসূল শব্দের সাথে কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও মাকরূহ। যেমন- গোলাম রাসূল (গোলাম শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ হিসেবে ধরা হয় এর অর্থ হবে রাসূলের চাকর বা বাছা তখন এটি মাকরূহ। আর যেসব ভাষায় গোলাম শব্দটি দাস অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব ভাষার শব্দ হিসেবে নাম রাখা হয় তখন এ ধরনের নাম রাখা হারাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।)
নির্বাচিত আরো কিছু ছেলেদের সুন্দর নাম:
• উসামা ( ﺃﺳﺎﻣﺔ - সিংহ),
• আফীফ (ﻋﻔﻴﻒ- পুতপবিত্র),
• হামদান (প্রশংসাকারী),
• লাবীব ( ﻟﺒﻴﺐ- বুদ্ধিমান),
• রাযীন (ﺭﺯﻳﻦ- গাম্ভীর্যশীল),
• রাইয়্যান (ﺭﻳَّﺎﻥ - জান্নাতের দরজা বিশেষ),
• মামদুহ (ﻣﻤﺪﻭﺡ- প্রশংসিত),
• নাবহান (ﻧﺒﻬﺎﻥ - খ্যাতিমান),
• নাবীল ( ﻧﺒﻴﻞ- শ্রেষ্ঠ),
• নাদীম (ﻧﺪﻳﻢ - অন্তরঙ্গ বন্ধু),
• আব্দুল ইলাহ ( ﻋﺒﺪ ﺍﻹﻟﻪ - উপাস্যের বান্দা),
• ইমাদ (ﻋﻤﺎﺩ - সুদৃঢ়স্তম্ভ),
• মাকহুল (ﻣﻜﺤﻮﻝ- সুরমাচোখ),
• মাইমূন (ﻣﻴﻤﻮﻥ - সৌভাগ্যবান),
• তামীম (ﺗﻤﻴﻢ ),
• হুসাম (ﺣُﺴَﺎﻡ- ধারালো তরবারি),
• বদর (ﺑﺪﺭ - পূর্ণিমার চাঁদ),
• হাম্মাদ (ﺣﻤﺎﺩ - অধিক প্রশংসাকারী),
• হামদান (ﺣﻤﺪﺍﻥ- প্রশংসাকারী),
• সাফওয়ান ( ﺻﻔﻮﺍﻥ - স্বচ্ছ শিলা),
• গানেম ( ﻏﺎﻧﻢ - গাজী, বিজয়ী),
• খাত্তাব (ﺧﻄﺎﺏ - সুবক্তা),
• সাবেত (ﺛﺎﺑﺖ - অবিচল),
• জারীর (ﺟﺮﻳﺮ ), খালাফ (ﺧﻠﻒ),
• জুনাদা (ﺟﻨﺎﺩﺓ ), ইয়াদ ( ﺇﻳﺎﺩ),
• ইয়াস (ﺇﻳﺎﺱ),
• যুবাইর (ﺯﺑﻴﺮ ),
• শাকের (ﺷﺎﻛﺮ- কৃতজ্ঞ),
• আব্দুল মাওলা ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻮﻟﻰ - মাওলার বান্দা),
• আব্দুল মুজিব ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﺠﻴﺐ - উত্তরদাতার বান্দা),
• আব্দুল মুমিন ( ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ - নিরাপত্তাদাতার বান্দা),
• কুদামা (ﻗﺪﺍﻣﺔ ),
• সুহাইব (ﺻﻬﻴﺐ ) ইত্যাদি।
(সংকলিত, লিখেছেন : নূরুল্লাহ তারীফ)
সূত্র : সালাফী বিডি
=======================================
=======================================
=======================================
সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয়
পৃথিবী জুড়ে মুসলমানদের ঘরে ঘরে প্রতি দিন আগমন হচ্ছে নতুন মেহমান ও নতুন সন্তানের। কিন্তু আমরা কজন আছি যারা এ সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের সূচনা লগ্নে ইসলামি আদর্শের অনুশীলন করি!? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের বাতলানো সব সুন্নতগুলো পালন করি! পরিতাপের বিষয়, আমরা অনেকেই তা করি না। এর কারণ, সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে আমাদের উদাসীনতা। তবে এটাও ঠিক যে, ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেকে না-জানার কারণে তা করতে সক্ষম হয় না। আবার কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে ইসলামি আদর্শ ত্যাগ করে বিধর্মী ও অমুসলিমদের অনুসরণ করে, অথচ তারা মুসলমান ! যেমন, জন্মদিন পালন, জন্মদিনের কেক কাটা ইত্যাদি, যা অত্যন্ত দুঃখ জনক। এর সঙ্গে নেই কোন ইসলামের সম্পর্ক। বরং এটা মুসলিম জাতির অধঃপতনের আলামত এবং নিজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমি এ নিবন্ধের মাধ্যমে কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস পেয়েছি। হয়তো কোন মুসলমান ভাই কাফেরদের অনুসরণ ত্যাগ করে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসরণ করবে| নিজ সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায় ইসলামের নিদর্শনা মেনে চলবে।
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর করণীয় :
১. সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আল্লাহর প্রসংশা করা, তার শুকরিয়া আদায় করা ও সন্তানের জন্য দোয়া করা।
পবিত্র কুরআনে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তিনি বলেন,
সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দোআ শ্রবণকারী। হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আর আমার দোআ কবুল করুন। (সূরা ইবরাহিম : ৩৯-৪১)
তদ্রুপ আত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ীদের সুসংবাদ প্রদান করা, সন্তানের জনক-জননীকে মোবারকবাদ দেয়া ও তাদের খুশিতে অংশ গ্রহণ করা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে,
আর তার (ইবরাহিমের) স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল, সে হেসে উঠল। অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের ও ইসহাকের পরে ইয়াকুবের। (সূরা হুদ : ৭১)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের স্ত্রীকে সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
অত:পর ফেরেশতারা তাকে ডেকে বলল, সে যখন কক্ষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন। (সূরা আলে ইমরান : ৩৯)
অন্যত্র বলেন,
হে যাকারিয়্যা, আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে কাউকে আমি এ নাম দেইনি। (সূরা মারইয়াম : ৭)
এ আয়াত দুটিতে আল্লাহ তাআলা যাকারিয়্যা আলাইহিস সালামকে সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
এতে তাদের (ফেরেশতাদের) সম্পর্কে সে (ইবরাহিমের স্ত্রী) মনে মনে ভীত হল। তারা বলল, ভয় পেয়োনা, তারা তাকে এক বিদ্বান পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল। (সূরা জারিয়াত : ২৮)
এসব আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সন্তান (ছেলে বা মেয়ে) জন্মের পর খুশি হওয়া, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং সন্তানের জন্য দোয়া করা ইসলামের আদর্শ, বরং সওয়াবের কাজ। লক্ষণীয় ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এ সময়ও পিতা-মাতা ও মুমিনদের জন্য দোয়া করতে ভুলেননি।
ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, সন্তান জন্মের সংবাদ পেলে সন্তানের জন্য কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করা কর্তব্য। (তুহফাতুল মওলূদ)
হাসান ইবনে আলী রা. কারো সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সংবাদ শুনলে এ বলে দোয়া করতেন।
( ﺑﻮﺭﻙ ﻟﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻮﻫﻮﺏ، ﻭﺷﻜﺮﺕ ﺍﻟﻮﺍﻫﺐ، ﻭﺑﻠﻎ ﺃﺷﺪﻩ، ﻭﺭﺯﻗﺖ ﺑﺮﻩ ‏) ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﻓﻲ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ .
অর্থ : আল্লাহ তোমার জন্য এ সন্তানে বরকত দান করুন। তুমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। এ সন্তান দীর্ঘজীবী হোক। আল্লাহ তোমাকে এর কল্যাণ দান করুন। (ইমাম নববির আজকার গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)
২. সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডান কানে আজান দেয়া।
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডান কানে আজান দেয়া সুন্নত। আবু রাফে রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
ফাতেমার ঘরে হাসান ইবনে আলী ভূমিষ্ঠ হলে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে তার কানে আজান দিতে দেখেছি। (আবুদাউদ, তিরমিজি-সহিহ সূত্রে)
আর বাম কানে একামত দেয়ার ব্যাপারে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা বিশুদ্ধ সনদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়, তাই এর ওপর আমল করা বা একে সুন্নত জ্ঞান করা ঠিক নয়।
৩. তাহনিক করা।
ইমাম নববি রহ. বলেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খেজুর দিয়ে তাহনিক করা সুন্নত। অর্থাৎ খেজুর চিবিয়ে নবজাতকের মুখের তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা এবং তার মুখ খুলে দেয়া যাতে তার পেটে এর কিছু অংশ প্রবেশ করে। তিনি বলেন, কতক আলেম বলেছেন, খেজুর সম্ভব না হলে অন্য কোন মিষ্টি দ্রব্য দিয়ে তাহনিক করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, সবার নিকটই তাহনিক করা মুস্তাহাব, আমার জানা মতে এ ব্যাপারে কেউ ভিন্ন মত পোষণ করেননি। (শরহে মুহাজ্জাব : ৮/৪২৪)
আনাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা ভূমিষ্ঠ হলে আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলাম, তিনি বলেন, তোমার সঙ্গে কি খেজুর আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম খেজুর চিবালেন, অতঃপর তা বের করে বাচ্চার মুখে দিলেন। বাচ্চাটি জিব্বা দিয়ে চুসে ও ঠোটে লেগে থাকা অংশ চেটে খেতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এ দৃশ্য দেখে বলেন, দেখ, আনসারদের খেজুর কত প্রিয়! (মুসলিম)
আবু মুসা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমার এক সন্তানের জন্ম হলে, আমি তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তার নাম রাখেন ইবরাহিম অত:পর খেজুর দিয়ে তাহনিক করেন, তার জন্য বরকতের দোয়া করেন এবং আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। এটা আবু মুসার বড় সন্তানের ঘটনা। (বুখারি-মুসলিম)
৪. সপ্তম দিন মাথা মুণ্ডন করা ও চুলের ওজন পরিমাণ রুপা সদকা করা।
আনাস ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তম দিন হাসান ও হুসাইনের চুল কাটার নির্দেশ দেন এবং চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা করেন।
ছেলে কিংবা মেয়ে হোক জন্মের সপ্তম দিন চুল কাটা সুন্নত। সাহাবি সামুরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন,
প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। অতএব সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, তার চুল কাট ও তার নাম রাখ। (আহমদ, তিরমিজি-সহিহ সূত্রে)
নবজাতকের চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা করা সুন্নত। আলী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম হাসানের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতিমা, তার মাথা মুণ্ডন কর ও তার চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য সদকা কর। (তিরমিজি)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সব বর্ণনাতে রৌপ্যের কথাই এসেছে। (তালখিসুল হাবির)
হ্যাঁ, অবশ্য কোন কোন বর্ণনাতে রৌপ্য বা স্বর্ণ সদকার কথাও বলা হয়েছে।
৫. আকিকা করা।
আকিকার আভিধানিক অর্থ : আল্লাহর দরবারে নজরানা পেশ করা, শুকরিয়া আদায় করা, জানের সদকা দেয়া ও আল্লাহর নেয়ামতের মোকাবেলায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ইসলামি পরিভাষায় আকিকা হচ্ছে, নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবেহ করা। আলেমদের অনেকেই আকিকা করাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন।
ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের পক্ষ থেকে একটি করে বকরি জবেহ করেছেন। (আবুদাউদ-সহিহ সূত্রে)
আনাস রাদিআল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রয়েছে, দুটি বকরি জবেহ করেছেন। খায়সামি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন আনাসের বর্ণনা শুদ্ধতার বিচারে বুখারি-মুসলিমের বর্ণনার সম মর্যাদা রাখে।
ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার মুয়াত্তায় বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন,
যার সন্তান হয় সে যদি সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানি করতে চায়, তবে তা করা উচিত। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, নাম রাখ ও চুল কর্তন কর। (আহমদ ও সুনান গ্রন্থসমূহ, তিরমিজি হাদিসটি সহিহ বলেছেন)
ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,
ছেলের পক্ষ থেকে প্রতিদান হিসেবে দুটি বকরি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। জন্মের সপ্তম দিন, সম্ভব না হলে ১৪তম দিন বা ২১তম দিন আকিকা করা সুন্নত।
বুরায়দা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন,
সপ্তম দিন, অথবা চতুর্দশ দিন অথবা একুশতম দিন আকিকা কর। (তিরমিজি)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের কথা-কাজ উভয়ের মাধ্যমেই আকিকার প্রমাণ পাওয়া যায়। সালমান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন,
বাচ্চার সঙ্গে আকিকার দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং তোমরা তার পক্ষ থেকে আকিকা কর এবং তার শরীর থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দাও। (বুখারি)
উম্মে কুরজ আল-কাবিয়া বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন,
ছেলের পক্ষ থেকে দুটি আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি পশু, নর-মাদি যে কোন এক প্রকার হলেই চলে, এতে কোন সমস্যা নেই। (আবু দাউদ, নাসায়ি)
অধিকাংশ আলেম আকিকার গোস্ত পাকানো মুস্তাহাব বলেছেন, এমনকি সদকার অংশও। হ্যাঁ, পাকানো ব্যতীত বণ্টন করাও বৈধ। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন,
ছেলের পক্ষ থেকে সমমানের দুটি আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি জবেহ কর। (আহমদ, তিরমিজি, তিরমিজির নিকট হাদিসটি হাসান ও সহিহ)
অন্য বর্ণনায় আছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আমাদেরকে মেয়ের পক্ষ থেকে একটি এবং ছেলের পক্ষ থেকে দুটি বকরি জবেহ করার নিদের্শ দিয়েছেন। (তিরমিজির নিকট হাদিসটি সহিহ ও হাসান)
তবে উলামায়ে কেরাম ইয়াতিম সন্তানের আকিকা তার সম্পদ থেকে দিতে নিষেধ করেছেন।
আরো জ্ঞাতব্য যে, কুরবানির পশুর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত রয়েছে আকিকার পশুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। অর্থাৎ পশুর কোন অংশ মজদুরি হিসেবে দেয়া যাবে না, এর চামড়া বা গোস্ত বিক্রি করা যাবে না বরং এর গোস্ত খাবে, সদকা করবে ও যাকে ইচ্ছে উপহার হিসেবে প্রদান করবে।
তবে একদল আলেম বলেছেন, কুরবানিতে যেমন অংশিদারিত্ব বৈধ এখানে সে অংশিদারিত্ব বৈধ নয়। যদি কেউ গরু বা উটের মাধ্যমে আকিকা করতে চায় তাকে একজনের পক্ষ থেকে পূর্ণ একটি পশু জবেহ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের আমল ও বাণী থেকে এ মতই সঠিক মনে হয়।
ইবনে হাজম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আকিকার পশুর হাড় ভাঙতে কোন অসুবিধা নেই। যেসব বর্ণনায় আকিকার পশুর হাড় ভাঙতে নিষেধ করা হয়েছে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। অধিকন্তু তিনি আবুবকর ইবনে আবুশায়বা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সূত্রে বর্ণনা করেন, ইমাম জুহরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আকিকার পশুর হাড় ও মাথা ভাঙা যাবে, কিন্তু তার রক্তের কোন অংশ বাচ্চার শরীরে মাখা যাবে না। (মুহাল্লা : ৭/৫২৩)
আকিকার কিছু উপকারিতা :
(ক) আকিকা একটি এবাদত, এর দ্বারা বাচ্চা দুনিয়াতে আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর এবাদত করার সৌভাগ্য অর্জন করে।
(খ) এর ফলে বাচ্চা বন্ধক মুক্ত হয় ও মাতা-পিতার জন্য সুপারিশ করার উপযুক্ত হয়।
(গ) এটা জানের সদকা। এর মাধ্যমে বাচ্চা তার জানের সদকা পেশ করে, যেমন আল্লাহ তাআলা ইসমাইলের পক্ষে বকরি ফিদইয়া হিসেবে পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর আমি এক মহান যবেহের (একটি জান্নাতী দুম্বার) বিনিময়ে তাকে (ইসমাইলকে) মুক্ত করলাম। (সাফফাত : ১০৭)
৬. নাম রাখা।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম দিন বা সপ্তম দিন নব জাতকের নাম রাখা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন,
আজ রাতে আমার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে, আমি তার নামকরণ করেছি ইবরাহিম, আমার পিতা ইবারাহিমের নামানুসারে। (মুসলিম)
ইমাম আবু দাউদ, আহমদ, দারামি, ইবনে হিব্বান ও আহমদের বর্ণনাকৃত হাদিসের ভাষ্য মতে নবজাতকের নাম সুন্দর রাখা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন,
কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নিজ নামে ও তোমাদের বাপ-দাদার নামে আহ্বান করা হবে, অতএব তোমরা তোমাদের নাম সুন্দর করে নাও।
মুসলিমের হাদিসে রয়েছে,
আল্লাহর পছন্দনীয় ও সর্বোত্তম নাম হচ্ছে, আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান।
আবু দাউদের হাদিসে রয়েছে,
সবচেয়ে সত্য নাম হচ্ছে, হারিস ও হাম্মাম আর সবচেয়ে ঘৃণিত নাম হচ্ছে, হারব ও মুররাহ।
হারিস ও হাম্মাম -কে সবচেয়ে সত্য বলা হয়েছে এ হিসেবে যে, এ নামগুলোর অর্থের সঙ্গে মানুষের কর্ম ও প্রকৃতির পুরোপুরি মিল রয়েছে। কারণ, হারিস শব্দের অর্থ কর্মজীবি ও উপার্জনকারী আর হাম্মাম শব্দের অর্থ আকাঙ্ক্ষী ও ইচ্ছা পোষণকারী। প্রত্যেক মানুষের প্রকৃতির মধ্যে এ স্বভাবগুলো পুরোপুরি বিদ্যমান, তাই এগুলো সবচেয়ে সত্য নাম। পক্ষান্তরে হারব শব্দের অর্থ যুদ্ধ-বিগ্রহ আর মুররাহ শব্দের অর্থ তিক্ততা-বিষাক্ততা। যেহেতু এসব শব্দ থেকে অশুভ লক্ষণ বুঝে আসে তাই এসব নামকে সবচেয়ে ঘৃণিত নাম বলা হয়েছে।
এর দ্বারা বুঝে আসে যে, যার অর্থ ভাল ও সুন্দর, এমন শব্দ দ্বারা নাম রাখা মুস্তাহাব। যেমন, নবীদের নাম, ফেরেশতাদের নাম, জান্নাতের নাম ও যেসব শব্দের অর্থ ভাল সেসব শব্দের নাম।
তবে যেসব শব্দের মধ্যে বড়ত্ব, অহমিকা, অহংকার ও আত্মপ্রশংসার অর্থ রয়েছে, সেসব শব্দের মাধ্যমে নাম রাখা ঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
কাজেই তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। কে তাকওয়া অবলম্বন করেছে, সে সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত। (সূরা নাজম : ৩২)
অতএব এমন শব্দ দ্বারা নাম রাখা ঠিক নয়, যার মধ্যে আত্মপ্রসংশা রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বাচ্চাদের, রাবাহ ও নাজীহ শব্দের মাধ্যমে নাম রাখতে বারণ করেছেন। সহিহ মুসলিম শরিফে সামুরা বিন জুনদুব থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন,
তোমরা বাচ্চাদের ইয়াসার, রাবাহ, নাজিহ ও আফলাহ নাম রেখ না। (রাবাহ শব্দের অর্থ লাভ, নাজিহ শব্দের অর্থ শুদ্ধ-সুস্থ, ইয়াসার শব্দের অর্থ সহজতা ও আফলাহ শব্দের অর্থ সফলতা) কারণ, যখন তুমি এ নামে কাউকে ডাকবে আর সে ওখানে উপস্থিত না থাকলে উত্তর আসবে নেই।
এ থেকে কুলক্ষণ বুঝে আসে, অর্থাৎ ওখানে লাভ নেই, যা আছে ক্ষতি আর ক্ষতি ইত্যাদি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বাররাহ নাম রাখতেও নিষেধ করেছেন। (যার অর্থ পূণ্যবান নারী) যয়নব বিনতে আবু সালামা বলেন, তার নাম ছিল বাররাহ বিনতে আবু সালামা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বললেন,
তোমরা নিজদেরকে নিষ্পাপ ঘোষণা কর না। আল্লাহই ভাল জানেন কে নিষ্পাপ আর কে পূণ্যবান। তারা বলল, আমরা তাকে কি নামে ডাকব? তিনি বললেন, যয়নাব বলে ডাক। (মুসলিম)
এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তার কোন কোন স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছেন। যেমন যয়নাব বিনতে জাহাশের নাম, জয়নাব বিনতে উম্মে সালামার নাম এবং জুয়াইরিয়া বিনতে হারেসের নাম। মুসলিমের বর্ণনা মতে তাদের প্রত্যেকের নাম ছিল বাররাহ।
আল্লাহর নামে নামকরণ করাও হারাম। যেমন, খালেক, রহমান, কুদ্দুস, আওয়াল, আখের, জাহির, বাতেন ইত্যাদি।
আল্লাহর এমন সব নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখাও নিষেধ, যার মাধ্যমে বড়ত্ব বা অহমিকার প্রকাশ পায়। যেমন নুরুল্লাহ, নুরুল ইলাহ ইত্যাদি। এসব নামের মাধ্যমে নিজের পূণ্যতা ও আত্মপ্রশংসার প্রকাশ ঘটে, অথচ বাস্তব তার বিপরীতও হতে পারে।
ইয়াসিন শব্দ দ্বারাও নাম রাখা নিষেধ। কারণ, এটা কুরআনের একটি সুরার নাম। কেউ কেউ বলেছেন, ইয়াসিন আল্লাহর নাম।
আশহাব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ইয়াসিন নাম রাখা কেমন? তিনি বলেন, আমি এটা অনুচিত মনে করি। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ইয়াসিন, অলকুরআনিল হাকিম, ইন্নাকা লামিনাল মুরসালিন।
ইবনুল কাইয়িম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আরো কিছু শব্দের মাধ্যমে নাম রাখা নিষেধ। অর্থাৎ কুরআনের নামে নাম রাখা, কুরআনের সুরার নামে নাম রাখা, যেমন, তাহা, ইয়াসিন, হা-মিম ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ইয়াসিন, তাহা এগুলো নবিদের নাম বলে যে কথা প্রচলিত আছে এর কোন ভিত্তি নেই।
তাই, আমাদের উচিত হবে নবিদের নামে, নেককার লোকদের নামে, সাহাবাদের নামে বা যেসব শব্দের অর্থ ভাল তার মাধ্যমে বাচ্চাদের নামকরণ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম খারাপ অর্থের নামগুলো ভাল অর্থের শব্দের দ্বারা পরিবর্তন করে দিতেন। আবুদাউদ শরিফে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আসিয়া (অর্থ অবাধ্য) নামকে জামিলা (অর্থ সুন্দর) শব্দ দ্বারা পরিবর্তণ করে দিয়েছেন।
নিষিদ্ধ নামের বিষয়ে মূলনীতি :
ক. যেসব শব্দের মাধ্যমে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব বুঝে আসে, যেমন, আব্দুর রাসূল, আব্দুল মুত্তালিব ও আব্দুন্নবি ইত্যাদি দ্বারা নাম রাখা নিষেধ।
খ. যেসব নাম আল্লাহর জন্য খাস অথবা আলিফ-লাম সংযুক্ত আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম, যেমন, আর-রহমান, আর-রহিম ইত্যাদি দ্বারা নাম রাখা নিষেধ।
গ. যেসব নাম খারাপ অর্থ বহন করে, যেমন, হারব, মুররাহ ও হুজ্ন (দুশ্চিন্তা) ইত্যাদি শব্দ দ্বারা নাম রাখা নিষেধ।
ঘ. যে সব নামের কোন অর্থ নেই বা অর্থহীন শব্দ দ্বারা নাম রাখা নিষেধ। যেমন, জুজু, মিমি বা খৃষ্টীয় কোন নাম যেমন নিকলু, তদ্রুপ পশ্চিমাদের নামে নামকরণ করাও নিষেধ। যেমন, দিয়ানা, অলিজা, সিমুন, জর্জ, মার্কস, লেলিন, লিটন, মিল্টন ইত্যাদি।
ঙ. যেসব শব্দের মধ্যে বড়ত্ব, অহংকার, নিষ্পাপ ও আত্মপ্রশংসার অর্থ রয়েছে, সেসব শব্দ দ্বারা নাম রাখাও নিষেধ। যেমন, শাহানশাহ, আলমগীর, জাহাঙ্গীর ইত্যাদি।
৭ . খাৎনা করানো
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের নিকট এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তিনি বললেন, কুফরির চুল মুণ্ডিয়ে ফেল আর খাৎনা কর। (আবুদাউদ)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেছেন,
মানুষের প্রকৃতগত স্বভাব পাঁচটি।
ক. খাৎনা করা।
খ. নাভির নিচের পশম পরিস্কার করা।
গ. বগলের নিচের পশম উপড়ানো।
ঘ. আঙ্গুলের নখ কর্তন করা।
ঙ. মোচ ছোট করা। (বুখারি)
ইমাম নববি রহ. বলেন, এখানে প্রকৃতগত স্বভাবের অর্থ সুন্নত।
খাৎনার সময় : সপ্তম দিন খাৎনা করানো সুন্নত। জাবের রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম হাসান এবং হুসাইনের সপ্তম দিন আকিকা দিয়েছেন ও খাৎনা করিয়েছেন। (তাবরানি ফিল আওসাত ও বায়হাকি)
বুখারি-মুসলিমের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আশি বছর বয়সে খাৎনা করেছেন। আর ইবরাহিম আলাইহিস সালামের অনুসরণ করার জন্য আমরা আদিষ্ট। আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে সম্বোধন করে বলেন,
তারপর আমি তোমার প্রতি ওহী পঠিয়েছি যে, তুমি মিল্লাতে ইবরাহিমের অনুসরণ কর, যে ছিল একনিষ্ঠ এবং ছিল না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা নাহাল : ১২৩)
মূলতঃ খাৎনার বয়স জন্মের এক সপ্তাহ পর থেকে শরু হয়, তবে সাত বছর পুরো হওয়ার আগেই তা সেরে নেয়া ভাল, সাবালক হওয়ার পূর্বে খাৎনা করা অবশ্য জরুরি। ডাক্তারি বিদ্যা প্রমাণ করেছে যে, জন্মের এক সপ্তাহ পর থেকে তিন বৎসরের মধ্যে খাৎনা সম্পাদন করা উত্তম।
খাৎনার বিধানের ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, খাৎনা সুন্নত। ইমাম শাফি, মালেক ও আহমদ রাহিমাহুমুল্লাহ বলেন, খাৎনা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আরো কঠোর অবস্থান নিয়ে বলেছেন, যে খাৎনা করবে না তার ইমামত ও সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। কাজি আয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, অধিকাংশ আলেমদের নিকট খাৎনা সুন্নত, এ সুন্নত পরিত্যাগ করা গোনাহ।
পরিশিষ্ট :
গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসবের পূর্বে, প্রসবের সময় বা পরে, যা ইচ্ছে তাই দোয়া করতে পারে। এ সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই, আবার এ সময় দোয়া কবুল হয় এমন ওয়াদাও নেই। তবে, সন্তান প্রসব কঠিন বা ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় প্রসব বেদনা-কাতর নারী নিরুপায় ও মুসিবতগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত, সে হিসেবে বলা যায় এটা তার দোয়া কবুল হওয়ার মুহূর্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
বরং (আল্লাহ) তিনি, যিনি নিরুপায়ের ডাকে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন। (সূরা নামাল : ৬২)
উল্লেখ্য, কুরআনের আয়াত বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের হাদিস দ্বারা প্রসবকালীন নির্দিষ্ট কোন দোয়া বা আমল প্রমাণিত নেই। এ ক্ষেত্রে সাধারণ দোয়াই যথেষ্ট। যেমন, যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন,
হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী। অতঃপর আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া। আর তার জন্য তার স্ত্রীকে উপযোগী করেছিলাম। (সূরা আম্বিয়া : ৮৯-৯০)
মরিয়ম আলাইহাস সালামের প্রসব প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
অতঃপর প্রসব-বেদনা তাকে খেজুর গাছের কাণ্ডের কাছে নিয়ে এলো। সে বলল, হায়! এর আগেই যদি আমি মরে যেতাম এবং সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হতাম, তখন তার নিচ থেকে সে তাকে ডেকে বলল যে, তুমি চিন্তা করো না। তোমার রব তোমার নিচে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন। আর তুমি খেজুর গাছের কাণ্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার ওপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে। অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। (সূরা মারইয়াম : ২৩-২৬)
এ থেকে অনেকে বলেছেন, প্রসবের পূর্বে তাজা-পাকা খেজুর খাওয়া, পানীয় দ্রব্য পান করা ও আগত সন্তানের কথা স্মরণ করে শান্ত, শঙ্কামুক্ত ও প্রসন্ন থাকা, অন্তরে কোন ধরনের ভয়-ভীতি বা পেরেশানী স্থান না দেয়া, সহজে প্রসব হওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে।
সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাচ্চা প্রসব হলে মা নিজেকে ধন্য মনে করেন। নতুন জীবন নিয়ে কলিজার টুকরা দুনিয়ার আলো-বাতাস দেখছে ভেবে খুব আনন্দিত হন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা অতি আদরে তার বাচ্চাকে কাছে টেনে নেন এবং নিজ বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেন। এটাই স্বাভাবিক, হাসপাতালের নার্স কিংবা দাত্রীদের তাই করা উচিত। তারা সর্ব প্রথম মার হাতে তার সন্তান তুলে দেবেন। অনেকে বলেন, এ সময় মার বুকের স্পর্শ সন্তানের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে এবং পরবর্তীতে মা-সন্তানের সম্পর্কে বিরাট ভূমিকা রাখে। এর ফলে বাচ্চা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম হয়, উভয়ের মাঝে মধুর ঘনিষ্টতা সৃষ্টি হয়। অন্যথায় মা-সন্তানের মাঝে সম্পর্কের টানাপোড়েন কিংবা ভিন্ন তিক্তার জন্ম হতে পারে।
হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন। (সূরা ফুরকান : ৭৪)
হে আমাদের রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আমার দোয়া কবুল করুন। (সুরা ইবরাহিম : ৪০)
সমাপ্ত
লেখক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদক: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
=======================================
=======================================
=======================================
সন্তানের হক
ﺇﻥ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ ﺃﻣﺎ ﺑﻌﺪ :
আল্লাহ তা‘আলা মানব জীবনকে সন্তান-সন্তুতির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করেছেন। পারিবারিক জীবনে সন্তান-সন্ততি কতবড় নিয়ামত তা যার সন্তান হয়নি তিনি সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করে থাকেন। যাদেরকে আল্লাহ রাববুল আলামীন সন্তান দান করেছেন তাদের উপর এক মহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। পিতা-মাতার জন্য সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হবে যদি সন্তানকে আদর্শবান রূপে গড়ে না তুলতে পারেন। কেননা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻣَﻮْﻟُﻮﺩٍ ﺇِﻻَّ ﻳُﻮﻟَﺪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮَﺓِ ﻓَﺄَﺑَﻮَﺍﻩُ ﻳُﻬَﻮِّﺩَﺍﻧِﻪِ ، ﺃَﻭْ ﻳُﻨَﺼِّﺮَﺍﻧِﻪِ ، ﺃَﻭْ ﻳُﻤَﺠِّﺴَﺎﻧِﻪِ »
প্রতিটি নবজাতক তার স্বভাবজাত দ্বীন ইসলামের ওপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক হিসেবে গড়ে তোলে [সহীহ বুখারী: ১৩৫৮]।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা দিন দিন যেভাবে অপসংস্কৃতি, অনৈতিকতা এবং চরিত্র বিধ্বংসী কাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেখানে আমাদের সন্তানের উপর যেসব দায়িত্ব আছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পন্থায় সন্তানকে লালন-পালন করা ঈমানের অন্যতম দাবী।
আমাদের উপর সন্তানদের যে হকগুলো রয়েছে তা এখানে আলোচনা করা হলো :
১. কানে আযান দেয়া : সন্তান দুনিয়াতে আসার পর গোসল দিয়ে পরিষ্কার করে তার ডান কানে আযান দেয়া, তা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। এটি পিতা-মাতার উপর এজন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বযে, শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের আওয়াজ পৌঁছে দেয়া এবং ওত পেতে থাকা শয়তান যাতে তার কোন ক্ষতি না করতে পারে। হাদিসে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﻋُﺒَﻴْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺭَﺍﻓِﻊٍ ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏« ﺃَﺫَّﻥَ ﻓِﻲ ﺃُﺫُﻥِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﺑْﻦِ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺣِﻴﻦَ ﻭَﻟَﺪَﺗْﻪُ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔُ ﺑِﺎﻟﺼَّﻼَﺓِ ».
আবূ রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসান ইবনে আলীর কানে আযান দিতে দেখেছি [সুনান আবূ দাউদ:৫১০৫]
২. সুন্দর নাম রাখা : বাচ্চার জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। নাম অর্থবহ হওয়া নামের সৌন্দর্য। কেননা,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অনেক অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। [আবু দাউদ ৪৯৫২-৪৯৬১]
৩. আক্বিকা করা : ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম বিষয় হলো সন্তানের আকীকা করা। ছেলের পক্ষ থেকে ২টি ছাগল এবং মেয়ের পক্ষ থেকে ১টি ছাগল আল্লাহর নামে যবেহ করা। হাদীসে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﺳَﻤُﺮَﺓَ ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻛُﻞُّ ﻏُﻠَﺎﻡٍ ﺭَﻫِﻴﻨَﺔٌ ﺑِﻌَﻘِﻴﻘَﺘِﻪِ ﺗُﺬْﺑَﺢُ ﻋَﻨْﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﺴَّﺎﺑِﻊِ ﻭَﻳُﺤْﻠَﻖُ ﺭَﺃْﺳُﻪُ »
সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল নবজাতক তার আক্বিকার সাথে আবদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে জবেহ করা হবে। ঐ দিন তার নাম রাখা হবে। আর তার মাথার চুল কামানো হবে। [সুনান আবূ দাউদ: ২৮৩৮]
৪. সদকাহ করা : ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সপ্তম দিবসে চুল কাটা এবং চুল পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ করা সুন্নাত।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান রা. এর পক্ষ থেকে ১টি বকরী আকীকা দিয়েছেন এবং বলেছেন, হে ফাতেমা ! তার মাথা মুণ্ডন কর এবং চুল পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ কর। [সুনান আত-তিরমিযী: ১৫১৯]
এছাড়া,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদেরকে খেজুর দিয়ে তাহনীক এবং বরকতের জন্য দো‘আ করতেন। [সহীহ বুখারী: ৩৯০৯; মুসলিম: ২১৪৬]
৫. খাতনা করা : ছেলেদের খাতনা করানো একটি অন্যতম সুন্নাত। হাদীসে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮٍ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻋَﻖَّ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﻭَﺍﻟْﺤُﺴَﻴْﻦِ ﻭَﺧَﺘَﻨَﻬُﻤَﺎ ﻟِﺴَﺒْﻌَﺔِ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ».
জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সপ্তম দিবসে আকীকা এবং খাতনা করিয়েছেন। [আল-মু‘জামুল আওসাত: ৬৭০৮]
৬. তাওহীদ শিক্ষা দেয়া : শিশু যখন কথা বলা আরম্ভ করবে তখন থেকেই আল্লাহর তাওহীদ শিক্ষা দতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন,
« ﻳَﺎ ﻏُﻠَﺎﻡُ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻋَﻠِّﻤُﻚَ ﻛَﻠِﻤَﺎﺕٍ، ﺍﺣْﻔَﻆِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺤْﻔَﻈْﻚَ، ﺍﺣْﻔَﻆِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﺠِﺪْﻩُ ﺗُﺠَﺎﻫَﻚَ، ﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟْﺖَ ﻓَﺎﺳْﺄَﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪَ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘَﻌَﻨْﺖَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻌِﻦْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﺍﻋْﻠَﻢْ ﺃَﻥَّ ﺍﻷُﻣَّﺔَ ﻟَﻮْ ﺍﺟْﺘَﻤَﻌَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻔَﻌُﻮﻙَ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ ﻟَﻢْ ﻳَﻨْﻔَﻌُﻮﻙَ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ ﻗَﺪْ ﻛَﺘَﺒَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻚَ، ﻭَﻟَﻮْ ﺍﺟْﺘَﻤَﻌُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻀُﺮُّﻭﻙَ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ ﻟَﻢْ ﻳَﻀُﺮُّﻭﻙَ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ ﻗَﺪْ ﻛَﺘَﺒَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ، ﺭُﻓِﻌَﺖِ ﺍﻷَﻗْﻠَﺎﻡُ ﻭَﺟَﻔَّﺖْ ﺍﻟﺼُّﺤُﻒُ »
‘হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখাতে চাই। তুমি আল্লাহর অধিকারের হেফাযত করবে, আল্লাহও তোমার হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহর অধিকারের হেফাযত করবে, তুমি তাঁকে সর্বদা সামনে পাবে। যখন কোন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর যখন সহযোগিতা চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর জেনে রাখ! যদি পুরো জাতি যদি তোমার কোন উপকার করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন উপকার করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি পুরো জাতি যদি তোমার কোন ক্ষতি করার জন্য একতাবদ্ধ হয়, তবে তোমার কোন ক্ষতি করতে সমর্থ হবে না, শুধু ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। কলমের লিখা শেষ হয়েছে এবং কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে। [তিরমিযী: ২৫১৬]
৭. কুরআন শিক্ষা দান : ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। কেননা কুরআন শিক্ষা করা ফরয। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও। তন্মধ্যে রয়েছে তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা ও কুরআনের জ্ঞান দাও। [জামিউল কাবীর]
কুরআন শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻋَﻠَّﻤَﻪُ »
‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’’ [সহীহ বুখারী:৫০২৭]
৮. সলাত শিক্ষা দেয়া ও সলাত আদায়ে অভ্যস্ত করা : এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার যে পিতা-মাতা তার সন্তানকে সলাত শিক্ষা দিবেন এবং সলাত আদায়ে অভ্যস্ত করাবেন। হাদীসে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺷُﻌَﻴْﺐٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ‏« ﻣُﺮُﻭﺍ ﺃَﻭْﻟَﺎﺩَﻛُﻢْ ﺑِﺎﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻭَﻫُﻢْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺀُ ﺳَﺒْﻊِ ﺳِﻨِﻴﻦَ ﻭَﺍﺿْﺮِﺑُﻮﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻭَﻫُﻢْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺀُ ﻋَﺸْﺮٍ ﻭَﻓَﺮِّﻗُﻮﺍ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﻀَﺎﺟِﻊِ »
আমর ইবনে শূয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাবা তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের সলাতের নির্দেশ দাও সাত বছর বয়সে। আর দশ বছর বয়সে সলাতের জন্য মৃদু প্রহার কর এবং শোয়ার স্থানে ভিন্নতা আনো। [সুনান আবূ দাউদ: ৪৯৫]
৯. আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া : সন্তানদের আচরণ শিক্ষা দেয়া পিতামাতার উপর দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভূক্ত। লুকমান আলাইহিস সালাম তার সন্তানকে বললেন,
‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।’ [ সূরা লুকমান ১৮,১৯]
১০. আদর স্নেহ ও ভালবাসা দেয়া : সন্তানদেরকে স্নেহ করা এবং তাদেরকে আন্তরিকভাবে ভালবাসতে হবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে চুম্বন দিলেন এবং আদর করলেন। সে সময় আকরা ইবনে হাবিস রাদিয়াল্লাহু আনহুও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমারতো দশটি সন্তান কিন্তু আমিতো কখনো আমার সন্তানদেরকে আদর স্নেহ করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, যে অন্যের প্রতি রহম করে না আল্লাহও তার প্রতি রহম করেন না। [সহীহ বুখারী: ৫৯৯৭]
১১. দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া : সন্তানকে দীনি ইলম শিক্ষা দেয়া ফরজ করা হয়েছে। কারণ দ্বীনি ইলম না জানা থাকলে সে বিভ্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে। হাদীসে এসেছে-
ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢَ : ‏« ﻃَﻠَﺐُ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ ﻓَﺮِﻳﻀَﺔٌ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ»
আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয। [সুনান ইবন মাজাহ: ২২৪]
১২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করা : সন্তানদেরকে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত লালন-পালন করতে হবে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করতে হবে।
ﻋَﻦْ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫَﻞْ ﻟِﻲ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﺮٍ ﻓِﻲ ﺑَﻨِﻲ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺃَﻥْ ﺃُﻧْﻔِﻖَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺴْﺖُ ﺑِﺘَﺎﺭِﻛَﺘِﻬِﻢْ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﻫَﻜَﺬَﺍ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻫُﻢْ ﺑَﻨِﻲَّ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻧَﻌَﻢْ ﻟَﻚِ ﺃَﺟْﺮُ ﻣَﺎ ﺃَﻧْﻔَﻘْﺖِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ »
উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আবূ সালামার সন্তানদের জন্য আমি যদি খরচ করি এতে কি আমার জন্য প্রতিদান রয়েছে? নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ যতদিন তুমি খরচ করবে ততদিন তোমার জন্য প্রতিদান থাকবে। [সহীহ বুখারী: ৫৩৬৯]
১৩. সক্ষম করে তোলা : সন্তানদেরকে এমনভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা,তারা যেন উপার্জন করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এভাবে বলেছেন,
« ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻥْ ﺗَﺪَﻉَ ﻭَﺭَﺛَﺘَﻚَ ﺃَﻏْﻨِﻴَﺎﺀَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﺗَﺪَﻋَﻬُﻢْ ﻋَﺎﻟَﺔً ﻳَﺘَﻜَﻔَّﻔُﻮﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻓِﻲ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ »
তোমাদের সন্তান সন্ততিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বি রেখে যাওয়া, তাদেরকে অভাবী ও মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। [সহীহ বুখারী:১২৯৫]
১৪. বিবাহ দেয়া : সুন্নাহ পদ্ধতিতে বিবাহ দেয়া এবং বিবাহর যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা এবং উপযুক্ত সময়ে বিবাহর ব্যবস্থা করা। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে,
নিশ্চয়ই পিতার উপর সন্তানের হকের মধ্যে রয়েছে, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে। [জামিউল কাবীর]
১৫. দ্বীনের পথে পরিচালিত করা : পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে, কুরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনা করা, দ্বীনের বিধান পালনের ক্ষেত্রে অভ্যস্ত করে তোলা। কুরআনে এসেছে,
﴿ ﻗُﻞۡ ﻫَٰﺬِﻩِۦ ﺳَﺒِﻴﻠِﻲٓ ﺃَﺩۡﻋُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِۚ ﻋَﻠَﻰٰ ﺑَﺼِﻴﺮَﺓٍ ﺃَﻧَﺎ۠ ﻭَﻣَﻦِ ﭐﺗَّﺒَﻌَﻨِﻲۖ ﻭَﺳُﺒۡﺤَٰﻦَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﺂ ﺃَﻧَﺎ۠ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﺸۡﺮِﻛِﻴﻦَ ١٠٨﴾ ‏[ ﻳﻮﺳﻒ 108: ]
‘ বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই’। [সূরা ইউসুফ : ১০৮]
সন্তানকে দ্বীনের পথে পরিচালনার মাধ্যমে সওয়াব অর্জন করার এক বিরাট সুযোগ রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন,
« ﻓَﻮَﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﺄَﻥْ ﻳُﻬْﺪَﻯ ﺑِﻚَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚَ ﻣِﻦْ ﺣُﻤْﺮِ ﺍﻟﻨَّﻌَﻢِ »
তোমার মাধ্যমে একজনও যদি হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা হবে তোমার জন্য লালবর্ণের অতি মূল্যবান উট থেকেও উত্তম। [সহীহ বুখারী]
১৬. সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা : সন্তানগণ পিতামাতার কাছ থেকে ইনসাফ আশা করে এবং তাদের মাঝে ইনসাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন,
‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তাদের মাঝে ইনসাফ করো’। [সহীহ বুখারী: ২৫৮৭]
১৭. ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে বিরত রাখা : ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে তাদেরকে বিরত না রাখলে এই সন্তানগনই কিয়ামাতে পিতামাতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। কুরআনে এসেছে,
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻗُﻮٓﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡ ﻭَﺃَﻫۡﻠِﻴﻜُﻢۡ ﻧَﺎﺭٗﺍ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ 6: ]
হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। [সূরা আত-তাহরীম-৬]
﴿ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍْ ﺭَﺑَّﻨَﺂ ﺃَﺭِﻧَﺎ ﭐﻟَّﺬَﻳۡﻦِ ﺃَﺿَﻠَّﺎﻧَﺎ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺠِﻦِّ ﻭَﭐﻟۡﺈِﻧﺲِ ﻧَﺠۡﻌَﻠۡﻬُﻤَﺎ ﺗَﺤۡﺖَ ﺃَﻗۡﺪَﺍﻣِﻨَﺎ ﻟِﻴَﻜُﻮﻧَﺎ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺄَﺳۡﻔَﻠِﻴﻦَ ٢٩﴾ ‏[ ﻓﺼﻠﺖ : 29 ]
আর কাফিররা বলবে, ‘হে আমাদের রব, জ্বিন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নীচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়। [সূরা হা-মীম আসসিজদাহ-২৯ ]
১৮. পাপকাজ, অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি থেকে বিরত রাখা : সন্তান দুনিয়ার আসার সাথে সাথে শয়তান তার পেছনে লেগে যায় এবং বিভিন্নভাবে, ভিন্ন ভিন্ন রুপে,পোশাক-পরিচ্ছেদের মাধ্যমে, বিভিন্ন ফ্যাশনে, বিভিন্ন ডিজাইনে, বিভিন্ন শিক্ষার নামে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। তাই পিতা-মাতাকে অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮٓﺍْ ﺇِﻥَّ ﻣِﻦۡ ﺃَﺯۡﻭَٰﺟِﻜُﻢۡ ﻭَﺃَﻭۡﻟَٰﺪِﻛُﻢۡ ﻋَﺪُﻭّٗﺍ ﻟَّﻜُﻢۡ ﻓَﭑﺣۡﺬَﺭُﻭﻫُﻢۡۚ ﻭَﺇِﻥ ﺗَﻌۡﻔُﻮﺍْ ﻭَﺗَﺼۡﻔَﺤُﻮﺍْ ﻭَﺗَﻐۡﻔِﺮُﻭﺍْ ﻓَﺈِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ ١٤ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﻐﺎﺑﻦ 14: ]
হে মুমিনগণ, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। অতএব তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু। [সূরা তাগাবুন-১৪]
হাদীসে এসেছে,
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ، ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ، ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻤُﺘَﺸَﺒِّﻬِﻴﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﺑِﺎﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﺸَﺒِّﻬَﺎﺕِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺑِﺎﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ »
ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। [সহীহ বুখারী:৫৮৮৫]
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏« ﻣَﻦْ ﺗَﺸَﺒَّﻪَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ».
‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। [সুনান আবূ দাউদ:৪০৩১]
১৯. দো‘আ করা : আমাদের সন্তানদের জন্য দো‘আ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দো‘আ শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে,
﴿ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐۡ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦۡ ﺃَﺯۡﻭَٰﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّٰﺘِﻨَﺎ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋۡﻴُﻦٖ ﻭَﭐﺟۡﻌَﻠۡﻨَﺎ ﻟِﻠۡﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ ٧٤ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ : 74 ]
আল্লাহর নেক বান্দা তারাই যারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। [সূরা আলফুরকান-৭৪]
যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট দো‘আ করেছিলেন,
﴿ ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﺩَﻋَﺎ ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ ﺭَﺑَّﻪُۥۖ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﻫَﺐۡ ﻟِﻲ ﻣِﻦ ﻟَّﺪُﻧﻚَ ﺫُﺭِّﻳَّﺔٗ ﻃَﻴِّﺒَﺔًۖ ﺇِﻧَّﻚَ ﺳَﻤِﻴﻊُ ﭐﻟﺪُّﻋَﺂﺀِ ٣٨ ﴾ ‏[ ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ 38: ]
‘হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’। [সূরা আলে ইমরান ৩৮]
সম্মানিত পিতামাতাবৃন্দ, আমরা কি সন্তানের হকগুলো পালন করতে পেরেছি বা পারছি ? আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদেরকে নেকসন্তান হিসাবে গড়ে তুলি। যে সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗَﺎﻝَ ‏« ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎﺕَ ﺍﻹِﻧْﺴَﺎﻥُ ﺍﻧْﻘَﻄَﻊَ ﻋَﻨْﻪُ ﻋَﻤَﻠُﻪُ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﺛَﻼَﺛَﺔٍ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﺻَﺪَﻗَﺔٍ ﺟَﺎﺭِﻳَﺔٍ ﺃَﻭْ ﻋِﻠْﻢٍ ﻳُﻨْﺘَﻔَﻊُ ﺑِﻪِ ﺃَﻭْ ﻭَﻟَﺪٍ ﺻَﺎﻟِﺢٍ »
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-
১. সদকায়ে জারিয়া
২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়
৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দো‘আ করে [সহিহ মুসলিম:১৬৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সন্তানদেরকে কবুল করুন,
তাদের হকসমূহ যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দিন। আমীন!
লেখক : হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
=======================================
=======================================
=======================================
শিশুদের লালন-পালন [মাতা-পিতার দায়িত্ব ও সন্তানের করণীয়]
অনুবাদকের কথা
শিশুই হল, দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুদের বাল্য কালের শিক্ষা-দীক্ষা যদি ভালো হয়, তবে তাদের আগামী দিন ও ভবিষ্যৎ ভালো হবে। তাতে দেশ, জাতি ও সমাজ তাদের দ্বারা হবে লাভবান ও উপকৃত। এ জন্য শিশুদের শিক্ষা, তালীম, তরবিয়ত ও তাদের চরিত্রবান করে ঘড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব দেয়া, অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে কোন কিছু লিখে জাতির সামনে তুলে ধরার চিন্তা ও স্বপ্ন অনেক দিন থেকেই লালন করছি। কিন্তু যোগ্যতার সীমাবদ্ধতা ও সময়ের অভাবে তা আর বাস্তবে রূপ দিতে পারি নি। তবে সম্প্রতি আমার প্রাণ-প্রিয় সাইট ইসলাম হাউসে শাইখ মুহাম্মাদ ইবন জামীল যাইনূ রহ. এর একটি রিসালা এ বিষয়ে পেয়ে আমি আমার চিন্তা ও লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগটি গ্রহণ করি। চিন্তা করলাম এ লিখকের বইটি যদি অনুবাদ করে বাংলা-ভাষাভাষীদের জন্য তুলে ধরা হয়, তাতে তারা উপকৃত হবে এবং আমি নিজে কিছু লেখার চেয়েও এ রিসালাটি অনুবাদ করা অধিক ফলপ্রসূ হবে।
লেখক এ বইটিতে কুরআন ও হাদিসের আলোকে শিশুদের উপদেশ দেয়া, মাতা-পিতার সাথে সৎ ব্যবহার করা, তাদের খেদমত করা ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। শিশুরা কীভাবে ওজু, গোসল, তায়াম্মুম ও সালাত আদায় করবে, তাও তিনি এ রিসালাটিতে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়াও শিশুরা যখন বড় হতে থাকবে, তখন মাতা-পিতার করণীয় কি এবং মাতা-পিতার প্রতি তাদের দায়িত্ব কি হওয়া উচিত; তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তিনি তুলে ধরেছেন। আশা করি পাঠকগণ রিসালাটি পাঠ করে উপকৃত হবেন। যদি একজন পাঠকও এ রিসালাটি পড়ে উপকৃত হন, তাহলে আমি ধরে নিব আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। যেকোনো কাজ করতে গেলেই ভুল-ভ্রান্তি হওয়াই স্বাভাবিক। সুতরাং আমিও স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে নই। যদি কোন সু-হৃদয়বান পাঠকের চোখে কোন ভুল ধরা পড়ে, তা সংশোধন করে দিলে কৃতজ্ঞ হব। আমি আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসকে আমার অসুস্থ পিতা আল-হাজ্ব আবুল খায়ের সাহেবের জন্য উৎসর্গ করছি; যার অকৃত্রিম ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা ও সঠিক পথে লালন-পালন করার আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমি ধন্য। পাঠকদের নিকট বিনীত প্রার্থনা হল, আপনারা আমার অসুস্থ আব্বার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ তাকে শিফা দান করুন। আমীন!
অবশেষে আপনাদের নিকট আমার আখেরি ফরিয়াদ হল, এ রিসালাটি আমি ইলেকট্রিক মিডিয়াতেই দিচ্ছি; তাতে শুধু ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠ করা যাবে। সাথে সাথে যদি প্রিন্ট করে বিতরণ করা যেত, তবে অসংখ্য বাংলা-ভাষী, যারা এখনো পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়, তারাও উপকৃত হত। যদি কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি ও আহলে-খাইর এ অবশিষ্ট কাজটি সম্পাদন করেন, তাহলে তিনি অধিক কল্যাণ ও সাওয়াবের অধিকারী হবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে জাযায়ে খাইর দিন। আমীন!
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
ভূমিকা
ﺇﻥ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﻧﺤﻤﺪﻩ ﻭﻧﺴﺘﻌﻴﻨﻪ ﻭﻧﺴﺘﻐﻔﺮﻩ ، ﻭﻧﻌﻮﺫ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺷﺮﻭﺭ ﺃﻧﻔﺴﻨﺎ ﻭﺳﻴﺌﺎﺕ ﺃﻋﻤﺎﻟﻨﺎ ، ﻣﻦ ﻳﻬﺪﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻼ ﻣﻀﻞ ﻟﻪ ، ﻭﻣﻦ ﻳﻀﻠﻞ ﻓﻼ ﻫﺎﺩﻱ ﻟﻪ . ﺃﻣﺎ ﺑﻌﺪ ؛؛
শিশুদের লালন-পালন বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ের উপর জানা বা জ্ঞান থাকার সাথে মাতা-পিতা ও সন্তান উভয়ের কল্যাণ জড়িত। শুধু তাই নয়, একটি সমাজের উন্নতি ও জাতির ভবিষ্যৎ শিশুদের শিক্ষা ও লালন পালনের উপর নির্ভর করে। শিশুরাই হল, জাতির কর্ণধার ও ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এ কারণেই ইসলাম ও মনীষীগণ বিশেষ করে সমস্ত-মনীষীদের-সরদার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যাকে মহান আল্লাহ তা‘আলা পিতা-মাতা ও সন্তান উভয়ের জন্য শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন, তিনি শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষা ও সঠিকভাবে লালন-পালন করার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন, যাতে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
এ কারণেই আমরা কুরআনে করীমে দেখতে পাই যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক অনেক ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যাতে সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন, লোকমান হাকিমের ঘটনা; এ ঘটনাতে তিনি তার ছেলেকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেন, যা কুরআন সবিস্তারে আলোচনা করেছে। অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাল্যকাল থেকেই তার চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের অন্তরে তাওহীদের বীজ বপন করে জাতিকে জানিয়ে দেন যে, বাল্যকাল থেকেই একজন সন্তানকে তাওহীদের শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের এ বইয়ে একজন পাঠক অবশ্যই জানতে পারবে, সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার কর্তব্য কি আবার মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়-দায়িত্ব কি? মহান আল্লাহর নিকট আকুল আবেদন, তিনি যেন এ বইটি দ্বারা পাঠকদের উপকৃত করেন এবং বইটিকে যেন একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ বানিয়ে দেন।
মুহাম্মাদ ইবন জামীল যাইনূ
সন্তানের প্রতি লোকমান হাকীমের উপদেশাবলি
প্রথমে লোকমান আ. তার ছেলেকে যেভাবে উপদেশ দিয়েছেন, তা আলোচনা করা হল। কারণ, লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তা এতই সুন্দর ও গ্রহণ যোগ্য যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তা কুরআনে করীমে উল্লেখ করে কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত উম্মতের জন্য তিলাওয়াতে উপযোগী করে দিয়েছেন এবং কিয়ামত পর্যন্তের জন্য তা আদর্শ করে রেখেছেন।
লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন তা নিম্নরূপ:
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﻟُﻘْﻤَﺎﻥُ ﻟِﺎﺑْﻨِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻌِﻈُﻪُ ﴾
অর্থ, “আর স্মরণ কর, যখন লোকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল...।”
এ উপদেশগুলো ছিল অত্যন্ত উপকারী, যে কারণে মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে লোকমান হাকিমের পক্ষ থেকে উল্লেখ করেন।
প্রথম উপদেশ: তিনি তার ছেলেকে বলেন,
﴿ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙَ ﻟَﻈُﻠْﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ ﴾
অর্থ, “হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলুম।”
এখানে লক্ষণীয় যে, প্রথমে তিনি তার ছেলেকে শিরক হতে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। একজন সন্তান তাকে অবশ্যই জীবনের শুরু থেকেই আল্লাহর তাওহীদে বিশ্বাসী হতে হবে। কারণ, তাওহীদই হল, যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিশুদ্ধতা ও নির্ভুলতার একমাত্র মাপকাঠি। তাই তিনি তার ছেলেকে প্রথমেই বলেন, আল্লাহর সাথে ইবাদতে কাউকে শরিক করা হতে বেচে থাক। যেমন, মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা অথবা অনুপস্থিত ও অক্ষম লোকের নিকট সাহায্য চাওয়া বা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। এছাড়াও এ ধরনের আরও অনেক কাজ আছে, যেগুলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দোআ হল ইবাদত” ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻫﻮ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ সুতরাং আল্লাহর মাখলুকের নিকট দোআ করার অর্থ হল, মাখলুকের ইবাদত করা, যা শিরক।
মহান আল্লাহ তা‘আলা যখন তার বাণী,
﴿ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻠْﺒِﺴُﻮﺍْ ﺇِﻳﻤَﺎﻧَﻬُﻢ ﺑِﻈُﻠْﻢٍ ﴾
অর্থাৎ “তারা তাদের ঈমানের সাথে যুলুমকে একত্র করে নি।”
এ আয়াত নাযিল করেন, তখন বিষয়টি মুসলিমদের জন্য কষ্টকর হল, এবং তারা বলাবলি করল যে, আমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে তার উপর অবিচার করে না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আলোচনা শোনে বললেন,
} ﻟﻴﺲ ﺫﻟﻚ ، ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻮ ﺍﻟﺸﺮﻙ ، ﺃﻟﻢ ﺗﺴﻤﻌﻮﺍ ﻗﻮﻝ ﻟﻘﻤﺎﻥ ﻻﺑﻨﻪ : ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙَ ﻟَﻈُﻠْﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ ﴾ .
অর্থাৎ, “তোমরা যে রকম চিন্তা করছ, তা নয়, এখানে আয়াতে যুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য হল, শিরক। তোমরা কি লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছে, তা শোন নি? তিনি তার ছেলেকে বলেছিলেন,
} ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙَ ﻟَﻈُﻠْﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ﴾ .
অর্থ, হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলুম।”
দ্বিতীয় উপদেশ: মহান আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿ ﻭَﻭَﺻَّﻴْﻨَﺎ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﺑِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ﺣَﻤَﻠَﺘْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ ﻭَﻫْﻨًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﻫْﻦٍ ﻭَﻓِﺼَﺎﻟُﻪُ ﻓِﻲ ﻋَﺎﻣَﻴْﻦِ ﺃَﻥِ ﺍﺷْﻜُﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻚَ ﺇِﻟَﻲَّ ﺍﻟْﻤَﺼِﻴﺮُ ﴾ .
অর্থ, “আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে [সদাচরণের] নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে, তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন-তো আমার কাছেই।” [সূরা লোকমান: ১৪]
তিনি তার ছেলেকে কেবলই আল্লাহর ইবাদত করা ও তার সাথে ইবাদতে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করার সাথে সাথে মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার উপদেশ দেন। কারণ, মাতা-পিতার অধিকার সন্তানের উপর অনেক বেশি। মা তাকে গর্ভধারণ, দুধ-পান ও ছোট বেলা লালন-পালন করতে গিয়ে অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা ও কষ্ট সইতে হয়েছে। তারপর তার পিতাও লালন-পালনের খরচাদি, পড়া-লেখা ও ইত্যাদির দায়িত্ব নিয়ে তাকে বড় করছে এবং মানুষ হিসেবে ঘড়ে তুলছে। তাই তারা উভয় সন্তানের পক্ষ হতে অভিসম্পাত ও খেদমত পাওয়ার অধিকার রাখে।
তৃতীয় উপদেশ: মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে মাতা-পিতা যখন তোমাকে শিরক বা কুফরের নির্দেশ দেয়, তখন তোমার করণীয় কি হবে তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿ ﻭَﺇِﻥ ﺟَﺎﻫَﺪَﺍﻙَ ﻋَﻠﻰ ﺃَﻥ ﺗُﺸْﺮِﻙَ ﺑِﻲ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻚَ ﺑِﻪِ ﻋِﻠْﻢٌ ﻓَﻠَﺎ ﺗُﻄِﻌْﻬُﻤَﺎ ﻭَﺻَﺎﺣِﺒْﻬُﻤَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻣَﻌْﺮُﻭﻓًﺎ ﻭَﺍﺗَّﺒِﻊْ ﺳَﺒِﻴﻞَ ﻣَﻦْ ﺃَﻧَﺎﺏَ ﺇِﻟَﻲَّ ﺛُﻢَّ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣَﺮْﺟِﻌُﻜُﻢْ ﻓَﺄُﻧَﺒِّﺌُﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﴾
অর্থ, “আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না। এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে করবে সদ্ভাবে। আর আমার অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়। তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে।” [সূরা লোকমান: ১৫]
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘যদি তারা উভয়ে তোমাকে পরি-পূর্ণরূপে তাদের দ্বীনের আনুগত্য করতে বাধ্য করে, তাহলে তুমি তাদের কথা শুনবে না এবং তাদের নির্দেশ মানবে না। তবে তারা যদি দ্বীন কবুল না করে, তারপরও তুমি তাদের সাথে কোন প্রকার অশালীন আচরণ করবে না। তাদের দ্বীন কবুল না করা তাদের সাথে দুনিয়ার জীবনে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। তুমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহারই করবে। আর মুমিনদের পথের অনুসারী হবে, তাতে কোন অসুবিধা নাই।’
এ কথার সমর্থনে আমি বলব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীও বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট ও শক্তিশালী করেন, তিনি বলেন,
« ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻷﺣﺪ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ »
“আল্লাহর নাফরমানিতে কোন মাখলুকের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য-তো হবে একমাত্র ভালো কাজে।”
চতুর্থ উপদেশ: লোকমান হাকিম তার ছেলেকে কোন প্রকার অন্যায় অপরাধ করতে নিষেধ করেন। তিনি এ বিষয়ে তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন, মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তার বর্ণনা দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺇِﻥ ﺗَﻚُ ﻣِﺜْﻘَﺎﻝَ ﺣَﺒَّﺔٍ ﻣِّﻦْ ﺧَﺮْﺩَﻝٍ ﻓَﺘَﻜُﻦ ﻓِﻲ ﺻَﺨْﺮَﺓٍ ﺃَﻭْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﺃَﻭْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻳَﺄْﺕِ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻄِﻴﻒٌ ﺧَﺒِﻴﺮٌ ﴾ .
অর্থ, “হে আমার প্রিয় বৎস! নিশ্চয় তা [পাপ-পুণ্য] যদি সরিষা দানার পরিমাণও হয়, অত:পর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমান সমূহে বা জমিনের মধ্যে, আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষ্মদর্শী সর্বজ্ঞ।” [সূরা লোকমান: ১৬]
আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, অন্যায় বা অপরাধ যতই ছোট হোক না কেন, এমনকি যদি তা শস্য-দানার সমপরিমাণও হয়, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা‘আলা তা উপস্থিত করবে এবং মীযানে ওজন দেয়া হবে। যদি তা ভালো হয়, তাহলে তাকে ভালো প্রতিদান দেয়া হবে। আর যদি খারাপ কাজ হয়, তাহলে তাকে খারাপ প্রতিদান দেয়া হবে।
পঞ্চম উপদেশ: লোকমান হাকিম তার ছেলেকে সালাত কায়েমের উপদেশ দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﺃَﻗِﻢِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﴾
অর্থাৎ, “হে আমার প্রিয় বৎস সালাত কায়েম কর”,
তুমি সালাতকে তার ওয়াজিবসমূহ ও রোকনসমূহ সহ আদায় কর।
ষষ্ঠ উপদেশ:
﴿ ﻭَﺃْﻣُﺮْ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﺍﻧْﻪَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨْﻜَﺮِ ﴾
অর্থাৎ “তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ কর।”
বিনম্র ভাষায় তাদের দাওয়াত দাও, যাদের তুমি দাওয়াত দেবে তাদের সাথে কোন প্রকার কঠোরতা করো না।
সপ্তম উপদেশ: আল্লাহ বলেন,
﴿ ﻭَﺍﺻْﺒِﺮْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻚَ ﴾
“যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার উপর তুমি ধৈর্য ধারণ কর।”
আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, যারা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ ও মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ করবে তাকে অবশ্যই কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে এবং অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে। যখন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে তখন তোমার করণীয় হল, ধৈর্যধারণ করা ও ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। রাসূল সা. বলেন,
« ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﺨﺎﻟﻂ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻳﺼﺒﺮ ﻋﻠﻰ ﺃﺫﺍﻫﻢ ، ﺃﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ ﻳﺨﺎﻟﻂ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻻ ﻳﺼﺒﺮ ﻋﻠﻰ ﺃﺫﺍﻫﻢ ».
“যে ঈমানদার মানুষের সাথে উঠা-বসা ও লেনদেন করে এবং তারা যে সব কষ্ট দেয়. তার উপর ধৈর্য ধারণ করে, সে— যে মুমিন মানুষের সাথে উঠা-বসা বা লেনদেন করে না এবং কোন কষ্ট বা পরীক্ষার সম্মুখীন হয় না—তার থেকে উত্তম।”
﴿ ﺇِﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﻋَﺰْﻡِ ﺍﻟْﺄُﻣُﻮﺭِ ﴾
অর্থ, “নিশ্চয় এগুলো অন্যতম সংকল্পের কাজ।”
অর্থাৎ, মানুষ তোমাকে যে কষ্ট দেয়, তার উপর ধৈর্য ধারণ করা অন্যতম দৃঢ় প্রত্যয়ের কাজ।
অষ্টম উপদেশ:
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺼَﻌِّﺮْ ﺧَﺪَّﻙَ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ ﴾
অর্থ, “আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।”
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, ‘যখন তুমি কথা বল অথবা তোমার সাথে মানুষ কথা বলে, তখন তুমি মানুষকে ঘৃণা করে অথবা তাদের উপর অহংকার করে, তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে না। তাদের সাথে হাস্যোজ্জ্বল হয়ে কথা বলবে। তাদের জন্য উদার হবে এবং তাদের প্রতি বিনয়ী হবে।’
কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺗﺒﺴﻤﻚ ﻓﻲ ﻭﺟﻪ ﺃﺧﻴﻚ ﻟﻚ ﺻﺪﻗﺔ .
“তোমার অপর ভাইয়ের সম্মুখে তুমি মুচকি হাসি দিলে, তাও সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।”
নবম উপদেশ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻭَﻻ ﺗَﻤْﺶِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣَﺮَﺣﺎً ﴾
“অহংকার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাটা চলা করবে না।”
কারণ, এ ধরনের কাজের কারণে আল্লাহ তোমাকে অপছন্দ করবে। এ কারণেই মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﻛُﻞَّ ﻣُﺨْﺘَﺎﻝٍ ﻓَﺨُﻮﺭٍ ﴾
“নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।”
অর্থাৎ যারা নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যদের উপর বড়াই করে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের পছন্দ করে না।
দশম উপদেশ: নমনীয় হয়ে হাটা চলা করা। মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে বলেন:
﴿ ﻭَﺍﻗْﺼِﺪْ ﻓِﻲ ﻣَﺸْﻴِﻚَ ﴾
“আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর।”
তুমি তোমার চলাচলে স্বাভাবিক চলাচল কর। খুব দ্রুত হাঁটবে না আবার একেবারে মন্থর গতিতেও না। মধ্যম পন্থায় চলাচল করবে। তোমার চলাচলে যেন কোন প্রকার সীমালঙ্ঘন না হয়।
একাদশ উপদেশ: নরম সূরে কথা বলা। লোকমান হাকীম তার ছেলেকে নরম সূরে কথা বলতে আদেশ দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﺍﻏْﻀُﺾْ ﻣِﻦ ﺻَﻮْﺗِﻚَ ﴾
“তোমার আওয়াজ নিচু কর।”
আর কথায় কোন তুমি কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। বিনা প্রয়োজনে তুমি তোমার আওয়াজকে উঁচু করো না। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﺇِﻥَّ ﺃَﻧﻜَﺮَ ﺍﻟْﺄَﺻْﻮَﺍﺕِ ﻟَﺼَﻮْﺕُ ﺍﻟْﺤَﻤِﻴﺮِ ﴾
“নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ।”
আল্লামা মুজাহিদ বলেন, ‘সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ। অর্থাৎ, মানুষ যখন বিকট আওয়াজে কথা বলে, তখন তার আওয়াজ গাধার আওয়াজের সাদৃশ্য হয়। আর এ ধরনের বিকট আওয়াজ মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট একেবারেই অপছন্দনীয়। বিকট আওয়াজকে গাধার আওয়াজের সাথে তুলনা করা প্রমাণ করে যে, বিকট শব্দে আওয়াজ করে কথা বলা হারাম। কারণ, মহান আল্লাহ তা‘আলা এর জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। যেমনিভাবে—
ক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
» ﻟﻴﺲ ﻟﻨﺎ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺴﻮﺀ ، ﺍﻟﻌﺎﺋﺪ ﻓﻲ ﻫﺒﺘﻪ ﻛﺎﻟﻜﻠﺐ ﻳﻌﻮﺩ ﻓﻲ ﻗﻴﺌﻪ «
“আমাদের জন্য কোন খারাপ ও নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হতে পারে না। কোন কিছু দান করে ফিরিয়ে নেয়া কুকুরের মত, যে কুকুর বমি করে তা আবার মুখে নিয়ে খায়।”
খ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
» ﺇﺫﺍ ﺳﻤﻌﺘﻢ ﺃﺻﻮﺍﺕ ﺍﻟﺪﻳﻜﺔ ، ﻓﺴﻠﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﻓﻀﻠﻪ ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﺭﺃﺕ ﻣﻠﻜﺎً ، ﻭﺇﺫﺍ ﺳﻤﻌﺘﻢ ﻧﻬﻴﻖ ﺍﻟﺤﻤﺎﺭ ﻓﺘﻌﻮﺫﻭﺍ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ، ﻓﺈﻧﻬﺎ ﺭﺃﺕ ﺷﻴﻄﺎﻧﺎً » .
“মোরগের আওয়াজ শোনে তোমরা আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ কামনা কর, কারণ, সে নিশ্চয় কোন ফেরেশতা দেখেছে। আর গাধার আওয়াজ শোনে তোমরা শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কারণ, সে অবশ্যই একজন শয়তান দেখেছে।”
দেখুন: তাফসীর ইবন কাসীর, খ. ৩ পৃ. ৪৪৬
আয়াতের দিক-নির্দেশনা:-
1. আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যে সব কাজ করলে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত হয়, পিতা তার ছেলেকে সে বিষয়ে উপদেশ দিবে।
2. উপদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে তাওহীদের উপর অটল ও অবিচল থাকতে এবং শিরক থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেবে। কারণ, শিরক হল, এমন এক যুলুম বা অন্যায়, যা মানুষের যাবতীয় সমস্ত আমলকে বরবাদ করে দেয়।
3. প্রত্যেক ঈমানদারের উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব হল, মাতা-পিতার কৃতজ্ঞতা বা শুকরিয়া আদায় করা। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা, কোন প্রকার খারব ব্যবহার না করা এবং তাদের উভয়ের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা।
4. আল্লাহর নাফরমানি হয় না, এমন কোন নির্দেশ যদি মাতা-পিতা দিয়ে থাকে, তখন সন্তানের উপর তাদের নির্দেশের আনুগত্য করা ওয়াজিব। আর যদি আল্লাহর নাফরমানি হয়, তবে তা পালন করা ওয়াজিব নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻷﺣﺪ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻄﺎﻋﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ »
অর্থ: “আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে কোন মাখলুকের আনুগত্য চলে না; আনুগত্য-তো হবে ভালো কাজে”।
5. প্রত্যেক ঈমানদারের উপর কর্তব্য হল, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী মুমিন-মুসলিমদের পথের অনুকরণ করা, আর অমুসলিম ও বিদআতিদের পথ পরিহার করা।
6. প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আর মনে রাখবে কোন নেক-কাজ তা যতই ছোট হোক না কেন, তাকে তুচ্ছ মনে করা যাবে না এবং কোন খারাপ-কাজ তা যতই ছোট হোক না কেন, তাকে ছোট মনে করা যাবে না এবং তা পরিহার করতে কোন প্রকার অবহেলা করা চলবে না।
7. সালাতের যাবতীয় আরকান ও ওয়াজিবগুলি সহ সালাত কায়েম করা প্রত্যেক মুমিনের উপর ওয়াজিব; সালাতে কোন প্রকার অবহেলা না করে, সালাতের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হওয়া এবং খুশুর সাথে সালাত আদায় করা ওয়াজিব।
8. জেনেশুনে, সামর্থানুযায়ী সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। না জেনে এ কাজ করলে অনেক সময় হিতে-বিপরীত হয়। আর মনে রাখতে হবে, এ দায়িত্ব পালনে যথা সম্ভব নমনীয়তা প্রদর্শন করবে; কঠোরতা পরিহার করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣﻦ ﺭﺃﻯ ﻣﻨﻜﻢ ﻣﻨﻜﺮﺍً ﻓﻠﻴﻐﻴﺮﻩ ﺑﻴﺪﻩ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﻳﺴﺘﻄﻊ ﻓﺒﻠﺴﺎﻧﻪ ، ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﻳﺴﺘﻄﻊ ﻓﺒﻘﻠﺒﻪ ، ﻭﺫﻟﻚ ﺃﺿﻌﻒ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ »
অর্থ: “তোমাদের কেউ যদি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে, তখন সে তাকে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে তার মুখ দ্বারা। আর তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। আর এ হল, ঈমানের সর্বনিম্নস্তর।”
9. মনে রাখতে হবে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বারণকারীকে অবশ্যই-অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। ধৈর্যের কোন বিকল্প নাই। ধৈর্য ধারণ করা হল, একটি মহৎ কাজ। আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন।
10. হাটা চলায় গর্ব ও অহংকার পরিহার করা। কারণ, অহংকার করা সম্পূর্ণ হারাম। যারা অহংকার ও বড়াই করে আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না।
11. হাটার সময় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে হাটতে হবে। খুব দ্রুত হাঁটবে না এবং একেবারে ধীর গতিতেও হাঁটবে না।
12. প্রয়োজনের চেয়ে অধিক উচ্চ আওয়াজে কথা বলা হতে বিরত থাকবে। কারণ, অধিক উচ্চ আওয়াজ বা চিৎকার করা হল গাধার স্বভাব। আর দুনিয়াতে গাধার আওয়াজ হল, সর্ব নিকৃষ্ট আওয়াজ।
শিশুদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ছিলাম, তখন তিনি আমাকে ডেকে বললেন, “হে বৎস! আমি কি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব?” এ বলে রাসূল আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে কিছু উপদেশ দেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হল:
প্রথম উপদেশ:
ﺍﺣﻔﻆ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺤﻔﻈﻚ
“তুমি আল্লাহর হেফাজত কর আল্লাহ তোমার হেফাজত করবে”
অর্থাৎ, তুমি আল্লাহর নির্দেশ মেনে চল এবং যে সব কাজ হতে আল্লাহ তোমাকে নিষেধ করেছে, সে সব কাজ হতে বিরত থাক। আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা বিধান করবে।
দ্বিতীয় উপদেশ:
ﺍﺣﻔﻆ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺠﺪﻩ ﺗﺠﺎﻫﻚ ‏( ﺃﻣﺎﻣﻚ )
“তুমি আল্লাহকে হেফাজত কর, তখন তুমি তাঁকে তোমার সম্মুখেই পাবে।”
অর্থাৎ, তুমি আল্লাহ তা‘আলার বিধানের সংরক্ষণ ও আল্লাহর হক রক্ষা কর; তবে তুমি আল্লাহকে এমন পাবে যে, তিনি তোমাকে ভাল কাজের তাওফিক দেবে এবং তোমাকে তোমার যাবতীয় কর্মে সাহায্য করবে।
তৃতীয় উপদেশ:
ﺇﺫﺍ ﺳﺄﻟﺖ ﻓﺎﺳﺄﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺇﺫﺍ ﺍﺳﺘﻌﻨﺖ ﻓﺎﺳﺘﻌﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ
“যখন তুমি কোন কিছু চাইবে, আল্লাহর নিকট চাইবে। যখন কোনো সাহায্য চাইবে, আল্লাহ্র কাছেই চাইবে।”
অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের কোন বিষয়ে সাহায্যের প্রয়োজন হলে, তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাও। বিশেষ করে, যে কাজ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সমাধান করতে পারে না, তা আল্লাহর নিকটই চাইবে; কোন মাখলুকের নিকট চাইবে না। যেমন, সুস্থতা, রিযক, হায়াত, মওত ইত্যাদি। এগুলি এমন কাজ, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সমাধান করতে পারে না।
চতুর্থ উপদেশ:
ﻭﺃﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﺍﻷﻣﺔ ﻟﻮ ﺍﺟﺘﻤﻌﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻳﻨﻔﻌﻮﻙ ﺑﺸﻲﺀ ﻟﻢ ﻳﻨﻔﻌﻮﻙ ﺇﻻ ﺑﺸﻲﺀ ﻗﺪ ﻛﺘﺒﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻚ ، ﻭﺇﻥ ﺍﺟﺘﻤﻌﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻳﻀﺮﻭﻙ ﺑﺸﻲﺀ ﻟﻢ ﻳﻀﺮﻭﻙ ﺇﻻ ﺑﺸﻲﺀ ﻗﺪ ﻛﺘﺒﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻚ
“একটি কথা মনে রাখবে, যদি সমস্ত উম্মত একত্র হয়ে তোমার কোন উপকার করতে চায়, আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য যতটুকু উপকার লিপিবদ্ধ করেছে, তার বাইরে বিন্দু পরিমাণ উপকারও তোমার কেউ করতে পারবে না, যদি আল্লাহ তোমার উপকার না চায়। আর সমস্ত উম্মত একত্র হয়ে যদি তোমার কোন ক্ষতি করতে চায়, আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য যতটুকু ক্ষতি লিপিবদ্ধ করেছে, তার বাইরে বিন্দু পরিমাণ ক্ষতিও তোমার কেউ করতে পারবে না, যদি আল্লাহ তোমার ক্ষতি না চায়।”
অর্থাৎ, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য ভালো ও মন্দের যে, ভাগ্য নির্ধারণ করেছে, তার বাইরে কোন কিছুই বাস্তবায়িত হবে না। এ বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক।
পঞ্চম উপদেশ:
ﺭﻓﻌﺖ ﺍﻷﻗﻼﻡ ﻭﺟﻔﺖ ﺍﻟﺼﺤﻒ
“কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে ও কাগজ শুকিয়ে গেছে।”
তাই আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করতে হবে। তাওয়াককুল করার অর্থ হল, উপকরণ অবলম্বন করে তাওয়াককুল/ভরসা করা। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উষ্ট্রীর মালিককে বলেন, তুমি আগে উষ্ট্রীকে বেঁধে রাখ এবং আল্লাহর উপর তাওয়াককুল কর।
ষষ্ঠ উপদেশ:
ﺗﻌﺮﻑ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﺧﺎﺀ ﻳﻌﺮﻓﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺪﺓ
“সচ্ছল অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর, বিপদে তোমাকে আল্লাহ স্মরণ করবে।”
অর্থাৎ, সচ্ছল অবস্থায় তুমি আল্লাহর হক ও মানুষের হক্ব আদায় কর, বিপদে আল্লাহ তোমাকে মুক্তি দেবে।
সপ্তম উপদেশ:
ﻭﺃﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﻣﺎ ﺃﺧﻄﺄﻙ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻴﺼﻴﺒﻚ ، ﻭﻣﺎ ﺃﺻﺎﺑﻚ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻴﺨﻄﺌﻚ
“মনে রেখো— যা তুমি পেলে না, তা তোমার পাবার ছিল না; আর যা তুমি পেলে তা তুমি না পেয়ে থাকতে না।”
অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাকে কোন কিছু দান না করলে, তা কখনোই তুমি লাভ করতে পারবে না। আর যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে কোন কিছু দান করে, তা বাধা দেয়ার কেউ নাই।
অষ্টম উপদেশ:
ﻭﺍﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺼﺮ ﻣﻊ ﺍﻟﺼﺒﺮ
“আর জেনে রাখ, বিজয় ধৈর্যের সাথে।”
অর্থাৎ, শত্রু ও নফসের বিপক্ষে সাহায্য বা বিজয় লাভ ধৈর্য ধারণের উপর নির্ভর করে। সুতরাং, আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
নবম উপদেশ:
ﻭﺃﻥ ﺍﻟﻔﺮﺝ ﻣﻊ ﺍﻟﻜﺮﺏ
“বিপদের সাথেই মুক্তি আসে।”
মুমিন বান্দা যেসব বিপদের সম্মুখীন হয়, তারপরই মুক্তি আসে।
দশম উপদেশ:
ﻭﺃﻥ ﻣﻊ ﺍﻟﻌﺴﺮ ﻳﺴﺮﺍ
“কষ্টের সাথেই সুখ।”
এক মুসলিম যে কষ্টের মুখোমুখি হয়, তা কখনোই স্থায়ী হয় না। কারণ, তারপর অবশ্যই আরাম বা সুখ আসে এবং আসবেই।
হাদিসের নির্যাস:
1. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের ভালোবাসতেন। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে নিজের পিছনে বসান এবং আদর করে তিনি তাকে হে বৎস বলে আহ্বান করেন, যাতে সে সতর্ক হয় এবং রাসুলের কথার প্রতি মনোযোগী হয়।
2. শিশুদের তিনি আল্লাহর আনুগত্য করা ও তার নাফরমানি হতে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিতেন, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত হয়।
3. যখন কোন বান্দা সচ্ছলতা, সুস্থতা ও ধনী অবস্থায় আল্লাহ ও তার বান্দাদের অধিকার আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা বিপদে তাকে মুক্তি দেবে এবং সাহায্য করবে।
4. আল্লাহর নিকট কোন কিছু চাওয়া ও সাহায্য প্রার্থনার তালীম দেয়ার মাধ্যমে শিশুদের অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে দেয়া, মাতা-পিতা ও অভিভাবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ছোট বেলা থেকেই শিশুদের অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে দিতে হবে, যাতে বড় হলে তার পথভ্রষ্ট না হয়।
5. ঈমানের রোকনসমূহ হতে একটি রোকন হল, ভাল ও মন্দের তকদীরের উপর বিশ্বাস করা। বিষয়টি শিশুদের অন্তরে গেঁথে দিতে হবে।
6. শিশুদের ইতিবাচক মনোভাবের উপর গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা আশা, আকাঙ্ক্ষা ও সাহসিকতার সাথে তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ রচনা করে এবং তাদের জাতির জন্য কর্ণধার ও ত্রাণকর্তা হিসেবে আর্ভিভাব হতে পারে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻭﺃﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺼﺮ ﻣﻊ ﺍﻟﺼﺒﺮ ، ﻭﺃﻥ ﺍﻟﻔﺮﺝ ﻣﻊ ﺍﻟﻜﺮﺏ ، ﻭﺃﻥ ﻣﻊ ﺍﻟﻌﺴﺮ ﻳﺴﺮﺍ » .
“আর জেনে রাখ: ধৈর্যের সাথেই বিজয়, বিপদের সাথেই মুক্তি, কষ্টের সাথেই সুখ।”
ইসলামের রোকনসমূহ
জীবনের শুরুতেই শিশুদের ঈমান ও ইসলামের রোকনসমূহ তালীম দিতে হবে, যাতে তারা বড় হয়ে, তা হতে দূরে সরে না যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি:
এক. “এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন হক ইলাহ নাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।” অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নাই আর আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে মুহাম্মদ এর আনুগত্য করা ওয়াজিব।[1]
দুই. “সালাত কায়েম করা” : সালাতের আরকান ও ওয়াজিবসমূহ সহ খুশুর সাথে সালাত আদায় করা।
তিন. “যাকাত প্রদান করা” : যদি কোন মুসলিম তার মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা তার সমপরিমাণ অর্থের মালিক হয়, তাহলে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে যখন তার এ সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হয়; তখন তাকে শতকরা ২.৫ টাকা যাকাত দিতে হবে। এ-ছাড়াও আরও অনেক সম্পদ আছে যেগুলোর উপর যাকাত ওয়াজিব হয়। সে সব সম্পদের যাকাত শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত হারে প্রদান করতে হয়।
চার. “বায়তুল্লাহর হজ করা” : হজ তার উপর ফরয হবে, যে হজ করার সামর্থ্য রাখে।
পাঁচ. “রমযানের রোজা রাখা:” রোজা বলতে আমরা বুঝি, নিয়ত সহকারে ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানা-পিনা ও রোজার পরিপন্থী সবধরনের কাজ হতে বিরত থাকা।
ঈমানের রোকনসমূহ
১. “আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা”: আল্লাহর অস্তিত্ব এবং ইবাদতে ও সিফাতসমূহে তাঁর একত্ব সম্পর্কে প্রগাঢ় বিশ্বাস করা।
২. “আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা” : ফেরেশতা হল, আল্লাহরই মাখলুক; যারা আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করে এবং তিনি যা করতে বলেন, তাই করে; তার কোন প্রকার এদিক সেদিক করে না এবং করার ক্ষমতা রাখে না।
৩. “আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনা” : আল্লাহর নাযিল-কৃত আসমানি কিতাব তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিল ও সর্বোত্তম কিতাব কুরআনের প্রতি ঈমান আনা।
৪. “আল্লাহর রাসূলদের প্রতি ঈমান আনা” : সর্ব প্রথম রাসূল হলেন নূহ আ. আর সর্বশেষ রাসূল হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
৫. “আখিরাতের প্রতি ঈমান আনা” : এর অর্থ হল, হিসাব দিবসের প্রতি বিশ্বাস করা। মানুষের যাবতীয় কর্মের উপর অবশ্যই হিসাব নেয়া হবে এবং তার কর্মের বিনিময়ে তাকে প্রতিদান দেয়া হবে, যদি তার কর্ম ভালো হয়, তবে ভালো প্রতিদান আর যদি খারাপ হয়, তবে খারাপ প্রতিদান।
৬. “তাকদীরের ভালো ও মন্দের প্রতি ঈমান রাখা” : ভালো ও মন্দের তকদীরের উপর রাজি-খুশি থাকা। কারণ, এটা আল্লাহরই নির্ধারণ। (তবে শুধু এর উপর নির্ভর না করে থেকে বৈধ উপায়- উপকরণ গ্রহণ করতে হবে।)
[মূল হাদীসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন]
আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপর
কুরআনের আয়াত, বিশুদ্ধ হাদিস, সত্যিকার জ্ঞান ও সঠিক স্বভাব প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরই আছেন। একজন মুসলিমের আক্বীদা বা বিশ্বাস এটিই হতে হবে। নিম্নে এর সপক্ষে কয়েকটি প্রমাণ উপস্থাপন করা হল।
১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﺳْﺘَﻮَﻯ ﴾
অর্থাৎ “আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন।” [সূরা ত্বাহা]
ﺍﺳﺘﻮﻯ এর অর্থ উপরে উঠা এবং উন্নীত হওয়া। যেমনটি বুখারির বর্ণনায় তাবেয়ীদের থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
২. বিদায় হজের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিন যে ভাষণ দেন, তাতে তিনি বলেন, “আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে আমার উপর অর্পিত রিসালাতের দায়িত্ব তোমাদের নিকট পৌছাইনি?” উপস্থিত সবাই সমস্বরে বললে, হ্যাঁ। তারপর তিনি তার আঙ্গুলকে আসমানের দিকে উঁচু করলেন এবং সমবেত লোকদের দিকে ঝুঁকিয়ে তাদের সম্বোধন করে বললেন, “হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক।” [মুসলিম]
৩. সালাতে মুসল্লিরা বলেন, ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺭﺑﻲ ﺍﻷﻋﻠﻰ “আমার সুউচ্চ রব কতই না পবিত্র!” অনুরূপভাবে দো‘আর সময় মানুষ আসমানের দিকেই হাত উঠায়। [এতেও এ কথা স্পষ্ট হয় যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা উপরেই আছেন।]
৪. শিশুদের যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, আল্লাহ কোথায়? তখন সে স্বভাবতই বলে, আল্লাহ আসমানে অথবা ইশারা করে আসমানের দিকে দেখায়।
৫. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ }
“ আর আল্লাহ, তিনি-তো আসমানসমূহে।” [সূরা আল-আন‘আম]
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, তাফসীরবিদগণ এ বিষয়ে ঐকমত পোষণ করেন যে, পথভ্রষ্ট দল জাহমিয়ারা যে কথা বলে, আমরা তা বলবো না। তারা বলে ‘আল্লাহ তা‘আলা সর্বত্র বিরাজমান’, অথচ মহান আল্লাহ তা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ বা আল্লাহ আসমানে এ কথার অর্থ হল ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ- আল্লাহর আসমানের উপর। তবে মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দেখেন, আমাদের কথা শোনেন, যদিও তিনি আরশের উপর অবস্থান করছেন।
অসাধারণ উপদেশমূলক কাহিনী
এ বিষয়ে হাদিসে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে:—
ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﺍﻟﺴﻠﻤﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ‏« ﻭﻛﺎﻧﺖ ﻟﻲ ﺟﺎﺭﻳﺔ ﺗﺮﻋﻰ ﻏﻨﻤﺎً ﻟﻲ ﻗﺒﻞ ‏« ﺃﺣﺪ ﻭﺍﻟﺠﻮﺍﻧﻴﺔ ‏» ﻓﺎﻃﻠﻌﺖ ﺫﺍﺕ ﻳﻮﻡ ، ﻓﺈﺫﺍ ﺑﺎﻟﺬﺋﺐ ﻗﺪ ﺫﻫﺐ ﺑﺸﺎﺓ ﻣﻦ ﻏﻨﻤﻬﺎ ، ﻭﺃﻧﺎ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺑﻨﻲ ﺁﺩﻡ ، ﺁﺳﻒ ﻛﻤﺎ ﻳﺄﺳﻔﻮﻥ ، ﻟﻜﻨﻲ ﺻﻜﻜﺘﻬﺎ ﺻﻜﺔ ، ﻓﺄﺗﻴﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻌﻈﻢ ﺫﻟﻚ ﻋﻠﻲّ ، ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺃﻓﻼ ﺃﻋﺘﻘﻬﺎ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﺋﺘﻨﻲ ﺑﻬﺎ ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻬﺎ : ﺃﻳﻦ ﺍﻟﻠﻪ ؟ ﻗﺎﻟﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ، ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺃﻧﺎ ؟ ﻗﺎﻟﺖ : ﺃﻧﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻗﺎﻝ : ﺃﻋﺘﻘﻬﺎ ﻓﺈﻧﻬﺎ ﻣﺆﻣﻨﺔ » .
অর্থ, মুয়াবিয়া ইবনে হাকাম আস-সুলামী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার একজন বাঁদী ছিল, সে ওহুদ পাহাড়ের প্রান্তে আমার ছাগল চড়াত। একদিন সে বাড়িতে আসলে, তখন একটি নেকড়ে বাঘে এসে আমার একটি ছাগল ধরে নিয়ে যায়। আর আমি যেহেতু একজন আদম সন্তান— মানুষ, এতে স্বভাবতই অন্যান্য মানুষের মত আমিও খুব কষ্ট পেলাম। ফলে আমি বাঁদীটিকে সজোরে একটি প্রহার করলাম। পরবর্তীতে বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করলে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি তাকে আজাদ করে দেব? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি তাকে আমার নিকট নিয়ে আস। তারপর আমি তাকে নিয়ে এলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করল, “আল্লাহ কোথায়?” উত্তরে সে বলল, “আল্লাহ আসমানে।” তারপর জিজ্ঞাসা করল, “আমি কে?” সে বলল, “আপনি আল্লাহর রাসূল।” তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল, “তুমি তাকে আজাদ করে দাও, কারণ সে মুমিন।” [মুসলিম ও আবু দাউদ]
(‘আসমানে’ অর্থ হলো ‘আসমানের উপরে’)।
হাদিসের শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ:
১. ছোট হোক অথবা বড় হোক যে কোন ধরনের সমস্যায় সাহাবীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে তার সমাধান করত, যাতে তারা এ বিষয়ে আল্লাহর বিধান কী তা জানতে পারে।
২. আর বিচার ফায়সালার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকটই যেতে হবে। আল্লাহ ও তার রাসূলকে বাদ দিয়ে কারো নিকট বিচার ফায়সালার জন্য যাওয়া কোন ঈমানদারের কাজ হতে পারে না। কারণ, মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে বলেন,
﴿ ﻓَﻼَ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻻَ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰَ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍْ ﻓِﻲ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺣَﺮَﺟًﺎ ﻣِّﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍْ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ ﴾ .
“আমি আপনার রবের শপথ করে বলছি, তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তাদের বিবাদ মীমাংসায় আপনাকে ফায়সালাকারী না বানায়। অতঃপর আপনি যে ফায়সালা দিয়েছেন, তাতে তাদের অন্তরে কোন প্রকার সংকীর্ণতা না থাকে এবং তারা পুরোপুরি আত্মসমর্পন করে।” [সূরা আন-নিসা: ৬৫]
৩. বাঁদীটিকে প্রহার করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেন নি, শুধু তাই নয়, বিষয়টি তার নিকট খুব কষ্টকর ও দুঃখনীয় ছিল।
৪. হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাধারণত মুমিনদেরই আজাদ করে দেয়া হয়, কাফেরদের নয়। কারণ, এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে বাঁদীটির পরীক্ষা করেছেন। তারপর যখন তিনি তার ঈমানের বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হলেন, তখন তাকে আজাদ করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। আর যদি কাফের হত, তাহলে তিনি তাকে আজাদ করতে নির্দেশ দিতেন না।
৫. এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, তাওহীদ বিষয়ে মানুষের নিকট জিজ্ঞাসা করা আবশ্যক। আর আল্লাহ তা‘আলা যে, আরশের উপর তা প্রতিটি মুমিন মুসলিমের জানা থাকা আবশ্যক।
৬. ‘আল্লাহ কোথায়?’ এ বলে কাউকে জিজ্ঞাসা করা যে সুন্নত তা এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কারণ, এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ কোথায়? এ বলে বাঁদীটিকে জিজ্ঞাসা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা আসমানে! এ বলে উত্তর দেওয়া যে বৈধ তা এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উত্তরের উপর স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং কোন প্রকার আপত্তি করেননি। এ ছাড়া উত্তরটি আল্লাহ তা‘আলার বাণীর অনুরূপ। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন,
﴿ ﺃَﺃَﻣِﻨﺘُﻢ ﻣَّﻦ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﺃَﻥ ﻳَﺨْﺴِﻒَ ﺑِﻜُﻢُ ﺍﻷَﺭْﺽَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻫِﻲَ ﺗَﻤُﻮﺭُ ﴾ .
“যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদেরসহ জমিন ধসিয়ে দেয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ, অতঃপর আকস্মিকভাবে তা থরথর করে কাঁপতে থাকবে।”
ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তিনি হলেন, মহান আল্লাহ তা‘আলা।
আর আয়াতে ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ কথাটির অর্থ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ - আসমানের উপর।
৭. একজন মানুষের ঈমান তখন বিশুদ্ধ হবে, যখন সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাত বিষয়ে সাক্ষী প্রদান করবে। আল্লাহর উপর ঈমান আনল, অথচ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসেবে স্বীকার করল না, তাহলে সে ঈমানদার হতে পারবে না।
৮. মহান আল্লাহ তা‘আলা আসমানে এ কথার উপর বিশ্বাস করা, প্রমাণ করে যে, তার ঈমান সঠিক ও নির্ভেজাল। আর এ বিষয়ের উপর বিশ্বাস করা প্রতিটি মুমিনের আবশ্যক।
৯. এ হাদিস দ্বারা তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করা হল, যারা বলে মহান আল্লাহ সশরীরে সর্বত্র বিরাজমান। তাদের কথাটি ঈমানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সত্যি কথা হল, আল্লাহ তা‘আলা আসমানে। তবে তার জ্ঞান আমাদের সাথে আছেন এবং তার ইলম বা জ্ঞান আমাদের পরিবেষ্টন করে আছেন, তিনি সশরীরে আমাদের সাথে নাই। তার ইলম ও কুদরাত সর্বত্র বিরাজমান। যারা বলে ‘আল্লাহ তা‘আলা সশরীরে সর্বত্র বিরাজমান’ তাদের কথা ভ্রান্ত ও ভুল।
১০.রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাদীটিকে পরীক্ষা করার জন্য তার নিকট নিয়ে আসার জন্য যে, নির্দেশ দিয়েছেন, তা প্রমাণ করে যে, তিনি গায়েব জানেন না। যদি গায়েব জানতেন তাহলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা না করেই ফায়সালা দিতে পারতেন। এ হাদিস দ্বারা সূফীদের দাবীও বাতিল বলে প্রমাণিত হয়; কারণ, তারা বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানে। প্রকৃত সত্য হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন গায়েব জানেন না। এ কারণে মহান আল্লাহ তা‘আলা তার নবীকে নির্দেশ দেন যে,
﴿ ﻗُﻞ ﻻَّ ﺃَﻣْﻠِﻚُ ﻟِﻨَﻔْﺴِﻲ ﻧَﻔْﻌًﺎ ﻭَﻻَ ﺿَﺮًّﺍ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﺷَﺎﺀ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻭَﻟَﻮْ ﻛُﻨﺖُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐَ ﻻَﺳْﺘَﻜْﺜَﺮْﺕُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﻭَﻣَﺎ ﻣَﺴَّﻨِﻲَ ﺍﻟﺴُّﻮﺀُ ﺇِﻥْ ﺃَﻧَﺎْ ﺇِﻻَّ ﻧَﺬِﻳﺮٌ ﻭَﺑَﺸِﻴﺮٌ ﻟِّﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﴾ .
“হে রাসূল! আপনি বলুন, আমি আমার নিজের জন্যও উপকার ও ক্ষতির নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নই। তবে আল্লাহ যা চায়। আর আমি যদি গায়েব জানতাম, তবে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমি-তো শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদ-দানকারী।”
পিতা-মাতা ও সন্তানের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপদেশ
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻛﻠﻜﻢ ﺭﺍﻉ ﻭﻛﻠﻜﻢ ﻣﺴﺆﻭﻝ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻪ ، ﻓﺎﻹﻣﺎﻡ ﺭﺍﻉ ﻭﻣﺴﺆﻭﻝ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻪ ، ﻭﺍﻟﺮﺟﻞ ﺭﺍﻉ ﻓﻲ ﺃﻫﻠﻪ ﻭﻫﻮ ﻣﺴﺆﻭﻝ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻪ ، ﻭﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺑﻴﺖ ﺯﻭﺟﻬﺎ ﺭﺍﻋﻴﺔ ، ﻭﻫﻲ ﻣﺴﺆﻭﻟﺔ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻬﺎ ، ﻭﺍﻟﺨﺎﺩﻡ ﻓﻲ ﻣﺎﻝ ﺳﻴﺪﻩ ﺭﺍﻉ ﻭﻫﻮ ﻣﺴﺆﻭﻝ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻪ »
অর্থ, “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল! তোমাদের সকলকে তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন ইমাম সে অবশ্যই একজন দায়িত্বশীল, তাকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন পরিবারের কর্তা সে তার পরিবারের দায়িত্বশীল। তাকে অবশ্যই তার পরিবারের যারা তার অধীনস্থ তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন মহিলা সে তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল, তাকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। আর একজন চাকর সে তার মালিকের ধন-সম্পদের দায়িত্বশীল! তাকে তার দায়িত্বের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।” [বুখারী, মুসলিম]
২. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ কি? তিনি উত্তরে বললেন,
« ﺃﻥ ﺗﺠﻌﻞ ﻟﻠﻪ ﻧﺪﺍً ﻭﻫﻮ ﺧﻠﻘﻚ ، ﻗﻠﺖ : ﺛﻢ ﺃﻱ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻥ ﺗﻘﺘﻞ ﻭﻟﺪﻙ ﺧﺸﻴﺔ ﺃﻥ ﻳﻄﻌﻢ ﻣﻌﻚ ، ﻗﻠﺖ : ﺛﻢ ﺃﻱ ، ﻗﺎﻝ : ﺃﻥ ﺗﺰﻧﻲ ﺑﺤﻠﻴﻠﺔ ﺟﺎﺭﻙ » .
“আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” আমি বললাম, তারপর মারাত্মক অপরাধ কোনটি? তিনি বললেন, “তোমার সন্তান তোমার সাথে খাবে এ ভয়ে তুমি তাকে হত্যা করলে।” আমি বললাম, তারপর মারাত্মক অপরাধ কোনটি? তিনি বললেন, “তুমি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করলে।” [বুখারী, মুসলিম]
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺍﺗﻘﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺃﻋﺪﻟﻮﺍ ﻓﻲ ﺃﻭﻻﺩﻛﻢ
“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে ইনসাফ কর।” [বুখারী, মুসলিম]
অর্থাৎ, তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে তাদের ধন-সম্পত্তিতে, অনুদানের ক্ষেত্রে ও যাবতীয় সব বিষয়ে তুমি ইনসাফ কর।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻛﻞ ﻣﻮﻟﻮﺩ ﻳﻮﻟﺪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻔﻄﺮﺓ ، ﻓﺄﺑﻮﻩ ﻳﻬﻮﺩﺍﻧﻪ ، ﺃﻭ ﻳﻨﺼﺮﺍﻧﻪ ، ﺃﻭ ﻳﻤﺠﺴﺎﻧﻪ ﻛﻤﺜﻞ ﺍﻟﺒﻬﻴﻤﺔ ﺗﻨﺘﺞ ﺍﻟﺒﻬﻴﻤﺔ ، ﻫﻞ ﺗﺮﻯ ﻓﻴﻬﺎ ﺟﺪﻋﺎً » .
“প্রতিটি নবজাত শিশু ফিতরাত তথা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে, তারপর তার পিতা তাকে ইয়াহুদি বানায়, খ্রিষ্টান বানায়, অথবা অগ্নি-উপাসক বানায়। যেমন, চতুষ্পদ জন্তু সে একটি জন্তু জন্ম দেয়, কিন্তু তার মধ্যে কোনটিকেই তুমি কান কাটা দেখতে পাবে না।” [বুখারী]
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ,
« ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺒﺎﺋﺮ ﺃﻥ ﻳﺸﺘﻢ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﺍﻟﺪﻳﻪ ، ﻳﺴﺐ ﺃﺑﺎ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻴﺴﺐ ﺃﺑﺎﻩ ، ﻭﻳﺴﺐ ﺃﻣﻪ ﻓﻴﺴﺐ ﺃﻣﻪ » .
“কবিরা গুনাহের একটি বড় ধরনের কবিরা গুনাহ হল, কোন লোক তার মাতা-পিতাকে গালি দেওয়া। যেমন, সে কোন লোকের পিতাকে গালি দিল, তখন লোকটিও তার পিতাকে গালি দিল অথবা সে অন্যের মাকে গালি দিল এবং সে লোকও তার মাকে গালি দিল।” [বুখারী, মুসলিম]
৬. এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে জিজ্ঞাসা করে বলল,
« ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻣﻦ ﺃﺣﻖ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺤﺴﻦ ﺻﺤﺎﺑﺘﻲ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ ، ﻗﺎﻝ ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﺑﻮﻙ » .
হে আল্লাহর রাসূল! আমি সর্বোত্তম ব্যবহার কার সাথে করব? তিনি বললেন, “তোমার মায়ের সাথে।” সে বলল, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন, “তোমার মায়ের সাথে।” তারপর লোকটি বলল, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন, “তোমার মায়ের সাথে।” সে বলল, তারপর কার সাথে? তিনি বললেন, “তোমার পিতার সাথে।” [বুখারী, মুসলিম]
মাতা-পিতা ও অভিভাবকদের দায়িত্ব
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন,
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻗُﻮﺍ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢْ ﻧَﺎﺭًﺍ
“হে ঈমানদারগণ তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর।”
একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পিতা-মাতা, অভিভাবক ও সমাজের দায়িত্বশীলদের নতুন প্রজন্মের শিশু, কিশোর ও যুবকদের শিক্ষা-দীক্ষা বিষয়ে অবশ্যই আল্লাহর সম্মুখে জবাবদিহি করতে হবে। তারা যদি তাদের ভালো শিক্ষা দিয়ে থাকে, তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে তারা নিজেরাও সফল হবে এবং নতুন প্রজন্মও সফল হবে। আর যদি তারা তাদের শিক্ষা দিতে অলসতা করে, তখন তারাও তার পরিণতি ভোগ করবে এবং তাদের অপরাধের শাস্তি তাদেরও ভোগ করতে হবে। কারণ, হাদিসে বলা হয়েছে,
ﻛﻠﻜﻢ ﺭﺍﻉ ، ﻭﻛﻠﻜﻢ ﻣﺴﺌﻮﻝ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻪ .
তোমরা সবাই দায়িত্বশীল তোমাদের সবাইকে তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
হে অভিভাবক বা শিক্ষক! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী আপনাদের জন্য সুখবর! কারণ, তিনি বলেন,
ﻓﻮﺍﻟﻠﻪ ﻻﻥ ﻳﻬﺪﻱ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻚ ﺭﺟﻼً ﻭﺍﺣﺪﺍً ﺧﻴﺮ ﻟﻚ ﻣﻦ ﺣﻤﺮ ﺍﻟﻨﻌﻢ
“তোমার দ্বারা যদি একজন মানুষকেও হেদায়েত দেয়া হয়, তা তোমার জন্য আরবের সবচেয়ে মূল্যবান উট লাল উট হতেও উত্তম।”
আর আপনারা যারা মাতা-পিতা হয়েছেন, আপনাদের জন্য সু-সংবাদ হল, রাসূলের বিশুদ্ধ হাদিস.. তিনি বলেন,
« ﺇﺫﺍ ﻣﺎﺕ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﺍﻧﻘﻄﻊ ﻋﻤﻠﻪ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺛﻼﺙ : ﺻﺪﻗﺔ ﺟﺎﺭﻳﺔ ﺃﻭ ﻋﻠﻢ ﻳﻨﺘﻔﻊ ﺑﻪ ، ﺃﻭ ﻭﻟﺪ ﺻﺎﻟﺢ ﻳﺪﻋﻮﺍ ﻟﻪ » .
“মানুষ যখন মারা যায় তিনটি আমল ছাড়া আর সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তিনটি আমল হল, সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যার দ্বারা জাতি উপকৃত হয়, অথবা নেক সন্তান যারা তার মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া করে।”
কাজেই হে অভিভাবক! প্রথমে আপনি আপনার নিজের আমলকে সুন্দর করতে চেষ্টা কর। আপনি যা করেন তাই শিশুদের নিকট ভালো কাজ আর আপনি যে সব কাজ করা ছেড়ে দেবেন, তাই হল, শিশুদের নিকট খারাপ কাজ। মাতা-পিতা ও অভিভাবকরা শিশুদের সামনে ভালো কাজ করাটাই হল, তাদের জন্য অতি উত্তম শিক্ষা, এর চেয়ে উত্তম আর কোন শিক্ষা হতে পারে না।
অভিভাবক ও শিক্ষকদের কর্তব্য
১. শিশুদের ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ দ্বারা কথা শিখানো। আর শিশুরা যখন বড় হবে তখন তাদের এ কালিমার অর্থ শেখাবে। কালিমার অর্থ হল, “আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নাই, তার কোন শরিক নাই।”
২. শিশুর অন্তরে আল্লাহর মহব্বত ও আল্লাহর প্রতি ঈমানের বীজ জীবনের শুরুতেই বপন করে দিতে হবে। কারণ, আল্লাহই আমাদের স্রষ্টা, রিযিকদাতা ও আমাদের সাহায্যকারী; তিনি একক তার কোন শরীক নাই।
৩. শিশুদের এ কথা শিখানো যে, তারা যেন সব সময় সবকিছু আল্লাহর নিকটই চায় এবং সাহায্যের প্রয়োজন হলে, আল্লাহর নিকটই চায়। কারণ, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে বলেন,
« ﺇﺫﺍ ﺳﺄﻟﺖ ﻓﺎﺳﺄﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺇﺫﺍ ﺍﺳﺘﻌﻨﺖ ﻓﺎﺳﺘﻌﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ » .
“যখন কোন কিছু চাইবে তখন তুমি আল্লাহর নিকট চাইবে, আর যখন কোন সাহায্য চাইবে তখনও আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।” [তিরমিযী]
নিষিদ্ধ কাজ হতে শিশুদের দূরে রাখা:-
১. শিশুদের কুফর, শিরক, গালি দেয়া, অভিশাপ দেয়া ও অনৈতিক কথা-বার্তা বলা হতে বিরত রাখা। তাদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়া যে, কুফর হল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ, তা মানুষকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায় এবং জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হয়। আর আমাদের উপর কর্তব্য হল, আমরা তাদের সামনে আমাদের জবানকে হেফাজত করব, তাদের সামনে কখনোই বাজে কথা বলব না, যাতে আমরা তাদের জন্য অনুকরণীয় ও আদর্শ হতে পারি।
২. আল্লাহর সাথে শিরক করা হতে বিরত থাকতে হবে। যেমন, মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে কোন মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা, তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া ও আরোগ্য লাভের জন্য তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া। অথচ, তারা মহান আল্লাহরই বান্দা, কোন ক্ষতি বা উপকার করতে পারে না। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﻻَ ﺗَﺪْﻉُ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻣَﺎ ﻻَ ﻳَﻨﻔَﻌُﻚَ ﻭَﻻَ ﻳَﻀُﺮُّﻙَ ﻓَﺈِﻥ ﻓَﻌَﻠْﺖَ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺇِﺫًﺍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﴾
অর্থ, “আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বস্তুকে ডেকো না; যা তোমার উপকার ও ক্ষতি করতে পারে না। তারপরও যদি তুমি তাই কর, তখন অবশ্যই তুমি যালিমদের অন্তর্ভক্ত হবে।”
৩. তাস, জুয়া, লটারি, বাজি ইত্যাদি হতে শিশুদের দূরে রাখতে হবে, কখনোই তাদের সামনে এগুলো পেশ করা যাবে না, যদিও এগুলো দিয়ে তাদের সান্ত্বনা বা খুশি করার জন্য হয়। কারণ, তা মানুষকে জুয়ার দিকে নিয়ে যায় এবং মানুষের মধ্যে রেষারেষি ও দুশমনি সৃষ্টি করে। এগুলো শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, এগুলোর কারণে তাদের সময় নষ্ট, মালামাল অপচয়, পড়ালেখার ক্ষতি ও তাদের সালাত নষ্ট করার কারণ হয়। অনেক সময় এসবের মধ্যে মগ্ন হওয়ার কারণে অন্য দিকে আর মনোযোগ দিতে পারে না।
৪. তাদের অশ্লীল পত্র-পত্রিকা, উলঙ্গ ছবি সম্বলিত ম্যাগাজিন, মিথ্যা বানোয়াট গোয়েন্দা উপন্যাস বা গল্পের বই পড়া হতে অবশ্যই বিরত রাখতে হবে। অশ্লীল সিনেমা, টেলিভিশন ও সিডি, বি-সিডি যাতে না দেখে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ, এ গুলো সবই তাদের আখলাক-চরিত্র ও নীতি-নৈতিকতার জন্য হুমকি ও ভবিষ্যতের অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৫. শিশুদের ধুমপান হতে দূরে রাখতে হবে। আর তাদের এ কথা বুঝাতে হবে, সমস্ত ডাক্তাররা এ কথার উপর ঐকমত্য পোষণ করে যে, ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধুমপানে ক্যানসার হয়, রক্তকে দূষিত করে, দাঁত নষ্ট করে, দুর্গন্ধ ছড়ায় ও ধুমপান মানুষের হার্ডের জন্য ক্ষতিকর। ধুমপান মানব দেহের কোন উপকারে আসে না। সুতরাং, ধুমপানের বেচা-কেনা ও পান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শিশুদের ধুমপানের বিকল্প হিসেবে ফল-মূল ইত্যাদি খেতে উপদেশ দেবেন।
৬. সত্য কথা বলা ও সত্য পথে চলার জন্য তাদের অভ্যস্ত করবেন। আমরা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে হলেও তাদের সামনে মিথ্যা কথা বলবো না। আর আমরা যখন তাদের কোন ওয়াদা দেবো তা পূরণ করবো। হাদিসে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ,
« ﺁﻳﺔ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻖ ﺛﻼﺙ : ﺇﺫﺍ ﺣﺪﺙ ﻛﺬﺏ ، ﻭﺇﺫﺍ ﻭﻋﺪ ﺃﺧﻠﻒ ، ﻭﺇﺫﺍ ﺃﺅﺗﻤﻦ ﺧﺎﻥ » .
অর্থ, “মুনাফেকের আলামত তিনটি: যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, আর যখন ওয়াদা করে খেলাফ করে, আর যখন তার নিকট আমানত রাখা হয়, তখন সে তার খেয়ানত করে।” [বুখারী, মুসলিম]
৭. আমরা আমাদের শিশুদের হারাম খাদ্য হতে খাওয়াবো না। যেমন, সুদ, ঘুষ ও চুরি ডাকাতি ইত্যাদির পয়সা দ্বারা তাদের বড় করবো না। কাউকে ধোঁকা দিয়ে উপার্জিত সম্পদ হতে তাদের কিছু কিনে দেবো না। কারণ, এ সব হল, সন্তান অবাধ্য, অসভ্য ও বেআদব হওয়ার কারণ।
৮. শিশুদের আদর যত্ন ও স্নেহ মমতা দিয়ে লালন-পালন করবে। তাদের সাথে কখনো কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার করা উচিত না। তাদের ধ্বংসের জন্য অভিশাপ দেয়া হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। কারণ, ভালো দোয়া ও খারাপ দোয়া সবই গ্রহণ করা হতে পারে। এতে কোন কোন সময় তাদের গোমরাহি আরও বৃদ্ধি পায়। তবে উত্তম হল, আমরা শিশুদের বলব, মহান আল্লাহ তোমার সংশোধন করুক।
সালাত কীভাবে আদায় করতে হয় তা শিক্ষা দেয়া:-
১. শিশু ছেলে-মেয়েদের ছোট বেলাতেই সালাত কীভাবে আদায় করতে হয়— তা শিক্ষা দেবেন, যাতে বড় হলে সালাত আদায় করতে অভ্যস্ত হয়। যেমন, বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,
« ﻋﻠﻤﻮﺍ ﺃﻭﻻﺩﻛﻢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺇﺫﺍ ﺑﻠﻐﻮﺍ ﺳﺒﻌﺎً ، ﻭﺍﺿﺮﺑﻮﻫﻢ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺑﻠﻐﻮﺍ ﻋﺸﺮﺍ ، ﻭﻓﺮﻗﻮﺍ ﺑﻴﻨﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻀﺎﺟﻊ » .
“তোমরা তোমাদের শিশুদের সাত বছর বয়সে সালাতের তালীম দাও। আর যখন দশ বছর হয়, তখন তোমরা তাদের সালাত আদায় না করার কারণে প্রহার কর। আর তোমরা তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।” [আল-জামে‘ আস-সহীহ]
তাদের ওজু করে দেখাবে, তাদের সামনে সালাত আদায় করে, তাদের দেখাবে। তাদের নিয়ে মসজিদে যাবে। যে বই পুস্তকে সালাতের নিয়মাবলী আছে, তা তাদের পড়তে দেবে, যাতে তাদের উসিলায় পরিবারের সবাই শিখতে পারে। তাদের সালাত আদায়ের নিয়ম শিখানো, মাতা-পিতা ও অভিভাবকের নৈতিক দায়িত্ব। তারা যদি দায়িত্ব পালনে অলসতা করে, মহান আল্লাহ তাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসা করবে।
২. শিশুদের কুরআন শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে সূরা ফাতেহা শিক্ষা দিবেন। তারপর ছোট ছোট সূরা গুলো শিক্ষা দিবেন। সালাতে পড়ার জন্য আত্-তাহিয়্যাতু শেখাতে হবে। আর যদি মাতা-পিতা সময় না পায়, তবে তাদের জন্য বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষা, কুরআন হিফয করা ও হাদিস মুখস্থ করা ইত্যাদির জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করবে, যিনি তাদের বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত ও সালাতের তালীম দেবে।
৩. শিশুদের জুমার সালাতে উপস্থিত হতে অনুমতি দেবেন, মসজিদের সালাতের জামাতে উপস্থিত হতে উৎসাহ প্রদান করবেন। তারা মসজিদের গিয়ে বড়দের পিছনে দাঁড়াবে। তারা যদি কোন ভুল করে, তবে তাদের খুব যত্ন সহকারে বুঝিয়ে বলবেন। তাদের কোন প্রকার ধমক দেবে না এবং তাদের সাথে চেঁচামেচি করবেন না। কারণ, যদি এ কারণে সালাত ছেড়ে দেয়, মসজিদে আসা বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা গুনাহগার হবো।
৫. ছোট শিশুরা যখন সাত বছর হবে, তখন তাদের রোজা রাখার জন্য তালিম দেবেন, যাতে বড় হলে তাদের রোজা রাখতে কোন প্রকার কষ্ট না হয়।
পর্দা করার জন্য উৎসাহ দেয়া:
১. ছোট ছেলে মেয়েদের ছোট বেলা থেকেই পর্দা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করবে, যাতে তারা বড় হলে পর্দাকে অপরিহার্য মনে করে। তাদের কখনোই ছোট বা পাতলা কাপড় পরিধান করাবে না এবং মেয়েদের পুরুষদের মত এক কাপড় পরিধান করাবে না। কারণ, এ হল কাফের-বেদ্বীনদের স্বভাব, এতে যুব সমাজ ফিতনার মুখোমুখি হয় এবং এ ধরনের পোশাক পরিধান করা তাদের চারিত্রিক অধঃ:পতনের কারণ হয়। আমাদের কর্তব্য হল, আমরা আমাদের মেয়েদের বয়স যখন সাত বছর হবে, তখন থেকে বাধ্য করব, তারা যাতে তাদের মাথাকে ওড়না দিয়ে ডেকে রাখে। আর যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন তাকে অবশ্যই চেহারাও ডেকে রাখতে হবে। কালো পোশাক বা বোরকা পরার জন্য তাদের নির্দেশ দিতে হবে। কুরআন সব নারীদের পর্দা করার প্রতি উদাত্ত আহ্বান করে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞ ﻟِّﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺃَﻥ ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤًﺎ﴾ ،
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে কন্যাদেরকে ও মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিল-বাবের কিছু অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে।ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব: ৫৯]
মহান আল্লাহ তা‘আলা নারীদের জাহিলিয়্যাতের যুগের মত সাজ-সজ্জা অবলম্বন করতে এবং ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﻗَﺮْﻥَ ﻓِﻲ ﺑُﻴُﻮﺗِﻜُﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺒَﺮَّﺟْﻦَ ﺗَﺒَﺮُّﺝَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﺍﻟْﺄُﻭﻟَﻰ ﴾ .
অর্থ, “আর তোমরা তোমাদের নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।” [সূরা আল-আহযাব: 32-33]
২. শিশুদের এমন কাপড় পরাতে হবে, যাতে মেয়েদের পোশাক তাদের ছেলেদের পোশাক হতে সম্পূর্ণ আলাদা হয়। আর তারা যেন অশালীন ও বেমানান পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকে। একেবারে চিপা, সংকীর্ণ ও পাতলা কাপড় যাতে শরীর দেখা যায়, এ ধরনের পোশাক পরিধান হতে বিরত থাকবে। বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের থেকে যারা পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য রাখে তাদের এবং পুরুষদের থেকে যারা নারীদের সাথে সাদৃশ্য রাখে তাদের অভিশাপ করেছেন। আর তিনি পুরুষদের থেকে যারা নারীদের ভেশ-ভুসা অবলম্বন করে এবং নারীদের থেকে যারা পুরুষদের ভেশ-ভুসা অবলম্বন করে তাদের অভিশাপ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣﻦ ﺗﺸﺒﻪ ﺑﻘﻮﻡ ﻓﻬﻮ ﻣﻨﻬﻢ » .
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের লোকের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” [আবু দাউদ]
আদব আখলাক শিক্ষা দেয়া:
১. শিশুদের উত্তম আচার-ব্যবহার শেখাবে। তাদের খানা-পিনা, দেওয়া-নেওয়া ইত্যাদিতে ডান হাত ব্যবহার করার অভ্যাস করাবে। খাওয়া-দাওয়া যাতে দাঁড়িয়ে না করে বসে করে, সে জন্য তাকে তার জীবনের শুরু থেকেই শিক্ষা দেবে। যে কোন কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে বলবে, আর শেষে ‘আলহামদু-লিল্লাহ’ বলতে তালীম দেবে।
২. শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তাদের হাত পায়ের নখগুলো কেটে দিতে হবে। মিসওয়াক করার ব্যাপারে তাদের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়ার নিয়ম শিখিয়ে দিবে। পাক-পবিত্রতা কীভাবে অর্জন করতে হয়, তা শিখাতে হবে। পেশাব পায়খানার পর টিলা কুলুখ বা টিসু পেপার ব্যবহারের পদ্ধতি শেখাবে। তারা যাতে তাদের পোশাক পরিচ্ছদ নাপাক করে না ফেলে, সে বিষয়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
৩. যদি তাদের থেকে কোন ভুল প্রকাশ পায়, তাহলে আমরা গোপনে তাদের উপদেশ দেবো, মানুষের সামনে কোন প্রকার লজ্জা দেবো না। তারপরও যদি তারা তাদের অন্যায়ের উপর অটল থাকে, তাহলে তার সাথে তিন দিন পর্যন্ত কথা-বার্তা বলা ছেড়ে দেবো, তিন দিনের বেশি নয়।
৪. আযানের সময় শিশুদের চুপ থাকতে বলব এবং তাদেরকে মুয়াজ্জিনের সাথে আযানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দিবে। আযান শেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত আদায় করবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট ওসিলা কামনা করবে।
« ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺏ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺪﻋﻮﺓ ﺍﻟﺘﺎﻣﺔ ، ﻭﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻘﺎﺋﻤﺔ ، ﺁﺕ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﻮﺳﻴﻠﺔ ﻭﺍﻟﻔﻀﻴﻠﺔ ، ﻭﺃﺑﻌﺜﻪ ﻣﻘﺎﻣﺎً ﻣﺤﻤﻮﺩﺍً ﺍﻟﺬﻱ ﻭﻋﺪﺗﻪ » .
অর্থ, “হে আল্লাহ! তুমিই এ পরিপূর্ণ আহ্বান ও শাশ্বত সালাতের প্রকৃত মালিক। তুমি দাও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মানিত স্থান ও মহা মর্যাদা। আর তাকে তুমি পৌঁছে দাও প্রশংসিত স্থান যার ওয়াদা তুমি তাকে দিয়েছ।”
৫. প্রতিটি শিশুর জন্য বিছানা আলাদা করে দিতে যথা সম্ভব চেষ্টা করবে। আর তা যদি সম্ভব না হয়, কমপক্ষে প্রত্যেকের জন্য আলাদা খাতা কম্বল ও লেপের ব্যবস্থা করতে। আর উত্তম হল, মেয়েদের জন্য একটি কামরা আর ছেলেদের জন্য একটি কামরা নির্ধারণ করে দেয়া, যাতে তাদের চরিত্র ভালো ও কলঙ্কমুক্ত থাকে।
৬. তারা যাতে ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে, সে জন্য তাদের বোঝাতে হবে। আর রাস্তা থেকে যে কোন ধরনের কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে রাখার ব্যাপারে তাদের উৎসাহ দিতে হবে।
৭. খারাপ ছেলেদের সাথে যাতে না মিশে, এ বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।
৮. শিশুদের সালাম দেয়ার বিষয়ে তালীম দিতে হবে। ঘরে প্রবেশের সময়, রাস্তায় চলাচলের সময়, মানুষের সাথে দেখা হলে ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ বলে সালাম দেবে।
৯. প্রতিবেশীদের সাথে ভালো ব্যবহার করার প্রতি তাদের উপদেশ দেবে এবং তাদের যাতে কোন প্রকার কষ্ট না দেয় তার জন্য বিশেষ সতর্ক করবে।
১০.শিশুদের মেহমানের মেহমানদারি করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মেহমানের সম্মান প্রদর্শন, মেহমানের জন্য মেহমানদারি পেশ করার অভ্যাস গড়ে তুলবে।
জিহাদ ও সাহসিকতা:
১. পরিবারের লোকদের মিলিয়ে একটি মজলিশের আয়োজন করবে। তাতে পরিবারের সদস্যদের ও ছাত্রদের নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের জীবনী পড়ে শোনাবে। যাতে তারা জানতে পারে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন একজন সত্যিকার সাহসী নেতা আর তার সাহাবী আবু বকর রা., ওমর রা., ওসমান রা., আলী রা. ও মুয়াবিয়া রা. -সহ আরও অন্যান্য সাহাবীর ইসলামী দুনিয়াকে মুসলিমদের জন্য বিজয়ী করেন। আর তারাই ছিল আমাদের হেদায়েত ও মুক্তিলাভের অন্যতম কারণ। তারা তাদের ঈমান, কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন, উন্নত চরিত্র ও সাহসিকতার কারণে সারা দুনিয়াতে বিজয় লাভ করে।
২. শিশুদের সাহসের অনুশীলন করাতে হবে। ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ ব্যাপারে তাদের উৎসাহ দিতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে, তারা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় না পায়। তবে তাদের মিথ্যা, ভ্রান্ত কথা-বার্তা ও অন্ধকার দিয়ে ভয় দেখানো বৈধ হবে না।
৩. আমাদের শিশুদের অন্তরের ইয়াহুদী ও জালিমদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার স্পৃহা জাগ্রত করবে। আমাদের জওয়ানরা যখন ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হবে তখন আল্লাহর রাহে জিহাদের মাধ্যমে অবশ্যই ফিলিস্তিন ও বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইয়াহুদীদের হাত থেকে মুক্ত করবে। মহান আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাদের সাহায্য করবে এবং বিজয়দান করবে।
৪. তাদের জন্য শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক বই ক্রয় করবে। যাতে তারা তা থেকে কিছু শিখতে পারে। যেমন, আল-কুরআনের কাহিনী সমগ্র, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী, সাহাবীদের জীবনী, সালাহ উদ্দিন আইউবীর জীবনী, কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আক্বীদা ইত্যাদি।
শিশুদের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করা
১. নোমান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺗﺼﺪﻕ ﻋﻠﻲَ ﺃﺑﻲ ﺑﺒﻌﺾ ﻣﺎﻟﻪ ، ﻓﻘﺎﻟﺖ ﺃﻣﻲ - ﻋﻤﺮﺓ ﺑﻨﺖ ﺭﻭﺍﺣﺔ - ﻻ ﺃﺭﺿﻰ ﺣﺘﻰ ﺗﺸﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻴﺸﻬﺪﻩ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﻗﺘﻲ ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻓﻌﻠﺖ ﻫﺬﺍ ﺑﻮﻟﺪﻙ ﻛﻠﻬﻢ ؟ ﻗﺎﻝ ﻻ ، ﻗﺎﻝ ﺍﺗﻘﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻭﺍﻋﺪﻟﻮﺍ ﺑﻴﻦ ﺃﻭﻻﺩﻛﻢ » .
“আমার পিতা তার সম্পত্তির কিছু অংশ আমাকে দান করে দেন, তখন আমার মা উমরা বিনতে রাওয়াহা বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানানো ছাড়া আমি আমার সদকার উপর রাজি হব না। তারপর বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হল। তিনি জানার পর বললেন, তুমি তোমার সব সন্তানদের কি এভাবে দান করেছ? সে বলল, না, তারপর তিনি বললেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং সন্তানদের মাঝে ইনসাফ কর।” [বুখারী, মুসলিম]
অপর এক বর্ণনাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﻓﻼ ﺗﺸﻬﺪﻭﻧﻲ ﺇﺫﺍً ، ﻓﺈﻧﻲ ﻻ ﺃﺷﻬﺪ ﻋﻠﻰ ﺟﻮﺭ
অর্থাৎ, “তাহলে তুমি আমাকে এ বিষয়ে সাক্ষী বানাবে না, কারণ, আমি অন্যায় কাজের উপর সাক্ষী হতে পারি না।” [মুসলিম, নাসায়ী]
২. হে মুসলিম ভাইয়েরা! তোমরা কখনোই সন্তানদের বিষয়ে বে-ইনসাফ করবে না। তাদের বিষয়ে যদি তোমরা কোন কিছু দান করা অথবা তাদের কারো বিষয়ে যদি তোমরা ওসিয়াত কর, তাহলে তা তোমরা ইনসাফের ভিত্তিতে কর। সন্তানদের থেকে কাউকে বঞ্চিত করো না। বরং, সবচেয়ে ভালো হয়, আল্লাহ তা‘আলা যা নির্ধারণ ও বণ্টন করেছে, তার উপর কোন প্রকার হস্তক্ষেপ না করা। মনে চাইলে কোন সন্তানকে অন্যদের উপর অধিক প্রাধান্য দেয়া যাবে না। এ ধরনের কোন কাজ করলে মনে রাখবে, তুমি তোমাকে আগুনে পেশ করলে। এ ধরনের অনেক ঘটনা পাওয়া যায়, পিতা তার কোন সন্তানের জন্য ধন-সম্পত্তি লিখে দেয়ার ফলে তাদের মধ্যে বিরোধ, মারামারি ও হানাহানি চরম পর্যায়ে পৌঁছে। ফলে একে অপরে মামলা-মুকাদ্দিমা করতে তাদের মূল ধন ও আর অবশিষ্ট থাকে না।
যুব-সমাজের সমস্যার সমাধান
যুবকদের সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান হল, যদি তারা স্ত্রীদের ভরণ পোষণ ও মোহরানা আদায়ে সক্ষম হয়, তাহলে তাদের বিবাহ দিয়ে দেয়া। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻟﺸﺒﺎﺏ ﻣﻦ ﺍﺳﺘﻄﺎﻉ ﻣﻨﻜﻢ ﺍﻟﺒﺎﺀﺓ ﻓﻠﻴﺘﺰﻭﺝ ، ﻓﺈﻧﻪ ﺃﻏﺾ ﻟﻠﺒﺼﺮ ، ﻭﺃﺣﺼﻦ ﻟﻠﻔﺮﺝ ، ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺴﺘﻄﻊ ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻪ ﻭﺟﺎﺀ » .
“হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্য হতে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা যেন বিবাহ করে। কারণ, তা চক্ষুর জন্য শীতলতা ও লজ্জা স্থানের সংরক্ষণ। আর যে সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে, কারণ, রোজা রাখা তার জন্য প্রবৃত্তি-নিরোধক।” [বুখারী, মুসলিম]
পড়ালেখা শেষ না করা বিবাহের জন্য কখনোই প্রতিবন্ধক নয়। বিশেষ করে, যখন সে কোন ধনী পরিবারের সন্তান হয়ে থাকে অথবা তার পিতা তার প্রয়োজনীয় খরচ বহন করার সামর্থ্য রাখে অথবা ছেলের নিকট সম্পদ থাকে বা তার চাকুরীর ব্যবস্থা থাকে, তখন বিবাহ করতে কোন বাধা নাই। বরং বিবাহ করে ঘর সংসার করাই তার জন্য মহৎ কাজ।
পিতার দায়িত্ব হল, ছেলে যখন বিবাহের বয়স হবে, তখন তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবাহ দিয়ে দেয়া। বিশেষ করে, যখন পিতা ধনী হয়, তখন সে তার ছেলেকে বিবাহ করাতে কোন প্রকার কালক্ষেপণ করবে না। আর একটি কথা অবশ্যই মনে রাখবে, যুবক ছেলে কোন প্রকার অশ্লীল কাজে জড়িত হওয়ার চেয়ে, তাকে বিবাহ দিয়ে দেয়া অধিক উত্তম। কারণ, যদি কোন অশ্লীল কাজে জড়িত হয়, তখন সমাজে সে অপমানিত হবে। আর ছেলেও যখন ধনী হয়, তখন সে নমনীয়তার সাথে তার পিতাকে বিবাহ দিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাতা-পিতার পছন্দ ও তাদের সন্তুষ্টিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত।
একটি কথা প্রতিটি মানুষের মনে রাখেতে হবে, মহান আল্লাহ তা‘আলা যে কোন কিছুকে হারাম করেছে, তবে তার জায়গায় উত্তম একটি জিনিস হালাল করেছে। যেমন, মহান আল্লাহ তা‘আলা সুদকে হারাম করছে, তার বিপরীতে ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর জিনাকে হারাম করছেন, তার বিপরীতে তিনি বিবাহকে হালাল করছেন। মোটকথা, যুবকদের সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায় হল, বিবাহ।
আর যখন অভাবী হয়, মোহরানা, বা খরচা বহন করতে অক্ষম হওয়ার কারণে যুবকের জন্য বিবাহ করা সম্ভব না হয়, তখন তার জন্য উত্তম চিকিৎসা নিম্নরূপ:
১. রোজা রাখা: কারণ হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺴﺘﻄﻊ ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ ، ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻪ ﻭﺟﺎﺀ » .
“যে অক্ষম হয়, সে যেন রোজা রাখে। কারণ, রোজা রাখা তার জন্য প্রবৃত্তি-নিরোধক।”
আর যে ব্যক্তি বিবাহ করতে অক্ষম, তার উপর রোজা রাখা আবশ্যক। কারণ, রোজা মানুষের যৌবনকে দমিয়ে রাখে এবং তাদের জন্য সাময়িক উপশম হয়। রোজা যুবকদের প্রবৃত্তিকে দুর্বল করে দেয়। তবে রোজা শুধু খানা-পিনা থেকে বিরত থাকার নাম নয় বরং, রোজা হল, নিষিদ্ধ বস্তুর দিকে তাকানো, মেয়েদের সাথে উঠবস করা, অশ্লীল সিনেমা, নাচ-গান শোনা ও নাটক দেখা এবং অশ্লীল উপন্যাস ও গল্পের বই পড়া হতে বিরত থাকা সহ যাবতীয় অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকা হল রোজা। আর যুবকদের উচিত হল, তারা তাদের চক্ষুর হেফাজত করবে, কানের হেফাজত করবে এবং মাথা-বনত করে রাস্তায় চলাফেরা করবে। কারণ, মহান আল্লাহ তা‘আলা সংযমের মধ্যেই সমাধান রেখেছেন। প্রবৃত্তির পূজা করার মধ্যে তিনি কোন সমাধান রাখেন নি, বরং তাতে তিনি রেখেছেন বিপদ ও সমস্যা ।
২. উন্নত হওয়া ও উত্তম আদর্শ গ্রহণ করা:
মনোবিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেন যে, মানুষের মধ্যে সুপ্ত যৌননাভূতি বা মানুষের যৌন প্রকৃতিকে উন্নীত ও নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে নয়, বরং তা মানুষের ক্ষমতার আওতাধীন ও মানুষের দ্বারা তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি তোমার বিয়ে করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে তার অর্থ এ নয় যে, তোমাকে বিপথে যেতে হবে। বরং তুমি ইচ্ছা করলে উত্তম আদর্শ আঁকড়ে ধরতে পার। তুমি কখনো অশ্লীলতার কাছেও না গিয়ে থাকতে পার, তুমি সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে উন্নত চরিত্রকেই অবলম্বন করতে পার। আর তা হল, তুমি আত্মিক সাধনার প্রতি অধিক চেষ্টা কর। এ ছাড়াও সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত. জিকির, হাদিস অধ্যয়ন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী, মহা-মনীষীদের জীবনী পাঠ ইত্যাদির প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করবে, তাতে তোমার মন আর খারাপ কাজের দিকে ধাবিত হবে না। অথবা কাজে মনোযোগ দেয়া, লেখালেখি ও গবেষণা করা, চিত্রাঙ্কন, ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকার মাধ্যমেও নিজেকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে হেফাজত করা যায়। বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, দৈহিক ব্যায়াম, হাস্যরস, রসিকতা ইত্যাদি মানুষকে খারাপ চিন্তা থেকে হেফাজত করে এবং অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখে।
৩. দৈহিক ব্যায়াম: এটি হল, মানুষের দৈহিক পরিশ্রম। মানুষ যখন দৈহিক পরিশ্রম তথা ব্যায়াম করে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা ও অন্যায়-অনাচার মুক্ত সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে, তখন মানুষের মধ্যে খারাপ কোন চিন্তা স্থান পায় না। তখন সে ব্যভিচার যা একজন যুবকের জন্য দৈহিক ও নৈতিক উভয়ের জন্য মারাত্মক পরিণতি ভয়ে আনে, থেকে নিজেকে হেফাজত করবে। একজন যুবক যখনই তার প্রবৃত্তির চাপ অনুভব করবে, তখন সে যখন দৈহিক পরিশ্রম করবে, তাতে তার যে অতিরিক্ত চাহিদাটি ছিল, তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। দীর্ঘ লম্বা দৌড়, ভারি বোঝা বহন, কুস্তি, প্রতিযোগিতা, যুদ্ধের ট্রেনিং, সাতার, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা ইত্যাদি মানুষের প্রবৃত্তির চাহিদা কমিয়ে দেয়।
৪. ইসলাম বিষয়ে বই-পুস্তক অধ্যয়ন করা: সবচেয়ে উত্তম হল, কুরআন তিলাওয়াত করা, হাদিস ও তাফসীর পড়া, কুরআনের কিছু অংশ হেফজ করা ও হাদিস মুখস্থ করা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরাত সম্পর্কে জানা, খুলাফায়ে রাশেদীন, চিন্তাবিদ ও বড় বড় মনীষীদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা। দ্বীনি মজলিশে অংশগ্রহণ করা, ইলমের আলোচনায় শরিক হওয়া, কুরআন তিলাওতের সিডি-ভিসিডি/রেডিও ইত্যাদি শোনা ।
মোট কথা, একজন যুবকের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা হল, বিবাহ। আর তা যদি কোন কারণে সম্ভব না হয়, তাহলে উপর কর্তব্য হল, রোজা রাখা, দৈহিক পরিশ্রম করা, জ্ঞান অর্জন করা। আর জ্ঞান অর্জন হল শক্তিশালী ঠিকানা যা মানুষের উপকার করে; কষ্ট দেয় না। তারপর সর্বোত্তম চিকিৎসা হল, যে সবের প্রতি দেখতে মহান আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন, তা হতে চোখের হেফাজত করা। মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করা যে, যাতে মহান আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য বিবাহকে সহজ করে দেয়।
গ্রহণযোগ্য দোয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর সময় এ দোয়াটি পড়ে,
ﻻ ﺍﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺣﺪﻩ ﻻ ﺷﺮﻳﻚ ﻟﻪ ﻟﻪ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﻭﻟﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻭﻫﻮ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﺷﺊ ﻗﺪﻳﺮ ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﺍﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﻭﻻ ﺣﻮﻝ ﻭﻻ ﻗﻮﺓ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ
অর্থ ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন হক ইলাহ নাই, তিনি একক তারা কোন শরীক নাই। রাজত্ব তারই প্রশংসা ও তার। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতা রাখেন। আল্লাহ পবিত্র, সব প্রশংসা আল্লাহর, তিনি ছাড়া আর কোন হক ইলাহ নাই, তিনি সবচাইতে বড়। আল্লাহর তাওফিক ছাড়া কেউ কোন ভালো কাজ করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে তাওফিক দেয় তাকে বিরত রাখার কেউ নাই।’ তারপর সে বলে ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺃﻏﻔﺮ ﻟﻲ মহান আল্লাহ তা‘আলা তার দুয়া কবুল করেন। আর যদি সে ওযু করে এবং সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার সালাতকে কবুল করে।”
জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষতি
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ ﺍﻟْﻤَﺎﻝُ ﻭَﺍﻟْﺒَﻨُﻮﻥَ ﺯِﻳﻨَﺔُ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ }
“সম্পদ ও সন্তান দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য।”
ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি মহান আল্লাহ তা‘আলার বহুত বড় নেয়ামত, যার প্রতি মানুষ স্বভাবতই ধাবিত ও আকৃষ্ট হয়ে থাকে। এ দুটি হল, মানুষের জন্য তাদের দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য, গৌরব ও সম্মান। তবে বর্তমানে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে কিছু মানুষ শুধু তাদের সন্তানের হার কমিয়ে আনার প্রবণতা অবলম্বন করছে। স্বভাবতই তারা তাদের সম্পদকে কমানোর চেষ্টা কখনোই করে না। অথচ মাল ও সন্তান-সন্ততি হল, মানুষের দুনিয়া ও পরকালের জীবনের অমূল্য সম্পদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺇﺫﺍ ﻣﺎﺕ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﺍﻧﻘﻄﻊ ﻋﻤﻠﻪ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺛﻼﺙ : ﺻﺪﻗﺔ ﺟﺎﺭﻳﺔ ، ﺃﻭ ﻋﻠﻢ ﻳﻨﺘﻔﻊ ﺑﻪ ، ﺃﻭ ﻭﻟﺪ ﺻﺎﻟﺢ ﻳﺪﻋﻮ ﻟﻪ » .
অর্থাৎ, মানুষ যখন মারা যায়, তিনটি আমল ছাড়া তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, এক- ছদকা জারিয়া, দুই-উপকারী ইলম, তিন-নেক সন্তান যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া করে।
২. ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের অধিকারী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺗﺰﻭﺟﻮﺍ ﺍﻟﻮﺩﻭﺩ ﺍﻟﻮﻟﻮﺩ ، ﻓﺈﻧﻲ ﻣﻜﺎﺛﺮ ﺑﻜﻢ ﺍﻷﻣﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ » .
“তোমরা অধিক সন্তানের অধিকারী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”
৩. মনে রাখতে হবে, ইসলাম শুধু মাত্র স্ত্রী রোগী হওয়ার কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দিয়েছে। যদি কোনো মুসলিম ডাক্তার বলে যে, এ মহিলা সন্তান নিলে তার জীবনের জন্য তা হুমকি হবে, তখন তার জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা বৈধ হতে পারে। এ ছাড়া অন্য যে সব কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয় যেমন, অভাব, লালন-পালন করতে না পারা, পড়া-লেখা করাতে অক্ষম হওয়া, নারীদের জন্য ক্ষতিকর ইত্যাদি— এ ধরনের কোন কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻳَﻌِﺪُﻛُﻢُ ﺍﻟْﻔَﻘْﺮَ } .
“শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়।” [সূরা আল-বাক্বারা]
৪. ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অথচ, তারা নিজেরা তাদের সংখ্যা বাড়ানো এবং তাদের অধিবাসীদের সংখ্যা যাতে সর্বোচ্চ হয়, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। তাদের সংখ্যা মুসলিমদের সংখ্যা হতে অধিক হয় এবং মুসলিমদের সংখ্যা কমে যায় এ কারণে তারা মুসলিমদের মধ্যে জন সংখ্যা বৃদ্ধিটাকে সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে। যেমনটি মিশর এবং আরও অন্যান্য মুসলিম দেশে বিষয়টি স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত। তারা এটিকে পরিবার পরিকল্পনা করে নামকরণ করে থাকে, বাস্তবে তা পরিকল্পনা নয় বরং মুসলিম নিধন বলা যেতে পারে। তারা আমাদের দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণের টেবলেটগুলো বিনা মূল্যে বিতরণ করে অথচ আমাদের দেশের অভাবী ও গরীবদের জন্য খাদ্য বিতরণ করে না। অভাবীদের অভাব দূরীকরণের কোন চেষ্টা না করে মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করে। প্রশ্ন হল, মুসলিমরা কি এ ধরনের শরীয়ত বিরোধী কাজের পরিণাম সম্পর্কে একবারও ভেবে দেখছে?
সালাতের ফজিলত এবং যারা সালাত ছেড়ে দেয় তাদের শাস্তি
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺻَﻠَﺎﺗِﻬِﻢْ ﻳُﺤَﺎﻓِﻈُﻮﻥَ ﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﻓِﻲ ﺟَﻨَّﺎﺕٍ ﻣُّﻜْﺮَﻣُﻮﻥَ ﴾
“আর যারা নিজেদের সালাতের হিফাজত করে, তারাই জান্নাতসমূহে সম্মানিত হবে।” [সূরা আল-মা‘আরিজ: ৩৪-৩৫]
২. মহান আল্লাহ আরও বলেন,
﴿ ﺍﺗْﻞُ ﻣَﺎ ﺃُﻭﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻭَﺃَﻗِﻢِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﺗَﻨْﻬَﻰ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻔَﺤْﺸَﺎﺀ ﻭَﺍﻟْﻤُﻨﻜَﺮِ ﻭَﻟَﺬِﻛْﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﺗَﺼْﻨَﻌُﻮﻥَ ﴾
অর্থ, “তোমার নিকট কিতাবের যে ওহী প্রেরণ করা হয়েছে, তা হতে তিলাওয়াত কর, সালাত কায়েম কর, নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখে। আর আল্লাহর জিকিরই সবচেয়ে বড়। আর আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।” [সূরা আল-আনকাবুত: ৪৫]
৩. মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ﻓَﻮَﻳْﻞٌ ﻟِّﻠْﻤُﺼَﻠِّﻴﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻋَﻦ ﺻَﻠَﺎﺗِﻬِﻢْ ﺳَﺎﻫُﻮﻥَ﴾
অর্থ, “অতএব সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজদের সালাতে অমনোযোগী। অর্থাৎ, তারা সালাত আদায় হতে গাফেল, সালাতকে সময়মত আদায় করে না।” [সূরা আল-মা‘ঊন : ১-২]
৫. মহান আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ ﻗَﺪْ ﺃَﻓْﻠَﺢَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺻَﻠَﺎﺗِﻬِﻢْ ﺧَﺎﺷِﻌُﻮﻥَ﴾
অর্থ, “অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা তাদের নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত।” [সূরা আল-মুমিনুন: ১-২]
৬. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻓَﺨَﻠَﻒَ ﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪِﻫِﻢْ ﺧَﻠْﻒٌ ﺃَﺿَﺎﻋُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻬَﻮَﺍﺕِ ﻓَﺴَﻮْﻑَ ﻳَﻠْﻘَﻮْﻥَ ﻏَﻴًّﺎ ﴾ .
অর্থ, “তাদের পরে আসল, এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।” [সূরা মারইয়াম]
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের প্রশ্ন করে বললেন,
« ﺃﺭﺃﻳﺘﻢ ﻟﻮ ﺃﻥ ﻧﻬﺮﺍً ﺑﺒﺎﺏ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻳﻐﺘﺴﻞ ﻓﻴﻪ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺧﻤﺲ ﻣﺮﺍﺕ ، ﻫﻞ ﻳﺒﻘﻰ ﻣﻦ ﺩﺭﻧﻪ ﺷﺊ ؟ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻻ ﻳﺒﻘﻰ ﻣﻦ ﺩﺭﻧﻪ ﺷﺊ ، ﻗﺎﻝ ﻓﺬﻟﻚ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﺨﻤﺲ ﻳﻤﺤﻮ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻬﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﻳﺎ» .
অর্থ, “তোমাদের বাড়ির সামনে একটি নদী আছে, তাতে যদি তোমাদের কেউ দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোন ময়লা থাকতে পারে?” সাহাবীরা উত্তরে বললেন, না। তখন রাসূল সা. বললেন, “এ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ সমূহ মুছে দেন।” [বুখারী, মুসলিম]
৮. রাসূল সা. আরও বলেন,
« ﺍﻟﻌﻬﺪ ﺍﻟﺬﻱ ﺑﻴﻨﻨﺎ ﻭﺑﻴﻨﻬﻢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﻓﻤﻦ ﺗﺮﻛﻬﺎ ﻓﻘﺪ ﻛﻔﺮ » .
আমাদের মাঝে আর অমুসলিমদের মাঝে চুক্তি হল, সালাত। যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল, সে কুফরী করল। [সহীহ, মুসনাদ আহমদ]
৯. রাসূল সা. আরও বলেন,
« ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﺸﺮﻙ ﻭﺍﻟﻜﻔﺮ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﺼﻼﺓ » .
একজন মানুষ ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারিত হয়, সালাত ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে। [মুসলিম]
শিশুদের ওযু ও সালাতের শিক্ষা দেয়া
ওযুর নিয়ম হল, প্রথমে বিসমিল্লাহ বলবে।
১. দুই হাতের কব্জি তিনবার ধোয়া, তারপর তিনবার করে নাকে পানি দেয়া ও তিনবার কুলি করা।
২. সমস্ত চেহারা তিনবার ধোয়া।
৩. প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাতের কনুই সহ তিনবার ধোয়া।
৪. সমস্ত মাথা কানসহ মাসেহ একবার করা।
৫. দুই পায়ের টাখনু সহ তিনবার ধোয়া।
আর যদি কোন ব্যক্তি ওযু করতে সক্ষম না হয়, তাকে অবশ্যই তায়াম্মুম করতে হবে। তায়াম্মুমের পদ্ধতি হল, প্রথমে পবিত্রতার নিয়ত করবে, তারপর তুমি তোমার চেহারাকে পাক মাটি দ্বারা মাসেহ করবে, এবং দুই হাতের কব্জীদ্বয় মাটি দ্বার মাসেহ করবে।
ওযু করতে অক্ষম হওয়ার কারণ: হয়তো পানি ব্যবহার দ্বারা ক্ষতি হতে পারে বা পানি না পাওয়া যাওয়া হতে পারে, অথবা সফরে তার সাথে পানি একবারেই কম; যদি ঐ পানি দিয়ে ওযু করে তবে খাওয়ারের পানি থাকবে না। এসব কারণে তার জন্য তায়াম্মম করা বৈধ ও শরিয়ত সম্মত।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময় মত আদায় করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কীভাবে আদায় করতে হয়, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেয়া হল, যাতে শিশুরা তাদের জীবনের শুরুতেই সালাত আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে অবগত হতে পারে।
ফজরের সালাত যেভাবে আদায় করবে
ফজরের সালাত দুই রাকাত; নিয়ত করা ফরয, তবে নিয়তের স্থান হল, অন্তর মুখে কোন নিয়ত পড়া বা উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নাই।
১. সালাত আদায়ের সময় প্রথমে কেবলামুখী হয়ে দাড়াতে হবে। তারপর দু হাত কান পর্যন্ত উঠাবে এবং আল্লাহু আকবর বলে হাত বাধবে।
২. হাত বাধার নিয়ম হল, ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বক্ষের উপর ছেড়ে দেবে। তারপর সানা পড়বে।
« ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ، ﻭﺗﺒﺎﺭﻙ ﺍﺳﻤـﻚ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﺟﺪﻙ ، ﻭﻻ ﺍﻟﻪ ﻏﻴﺮﻙ »
অর্থ, “হে আল্লাহ আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তোমার প্রশংসা করছি। তোমার নাম কত-না বরকতময়! আর তোমার মর্যাদা কতই না ঊর্ধ্বে! তুমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নাই।”
এ দোয়াটি ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত অন্য যে কোন দুয়া এ দোয়ার পরিবর্তে পড়তে পারবে।
প্রথম রাকাত যেভাবে আদায় করবে -
ﺃﻋﻮﺫ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺍﻟﺮﺟﻴﻢ
[আ‘উযু বিল্লাহি মিনাশশাইতানির রাজীম] পড়বে।
অর্থ, “হে আল্লাহ আমি বিতাড়িত শয়তান হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
তারপর,
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
[বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম]
অর্থ, “আমি পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।” নিম্ন আওয়াজে পড়বে।
তারপর সূরা ফাতেহা পড়বে।
﴿ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟﻠّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ * ﺍﻟﺮَّﺣْﻤﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ * ﻣَﻠِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ * ﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﻭﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴﻦُ * ﺍﻫﺪِﻧَﺎ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟﻤُﺴﺘَﻘِﻴﻢَ * ﺻِﺮَﺍﻁَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻧﻌَﻤﺖَ ﻋَﻠَﻴﻬِﻢْ * ﻏَﻴﺮِ ﺍﻟﻤَﻐﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴﻬِﻢْ ﻭَﻻَ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ﴾ .
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। দয়াময়, পরম দয়ালু বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা ইবাদত করি। এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল পথ দেখান। তাদের পথ যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্ট ও নয়।”
তারপর আবার বিসমিল্লাহ পড়ে, যে কোন একটি সূরা পড়বে। যেমন-
﴿ ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ * ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟﺼَّﻤَﺪُ * ﻟَﻢْ ﻳَﻠِﺪْ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻮﻟَﺪْ * ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻪُ ﻛُﻔُﻮًﺍ ﺃَﺣَﺪٌ ﴾
“বল, তিনিই আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। আর তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই।”
১. সূরা শেষে তুমি দুই হাত উঠাবে এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলে রুকু করবে, রুকুতে তোমার দুই হাতকে তোমার দুই টাখনুর উপর রাখবে এবং রুকুতে তিনবার ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺭﺑﻲ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ বলবে।
২. তারপর দুই হাত ও মাথা উঠিয়ে বলবে—
ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻤﻦ ﺣﻤﺪﻩ ، ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ
অর্থ, “আল্লাহ শোনেন যে তার প্রশংসা করে। হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা তোমারই।”
৩. তারপর তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলে সেজদা করবে, দুই হাত, হাঁটু, কপাল, নাক, দু পায়ের অঙ্গুলি কেবলা মুখ করে মাটিতে রাখবে। আর সেজদায় গিয়ে ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺭﺑﻲ ﺍﻷﻋﻠﻰ “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” তিনবার বলবে।
৪. তারপর সেজদা থেকে মাথা উঠাবে এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলবে। সেজদা হতে উঠে দুই হাত হাঁটুর উপর রেখে বসবে। তারপর বসা অবস্থায় বলবে,
ﺭﺏ ﺍﻏﻔﺮ ﻟﻲ ﻭﺍﺭﺣﻤﻨﻲ ﻭﺍﻫﺪﻧﻲ ﻭﻋﺎﻓﻨﻲ ﻭﺍﺭﺯﻗﻨﻲ
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর, তুমি আমাকে হেদায়েত দাও, মাপ কর এবং রিজিক দাও।”
৫. তারপর তাকবীর বলে জমিনে দ্বিতীয় সেজদা করবে। এবং সেজদায় ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺭﺑﻲ ﺍﻷﻋﻠﻰ তিনবার বলবে। এভাবে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করবে।
দ্বিতীয় রাকাত যেভাবে আদায় করতে হবে:
১. তারপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে এবং “আ‘উযু বিল্লাহ”, “বিসমিল্লাহ”, “সূরা ফাতেহা” সাথে অন্য একটি সূরা বা কুরআনের যে কোন স্থান থেকে কিছু অংশ তিলাওয়াত করবে।
২. তারপর পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী রুকু-সেজদা করার পর, দ্বিতীয় সেজদা শেষে বসবে। ডান হাতের আঙ্গুলগুলোকে গুছিয়ে রেখে, শাহাদত আঙ্গুলটি উঁচা করে রাখবে এবং আত্তাহিয়াতু পড়বে।
« ﺍﻟﺘَّﺤِﻴَّﺎﺕُ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺕُ ﻭَﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕُ، ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺑَﺮَﻛَﺎﺗُﻪُ، ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻋِﺒَﺎﺩِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ، ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ * ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ، ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴﺪٌ ﻣَﺠِﻴﺪٌ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ، ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴﺪٌ ﻣَﺠِﻴﺪٌ »
অর্থ: “যাবতীয় সম্মান আল্লাহর জন্য, আর যাবতীয় সালাত ও সমূদয় পবিত্র প্রসংসা সবই তাঁর জন্য। হে নবী আপনার উপর সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক, অনুরূপভাবে আল্লাহর রহমত ও বরকত। আর সালাম বর্ষিত হোক আমাদের উপর এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।”
হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদের উপর সালাত পেশ করুন এং তাঁর পরিবারভুক্তদের উপরও, যেমনিভাবে সালাত পেশ করেছেন ইবরাহীমের উপর এবং তার পরিবারের উপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও অতিশয় সম্মানিত। হে আল্লাহ আপনি বরকত প্রদান করুন মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পারিবারভুক্তদের উপরও। যেমনি আপনি বরকত প্রদান করেছেন ইবরাহীমের উপর এবং ইবরাহীমের পরিবারের উপর। নিশ্চয় আপনি অতিশয় প্রশংসিত ও খুবই মর্যাদাবান। [বুখারী]
৩. তারপর দুয়ায়ে মাসূরা পড়বে— যেমন,
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺇﻧﻲ ﺃﻋﻮﺫ ﺑﻚ ﻣﻦ ﻋﺬﺍﺏ ﺟﻬﻨﻢ ﻭﻣﻦ ﻋﺬﺍﺏ ﺍﻟﻘﺒﺮ ، ﻭﻣﻦ ﻓﺘﻨﺔ ﺍﻟﻤﺤﻴﺎ ﻭﺍﻟﻤﻤﺎﺕ ، ﻭﻣﻦ ﻓﺘﻨﺔ ﺍﻟﻤﺴﺢ ﺍﻟﺪﺟﺎﻝ .
অর্থ, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের শাস্তি ও কবরের আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আরও আশ্রয় প্রার্থনা করছি, হায়াত ও মওতের ফিতনা হতে এবং মাসীহ-দাজ্জালের ফিতনা হতে।”
৪. ডনে বামে সালাম ফিরাবে। আর উভয় দিকে সালাম ফিরানোর সময় বলবে,
« ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ » .
অর্থ, “তোমাদের উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।”
সালাতের রাকাতের সংখ্যার চার্ট
সালাত
পূর্বের সুন্নাত
ফরয
পরের সুন্নাত
ফজর



যোহর
২ এবং ২


আসর
২ এবং ২


মাগরিব



এশা


২ এবং ৩ (বিতর)
জুমা
২ (তাহিয়্যাতুল মসজিদ)

২ (ঘরে পড়লে) অথবা
২ এবং ২ (মসজিদে পড়লে)
সালাতের কিছু বিধি-বিধান
১. ফরয সালাতের পূর্বে ও পরে কিছু সুন্নাত সালাত আছে সেগুলো পাবন্দির সাথে আদায় করতে হবে।
২. সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় তোমার দৃষ্টি থাকবে সেজদার স্থানের দিকে। এদিক সেদিক তাকাবে না। অনেকে আছে সালাতে এদিক সেদিক তাকিয়ে থাকে, যা সালাতের মধ্যে একাগ্রতার পরিপন্থী।
৩. আর যখন তুমি জামাতে সালাত আদায় করবে, তখন ইমাম যদি কিরাত নিম্ন স্বরে পড়ে, তখন তুমিও তোমার সালাতে কিরাত পড়বে। আর যখন কিরাত উচ্চস্বরে পড়ে, তখন ওয়াকফের ফাকে ফাকে সূরা ফাতেহা পড়ে নিবে।
৪. জুমার সালাতের ফরয হল, দুই রাকাত। জুমার সালাত কেবল শুধু মসজিদে গিয়ে জুমার খুতবার পরে ইমামের সাথে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নিবে।
৫. মাগরিবের সালাত তিন রাকাত। ফজরের সালাতের মত দুই রাকাত সালাত আদায় করবে। তারপর যখন দ্বিতীয় রাকাত শেষে আত্তাহিয়্যাতু পড়া শেষ হবে, সালাম ফিরাবে না, তৃতীয় রাকাতের জন্য দুহাত কাঁদ পর্যন্ত উঁচা করে তাকবীর-আল্লাহু আকবর- বলে উঠে দাঁড়াবে। তারপর সূরা ফাতেহা পড়ে, উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী সালাত সম্পন্ন করবে। তারপর ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে বলবে,
« ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ » .
অর্থ, তোমাদের উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
৬. যোহর, আছর ও এশার সালাত চার রাকাত। ফজরের সালাত যেভাবে আদায় করতে হয়, সেভাবে প্রথম দুই রাকাত সালাত আদায় সম্পন্ন করে বৈঠক শেষে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে সালাম না ফিরিয়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। তৃতীয় রাকাত শেষে চতুর্থ রাকাত পড়বে এবং পরবর্তী দুই রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়বে। তারপর সালাতকে সম্পন্ন করার পর ডামে বামে সালাম ফিরাবে।
৭. ভিতিরের সালাত তিন রাকাত। প্রথমে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে। তারপর এক রাকাত পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। উত্তম হল, রুকুর আগে বা পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত দুয়াসমূহ দ্বারা দোয়া করবে। রাসূল হতে বর্ণিত দোয়া যেমন-
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻫﺪﻧﻲ ﻓﻴﻤﻦ ﻫﺪﻳﺖ ، ﻭﻋﺎﻓﻨﻲ ﻓﻴﻤﻦ ﻋﺎﻓﻴﺖ ، ﻭﺑﺎﺭﻙ ﻟﻲ ﻓﻴﻤﺎ ﺃﻋﻄﻴﺖ ، ﻭﻗﻨﻲ ﺷﺮ ﻣﺎ ﻗﻀﻴﺖ ، ﺇﻧﻚ ﺗﻘﻀﻰ ﻭﻻ ﻳﻘﻀﻰ ﻋﻠﻴﻚ ، ﺇﻧﻪ ﻻ ﻳﺬﻝ ﻣﻦ ﻭﺍﻟﻴﺖ ، ﻭﻻ ﻳﻌﺰ ﻣﻦ ﻋﺎﺩﻳﺖ ، ﺗﺒﺎﺭﻛﺖ ﺭﺑﻨﺎ ﻭﺗﻌﺎﻟﻴﺖ .
অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি যাদের হেদায়েত দিয়েছ এবং যাদের তুমি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছ, আমাকে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি আমাকে যা দান করছ, তাতে তুমি বরকত দাও। তুমি যে সব খারাপ কাজের ফায়সালা করেছ, তা থেকে তুমি আমাকে বাচাও। নিশ্চয় তুমিই ফায়সালা দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ ফায়সালা দেয় না। তুমি যাকে সম্মান দাও তাকে আর কেউ অপমান করতে পারে না। আর তুমি যাকে অপমান কর, তাকে কেউ ইজ্জত দিতে পারে না। হে প্রভু! তুমি বরকতময় ও মহান।
৮. যখন ইমামের সাথে সালাত আদায় করবে, তখন তুমিও তার সাথে সালাতে দাঁড়াবে এবং তাকবীর -আল্লাহু আকবর- বলবে। ইমামকে যে অবস্থায় পাবে, সে অবস্থায় ইমামের সাথে শরীক হয়ে যাবে। যদি ইমাম রুকু-রত হয়ে থাকে, তখন তুমি রুকুতে শরীক হয়ে, ইমামের অনুকরণ করবে, যদি তুমি ইমামের সাথে পুরোপুরি রুকু পাও, তাহলে তুমি সে রাকাত পেলে। আর যদি রুকু না পাও তাহলে, সে রাকাত পেয়েছ, বলে হিসাব করা যাবে না। ঐ রাকাত তোমাকে পরবর্তীতে আবার আদায় করতে হবে।
৯. আর যখন তোমার রাকাত ছুটে যাবে, তখন তা ইমামের সালাম ফিরানোর পর আদায় করবে। ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে না। বাকী সালাত আদায়ের জন্য তুমি একা দাড়িয়ে যাবে।
১০. মনে রাখবে সালাতে তাড়াহুড়া করবে না। কারণ, তা সালাত বাতিল করে দেয়। হাদিসে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে সালাতে তাড়াহুড়া করতে দেখে বলল, [ ﺇﺭﺟﻊ ﻓﺼﻞ ﻓﺈﻧﻚ ﻟﻢ ﺗﺼﻞ] তুমি ফেরৎ যাও এবং পুনরায় সালাত আদায় কর। তখন লোকটি ফেরত গিয়ে আবার সালাত আদায় করল, রাসূল তাকে আবার বলল, তুমি ফেরত যাও, পুনরায় সালাত আদায় কর, এভাবে তিনবার রাসূল লোকটিকে ফেরত পাঠাল। লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তৃতীয়বারে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সালাতের নিয়ম শিখিয়ে দিন, তখন সে বলল,
« ﺍﺭﻛﻊ ﺣﺘﻰ ﺗﻄﻤﺌﻦ ﺭﺍﻛﻌﺎً ، ﺛﻢ ﺍﺭﻓﻊ ﺣﺘﻰ ﺗﺴﺘﻮﻱ ﻗﺎﺋﻤﺎً ، ﺛﻢ ﺍﺳﺠﺪ ﺣﺘﻰ ﺗﻀﻤﺌﻦ ﺳﺎﺟﺪﺍً ، ﺛﻢ ﺍﺭﻓﻊ ﺣﺘﻰ ﺗﻀﻤﺌﻦ ﺟﺎﻟﺴﺎً » .
অর্থ, তুমি রুকু কর, এমনভাবে যাতে রুকুতে তুমি স্বস্তি লাভ কর। তারপর রুকু হতে সোজা হয়ে দাড়াও, তারপর সেজদা কর, যাতে সেজদায় তুমি স্বস্তি লাভ কর। তারপর তুমি মাথা উঠাও যাতে বসা অবস্থায় তুমি স্বস্তি পাও।
১১. যখন সালাতের ওয়াজিবসমূহ হতে কোন ওয়াজিব ছুটে যাবে, যেমন- তোমরা প্রথম বৈঠক ছুটে গেল, অথবা তুমি কত রাকাত পড়ছ, তা ভুলে গেছ, তখন তুমি নিশ্চিত সংখ্যা অনুযায়ী সালাত আদায় করে নিবে এবং সালাতের শেষাংশে দুই সেজদা করবে এবং সালাম ফিরাবে। এ সেজদাকে সেজদায়ে সাহু বলে।
১২. সালাতে অধিক নড়াচড়া করবে না। কারণ, অধিক নড়া-চড়া করা সালাতে একাগ্রতা ও খুশুর পরিপন্থী। অনেক সময় বিনা প্রয়োজনে অধিক নড়া-চড়া সালাত নষ্টেরও কারণ হয়।
১৩. এশার সালাতের সময় অর্ধ রাত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। এ সময়ের মধ্যে সালাত আদায় করে নিতে হবে, সুতরাং প্রয়োজন ছাড়া এশার সালাতকে দেরি করা ঠিক হবে না। আর বিতর সালাতের সময় সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত। বিতর সালাত হল রাতের সর্বশেষ সালাত।
সালাতের হাদিসসমূহ
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺻﻠﻮﺍ ﻛﻤﺎ ﺭﺃﻳﺘﻤﻮﻧﻲ ﺃﺻﻠﻲ
অর্থ, তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে সালাত আদায় কর।
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﻠﻴﺮﻛﻊ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﻳﺠﻠﺲ ‏« ﻭﺗﺴﻤﻰ ﺗﺤﻴﺔ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ » .
তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন বসার পূর্বে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেয়।
[এ দু রাকাত সালাতকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ বলা হয়]
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
ﻻ ﺗﺠﻠﺴﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ ، ﻭﻻ ﺗﺼﻠﻮﺍ ﺇﻟﻴﻬﺎ .
তোমরা কবরকে আসন বানাবে না এবং কবরের দিকে মুখ করে সেজদা করবে না।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺃﻗﻴﻤﺖ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﻓﻼ ﺻﻼﺓ ﺇﻻ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺔ
যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন তোমরা ফরয সালাত ছাড়া আর কোন সালাত আদায় করবে না।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺃﻗﻴﻤﻮﺍ ﺻﻔﻮﻓﻜﻢ ﻭﺗﺮﺍﺻﻮﺍ ، ﻗﺎﻝ ﺃﻧﺲ ﻭﻛﺎﻥ ﺃﺣﺪﻧﺎ ﻳﻠﺰﻕ ﻣﻨﻜﺒﻪ ﺑﻤﻨﻜﺐ ﺻﺎﺣﺒﻪ ، ﻭﻗﺪﻣﻪ ﺑﻘﺪﻣﻪ .
অর্থাৎ তোমরা সালাতের কাতার ঠিক কর এবং একে অপরের সাথে মিলে দাড়াও। আনাস রা. বলেন, আমরা সালাতে একে অপরের কাঁধের সাথে ও পায়ের সাথে মিলিয়ে সালাতে দাঁড়াতাম।
৬. রাসূল বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺃﻗﻴﻤﺖ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻼ ﺗﺄﺗﻮﻫﺎ ﻭﺃﻧﺘﻢ ﺗﺴﻌﻮﻥ ، ﻭﺃﺗﻮﻫﺎ ﻭﺃﻧﺘﻢ ﺗﻤﺸﻮﻥ ، ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﺴﻜﻴﻨﺔ ، ﻓﻤﺎ ﺃﺩﺭﻛﺘﻢ ﻓﺼﻠﻮﺍ ، ﻭﻣﺎ ﻓﺎﺗﻜﻢ ﻓﺄﺗﻤﻮﺍ .
অর্থ, যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন তোমরা দৌড়ে দৌড়ে সালাতে উপস্থিত হবে না। তোমরা স্বাভাবিকভাবে হেঁটে সালাতে উপস্থিত হবে। তোমরা নমনীয়তা প্রদর্শন কর। ইমামের সাথে যতটুকু পাবে আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যাবে, তা পরে তোমরা একা একা সম্পন্ন করবে।
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﻓﻀﻊ ﻛﻔﻴﻚ ، ﻭﺍﺭﻓﻊ ﻣﺮﻓﻘﻴﻚ .
অর্থ, যখন তুমি সেজদা করবে তখন তুমি তোমার উভয় হাত জমিনে রাখবে, আর তোমার দুই বাহুকে উঠিয়ে রাখবে; মাটি হলে আলাদা করে রাখবে।
৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺇﻧﻲ ﺇﻣﺎﻣﻜﻢ ﻓﻼ ﺗﺴﺒﻘﻮﻧﻲ ﺑﺎﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ .
“আমি তোমাদের ইমাম, সুতরাং রুকু সেজদায় তোমরা আমার থেকে আগে বাড়বে না।”
মুক্তাদি কখনোই ইমামের আগে কিছু করবে না। যদি তা করে তাহলে তার সালাত আদায় হবে না।
৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﻳﺤﺎﺳﺐ ﺑﻪ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﺈﻥ ﺻﻠﺤﺖ ﺻﻠﺢ ﻟﻪ ﺳﺎﺋﺮ ﻋﻤﻠﻪ ، ﻭﺇﻥ ﻓﺴﺪﺕ ﻓﺴﺪ ﺳﺎﺋﺮ ﻋﻤﻠﻪ .
অর্থ, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব করা হবে, যখন সালাত ঠিক থাকে, তখন তার যাবতীয় সব আমলই ঠিক থাকে। আর যখন তার সালাতের অবস্থা খারাপ হয়, তখন তার সমস্ত আমলই নষ্ট হয়ে থাকে।
জুমার সালাত ও জামাত ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে
জুমার সালাত আদায় করা এবং জামাতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব। নিম্নে এর উপর কুরআন ও হাদিসের একাধিক দলীল পেশ করা হল।
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﻧُﻮﺩِﻱ ﻟِﻠﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻣِﻦ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﺎﺳْﻌَﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺫِﻛْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺫَﺭُﻭﺍ ﺍﻟْﺒَﻴْﻊَ ﺫَﻟِﻜُﻢْ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَّﻜُﻢْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ﴾ .
অর্থ, হে মুমিনগণ, যখন জুমুআর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা করা ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য অতি উত্তম। যদি তোমরা জানতে পারতে।
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻟﻘﺪ ﻫﻤﻤﺖ ﺃﻥ ﺁﻣﺮ ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ ﻓﺘﻘﺎﻡ ، ﺛﻢ ﺃﺧﺎﻟﻒ ﺇﻟﻰ ﻣﻨﺎﺯﻝ ﻗﻮﻡ ﻻ ﻳﺸﻬﺪﻭﻥ ﺍﻟﺼﻼﺓ ، ﻓﺄﺣﺮﻕ ﻋﻠﻴﻬﻢ» .
অর্থ, আমার ইচ্ছা হয়, আমি একজনকে সালাতের নির্দেশ দেই, সে সালাত কায়েম করে যাবে, আর আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যারা সালাতের জামাতে উপস্থিত হয়নি, তাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেই।
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣﻦ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻨﺪﺍﺀ ، ﻓﻠﻢ ﻳﺄﺗﻪ ، ﻓﻼ ﺻﻼﺓ ﻟﻪ ﺇﻻ ﻣﻦ ﻋﺬﺭ ‏» ‏« ﺍﻟﺨﻮﻑ ﺃﻭ ﺍﻟﻤﺮﺽ » .
যে ব্যক্তি কোন প্রকার অপারগতা [ভয়ভীতি ও অসুস্থতা] ছাড়া আযান শোনে সালাতে উপস্থিত হয় না, তার সালাত আদায় হয় না।
৪. হাদিসে বর্ণিত,
ﺃﺗﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﺟﻞ ﺃﻋﻤﻰ ، ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺇﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﻟﻲ ﻗﺎﺋﺪ ﻳﻘﻮﺩﻧﻲ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ، ﻓﺴﺄﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﺮﺧﺺ ﻟﻪ ، ﻓﺮﺧﺺ ﻟﻪ ، ﻓﻠﻤﺎ ﻭﻟﻰّ ﺩﻋﺎﻩ ﻓﻘﺎﻝ ﻫﻞ ﺗﺴﻤﻊ ﺍﻟﻨﺪﺍﺀ ‏« ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ ‏» ﻗﺎﻝ ﻧﻌﻢ ، ﻗﺎﻝ ﻓﺄﺟﺐ » .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একজন অন্ধ লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন অন্ধ মানুষ আমার এমন কোন লোক নাই যে, আমাকে মসজিদে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সুতরাং আপনি আমাকে জামাতে অনুপস্থিত ও ঘরে সালাত আদায় করার অনুমতি দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে তাকে অনুমতি দেন। তারপর লোকটি চলে যেতে আরম্ভ করলে তাকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন, তুমি কি সালাতের আযান শোনতে পাও? বলল, হ্যাঁ। তাহলে তুমি সালাতের জামাতে উপস্থিত হও।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣﻦ ﺍﻏﺘﺴﻞ ، ﺛﻢ ﺃﺗﻰ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ، ﻓﺼﻠﻰ ﻣﺎ ﻗﺪﺭ ﻟﻪ ، ﺛﻢ ﺃﻧﺼﺖ ﺣﺘﻰ ﻳﻔﺮﻍ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻣﻦ ﺧﻄﺒﺘﻪ ، ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻣﻌﻪ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻪ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺍﻷﺧﺮﻯ ، ﻭﻓﻀﻞ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻳﺎﻡ » .
যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, তারপর মসজিদে উপস্থিত হল, এবং তার জন্য যা নির্ধারণ করা হল, সে পরিমাণ সালাত আদায় করে ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকে এবং ইমামের সাথে দুই রাকাত ফরয সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা এ জুমা হতে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত মাঝখানের গুনাহ গুলো ক্ষমা করে দেবেন এবং আরও অতিরিক্ত তিনি দিনের অপরাধ ক্ষমা করে দেবে।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺛﻼﺙ ﺟﻤﻊ ﺗﻬﺎﻭﻧﺎً ﺑﻬﺎ ، ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻗﻠﺒﻪ » .
যে ব্যক্তি অলসতা করে পরপর তিনটি জুমার সালাত আদায় ছেড়ে দিল, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরের উপর মোহর মেরে দেয়।
সুন্নাত তরীকায় কীভাবে জুমার সালাত আদায় করব?
১. জুমার দিন সকাল বেলা গোসল করবে। হাত পায়ের আঙ্গুল কাটবে এবং ওজু করার পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করব ও সুগন্ধি ব্যবহার করব।
২. আমরা কাঁচা পেয়াজ ও রসূন খাবো না, ধূমপান করব না এবং আমাদের মুখ ধোবো এবং মিসওয়াক বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করব।
৩. মসজিদের প্রবেশের সময় দুই রাকাত সালাত আদায় করব, যদিও খতীব মিম্বারে খুতবার জন্য দাড়িয়ে যায়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাকাত সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
« ﺇﺫﺍ ﺟﺎﺀ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﺍﻹﻣﺎﻡ ﻳﺨﻄﺐ ، ﻓﻠﻴﺮﻛﻊ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﻭﻟﻴﺘﺠﻮﺯ ﻓﻴﻬﻤﺎ »
অর্থ, তোমাদের কেউ যখন ইমাম সাহেব খুতবা দেয়ার সময় জুমার সালাতে উপস্থিত হয়, তখন সে সংক্ষেপে দু রাকাত সালাত আদায় করে নিবে।
৪. আমরা ইমাম বা খতীবের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনবো, কোন কথা বলব না।
৫. ইমামের সাথে মুক্তাদি হয়ে, জুমার দুই রাকাত ফরয সালাত আদায় করব।
৬. জুমার সালাতের পর চার রাকাত সুন্নত সালাত আদায় করব। অথবা বাসায় গিয়ে দু-রাকাত সালাত আদায় করব। এটি হল, উত্তম।
৭. জুমার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বেশি বেশি করে দরুদ পড়বে।
৮. জুমার দিন যে মুহূর্তটি মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়, তা পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺇﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻟﺴﺎﻋﺔ ﻻ ﻳﻮﺍﻓﻘﻬﺎ ﻣﺴﻠﻢ ﻳﺴﺄﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﺧﻴﺮﺍً ﺇﻻ ﺃﻋﻄﺎﻩ ﺇﻳﺎﻩ » .
অর্থ, নিশ্চয় জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, ঐ মুহূর্তটি মধ্যে কোন মুসলিম বান্দা মহান আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ কামনা করে, মহান আল্লাহ তা‘আলা সে কল্যাণ তাকে অবশ্যই দান করবে।
গান-বাজনার বিধান:-
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦ ﻳَﺸْﺘَﺮِﻱ ﻟَﻬْﻮَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻟِﻴُﻀِﻞَّ ﻋَﻦ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻋِﻠْﻢٍ ﻭَﻳَﺘَّﺨِﺬَﻫَﺎ ﻫُﺰُﻭًﺍ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻣُّﻬِﻴﻦٌ ﴾ .
অধিকাংশ তাফসীরকারকদের মতে ﻟَﻬْﻮَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, গান।
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এখানে উদ্দেশ্য হল, গান।
হাসান বসরী রহ. বলেন, আয়াতটি গান-বাজনা ও বাদ্য-যন্ত্র বিষয়ে নাযিল হয়েছে।
২. মহান আল্লাহ তা‘আলা শয়তানকে খেতাব করে বলেন,
﴿ ﻭَﺍﺳْﺘَﻔْﺰِﺯْ ﻣَﻦِ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﺑِﺼَﻮْﺗِﻚَ ﴾
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻟﻴﻜﻮﻧﻦ ﻣﻦ ﺃﻣﺘﻲ ﺃﻗﻮﺍﻡ ﻳﺴﺘﺤﻠﻮﻥ ﺍﻟﺤﺮ ‏« ﺍﻟﺰﻧﺎ ‏» ﻭﺍﻟﺤﺮﻳﺮ، ﻭﺍﻟﺨﻤﺮ ﻭﺍﻟﻤﻌﺎﺯﻑ ‏» – ﺍﻟﻤﻮﺳﻴﻘﻰ - .
অর্থ, আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতক সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে, যারা ব্যভিচার, রেশমি কাপড় পরিধান, মদ-পান ও গান-বাজনাকে হালাল জানবে।
একই অর্থে অপর একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় হতে একটি জামাত এমন হবে, যারা ব্যভিচার করা, রেশমি কাপড় পরিধান, মদ্য-পান ও গান-বাজনাকে হালাল বলে বিশ্বাস করবে, অথচ তা হারাম।
হাদীসে বর্ণিত “মায়াযেফ” বলা হয়, যে সব বাদ্য যন্ত্রে সূর রয়েছে। যেমন, বাঁশি, তবলা, ঢোল ইত্যাদি। এমনকি ঘণ্টিও তার অন্তর্ভুক্ত। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
[ ﺍﻟﺠﺮﺱ ﻣﺰﺍﻣﻴﺮ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ] .
অর্থ, ঘণ্টা হল, শয়তানের বাদ্য-যন্ত্র। হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঘণ্টার আওয়াজও ইসলাম পছন্দ করে নি। জাহিলিয়্যাতের যুগে মুশরিকরা তাদের চতুষ্পদ জন্তুর গলায় এ ধরনের ঘণ্টা ঝুলিয়ে দিত। এছাড়া খ্রিষ্টানরা যে নাকুস ব্যবহার করে, তার সাথে এর সামঞ্জস্য রয়েছে। সুতরাং ঘণ্টা ব্যবহার হতে বিরত থাকতে হবে। যদি একেবারেই প্রয়োজন হয়, তবে তার পরিবর্তে কলিং বেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. ইমাম শাফেয়ী রহ. থেকে কিতাবুল কাযাতে বর্ণিত হয়েছে যে, গান হচ্ছে অনর্থক কাজ ও অপছন্দনীয় কাজ। যে ব্যক্তি গান-বাজনায় ব্যস্ত থাকে সে অবশ্যই নির্বোধ, তার সাক্ষ্য কবুল করা হবে না, প্রত্যাখ্যান করা হবে।
বর্তমান সময়ে গান বাজনা:
১. বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিবাহ-শাদি, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদিতে যে সব গান-বাজনা পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই অশ্লীল ও অশালীন। এ সব গানে সাধারণত প্রেম, ভালোবাসা, নারীদের আলিঙ্গন, তাদের চেহারার বর্ণনা ইত্যাদি দ্বারা ভরপুর। এগুলো সবই যৌন উত্তেজক, যেগুলি যুবকদের যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে, তাদের জেনা-ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করে এবং তাদের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংস করে।
২. যখন গান ও বাদ্য এক সাথে চলতে থাকে, তখন তার পরিণতি হয়, খুবই ভয়াবহ। যুব সমাজের চরিত্র অশ্লীল গান-বাজনা ও ফিল্ম দেখা ইত্যাদির কারণে চরম অবনতির দিকে যায়। অধিকাংশ যুবকরা এ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মারাত্মক ধ্বংসের মুখে নিপতিত হয় এবং তারা তখন মহান আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভুলে, দুনিয়ার ভোগ বিলাস ও আনন্দ পূর্তিতে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। এমনকি ১৯৬৭ যখন ইয়াহুদিদের সাথে যুদ্ধ চলছিল, তখন ঘোষণা হল যে, তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও, কারণ, তোমাদের সাথে অমুক অমুক গায়িকা আছে যারা তোমাদের গানের মাধ্যমে উৎসাহ দিয়ে যাবে। এ ঘোষণার পর ইয়াহুদীদের সাথে মুসলিমদের শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হল। কারণ, তাদের উচিত ছিল এ কথা বলা, তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও! তোমাদের সাথে মহান আল্লাহর সাহায্য বহাল আছে। তা না করে তারা নারীদের গান-বাজনার প্রতি আহ্বান করল, যা আল্লাহ তা‘আলার পছন্দ হল না।
৩. মনে রাখতে হবে, অনেক সময় এমন হয়, দ্বীনি বা ইসলামের নামে যে সব গান গাওয়া হয় বা বাজারে পাওয়া যায়, সে গুলোও অন্যায় অশ্লীল হতে খালি হয় না। যেমন, বুসীরীর কাব্যগুলো তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। এ ছাড়াও দেখুন কোন এক গায়ক বলেছিল
ﻭﻗﺒﻞ ﻛﻞ ﻧﺒﻲ ﻋﻨﺪ ﺭﺗﺒﺘﻪ ﻭﻳﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻓﺎﺳﺘﻠﻢ .
এখানের শেষের অংশটি আল্লাহ ও রাসূলের উপর মিথ্যারোপ বৈ কিছুই না, যা বাস্তবতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
গান বাজনা হতে বাঁচার উপায়:
১. রেডিও টেলিভিশন ইত্যাদিতে গান-বাজনা শোনা ও দেখা হতে দূরে থাকতে হবে। বিশেষ করে যৌন উত্তেজক গান, ও বাজনাসহ গান শোনা হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
২. মহান আল্লাহর জিকির ও কুরআনের তিলাওয়াত গান বাজনা থেকে বাচার সর্বোত্তম পন্থা। বিশেষ করে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺇﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻳﻨﻔﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻘﺮﺃ ﻓﻴﻪ ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ » .
অর্থ, যে ঘরে সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে।
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻗَﺪْ ﺟَﺎﺀﺗْﻜُﻢ ﻣَّﻮْﻋِﻈَﺔٌ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢْ ﻭَﺷِﻔَﺎﺀ ﻟِّﻤَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼُّﺪُﻭﺭِ ﻭَﻫُﺪًﻯ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔٌ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ﴾ .
হে মানব সকল! তোমাদের নিকট তোমাদের প্রভূর পক্ষ হতে উপদেশ এসেছে এবং এসেছে তোমাদের অন্তরে যে সব ব্যাধি রয়েছে, তার জন্য শিফা। আর মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত।
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরfত, তার আখলাক সম্পর্কীয় কিতাবাদি ও সাহাবীদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করা।
যে সব গান গাওয়া বৈধ:
১. ঈদের দিন গান গাওয়া বৈধ। যেমন, আয়েশা রা. এর হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﺩﺧﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻠﻴﻬﺎ ، ﻭﻋﻨﺪﻫﺎ ﺟﺎﺭﻳﺘﺎﻥ ﺗﻀﺮﺑﺎﻥ ﺑﺪﻓﻴﻦ ‏« ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻋﻨﺪﻱ ﺟﺎﺭﻳﺘﺎﻥ ﺗﻐﻨﻴﺎﻥ ‏» ﻓﺎﻧﺘﻬﺮﻫﻤﺎ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ، ﻓﻘﺎﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺩﻋﻬﻦ ﻓﺈﻥ ﻟﻜﻞ ﻗﻮﻡ ﻋﻴﺪﺍً ، ﻭﺇﻥ ﻋﻴﺪﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ » .
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট প্রবেশ করে, তখন তার নিকট দুইজন বাঁদি ছিল, তারা উভয়ে দুটি ঢোল বাজাচ্ছিল, অপর বর্ণনায় আছে তারা দুইজন গান গাচ্ছিল, তাদের দেখে আবু বকর রা. ধমক দিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. কে বলল, তাদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও, কারণ, প্রতিটি সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য ঈদ আছে, আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন।
২ . বিবাহের অনুষ্ঠানে বিবাহের প্রচার প্রসারের জন্য ঢোল তবলা বাজিয়ে গান করা বৈধ। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻓﺼﻞ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺤـﻼﻝ ﻭﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ، ﺿﺮﺏ ﺍﻟﺪﻑ ، ﻭﺍﻟﺼﻮﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﻜﺎﺡ »
অর্থ, হারাম ও হালালের মধ্যে প্রার্থক হল, ঢোল বাজানো ও বিবাহের প্রচার করা।
৩. কোন কাজ সম্পাদন করার সময় ইসলামী গান গাওয়া। কারণ, তখন কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায় এবং চাঞ্চল্যটা ফিরে আসে। বিশেষ করে যখন গানে দোয়া বা আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি থাকে। এ ধরনের গানের জন্য রাসূল নিজেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। তিনি খন্দকের যুদ্ধে যখন পরিখা খনন করছিলেন, তখন তিনি তার সঙ্গীদের কর্ম চাঞ্চল্যটা ফিরিয়ে আনতে এ ধরনের কাব্যগুলো পড়েন। যেমন ইবনে মাজাতে বর্ণিত:
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻻ ﻋﻴﺶ ﺇﻻ ﻋﻴﺶ ﺍﻵﺧﺮﺓ **
ﻓﺎﻏﻔﺮ ﻟﻸﻧﺼﺎﺭ ﻭﺍﻟﻤﻬﺎﺟﺮﺓ
অর্থ: হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই জীবন। আপনি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দিন।
এ কথার উত্তরে আনসার ও মুহাজিররা বলল:
ﻧﺤﻦ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺑﺎﻳﻌﻮﺍ ﻣﺤﻤﺪﺍً ** ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﻣﺎ ﺑﻘﻴﻨﺎ ﺃﺑﺪﺍ
আমরা তারাই যারা মুহাম্মদের হাতে জিহাদের অঙ্গীকার করি। যতদিন পর্যন্ত আমরা জমিনে বেচে থাকি।
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻟﻮﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﺍﻫﺘﺪﻳﻨﺎ ** ﻭﻻ ﺗﺼﺪﻗﻨﺎ ﻭﻻ ﺻﻠﻴﻨﺎ
মহান আল্লাহ দয়া আমাদের উপর না থাকলে, আমরা হেদায়েত পেতাম না এবং আমরা আল্লাহর রাহে সদকা করতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না।
ﻓﺄﻧﺰﻟﻦ ﺳﻜﻴﻨﺔ ﻋﻠﻴﻨﺎ ** ﻭﺛﺒﺖ ﺍﻷﻗﺪﺍﻡ ﺇﻥ ﻻﻗﻴﻨﺎ
আপনি আমাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন। আমরা যখন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করব, তখন আমাদের তুমি অটল ও অবিচল রাখুন।
ﻭﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻮﻥ ﻗﺪ ﺑﻐﻮﺍ ﻋﻠﻴﻨﺎ ** ﺇﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩﻭﺍ ﻓﺘﻨﺔ ﺃﺑﻴﻨﺎ
মুশরিকরা আমাদের উপর নির্যাতন করছে। তারা যখন আমাদের শিরক করতে বলে আমরা তা অস্বীকার করি।
তারা ﺃﺑﻴﻨﺎ ... ﺃﺑﻴﻨﺎ .. [শিরিককে অস্বীকার করি, অস্বীকার করি] বলে চিৎকার করত।
৪. যে সব গানে আল্লাহর প্রশংসা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোহাব্বত ও রাসূলের গুণাগুণ থাকে, ঐ ধরনের গান গাওয়া নি:শন্দেহে বৈধ। অনুরূপভাবে যে সব গানে জিহাদের উপর উদ্বুদ্ধ করা হয়, ঈমানের উপর অবিচল ও অটুট থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় এবং নৈতিক চরিত্র সংশোধন বিষয়ে উৎসাহ দেয়া হয়, সে সব গান গাওয়াতে কোন প্রকার ক্ষতি নাই। এ ছাড়াও যে সব গানে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের ভালোবাসা জাগ্রত, মুসলিমদের মাঝে সু-সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করে, ইসলামের সৌন্দর্য তূলে ধরা হয়, এ ধরনের গান বৈধ বা প্রশংসিত হওয়াতে কোন সন্দেহ নাই। কারণ, এ ধরনের গানের মাধ্যমে সমাজ উপকৃত হয়, মানুষের নৈতিক চরিত্র ও মন-মানসিকতার উন্নতি হয়।
৫. বাদ্য যন্ত্রের মধ্য হতে ঈদের দিন ও বিবাহ অনুষ্ঠানে ঢোল বাজানোকে বৈধ করা হয়েছে। জিকিরের মজলিশে ঢোল বাজানো সম্পূর্ণ হারাম। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তারপর তার সাহাবীরা কখনোই জিকিরের মজলিসে ঢোল-তবলা বাজায়নি। কিন্তু ছুফিরা ঢোল বাজানোকে হালাল মনে করে এবং জিকিরের মজলিশে ঢোল বাজানোকে সূন্নাত বলে, অথচ তা বিদআত। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺇﻳﺎﻛﻢ ﻭﻣﺤﺪﺛﺎﺕ ﺍﻷﻣﻮﺭ ، ﻓﺈﻥ ﻛﻞ ﻣﺤﺪﺛﺔ ﺑﺪﻋﺔ ، ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ » .
অর্থ: তোমরা কুসংস্কার হতে বেচে থাক, কারণ, সব কুসংস্কারই হল, বিদআত। আর প্রতিটি বিদআত হল, গোমরাহি।
ছবি ও মূর্তির বিধান
ইসলাম মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করে এবং আল্লাহর সাথে অন্য মাখলুক যেমন, আল্লাহর অলি, নেককার বান্দা, মূর্তি, কবর, মাজার, ছবি ইত্যাদির পূজা করা বা কোন কিছুকে তার সাথে শরীক করা হতে নিষেধ করে। মহান আল্লাহ তা‘আলা যেদিন থেকে মানুষের হেদায়েতের জন্য নবী রাসূলদের দুনিয়াতে পাঠান, সেদিন থেকেই তারা মানুষদের তাওহীদের দাওয়াত দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺑَﻌَﺜْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺭَّﺳُﻮﻻً ﺃَﻥِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍْ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍْ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ ﴾
অর্থ, আর আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করি, তিনি দাওয়াত দেন যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক।
তাগুত: আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব কিছুর ইবাদত করা হয়, তাদের তাগুত বলা হয়। মুশরিকরা যে সব মূর্তির পূজা করত, সূরা নূহতে মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের আলোচনা করেন। যেমন, বুখারী শরীফে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস রা. আল্লাহর তা‘আলার বাণী-
﴿ ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﺬَﺭُﻥَّ ﺁﻟِﻬَﺘَﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺬَﺭُﻥَّ ﻭَﺩًّﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺳُﻮَﺍﻋًﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻐُﻮﺙَ ﻭَﻳَﻌُﻮﻕَ ﻭَﻧَﺴْﺮًﺍ ﻭَﻗَﺪْ ﺃَﺿَﻠُّﻮﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺰِﺩِ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﺇِﻟَّﺎ ﺿَﻠَﺎﻟًﺎ ﴾
আর তারা বলে, তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন করো না ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক, ও নাসরকে। বস্তুত তারা অনেককে পতভ্রষ্ট করেছে, আর (হে আল্লাহ) আপনি যালিমদেরকে ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই বাড়াবেন না।
এর ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতে উল্লেখিত নাম গুলো হল, নূহ আ. এর সম্প্রদায়ের নেককার লোক ও মহৎ ব্যক্তিবর্গ। এরা মারা গেলে শয়তান তাদের সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট ওহী পাঠান যে, তোমরা তাদের বসার স্থানে তাদের আকৃতিতে মূর্তি তৈরি কর এবং তাদের নামেই মূর্তিগুলোর নাম করণ কর। তখন তারা তাই করল। তখন পর্যন্ত তারা তাদের কোন ইবাদত করত না। তারপর যখন এ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে গেল, পরবর্তী প্রজন্ম এসে তাদের পূর্বসূরিদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে না জেনে মূর্তিগুলোর ইবাদত করতে আরম্ভ করে। এ ঘটনাটি দ্বারা একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, মানবজাতির মধ্যে শিরকের বিস্তার লাভের প্রধান কারণ হল, ছবি বা মূর্তি। কিন্তু বর্তমানে দু:খের বিষয় হল, অনেকেই মনে করে, এ ধরনের ছবি হালাল। কারণ, এখন এ ধরনের লোক পাওয়া যায় না, যারা ছবির ইবাদত করে। তাদের এ দাবি সঠিক নয়। কারণ, ছবি হল, শিরক এর প্রবেশের দরজা।
১. একটি কথা মনে রাখতে হবে, বর্তমানেও ছবি ও মূর্তির পূজা করা হয়ে থাকে। যেমন, ঈসা আ. ও তার মাতা মারিয়াম আ. মারা যাওয়ার পর, মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আকৃতির ইবাদত, এখনো করা হয়। ঈসা আ. এর ছবি সম্বলিত অনেক বড় বড় পোষ্টার বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করা হয়। এ গুলোকে ইবাদতের লক্ষ্যে ঘরে ঝুলিয়ে রাখা হয়, এ গুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
২. বর্তমান যুগেও বড় বড় নেতাদের ছবির প্রতি মানুষের মাথা নত করা হয়। মানুষ যখন তাদের মূর্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তখন তারা তাদের সম্মানে দাড়িয়ে যায়, কোমর বাঁকা করে পিঠ ঝুলিয়ে দেয়। যেমন, আমেরিকাতে জর্জ ওয়াশিংটন, ফ্রান্সে নেপোলিয়ন ও রাশিয়াতে লেনিনের ছবিকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যারা তাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তাদের সম্মানে মাথা ঝুঁকায়। বর্তমানে প্রতিকৃতি নির্মাণের এ ধারণাটি আরব জাহান ও মুসলিম দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তারা কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ করে যাচ্ছে, তারা তাদের নেতাদের প্রতিকৃতি রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপন করে। এভাবে অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহেও মূর্তির বিস্তার হচ্ছে। যে সব টাকা দিয়ে প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়ে থাকে, সে সব দিয়ে মসজিদ মাদ্রাসা, হাসপাতাল, জন-কল্যাণমূলক ট্রাস্ট তৈরি করে তাদের নামে নাম করণ করা যেতে পারে; তাতে কোন সমস্যা নাই। তাতে মানুষের উপকার আরও বেশি হবে। আর তাদের নামে নাম করণ করার মধ্যে কোন ক্ষতি নাই।
৩. কালের বিবর্তনে দেখা যাবে, যারা বর্তমানে প্রতিকৃতি গুলোর সেজদা করছে না, তারাও এক সময় এসে এগুলোর সেজদা করতে আরম্ভ করবে এবং ইবাদত করতে শুরু করবে। যেমনটি ইউরোপ, তুরস্ক ও অন্যান্য দেশে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আর এ বিষয়ে নূহ আ. এর সম্প্রদায়ের লোকেরাই হল ইতিহাসের সূচনা। কারণ, তারাই প্রথমে তাদের নেতাদের প্রতিকৃতি স্থাপন করে, তারপর তাদের সম্মান ও ইবাদত করে।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনে আবু তালিব রা. কে এ বলে নির্দেশ দেন যে, তুমি কোন মূর্তিকে দেখা মাত্র নিষ্পেষিত করে দেবে এবং কোন উঁচা কবর দেখলে তাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে।
যে সব বস্তুর ছবি বা প্রতিকৃতি বৈধ:
১. সব বস্তুর রুহ নাই, সে সব বস্তুর ছবি তোলা হালাল বা বৈধ। যেমন- গাছ-পালা, চন্দ্র, সূর্য, পাহাড়, পাথর, নদ-নদী, সমুদ্র, পবিত্র স্থান, মসজিদ, মদিনার মসজিদ, বাইতুল্লাহ ইত্যাদির ছবি বৈধ। এর প্রমাণ হল, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর উক্তি: তিনি বলেন, যদি তোমাকে ছবি নির্মাণ করতেই হয়, তবে তুমি গাছ-পালা প্রাকৃতিক দৃশ্য ও যে সব বস্তুর জীবন নাই সে সবের ছবিই অংকন কর।
২. প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের জন্য ছবি তোলা বৈধ। যেমন- পাসপোর্ট, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, গাড়ির লাইসেন্স ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাজে ছবি তোলার অনুমতি আছে।
৩. চোর, ডাকাত, অপরাধীদের ধরার জন্য তাদের ছবি টানিয়ে দেয়া বৈধ, যাতে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে।
৪. মেয়েদের জন্য টুকরা কাপড় দিয়ে পুতুল বানিয়ে সেগুলো দ্বারা খেলা-ধুলা করা বৈধ। যখন তারা ছোট থাকে, তখন তারা এ ধরনের খেলা-ধুলা করতে পারে; যাতে তারা যখন মা হয়, তখন শিশুদের কীভাবে লালন-পালন করতে হয়, তা শিখে। আয়েশা রা. এর কথা তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ, তিনি বলেন,
ﻛﻨﺖ ﺃﻟﻌﺐ ﺑﺎﻟﺒﻨﺎﺕ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে খেলা-ধুলা করতাম।
আর শিশুদের জন্য অশ্লীল কোন খেলা-ধুলা ক্রয় করা উচিত নয়; বিশেষ করে উলঙ্গ মেয়েদের ছবি। কারণ, এ সব দেখে তারাও নিজেরা শিখবে এবং তাদের অনুকরণ করবে। ফলে সমাজকে কলুষিত করবে। এ ছাড়াও এ সব ক্রয় করার মাধ্যমে টাকাগুলো দ্বারা ইয়াহুদী, নাছারা ও ইসলামের শত্রুদের সহযোগিতা করা হয়; যাতে তারা মুসলিমদের বিপক্ষে শক্তি অর্জন করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
ধূমপানের বিধান
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে বিড়ি, সিগারেট তামাক ইত্যাদি ছিল না। তবে ইসলামের সাধারণ মূলনীতি হল, মানুষের জন্য ক্ষতিকর, প্রতিবেশীর জন্য কষ্টকর অথবা সম্পদের অপচয় এমন সবকিছুই হারাম। নীচে ধূমপান হারাম হওয়ার উপর বিশেষ কয়েকটি প্রমাণ পেশ করা হল:
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿ ﻭَﻳُﺤِﻞُّ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕِ ﻭَﻳُﺤَﺮِّﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺂﺋِﺚَ ﴾
আর তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুকে হালাল করেছেন এবং অপবিত্র বস্তুকে তাদের উপর হারাম করেছেন।
আর বিড়ি-সিগারেট অপবিত্র বস্তুর অন্তর্ভুক্ত ও দুর্গন্ধময় বস্তু।
২. মহান আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ ﻭَﻻَ ﺗُﻠْﻘُﻮﺍْ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ﴾
তোমরা তোমাদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।
ধূমপান মানুষের জন্য মারাত্মক ব্যাধির কারণ হয়, যেমন ধূমপানের কারণে ক্যান্সার, রক্তচাপ, যক্ষ্মা, বক্ষ ব্যাধি ইত্যাদি আরও নানান ধরনের ব্যাধি হয়ে থাকে।
৩. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ }
[ তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না।]
ধূমপানের কারণে মানুষের আয়ু কমে আসে এবং অকাল মৃত্যুর কারণ হয়।
৪. মহান আল্লাহ তা‘আলা মদের ক্ষতি সম্পর্কে বলেন,
﴿ ﻭَﺇِﺛْﻤُﻬُﻤَﺂ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻣِﻦ ﻧَّﻔْﻌِﻬِﻤَﺎ ﴾ .
আর এ দুটির গুণাহ উপকারের চেয়ে অধিক মারাত্মক।
অনুরূপভাবে ধূমপানের ক্ষতি উপকারের তুলনায় মারাত্মক। বরং ধূমপানে ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার নাই।
৫. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﺒَﺬِّﺭِﻳﻦَ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﺇِﺧْﻮَﺍﻥَ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦِ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻟِﺮَﺑِّﻪِ ﻛَﻔُﻮﺭًﺍ ﴾ .
নিশ্চয় অপচয়কারী হল, শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভূকে অস্বীকারকারী।
ধূমপান হল, অর্থের অপচয়। আর সম্পদের অপচয় করা হল, শয়তানের কাজ।
৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻻ ﺿﺮﺭ ﻭﻻ ﺿﺮﺍﺭ »
ইসলামে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা ক্ষতি করার কোন অবকাশ নাই।
আর ধূমপান মানুষের জন্য ক্ষতিকারক, প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ এবং সম্পদের অপচয়।
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
ﻭﻛﺮﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻜﻢ ﺇﺿﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺎﻝ
মহান আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সম্পদের অপচয় করাকে অপছন্দ করেছেন।
৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
« ﻛﻞ ﺃﻣﺘﻲ ﻣﻌﺎﻓﻰ ﺇﻻ ﺍﻟﻤﺠﺎﻫﺮﻳﻦ »
আমার উম্মতের সব অপরাধীকে ক্ষমা করা হবে। তবে মুহাজিরকে ক্ষমা করা হবে না।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে অপরাধ করে এবং কোন অপরাধ করে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে। ধূমপানকারী প্রকাশ্যে ধূমপান করে, অন্যদের ধূমপানের মত অপরাধকে উৎসাহ দেয়।
৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ ﻓﻼ ﻳﺆﺫ ﺟﺎﺭﻩ»
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।
প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়া হারাম। আর ধূমপানকারী তার মুখের দুর্গন্ধ দ্বারা তার স্ত্রী, সন্তান ও প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়। বিশেষ করে ফেরেশতা ও মুসল্লিরা তার মুখের দূর্গগন্ধের কারণে কষ্ট পায়।
দাড়ি বড় করার বিধান
১. মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﻵﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﻐَﻴِّﺮُﻥَّ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﴾
আর দাড়ি মুণ্ডন আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার সামিল এবং শয়তানের অনুকরণ বৈ কিছুই না। [সূরা আন-নিসা: ১১৯]
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺟﺰﻭﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ ﻭﺃﺭﺧﻮﺍ ﺍﻟﻠﺤﻰ ، ﺧﺎﻟﻔﻮﺍ ﺍﻟﻤﺠﻮﺱ » .
তোমরা গোপকে খাট কর, দাড়িকে বড় কর এবং অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর।
অর্থাৎ দাড়ি যদি তোমাদের ঠোটের উপর বর্ধিত হয়, তখন বর্ধিতাংশ তোমরা কেটে ফেল। আর কাফেরদের বিরোধিতা স্বরূপ তোমরা তোমাদের দাড়িকে লম্বা কর।
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻋﺸﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻔﻄﺮﺓ ، ﻗﺺ ﺍﻟﺸﺎﺭﺏ ، ﻭﺇﻋﻔﺎﺀ ﺍﻟﻠﺤﻴﺔ ، ﻭﺍﻟﺴﻮﺍﻙ ﻭﺍﺳﺘﻨﺸﺎﻕ ﺍﻟﻤﺎﺀ ، ﻭﻗﺺ ﺍﻷﻇﺎﻓﺮ ....»
দশটি জিনিষ ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। আর তা হল, গোপকে খাট করা দাড়িকে লম্বা করা, মিসওয়াক করা, পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা এবং হাত-পায়ের নখ কাটা....।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব পুরুষরা নারীদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, তাদের অভিশাপ করেন। আর দাড়ি মুণ্ডন নারীদের সাথে সাদৃশ্য রাখারই নামান্তর এবং আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণ।
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻟﻜﻨﻲ ﺃﻣﺮﻧﻲ ﺭﺑﻲ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺃﻥ ﺃﻋﻔﻲ ﻟﺤﻴﺘﻲ ﻭﺃﻥ ﺃﻗﺺ ﺷﺎﺭﺑﻲ » .
তবে আমার রব আমাকে আদেশ দেন যে, আমি যেন আমার দাড়িকে বড় করি এবং গোপকে খাট করি।
মনে রাখতে হবে, দাড়িকে বড় করা আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ, যা পালন করা অবশ্যই কর্তব্য বা ওয়াজিব।
মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা
তুমি যদি দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চাও তাহলে নিম্নে বর্ণিত উপদেশগুলো পালন কর।
১. মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তাদের কখনোই কষ্ট দেবে না এবং তাদের ধমক দিয়ে কথা বলবে না। তাদের সাথে সুন্দর ও মনোরম ব্যবহার করবে।
২. তারা যদি কোন অন্যায়ের আদেশ না দেয়, তখন তাদের আদেশের আনুগত্য করবে। আর তারা যদি কোন অন্যায় কাজ করতে বলে, তাহলে তাদের অনুকরণ হতে বিরত থাকবে। কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে কোন মাখলুকের আনুগত্য নাই।
৩. মাতা-পিতার সাথে নম্র ব্যবহার করবে, তাদের সাথে মুখ কালাকালি করবে না এবং তাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাবে না।
৪. মাতা-পিতার সুনাম, মান-মর্যাদা ও তাদের ধন-সম্পত্তির সংরক্ষণ করবে। তাদের অনুমতি ছাড়া তাদের কোন কিছু ধরবে না।
৫. যে কাজ করলে তারা খুশি হয়, তা করা। যেমন, তাদের খেদমত করা, পড়া লেখা করা ও তাদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনে দেয়া।
৬. তোমার যাবতীয় কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করবে। যখন বাধ্য হয়ে তাদের কোন বিরোধিতা কর, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও।
৭. তারা যদি তোমাকে ডাকে তাহলে, হাসি মুখে তাদের কথার উত্তর দিবে।
৮. তাদের মৃত্যুর পর তাদের জীবিত আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান প্রদর্শন করবে।
৯. তাদের সাথে ঝগড়া করবে না। তাদের কোন ভুল দেখলে, সঠিকটি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেবে।
১০. তাদের সাথে কোন প্রকার হৎকারীতা করবে না। তাদের উপর তোমার আওয়াজকে উঁচা করবে না। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
১১. মাতা-পিতা যখন তোমার নিকট প্রবেশ করবে তখন তাদের তুমি দাড়িয়ে সম্মান দিবে। তাদের মাথায় চুমু দিবে।
১২. ঘরের কাজ কর্মে মা সহযোগিতা করবে এবং বাহিরের কাজে পিতাকে সাহায্য করবে।
১৩. যত বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজই হোক না কেন, তাদের অনুমতি ছাড়া বাহিরে কোথাও সফরে যাবে না। তারপরও যদি তুমি বাধ্য হও, তাহলে তুমি তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে।
১৪. তাদের কামরায় তাদের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করবে না, বিশেষ করে তাদের ঘুম ও বিশ্রামের সময়।
১৫. তুমি যদি ধূমপানে অভ্যস্ত হও, তাহলে তাদের সামনে ধূমপান করবে না।
১৬. তাদের পূর্বেই খেতে বসবে না, খাওয়ার সময় তাদের সম্মান রক্ষা করে খাবে।
১৭. তাদের বিপক্ষে কোন মিথ্যা কথা বলবে না। আর তারা যদি তোমার অপছন্দ কোন কাজ করে, তুমি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করো না।
১৮. তুমি স্ত্রী সন্তানদের মাতা-পিতার সন্তুষ্টির উপর প্রাধান্য দিবে না। সবকিছুর পূর্বে তুমি তাদের সন্তুষ্টি কামনা করবে। কারণ, আল্লাহর সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি মাতা-পিতা সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির উপরই নির্ভর করে।
১৯. তাদরে আসন থেকে উঁচা কোন আসনে তুমি বসবে না। অহংকারী করে তাদের দিকে পা বিছিয়ে দিয়ে বসবে না।
২০. তুমি যত বড় নেতা বা চাকুরীজীবী হও, তাদের পরিচয় তুলে ধরতে তুমি কখনোই ভুল করবে না। তাদের পরিচয়কে অস্বীকার করতে এবং কোন কথার মাধ্যমে তাকে কষ্ট দেয়া হতে সম্পূর্ণ সতর্ক থাকবে।
২১. মাতা-পিতার জন্য খরচ করতে তুমি কখনোই কৃপণতা করবে না। এটি অবশ্যই স্ববিরোধী কাজ। কারণ, তোমার সন্তানও তোমার সাথে তাই করবে তুমি যা করে থাক।
২২. বেশি বেশি করে মাতা-পিতাকে দেখতে যাবে, তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের হাদিয়া নিয়ে যাবে। আর তারা ছোট বেলায় তোমাকে যে, লালন-পালন করছে, তার জন্য তাদের কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। তুমি তোমার সন্তানদের সাথে তোমার বিষয়টি তুলনা করে দেখবে।
২৪. সর্বাধিক সম্মানের হকদার তোমার মা তারপর তোমার পিতা। আর মনে রাখবে মাতা-পিতার পায়ের তলে সন্তানের বেহেস্ত।
২৫. মাতা-পিতার নাফরমানি করা হতে বিরত থাকবে। অন্যথায় দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত হবে। আর তোমার শিশুরা সে রকম আচরণ করবে, যেমনটি তুমি তাদের সাথে করেছিলে।
২৬. যখন মাতা-পিতা হতে কোন কিছু চাইবে, তখন নরম ভাবে চাইবে। যখন তোমাকে দিবে তখন তুমি তাদের শুকরিয়া আদায় করবে, আর যখন নিষেধ করবে, তখন তুমি ক্ষমা চাইবে। তাদের নিকট কোন কিছু পাওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি করবে না।
২৭. যখন তুমি কামাই-রুজি করতে সক্ষম হবে, তখন তুমি তাই করবে এবং মাতা-পিতার সাহায্য করবে।
২৮. মনে রাখবে তোমার উপর তোমার মাতা-পিতার অধিকার রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। সুতরাং, প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা আদায় করবে। উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখবে এবং উভয়ের জন্য গোপনে হাদিয়া পাঠাবে।
২৯. যখন তোমার মাতা-পিতার তোমার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে, তখন তোমাকে অবশ্যই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। তুমি তোমার স্ত্রীকে বোঝাবে যে, যদি সত্য তাদের সাথে হয়, তবে তুমি তাদের পক্ষের লোক এবং তাদের সন্তুষ্টি অর্জনে তুমি বাধ্য।
৩০. বিবাহের ব্যাপারে মাতা-পিতার সাথে যদি মতবিরোধ দেখা দেয়, তখন তোমরা শরীয়তের বিধানকে বিচারক মানবে। কারণ, তোমাদের জন্য উত্তম সহযোগী।
৩১. মাতা-পিতার দোয়া ও বদদোয়া উভয়ই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য। সুতরাং তুমি তাদের বদদোয়া বা অভিশাপ হতে বেচে থাকবে।
৩২. মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার কর, মানুষকে গালি দেবে না, কারণ, যে মানুষকে গালি দেয় মানুষও তাকে গালি দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺒﺎﺋﺮ ﺷﺘﻢ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﺍﻟﺪﻳﻪ ، ﻳﺴﺐ ﺃﺑﺎ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻴﺴﺐ ﺃﺑﺎﻩ ﻭﻳﺴﺐ ﺃﻣﻪ ﻓﻴﺴﺐ ﺃﻣﻪ » .
৩৩. তাদের জীবদ্দশায় তাদের বেশি বেশি দেখতে যাবে। আর তাদের মৃত্যুর পর তাদের পক্ষ হতে তাদের নামে দান-খয়রাত কর। তাদের জন্য এ বলে বেশি বেশি দোয়া করবে-
[ ﺭﺏ ﺍﻏﻔﺮ ﻟﻲ ﻭﻟﻮﺍﻟﺪﻱ ]
হে প্রভূ তুমি আমাকে এবং আমার মাতা-পিতাকে ক্ষমা কর।
[ ﺭﺏ ﺍﺭﺣﻤﻬﻤﺎ ﻛﻤﺎ ﺭﺑﻴﺎﻧﻲ ﺻﻐﻴﺮﺍ ] .
হে প্রভূ তুমি আমার মাতা-পিতার প্রতি অনুরুপ দয়া কর, যেমনটি তারা আমাকে ছোট বেলা লালন-পালন করেছিল।
[1] ক. ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক ইলাহ নেই’ সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ হলো: আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদত না করা, অন্য কাউকে না ডাকা; তাঁকে তার কেবল শরী‘আতের মাধ্যমেই ইবাদত করা; আর শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহ হতে নির্গত শরী‘আত অনুযায়ীই বিচার-ফয়সালা করা।
খ. ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ হলো: যে আদেশ তিনি দিয়েছেন তা আনুগত্য করা; যে সংবাদ তিনি এনেছেন তা বিশ্বাস করা; আর যা থেকে তিনি বিরত থাকতে বলেছেন ও সাবধান করেছেন, তা থেকে দূরে থাকা। কেননা, তার আনুগত্যই আল্লাহর আনুগত্য।
________________________________________________________________________________
মূল: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন জামীল যাইনূ রহ.
অনুবাদক: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনায়: মো: আবদুল কাদের
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
=======================================
=======================================
=======================================
সন্তান লালন: মাতা-পিতার এক মহান দায়িত্ব
সন্তান লালন: মাতা-পিতার এক মহান দায়িত্ব
জীবনের শুরুতেই সন্তান যাদের হাতের স্পর্শ পায়, যাদেরকে সামনে দেখে, যাদের গন্ধ শুঁকে, তারা হলেন মাতা-পিতা। মাতা-পিতার হাত ধরেই সন্তান প্রবেশ করে কোলাহলময় পৃথিবীতে, গাত্রে লাগায় ইহজাগতিক আলো-বাতাস। মাতা-পিতার কাছ থেকেই শেখে প্রথম শব্দমালা। তাই মাতা-পিতার স্কন্ধেই অর্পিত সন্তানকে যথার্থরূপে মর্দে মুমিন তথা মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব।
ইমাম গাজালি রহ. বলেছেন: ‘সন্তান মাতা-পিতার কাছে আমানত। সন্তানের হৃদয় নকশা- ইমেইজমুক্ত এক সরল-স্বচ্ছ মুক্তা, যা যেকোনো নকশা- ইমেইজ ধারণ করতে প্রস্তুত। তাকে যে দিকেই হেলানো হবে সে সে দিকেই ঝুঁকে পড়বে। যা কিছু উত্তম ও ভালো তা যদি তাকে শেখানো হয়, তাকে যদি এগুলোর প্রতি অভ্যস্ত করে নেয়া হয় তবে সেভাবেই সে বড় হবে। ফলে তার মাতা-পিতা দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান হবে। তার উস্তাদ ও আদব-কায়দার শিক্ষকগণও তৃপ্তি অনুভব করবে। এর বিপরীতে তাকে যদি খারাপ বিষয়ে অভ্যস্ত করা হয়, জন্তু জানোয়ারের মতো তাকে লাগামহীন করে দেওয়া হয়, তাহলে সে ভাগ্যবিড়ম্বিত হবে, অতঃপর নিক্ষিপ্ত হবে ধ্বংসের গহ্বরে। আর এর দায়ভার বর্তাবে তাদের ঘারে যারা ছিল তার কর্ণধার, যাদের দায়িত্ব ছিল তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রতিটি শিশু ফেতরতের উপর জন্মগ্রহণ করে, আর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি, মজুসি (অগ্নিপূজক) অথবা খৃষ্টান বানায় [ বুখারি ও মুসলিম ]
সে হিসেবে সন্তান লালনে মাতা-পিতাকে হতে হবে যথেষ্ট সচেতন, ঐকান্তিক ও পরিশ্রমী। সন্তানের শারীরিক সুস্থতার প্রতি মাতা-পিতা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট যত্নবান্ থাকেন, তবে এর পাশাপাশি, ধার্মিকতা, উন্নত চরিত্র, আল্লাহ-ভীরু হৃদয় ইত্যাদি পরিগঠনের ব্যাপারেও সন্তানের প্রতি যত্ন নিতে হয় সমধিক গুরুত্ব দিয়ে। কেননা সন্তান মাতা-পিতার কাছে গচ্ছিত এক আমানত। তাই সন্তানের শারীরিক পরিপুষ্টির পাশাপাশি হৃদয়ের পুস্টি সরবরাহের প্রতি নজর না দিলে তা হবে আমানতের খেয়ানত ও সন্তানের প্রতি অন্যায়-অবিচার। সন্তানের হৃদয়কে পুষ্ট করার অর্থ ধর্মীয় ও মানবিক গুনাবলিতে ঋদ্ধ করে তোলা, আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস, আখেরাতের প্রতি দৃঢ় ইমান ও ইসলামের অন্যান্য মৌলিক আকিদার প্রতি দৃঢ়চিত্ত করে বড় করা। এর অন্যথা হলে মাতা-পিতাকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে নিশ্চিত রূপেই। হাদিসে পুরুষকে তার পরিবার পরিজনের দায়িত্বশীল, নারীকে তার স্বামীর বাড়িতে দায়িত্বশীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রত্যেককে যার যার দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে বলে ঘোষণা এসেছে।
একটি বিশুদ্ধ বর্ণনামতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ﻛﻠﻜﻢ ﺭﺍﻉ ﻭﻛﻠﻜﻢ ﻣﺴﺆﻭﻝ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻪ، ﻭﺍﻟﺮﺟﻞ ﺭﺍﻉ ﻓﻲ ﺃﻫﻠﻪ، ﻭﻣﺴﺆﻭﻝ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻪ ، ﻭﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺭﺍﻋﻴﺔ ﻓﻲ ﺑﻴﺖ ﺯﻭﺟﻬﺎ ﻭﻣﺴﺆﻭﻟﺔ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻬﺎ، ﻭﺍﻟﺨﺎﺩﻡ ﺭﺍﻉ ﻓﻲ ﻣﺎﻝ ﺳﻴﺪﻩ، ﻭﻣﺴﺆﻭﻝ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻪ ، ﻭﻛﻠﻜﻢ ﺭﺍﻉ ﻭﻣﺴﺆﻭﻝ ﻋﻦ ﺭﻋﻴﺘﻪ ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )
তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। পুরুষ তার পরিবারে দায়িত্বশীল এবং সে তার দায়িত্বকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর ঘরে দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্বকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। সেবক তার মনিবের সম্পদে দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্বকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।
সন্তান লালন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এ দায়িত্ব অন্যের কাঁধে চাপিয়ে মাতা-পিতা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললে তা হবে দিবাস্বপ্ন দেখার মতো এক ঘটনা। যারা ভুক্তভোগী তারা বিষয়টি ভাল করেই বুঝেন। তবু বিষয়টি আরো পরিস্কার করার লক্ষ্যে একটি উদাহরণ দিচ্ছি -
জনৈক আমেরিকান রমণী, তিনি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন যার নাম ‘আপনার মত একজন স্মার্ট নারী বাড়িতে বসে কি করছে?' উক্ত ভদ্র মহিলার বক্তব্যের সারসংক্ষেপ তার ভাষায় এই যে 'আমার ঘরে থাকার ইচ্ছা কখনোই ছিল না, আমি রীতিমত এক কোম্পানির চাকুরে ছিলাম। ৩৩ বছর বয়সে আমার ঘরে একটি ছেলেসন্তান জন্ম নেয়। ওকে সাম্লাতে গিয়ে আমি চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। কিছুদিন যেতে না যেতেই আর্থিক অনটনের সম্মুখীন হয়ে দ্বিতীয়বার চাকরিতে ফিরে যাই। এ-অবস্থায় বিকেল এবং সপ্তাহান্তের ছুটির দিনের সময়টুকু কেবল বাচ্চাকে দিতে সক্ষম হই। এ -সামন্য সময়টুকু বাচ্চার জন্য কখনোই যথেষ্ট ছিল না। তাই একটা নার্সারি খুঁজে বের করে ওকে সেখানে রেখে আসি। নার্সারিটি অসম্পূর্ণ ভেবে একমাস পরেই বাচ্চাকে বাসায় নিয়ে আসি। দ্বিতীয়বারের মতো চাকরি ছেড়ে ঘরে বসে বাচ্চা সাম্লাতে আরম্ভ করি। দু'বছর সময় একটি উৎকৃষ্ট নার্সারির তালাশেই কেটে যায়, কিন্তু ততক্ষণে আমি দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়ে বসি।
আবারও একটা চাকরিতে ফিরে যাই। বাচ্চা দুটোকে একটা ঘরোয়া ধরনের নার্সারিতে রেখে অফিস করতে যাই। কিন্তু সেখানেও আমার কাঙ্খিত শিশুসেবা খোঁজে না পেয়ে হতাশ হই। পরিশেষে বাসায় বসে করার-মতো একটি চাকরি খোঁজে নেই। আমি বাচ্চাদের নিয়ে যে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হই তা আমাকে একটি বিশেষ নৈতিক শিক্ষায় ঋদ্ধ করে। আর তা হল, আপনি যত আইনই প্রণয়ন করুন না কেন এবং যত পয়সাই খরচ করুন না কেন তা দিয়ে একজনের প্রতি অন্যজনের হৃদ্যতা-ভালবাসা কক্ষনোই সৃষ্টি করা যায় না।
আমি এমন এক ব্যক্তির তালাশে ছিলাম যিনি হবেন স্নেহী, প্রীতিপূর্ণ, দরদী এবং হৃদয়বিশিষ্ট, রসিক মেজাজের ও তৎপর। একজন সজীব হৃদয়বিশিষ্টি ব্যক্তি যিনি আমার বাচ্চাদের নৈতিকতাকে সুষমামণ্ডিত করবে। কৌতূহলোদ্রেককর পর্যটনে ওদেরকে নিয়ে বের হবে। ওদের প্রতিটি ছোট-ছোট প্রশ্নের উত্তর দেবে। ওদেরকে দুলিয়ে দুলিয়ে মিষ্টি ঘুম পারাবে। কিন্তু আস্তে আস্তে এবং বেদনাদায়কভাবে আমি এ তিক্ত সত্য পর্যন্ত পৌঁছুই যে, আমি যার তালাশে মাসের পর মাস কাটিয়েছি সে তো আমি ভিন্ন অন্য কেউ নয়। এটাই হচ্ছে সে কাজ যা আমার মতো একজন স্মার্ট মেয়ে ঘরে বসে করছে [ রিডারস ডাইজেস্ট : অগাস্ট ১৯৮৮ ]
এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যত টাকাই দেয়া হোক না কেন সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার যে মমত্ববোধ তা ক্রয় করা কখনো সম্ভব নয়, ফলে মাতৃপিতৃসুলভ মমত্ববোধ দিয়ে যথার্থরূপে সন্তানকে তালিম-তরবিয়তে ভূষিত করা, মানুষের মতো মানুষ করা কল্পনা বৈ অন্য কিছু হবে না।
বর্তমান যুগে অনেক মাতা-পিতাকে নিজের ছেলে-সন্তানের ব্যাপারে খুবই উদাসীন-বেপরোয়া হতে দেখা যায়। ফলে সন্তান যখন বখে যায়, ধর্মচ্যুত হয়ে অনাকাঙ্খিত জীবনযাপন শুরু করে, তখন হয়তো তাদের সম্বিত ফিরে আসে। আর সেসময় আক্ষেপ-অনুশোচনায়, মানসিক যাতনায় কালাতিপাত ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। তখন হয়তো শুধরানোর সময় অবলীলায় পেরিয়ে যায়। অতীতের প্রতি হতাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে যন্ত্রণাবিদ্ধ হৃদয়ে দিবস-রজনী যাপন করতে বাধ্য হতে হয়। শুধু যে পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবন আফসোস আক্ষেপে কাটাতে হয় তাই নয়, সময়ের কাজ সময়ে না করার কারণে, গচ্ছিত এক আমানতের খেয়ানত করার কারণে, একটি মানবাত্মাকে ধ্বংসের মুখে অবলীলায় ঠেলে দেয়ার কারণে পরকালীন জীবনে মাতা-পিতাকে জবাদিহিতার সম্মুখীন হওয়া একটি দুর্পার ঘটনা।
বর্তমানে অবশ্য অনেক মাতা পিতা পড়ন্ত বিকেলে এসেও সম্বিত ফিরে পান না ; কেননা তারা নিজেরাই অধার্মিকতাকে জীবনপথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এরূপ ব্যক্তিদের নিজেদের পাপের বোঝা তো বহন করতেই হবে সাথে সাথে তাদের কাছে গচ্ছিত আমানত, তাদেরই জীবনাচার, কৃতকর্মের কারণে ধ্বংস হয়েছে, পাপ ও অন্যায়ের পথ বেছে নিয়ে, আল্লাহ-বিমুখ হয়েছে, পরকাল বিমুখ হয়েছে , একারণে তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হতে হবে।
সে হিসেবে মাতা-পিতাকে তাদের কাছে গচ্ছিত আমানতের যথার্থ সম্মান করার স্বার্থে, নিজ সন্তানদের কাঙ্খিত মানবিক গুনাবলিতে ঋদ্ধ করে গড়ে তোলার স্বার্থে, নিজদেরকেও আল্লাহর আদেশ নিষেধের সীমানায় বেঁধে নিতে হবে, সন্তানদেরকেও আল্লাহর দেয়া মৌল প্রকৃতি (ফেতরত ) এর স্বচ্ছতা বজায় রেখে প্রকৃত অর্থে মর্দে মুমিন করে গড়ে তুলতে হবে।
সন্তানের দীন-ধর্ম, আদর্শ, মনোগঠন মাতাপিতার আদলে গড়ে উঠে, এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট একটি হাদিস রয়েছে:
ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ، ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏( ﻣﺎ ﻣﻦ ﻣﻮﻟﻮﺩ ﻳﻮﻟﺪ ﺇﻻ ﻳﻮﻟﺪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻔﻄﺮﺓ، ﻓﺄﺑﻮﺍﻩ ﻳﻬﻮﺩﺍﻧﻪ ﺃﻭ ﻳﻨﺼﺮﺍﻧﻪ ﺃﻭ ﻳﻤﺠﺴﺎﻧﻪ، ﻛﻤﺎ ﺗﻨﺘﺞ ﺍﻟﺒﻬﻴﻤﺔ ﺑﻬﻴﻤﺔ ﺟﻤﻌﺎﺀ، ﻫﻞ ﺗﺤﺴﻮﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺟﺪﻋﺎﺀ ؟ ﺛﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺃﺑﻮ ﻫﺮﻳﺮﺓ : ﻓﻄﺮﺓ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺘﻲ ﻓﻄﺮ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻻ ﺗﺒﺪﻳﻞ ﻟﺨﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺫﻟﻚ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﻘﻴﻢ (
(ইমাম বুখারি রা আবু হুরাইরা (রাযি:) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সন্তান কেবল ফেতরত (ইসলাম ) এর উপর জন্ম লাভ করে, অতঃপর তার মামা-পিতা তাকে ইহুদি অথবা নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানায়, যেমনি পশু পূর্ণাঙ্গ-দেহী পশু জন্ম দেয়, যাতে কি কোনো নাক কর্তিত (খুঁতবিশিষ্ট) দেখতে পাও? এরপর আবু হুরায়রা (রাযি:) বলেন : আল্লাহর ফেতরত যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। [ বুখারি]
সন্তান একটি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সন্তানকে কেন্দ্র করেই বরং যাপিত হয় অনেক পরিবারের দিবস রজনী, পরিবারের সকল দৌড়ঝাঁপের কেন্দ্রীয় টার্গেট থাকে সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নির্মাণ। আর যেহেতু সন্তানের ইহজাগতিক জীবনের স্বাচ্ছ্যন্দের তুলনায় পরজাগতিক শাশ্বত জীবনের স্বাচ্ছ্যন্দের গুরুত্ব অধিক; কেননা সে জীবনে জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুনে যাকে নিক্ষেপ করা হবে, তার দুঃখ-যন্ত্রণা, কষ্ট-যাতনার কোনো অন্ত থাকবে না। না পারবে কেউ তার উপর আরোপিত আযাবকে সামান্যতম লাঘব করতে। তাই তো পরিবারের সদস্যদেরকে, যাদের মধ্যে স্নেহস্পদ ছেলে সন্তানরা নিশ্চয়ই অন্যতম, পরকালের নারকীয় আযাব থেকে বাঁচানোর জন্য সকলপ্রকার সতর্কতা অবলম্বন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া অত্যাবশ্যক। ইরশাদ হয়েছে:
{হে মুমিনগন, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর} [ সূরা আততাহরীম: ৬]
আলী (রাযি:) { তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও} এর ব্যাখ্যা করেছেন এই বলে যে, ‘তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে যা কিছু উত্তম তা শেখাও। [ হাকেম: ৪/৪৯৪]
ইমাম ফখরুদ্দিন রাযি বলেছেন : {তোমরা নিজেদেরকে বাঁচাও} এর অর্থ আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে থেকে নিজেদেরকে বাঁচাও । [ আত তাফসিরুল কাবির : ৩০/৬৪]
ইমাম মুকাতেল উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন : ‘মুসলিম ব্যক্তি নিজেকে ও তার পরিবারকে শিষ্টাচারে দীক্ষিত করে তুলবে, অতঃপর যা কিছু উত্তম তার নির্দেশ দেবে, ও যা কিছু অনুত্তম তা থেকে বারণ করবে। ‌’
তাফসিরে কাশশাফে বলা হয়েছে: ‘{তোমরা নিজেদেরকে বাঁচাও } এর অর্থ গুনাহ বর্জন করে ও ইবাদত আনুগত্যের কাজগুলো করে তোমরা নিজেদেরকে বাঁচাও, আর পরিবারকে বাঁচানোর অর্থ : তাদের হিসেব নাও যে ব্যাপারে তুমি নিজের হিসেব নিয়ে থাক।’
সেহিসেবে ছেলে সন্তানকে মানুষ করতে, সংশোধন করতে, সভ্য-ভদ্র করতে নিরচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা করে যেতে হবে। কোনটা উত্তম, কোনটা অনুত্তম তা শেখাতে হবে। তাদের ভুলত্রুটি শুদ্ধ করার প্রচেষ্টায় যেন ছন্দপতন না ঘটে তার প্রতি অচ্ছেদ্য নজর রাখতে হবে। আর এটাই নবী রাসূলগণের পদ্ধতি। নূহ আলাইহিস সালাম তাঁর ছেলেকে ইমানের দাওয়াত দিয়েছেন। ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর ছেলেদেরকে অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত-আরাধনার উপদেশ করেছেন।
ইমাম নববি রহ. বুস্তানুল আরেফিন কিতাবে [ দ্রঃ পৃষ্ঠা ৪৫] ইমাম শাফেয়ি রা. থেকে বর্ণনা করে বলেন, তিন ফুযাইলের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন যে, নবী দাউদ আলাইহিস সালাম একদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, ‘ হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য যেমন ছিলেন, তেমনি আমার ছেলের ক্ষেত্রেও হবেন। (জবাবে) আল্লাহ তাআলা অহি পাঠিয়ে বললেন: হে দাউদ! তুমি তোমার ছেলেকে বলো, সে যেন আমার জন্য তোমার মতো হয়, তাহলে আমি তোমার প্রতি যেরূপ ছিলাম তার প্রতিও সেরূপ হব।
এ কারণেই ইমাম গাজালি রহ. তাঁর (হে বৎস) গ্রন্থে বলেন: তরবিয়তের অর্থ অনেকটা কৃষকের মতো যে তার ফসলের জমিন থেকে কাঁটা ও আগাছা উপ্ড়ে ফেলে দূরে নিক্ষেপ করে। উদ্দেশ্য তার ফসলের চাড়াগুলো যাতে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম হয়।
মাতা-পিতার দায়িত্বের ব্যাপারে ইমাম ইবনুল কাইয়েম খুব উপকারী একটি মন্তব্য করেছেন, তিনি বলেন: কয়েকজন আহলে ইলম-জ্ঞানবান্ ব্যক্তির বলেছেন যে, বিচার দিবসে প্রথমে পিতাকে তার সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আর এটা হবে সন্তানকে তার পিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করার পূর্বেই। কারণ পিতার যেমন সন্তানের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি সন্তানেরও পিতার উপর অধিকার রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন: {আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সুন্দরতম আচরণ (এহসান) করার উপদেশ দিয়েছি। [ সূরা আল আনকাবুত: ১৯]
আল কুরআনে সন্তানকে মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে উপদেশ, মাত-পিতাকে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশের পরে এসেছে।
ইরশাদ হয়েছে : {তোমরা তোমাদের সন্তানকে দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না, নিশ্চয় আমি তাদেরকে রিয্ক দিই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা বড় অন্যায়।} [ আল ইসরা: ৩১ ]
ইমাম ইবনুল কাইয়েম আরো বলেন, ‘ যে ব্যক্তি তার সন্তানকে উপকারী ইলম শেখানোর ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাল, তাকে সে এমনিতেই ছেড়ে দিল, তার প্রতি সে অবিচার করল। আর অধিকাংশ ছেলে-মেয়ের নষ্ট হওয়ার কারণ পিতার অবহেলা, উদাসীনতা, মাতা-পিতা কর্তৃক তাদেরকে দীনের আবশ্যক বিষয়সমূহ, সুন্নতকর্মসমূহ সম্পর্কে মূর্খ রাখা। আর এভাবেই তারা ছোট কালেই বাচ্ছাদেরকে হারিয়ে ফেলে, অতঃপর বড় হয়ে , না পারে তারা নিজেদেরও কোনো উপকার করতে, আর না আসে, মাতা-পিতার কোনো কল্যাণে।
বলা হয় যে এক ব্যক্তি তার ছেলেকে, মাতা-পিতার প্রতি অবিচার করায় শিকায়েত করে গালমন্দ করছিল। প্রত্যুত্তরে ছেলে বলল: আব্বাজ্বান! আমি যখন ছোট ছিলাম আপনি আমার প্রতি অবিচার করেছেন। তাই বড় হয়ে আমিও আপনার প্রতি অবিচার করলাম। ছোটকালে আপনি আমাকে ধ্বংস করেছেন, আমিও আপনাকে বৃদ্ধ বয়সে ধ্বংস করলাম।
পরিশেষে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, যে ব্যক্তি তার সন্তানদেরকে ইমানে-আমলে, আখলাকে-চরিত্রে বলীয়ান্ করে সঠিক অর্থে মানুষ করতে ব্যর্থ হল সে তার জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ব্যর্থ হল। তাই প্রতিটি মাতা-মাতারই উচিত তাদের জীবনের এ গুরুত্বপূর্ণ মিশনে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে যাওয়া। প্রয়োজনে অন্যসব ব্যস্ততা সংকুচিত করে সন্তান লালনে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দেয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাউফিক দান করুন।
মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
=======================================
=======================================
=======================================
মেয়ে শিশুর আরো কিছু সুন্দর নাম
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীবর্গ তথা উম্মেহাতুল মুমিনীন এর নাম:
খাদিজা (ﺧَﺪِﻳْﺠَﺔُ )
সাওদা (ﺳَﻮْﺩَﺓُ )
আয়েশা (ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ )
হাফসা (ﺣَﻔْﺼَﺔُ )
যয়নব (ﺯَﻳْﻨَﺐُ )
উম্মে সালামা ( ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔ )
উম্মে হাবিবা ( ﺃُﻡِّ ﺣَﺒِﻴْﺒَﺔ )
জুওয়াইরিয়া (ﺟُﻮَﻳْﺮِﻳَﺔُ )
সাফিয়্যা (ﺻَﻔِﻴَّﺔُ )।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যাবর্গের নাম:
ফাতেমা (ﻓَﺎﻃِﻤَﺔُ)
রোকেয়া ( ﺭُﻗَﻴَّﺔُ)
উম্মে কুলসুম ( ﺃُﻡُّ ﻛﻠْﺜُﻮْﻡ )।
আরো কিছু নেককার নারীর নাম-
সারা (ﺳَﺎﺭَﺓ )
হাজেরা (ﻫَﺎﺟِﺮ )
মরিয়ম (ﻣَﺮْﻳَﻢ )।
মহিলা সাহাবীবর্গের নাম:
রুফাইদা ( ﺭُﻓَﻴْﺪَﺓُ -সামান্য দান)
আমেনা (ﺁﻣِﻨَﺔُ -প্রশান্ত আত্মা)
আসমা (ﺃَﺳْﻤَﺎﺀُ -নাম)
রাকিকা (ﺭَﻗِﻴْﻘَﺔٌ -কোমলবতী)
নাফিসা (ﻧَﻔِﻴْﺴَﺔُ -মূল্যবান)
উমামা (ﺃُﻣَﺎﻣَﺔُ- তিনশত উট)
লায়লা (ﻟَﻴْﻠﻰ -মদ)
ফারিআ (ﻓَﺮِﻳْﻌَﺔُ -লম্বাদেহী)
আতিকা (ﻋَﺎﺗِﻜَﺔُ -সুগন্ধিনী)
হুযাফা (ﺣُﺬَﺍﻓَﺔُ -সামান্য বস্তু)
সুমাইয়্যা (ﺳُﻤَﻴَّﺔُ -আলামত)
খাওলা ( ﺧَﻮْﻟَﺔُ-সুন্দরী)
হালিমা (ﺣَﻠِﻴْﻤَﺔُ -ধৈর্য্যশীলা)
উম্মে মাবাদ ( ﺃﻡ ﻣَﻌْﺒَﺪ -মাবাদের মা)
উম্মে আইমান ( ﺃﻡَّ ﺃَﻳْﻤَﻦ -আইমানের মা)
রাবাব ( ﺭَﺑَﺎﺏ-শুভ্র মেঘ)
আসিয়া (ﺁﺳِﻴَﺔُ -সমবেদনাপ্রকাশকারিনী)
আরওয়া (ﺃﺭْﻭَﻯ -কোমল ও হালকা)
আনিসা (ﺃﻧِﻴْﺴَﺔُ -ভাল মনের অধিকারিনী)
জামিলা (ﺟَﻤِﻴْﻠَﺔُ -সুন্দরী)
দুর্রা (ﺩُﺭَّﺓ-বড় মতি)
রাইহানা (ﺭَﻳْﺤَﺎﻧَﺔ -সুগন্ধি তরু)
সালমা (ﺳَﻠْﻤﻰ -নিরাপদ)
সুআদ (ﺳُﻌَﺎﺩ-সৌভাগ্যবতী)
লুবাবা ( ﻟُﺒَﺎﺑَﺔ-সর্বোত্তম)
আলিয়া (ﻋَﻠِﻴَّﺔُ -উচ্চমর্যাদা সম্পন্না)
কারিমা ( ﻛَﺮِﻳْﻤَﺔُ – উচ্চবংশী)।
মেয়েদের আরো কিছু সুন্দর নাম:
ছাফিয়্যা (ﺻَﻔِﻴَّﺔُ )
খাওলা ( ﺧَﻮْﻟَﺔُ)
হাসনা (ﺣَﺴْﻨَﺎﺀ -সুন্দরী)
সুরাইয়া (ﺍﻟﺜُّﺮَﻳﺎ -বিশেষ একটি নক্ষত্র)
হামিদা (ﺣَﻤِﻴْﺪَﺓُ -প্রশংসিত)
দারদা (ﺩَﺭْﺩَﺍﺀُ )
রামলা ( ﺭَﻣْﻠَﺔُ- বালিময় ভূমি)
মাশকুরা (ﻣَﺸْﻜُﻮْﺭَﺓٌ -কৃতজ্ঞতাপ্রাপ্ত)
আফরা (ﻋَﻔْﺮَﺍﺀُ -ফর্সা)।
=====================
=====================
সন্তানের সুন্দর নাম এবং তার অর্থ
নাম - নামের অর্থ
এলি - হেলান দেয়া
আবদুল হাসিব -
হিসাব গ্রহনকারীর গোলাম
ইহতিসাব - হিসাব করা
আবদুল হাফিজ -
হিফাজতকারীর গোলাম
মুহাললিল -
হালালকারী
মুহাররিম -
হারামকারী
দিলদার - হৃদয়বান
বখতিয়ার নাদিম -
সৌভাগ্যবান সাথী
বখতিয়ার আমজাদ -
সৌভাগ্যবান সম্মানিত
বখতিয়ার মুইজ সৌভাগ্যবান সম্মানিত
বখতিয়ার ফাতিন -
সৌভাগ্যবান সুন্দর
বখতিয়ার হাসিন -
সৌভাগ্যবান সুন্দর
বখতিয়ার আজিম -
সৌভাগ্যবান শক্তিশালী
বখতিয়ার আসেফ -
সৌভাগ্যবান যোগ্য ব্যক্তি
বখতিয়ার জলিল -
সৌভাগ্যবান মহান
বখতিয়ার আশহাব -
সৌভাগ্যবান বীর
বখতিয়ার ফাতেহ -
সৌভাগ্যবান বিজয়ী
বখতিয়ার গালিব -
সৌভাগ্যবান বিজয়ী
বখতিয়ার মনসুর -
সৌভাগ্যবান বিজয়ী
বখতিয়ার আহবাব -
সৌভাগ্যবান বন্ধু
বখতিয়ার আনিস -
সৌভাগ্যবান বন্ধু
বখতিয়ার হামিম -
সৌভাগ্যবান বন্ধু
বখতিয়ার খলিল -
সৌভাগ্যবান বন্ধু
বখতিয়ার রফিক -
সৌভাগ্যবান বন্ধু
বখতিয়ার ওয়াদুদ -
সৌভাগ্যবান বন্ধু
বখতিয়ার ফাহিম -
সৌভাগ্যবান বুদ্ধিমান
বখতিয়ার আখতাব -
সৌভাগ্যবান বক্তা
বখতিয়ার আশিক -
সৌভাগ্যবান প্রেমিক
বখতিয়ার মুহিব -
সৌভাগ্যবান প্রেমিক
বখতিয়ার মাশুক -
সৌভাগ্যবান প্রেমাস্পদ
বখতিয়ার মাহবুব -
সৌভাগ্যবান প্রিয়
বখতিয়ার হামিদ -
সৌভাগ্যবান প্রশংসাকারী
মাসুদ লাতীফ -
সৌভাগ্যবান পবিত্র
বখতিয়ার আসলাম -
সৌভাগ্যবান নিরাপদ
বখতিয়ার আদিল -
সৌভাগ্যবান ন্যায়পরায়ন
বখতিয়ার আকরাম -
সৌভাগ্যবান দানশীল
বখতিয়ার করিম -
সৌভাগ্যবান দয়ালু
বখতিয়ার মুস্তাফা সৌভাগ্যবান উপকৃত
বখতিয়ার নাফিস -
সৌভাগ্যবান উত্তম
বখতিয়ার আবিদ -
সৌভাগ্যবান ইবাদতকারী
বখতিয়ার ফরিদ -
সৌভাগ্যবান আনুপম
মাসুদ -
সৌভাগ্যবান
মাসুদা -
সৌভাগ্যবতী
সাদীয়া -
সৌভাগ্যবতী
ইকবাল - সৌভাগ্য, উন্নতি
বরকত - সৌভাগ্য
রুমী - সৌন্দার্য
শোভন - সৌন্দর্য
যীনাত - সৌন্দর্য
যারীন নূদার -
সোনালী স্বর্ণ
যারীন আসিয়া -
সোনালী স্তম্ভ
যারীন রাফা -
সোনালী সুখ
যারীন আনান -
সোনালী মেঘ
যারীন গাওহার -
সোনালী মুক্তা
যারীন হাদীকা -
সোনালী বাগান
যারীন সুবাহ -
সোনালী প্রভাত
যারীন আনজুম -
সোনালী তারা
যারীন সাদাফ -
সোনালী ঝিনুক
যারীন সিমা -
সোনালী কপাল
যারীন আতিয়া -
সোনালী উপহার
যারীন রোশনী -
সোনালী আলো
যারীন রায়হানা -
সোনালী আনন্দ ফুল
যারীন ফরহাত -
সোনালী আনন্দ
যারীন মুসাররাত -
সোনালী আনন্দ
যারীন - সোনালী
দিবা - সোনালী
উসাইদ - সিংহ সাবক
আব্বাস - সিংহ
আসাদ - সিংহ
ফাহাদ - সিংহ
মানসুর - সাহায্যপ্রাপ্ত
আবদুল নাসের -
সাহায্যকারীর গোলাম
মুইন নাদিম -
সাহায্যকারী সঙ্গী
আনসার -
সাহায্যকারী
মুঈন -
সাহায্যকারী
নাসের - সাহায্যকারী
নাসির -
সাহায্যকারী
গিয়াস - সাহায্য
নুসরাত - সাহায্য
দিলির দাইয়ান -
সাহসী সিংহ
গালিব গজনফর -
সাহসী সিংহ
দিলির মনসুর -
সাহসী বিজয়ী
দিলির আহবাব -
সাহসী বন্ধু
দিলির হাবিব -
সাহসী বন্ধু
দিলির হামিম -
সাহসী বন্ধু
দিলির ফুয়াদ -
সাহসী অন্তর
দেলওয়ার - সাহসী
দিলওয়ারা- সাহসিকতা
আফিফা সাহেবী -
সাধবী বান্ধবী
আফিফা - সাধবী
রীমা - সাদা হরিন
আফরা আবরেশমী -
সাদা সিল্ক
আফরা আসিয়া -
সাদা স্তম্ভ
আফরা রায়হান -
সাদা সুগন্ধী ফুল
আফরা আনিকা -
সাদা রূপসী
আফরা ওয়াসিমা -
সাদা রূপসী
আফরা গওহর -
সাদা মুক্তা
আফরা নাওয়ার -
সাদা ফুল
আবইয়াজ আজবাব -
সাদা পাহাড়
আফরা আনজুম -
সাদা তারা
আফরা সাইয়ারা -
সাদা তারা
আফরা ইয়াসমিন -
সাদা জেসমিন ফুল
আফরা রুমালী -
সাদা কবুতর
আফরা ইবনাত -
সাদা কন্যা
আফরা বশীরা -
সাদা উজ্জ্বল
অর্ণব - সাগর
শাহীদ - সাক্ষী
আইদাহ -
সাক্ষাৎকারিনী
দীদার - সাক্ষাৎ
ইয়ানাত - সহযোগিতা করা
আযহার - সুস্পষ্ট
মুবিন - সুস্পষ্ট
সালীমা - সুস্থ
বশির শাহরিয়ার -
সুসংবাদবহনকারী রাজা
বশীর আশহাব -
সুসংবাদবহনকারী বীর
বশীর হাবীব -
সুসংবাদবহনকারী বন্ধু
বশীর হামিম -
সুসংবাদবহনকারী বন্ধু
বশীর আখতাব -
সুসংবাদবহনকারী বক্তা
বশীর আহবাব -
সুসংবাদবহনকারী নেতা
বশীর আনজুম -
সুসংবাদবহনকারী তারা
বাশীর - সুসংবাদ বহনকারী
মুবাশশীরা - সুসংবাদ বহনকারী
মুবাশশির - সুসংবাদ আনয়নকারী
আবদুল বারী -
সৃষ্টিকর্তার গোলাম
আবদুল খালেক -
সৃষ্টিকর্তার গোলাম
মধু - সৃষ্টি
রাশীদ - সরল,শুভ
আবদুর রশিদ - সরল সত্যপথে পরিচালকের গোলাম
উদিতা - সূর্য্যদয়
আদিত্য - সূর্য্য
অর্ক - সূর্য্য
সুরভি - সূর্য্য
সরিতা - সূর্য্য
তাপস - সূর্য্য
আদিত - সূর্য
তপন - সুর্য
তাহমিদ - সর্বক্ষন আল্লাহর প্রশংসাকারী
আবদুস সামী - সর্ব শ্রোতার গোলাম
সাইয়্যেদ - সরদার
মাহফুজ - সুরক্ষিত
মামুন - সুরক্ষিত
খাতিম সমাপনকরী
খাতি সমাপন কারী
এষা - স্মরণীয়
আজিজা সম্মানিতা
আমজাদ বখতিয়ার -
সম্মানিত সৌভাগ্যবান
আতিক বখতিয়ার -
সম্মানিত সৌভাগ্যবান
আতিক মাসুদ -
সম্মানিত সৌভাগ্যবান
আতিক জামাল -
সম্মানিত সৌন্দর্য্য
আমজাদ আসাদ -
সম্মানিত সিংহ
আতিক আনসার -
সম্মানিত সাহায্যকারী
আমজাদ বশীর -
সম্মানিত সুসংবাদবহনকারী
আতিক আহরাম -
সম্মানিত স্বাধীন
আমজাদ শাকিল -
সম্মানিত সুপুরুষ
আতিক শাকিল -
সম্মানিত সুপুরুষ
আমজাদ সাদিক -
সম্মানিত সত্যবান
আতিক সাদিক -
সম্মানিত সত্যবান
আমজাদ নাদিম -
সম্মানিত সঙ্গী
আমজাদ আমের -
সম্মানিত শাসক
আতিক আমের -
সম্মানিত শাসক
আমজাদ আজিম -
সম্মানিত শক্তিশালী
আতিক আজিম -
সম্মানিত শক্তিশালী
আতিক শাহরিয়ার -
সম্মানিত রাজা
আতিক তাজওয়ার -
সম্মানিত রাজা
মুয়াম্মার তাজওয়ার -
সম্মানিত রাজা
আমজাদ হামি -
সম্মানিত রক্ষাকারী
আতিক আসেফ -
সম্মানিত যোগ্যব্যক্তি
আমজাদ জলিল -
সম্মানিত মহান
আতিক আকবর -
সম্মানিত মহান
আসীর মুজতবা -
সম্মানিত মনোনীত
আমজাদ রইস -
সম্মানিত ভদ্র ব্যাক্তি
আমজাদ আশহাব -
সম্মানিত বীর
আতিক আশহাব -
সম্মানিত বীর
আমজাদ গালিব -
সম্মানিত বিজয়ী
আসীর মনসুর -
সম্মানিত বিজয়ী
আতিক মনসুর -
সম্মানিত বিজয়ী
আসীর ইনতিসার -
সম্মানিত বিজয়
আসীর ফয়সাল -
সম্মানিত বিচারক
আতিক ফয়সাল -
সম্মানিত বিচারক
আমজাদ মুনিফ -
সম্মানিত বিখ্যাত
আমজাদ আনিস -
সম্মানিত বন্ধু
আমজাদ খলিল -
সম্মানিত বন্ধু
আমজাদ মাহবুব -
সম্মানিত বন্ধু
আমজাদ রফিক -
সম্মানিত বন্ধু
আসীর আহবার -
সম্মানিত বন্ধু
আসীর হামিদ -
সম্মানিত বন্ধু
আতিক ওয়াদুদ -
সম্মানিত বন্ধু
আমজাদ লাবিব -
সম্মানিত বুদ্ধিমান
আতিক মুহিব -
সম্মানিত প্রেমিক
আমজাদ হাবীব -
সম্মানিত প্রিয় বন্ধু
আতিক মাহবুব -
সম্মানিত প্রিয় বন্ধু
আতিক ইশরাক -
সম্মানিত প্রভাত
আমজাদ মোসাদ্দেক -
সম্মানিত প্রত্যয়নকারী
আতিক মোসাদ্দেক -
সম্মানিত প্রত্যয়নকারী
আমজাদ লতিফ -
সম্মানিত পবিত্র
আতিক মুরশেদ -
সম্মানিত পথ প্রদর্শক
আসীর আজমল -
সম্মানিত নিখুঁত
আসীর আবরার -
সম্মানিত ন্যায়বান
আতিক আবরার -
সম্মানিত ন্যায়বান
আতিক আদিল -
সম্মানিত ন্যায়পরায়ণ
আতিক মুজাহিদ -
সম্মানিত ধর্মযোদ্ধা
আতিক ইয়াসির -
সম্মানিত ধনবান
আতিক জাওয়াদ -
সম্মানিত দানশীল
আতিক আবসার -
সম্মানিত দৃষ্টি
আমজাদ আরিফ -
সম্মানিত জ্ঞানী
আসীর আওসাফ -
সম্মানিত গুনাবলী
আতিক আহনাফ -
সম্মানিত খাঁটি ধার্মিক
আমজাদ আজিজ -
সম্মানিত ক্ষমতাবান
আমজাদ আকিব -
সম্মানিত উপাসক
আমজাদ আলি -
সম্মানিত উচ্চ
আমজাদ আবিদ -
সম্মানিত ইবাদতকারী
মুয়ীয মুজিদ -
সম্মানিত আবিষ্কারক
আমজাদ ফুয়াদ -
সম্মানিত অন্তর
আতিক আহমাদ -
সম্মানিত অতি প্রশংসনীয়
আমজাদ - সম্মানিত
আমজাদ - সম্মানিত
আসীর - সম্মানিত
আসীর মোসাদ্দেক -
সম্মানিত
আবদুল মুয়িয -
সম্মানদাতার গোলাম
তাওকীর তাজাম্মূল -
সম্মান মর্যাদা
ইকরাম - সম্মান করা
বানু - সম্ভ্রান্ত
আজমাইন আদিল -
সম্পূর্ন ন্যায়পরায়ন
আজমাইন ফায়েক -
সম্পূর্ন উত্তম
ফয়েজ - সম্পদ
ইয়াসার - সম্পদ
ফাইরুজ মাসুদা -
সমৃদ্ধিশীলা সৌভাগ্যবতী
ফাইরুজ মালিহা -
সমৃদ্ধিশীলা সৌভাগ্যবতী
ফাইরুজ আনিকা -
সমৃদ্ধিশীলা সুন্দরী
ফাইরুজ হোমায়রা -
সমৃদ্ধিশীলা সুন্দরী
ফাইরুজ ওয়াসিমা -
সমৃদ্ধিশীলা সুন্দরী
ফাইরুজ ইয়াসমিন -
সমৃদ্ধিশীলা সু্ন্দর
ফাইরুজ বিলকিস -
সমৃদ্ধিশীলা রানী
ফাইরুজ শাহানা -
সমৃদ্ধিশীলা রাজকুমারী
ফাইরুজ গওহার -
সমৃদ্ধিশীলা মুক্তা
ফাইরুজ লুবনা -
সমৃদ্ধিশীলা বৃক্ষ
ফাইরুজ নাওয়ার -
সমৃদ্ধিশীলা ফুল
ফাইরুজ সাদাফ -
সমৃদ্ধিশীলা ঝিনুক
আশেয়া - সমৃদ্ধিশীল
ফিরোজ আসেফ -
সমৃদ্ধিশালী যোগ্যব্যক্তি
ফিরোজ আহবাব -
সমৃদ্ধিশালী বন্ধু
ফিরোজ ওয়াদুদ -
সমৃদ্ধিশালী বন্দু
ফিরোজ আতেফ -
সমৃদ্ধিশালী দয়ালু
ফিরোজ মুজিদ -
সমৃদ্ধিশালী আবিষ্কারক
তানজীম - সুবিন্যাস্ত
মাযীদ - সুবিধা
আবদুল দাইয়ান -
সুবিচারের দাস
সালিম শাদমান -
স্বাস্থ্যবান আনন্দিত
আতয়াব - সুবাস
জয়া - স্বাধীন
নাঈম - স্বাচ্ছন্দ্য
রাহাত - স্বাচ্ছন্দ্য
আকিব - সবশেষে আগমনকারী
কনক - স্বর্ন
কঙ্কা - স্বর্ন
কাঞ্চন - স্বর্ন
নুদার - স্বর্ণ
রাব্বানী রাশহা -
স্বর্গীয় ফলের রস
রাব্বানী - স্বর্গীয়
শাদাব সিপার সবুজ বর্ম
আখজার আবরেশাম -
সবুজ বর্ণের সিল্ক
আখতার নেহাল -
সবুজ চার গাছ
আরহাম আখইয়ার -
সবচেয়ে সংবেদনশীল চমৎকার মানুষ
আরশাদ আওসাফ -
সবচাইতে সৎগুনাবলী
আরহাম আহবাব -
সবচাইতে সংবেদনশীল বন্ধু
বাসিত - স্বচ্ছলতা দানকারী
ফাওজিয়া আফিয়া -
সফল সুখী
ফাওজিয়া আফিয়া -
সফল পুন্যবতী
আরশাদ - সৎপথের অনুসারী
মাহদী - সৎপথ প্রাপ্ত
হাদি - সৎপথ প্রদর্শক
সুরাইয়া - সপ্তর্ষি মন্ডল
রাউফ - স্নেহশীল
ললিতা - সুনন্দরী সখী
রফিকুল হাসান -
সুন্দেরের উচ্চ
আমীর হাসান -
সুন্দরের বন্ধু
মনিরুল হাসান -
সুন্দরের পিতা
আলী হাসান -
সুন্দরের নেতা
আবুল হাসান -
সুন্দরের কল্যাণ
হোমায়রা আসিমা -
সুন্দরী সতী নারী
হোমায়রা আদিবা -
সুন্দরী শিষ্টাচারী
নাওশিন শরমিলি -
সুন্দরী লজ্জাবতী
হোমায়রা আফিয়া -
সুন্দরী পুণ্যবতী
মালিহা মুনাওয়ারা -
সুন্দরী দীপ্তিমান
হোমায়রা আতিয়া -
সুন্দরী দানশীল
হোমায়রা বিলকিস -
সুন্দরী তারা
নাওশিন সাইয়ারা -
সুন্দরী তারা
হোমায়রা ইয়াসমিন -
সুন্দরী জেসমিন ফুল
নাওশিন ইয়াসমিন -
সুন্দরী জেসমিন ফুল
অনিন্দিতা -
সুন্দরী
আতিকা - সুন্দরী
চারু - সুন্দরী
দময়ন্তী - সুন্দরী
ফালগুনি - সুন্দরী
হেমা - সুন্দরী
জামিলাহ - সুন্দরী
লালিমা - সুন্দরী
ললিত - সুন্দরী
পরমা সুন্দরী
ওয়াজিহা - সুন্দরী
ওয়াসীমা - সুন্দরী
ফাতিন আলমাস -
সুন্দর হীরা
আনিসা তাবাসসুম -
সুন্দর হাসি
জিয়াউল হাসান -
সুন্দর সাহায্যকারী
খাইরুল হাসান -
সুন্দর সুসংবাদ
আলতাফ হুসাইন -
সুন্দর সূর্য্য
আতিকা তাসাওয়াল -
সুন্দর সমতা
ফাতিন শাদাব -
সুন্দর সবুজ
ফাতিন ওয়াহাব -
সুন্দর সবুজ
হাসিন শাদাব -
সুন্দর সবুজ
মুনীর হুসাইন - সুন্দর সুপারিশ
মোহাম্মদ হাসান -
সুন্দর সৎপথপ্রাপ্ত ব্যক্তি
আমজাদ হুসাইন -
সুন্দর সত্যবাদী
রানা রায়হান - সুন্দর সুগন্ধীফুল
হাসিন রাইহান -
সুন্দর সুগন্ধী ফূল
আনিসা রায়হানা -
সুন্দর সুগন্ধী ফুল
নাওশিন আনবার - সুন্দর সুগন্ধী
ফাতিন ইশরাক -
সুন্দর সকাল
হাসিন ইশরাক -
সুন্দর সকাল
রানা আদিবা - সুন্দর শিষ্টাচারী
আনিসা বুশরা -
সুন্দর শুভ নিদর্শন
হাসিন আহমার - সুন্দর লাল বর্ণ
আনিসা শার্মিলা -
সুন্দর লজ্জাবতী
রানা শারমিলা - সুন্দর লজ্জাবতী
আনিসা শামা -
সুন্দর মোমবাতি
ফাতিন জালাল -
সুন্দর মহিমা
আহমাদ হুসাইন -
সুন্দর মহত্ত্ব
আনিসা গওহর - সুন্দর মুক্তা
নাওয়াল গওয়ার - সুন্দর মুক্তা
নুরুর হাসান - সুন্দর মুক্তা
শাফায়াত হুসাইন -
সুন্দর ভাগ্যবান
ফরীদুল হাসান - সুন্দর ভদ্র
ওয়ালী হাসান -
সুন্দর বিশিষ্ট
বদরুল হাসান - সুন্দর বসন্তকাল
হাসিন আখজার -
সুন্দর বর্ণ
হাসিন আহবান সুন্দর বন্ধু
হাসিন সাহাদ -
সুন্দর বন্ধু
সাদ্দাম হুসাইন -
সুন্দর বন্ধু
আনিসা নাওয়ার - সুন্দর ফুল
নাওশিন রুমালী -
সুন্দর ফুল
রানা নাওয়ার - সুন্দর ফুল
ফাতিন আজবাব -
সুন্দর পাহাড়
হাসিন মুহিব -
সুন্দর প্রেমিক
রানা সালমা - সুন্দর প্রশান্ত
মাহতাব হুসাইন -
সুন্দর প্রশংসিত
শরীফুল হাসান -
সুন্দর প্রশংসিত
হাসিন হামিদ -
সুন্দর প্রশংসাকারী
কামরুল হাসান -
সুন্দর পূর্নিমার চাঁদ
ফাতিস মেসবাহ -
সুন্দর প্রদীপ
হাসিন মেসবাহ -
সুন্দর প্রদীপ
রানা শামা - সুন্দর প্রদীপ
ফখরুল হাসান - সুন্দর নেতা
মাহদী হাসান -
সুন্দর নির্বাচিত
হাসিন আজমল -
সুন্দর নিখঁত
হাসিন আবরার সুন্দর ন্যায়বান
রানা সাইদা - সুন্দর নদী
ছাদেক হুসাইন -
সুন্দর দানবীর
আনোয়ার হুসাইন -
সুন্দর দয়ালু
ফাতিন আনজুম -
সুন্দর তারা
হাসিন আনজুম -
সুন্দর তারা
নাওশিন আনজুম -
সুন্দর তারা
রানা ইয়াসমীন - সুন্দর জেসমিন ফুল
ফাতিন আনওয়ার - সুন্দর জ্যোতির্মালা
হাসিন আখলাখ -
সুন্দর চারিত্র গুনাবলি
ফাতিন নেহাল -
সুন্দর চারাগাছ
ফাতিন মাহতাব -
সুন্দর চাঁদ
ফয়জুল হাসান - সুন্দর চাঁদ
হাসিন মাহতাব -
সুন্দর চাঁদ
ফাতিন আখইয়ার -
সুন্দর চমৎকার মানুষ
আফতাব হুসাইন -
সুন্দর চন্দ্র
ফাতিন হাসনাত -
সুন্দর গুনাবলী
রানা তারাননুম - সুন্দর গুঞ্জরণ
সাইফুল হাসান -
সুন্দর কল্যাণ
রানা তাবাসসুম - সুন্দর কমনীয় হাসি
রানা আবরেশমী - সুন্দর কমনীয় প্রভাত
নাওশিন রুমালী -
সুন্দর কবুতর
রানা রুমালী - সুন্দর কবুতর
ফাতিন নেসার - সুন্দর উৎসর্গ
ফরহাতুল হাসান -
সুন্দর উৎস
আতিয়া উলফা -
সুন্দর উপহার
নাওশিন আতিয়া -
সুন্দর উপহার
নাওশিন নাওয়াল -
সুন্দর উপহার
রানা আতিয়া - সুন্দর উপহার
রানা নাওয়াল - সুন্দর উপহার
আনিসা তাহসিন -
সুন্দর উত্তম
ফাতিন ইশতিয়াক -
সুন্দর ইচ্ছা
হাসিন আরমান -
সুন্দর ইচ্ছা
আইনুল হাসান - সুন্দর ইঙ্গিতদাতা
মাহমুদ হাসান সুন্দর আলোর বিচ্ছুরক
মুশারফ হুসাইন -
সুন্দর আলোবিচ্ছুরক
সাখাওয়াত হুসাইন -
সুন্দর আলোবিচ্ছুরক
ফাতিন নূর - সুন্দর আলো
মামুনুল হাসান -
সুন্দর আলো
মশিরুল হাসান -
সুন্দর আমানতকৃত
বাহারুল ইসলাম -
সুন্দর আনন্দ
মমতাজুল হাসান -
সুন্দর অহংকার
মুরতাজা হাসান -
সুন্দর অভিভাবক
ইকবাল হুসাইন -
সুন্দর অপ্রতিরোধ্য
ফাতিন ইহসাস -
সুন্দর অনুভূতি
ফাতিন ইলহাম -
সুন্দর অনুভূতি
রানা লামিসা - সুন্দর অনুভূতি
ফাতিন আবরেশাম -
সুন্দর অন্তর
ফাতিন ফুয়াদ -
সুন্দর অন্তর
হাসিন আহম্মদ -
সুন্দর অতিপ্রশংসনীয়
হাসিন আজহার - সুন্দর অই স্বচ্ছ
অনুপমা - সুন্দর
হাসিনা - সুন্দর
জামীল - সুন্দর
তাহসীন - সুন্দর
রাদিআহ - সন্তুষ্টি
রাজিব - সন্তুষ্ট
অমিয় - সুধা
জয়নব - সুদশনী
আরমান - সুদর্শন প্রেমিক
সুবাঙ - সুদর্শন
তাহিরা - সতী
সত্যেন - সত্যের প্রভূ
সত্যজিৎ - সত্যের জয়
মুসাদ্দেক -
সত্যায়নকারী
মুতাসাদ্দিক -
সত্যায়নকারী
সাদিক - সত্যবান
আছিয়া - স্তম্ব
সালওয়া - সততা
রশিদ আমের - সঠিক পথে পরিচালিত শাশক
রাশিদ মুতারাসসীদ -
সঠিক পথে পরিচালিত লক্ষ্যকারী
রাশিদ শাহরিয়ার -
সঠিক পথে পরিচালিত রাজা
রাশিদ তাজওয়ার -
সঠিক পথে পরিচালিত রাজা
রাশিদ আসেফ -
সঠিক পথে পরিচালিত যোগ্যব্যক্তি
রাশিদ আহবাব -
সঠিক পথে পরিচালিত বন্ধু
রাশীদ নাইব - সঠিক পথে পরিচালিত প্রতিনিধি
রশিদ আবরার - সঠিক পথে পরিচালিত ন্যায়বান
রাশিদ মুতাহাম্মিল -
সঠিক পথে পরিচালিত ধৈর্যশীল
রাশিদ মুবাররাত -
সঠিক পথে পরিচালিত ধার্মিক
রাশিদ তকী -
সঠিক পথে পরিচালিত ধার্মিক
রাশিদ মুজাহিদ -
সঠিক পথে পরিচালিত ধর্ম যোদ্ধা
রাশিদ আনজুম -
সঠিক পথে পরিচালিত তারা
রাশিদ শাবাব - সঠিক পথে পরিচালিত জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়
রাশিদ লুকমান -
সঠিক পথে পরিচালিত জ্ঞানী ব্যক্তি
রাশিদ আরিফ -
সঠিক পথে পরিচালিত জ্ঞানী
রাশিদ মুতারাদ্দীদ -
সঠিক পথে পরিচালিত চিন্তাশীল
রাশিদ আবিদ -
সঠিক পথে পরিচালিত ইবাদতকারী
রাশিদ তালিব -
সঠিক পথে পরিচালিত অনুসন্ধানকারি
আজরফ - সুচতুর
আনবার উলফাত -
সুগন্ধী উপহার
আতেরা - সুগন্ধী
মায়িশা মুমতাজ -
সুখী জীব-যাপনকারী মনোনীত
মালিহা সামিহা - সুখী জীবন-যাপনকারী দানশীল
নাইমাহ - সুখী জীবনযাপনকারিনী
মাশিয়া মালিহা -
সুখী জীবন যাপনকারী সুন্দরী
মায়িশা মুনাওয়ারা -
সুখী জীবন যাপনকারী দীপ্তিমান
আশা - সুখী জীবন
হোমায়রা আনিস -
সুখী কুমারী
আনন্দ - সুখী
ফারিহা - সুখী
ফাওজিয়অ আবিদা -
সকল এবাদতকারিনী
আকলিমা - সুকন্ঠি
ইসলাহ - সংস্কার
নবী - সংবাদ দাতা
মুহতাদী - সৎ পথের দিশরী
ইতি - শেষ, সমাপ্তি
তুহিনা - শিশির বিন্দু
ইদ্রীস - শিক্ষা দীক্ষায় ব্যস্ত ব্যক্তি
আবদুস সালাম -
শান্তিকর্তার গোলাম
আজম - শ্রেষ্ঠতম
উত্তম - শ্রেষ্ঠ
ইসমায়ী - শ্রবন করা
লায়লা - শ্যামলা
বুশরা - শুভ নিদর্শন
আয়মান উলফাত - শুভ উপহার
মুবারক - শুভ
ফাসীহ্ - শুদ্ধভাষী
ধীরান - শক্তিশালী
রিয়া - লৌকিকতা
লিপি - লিখন
পলা - লাল রং
আহমাম আবরেশমা -
লাল বর্নেরসিল্ক
আহমার আজবাব -
লাল পাহাড়
আহমার আখতার - লাল তারা
আইভি - লবুজ লতা
শার্মিলা - লজ্জাবতী
উর্মিলা - লক্ষনের স্ত্রী
সায়িমা - রোজাদার
আবদুর রাজ্জাক -
রিযিকদাতার গোলাম
উম্মী - রাসূল(স.)-এর উপাধি
আরাবী - রাসূল (স.)-এর উপাধি
হেজাযী - রাসূল (স.)-এর উপাধি
হাশেমী - রাসূল (স.)-এর উপাধি
মাক্কী - রাসূল (স.)-এর উপাধি
মাদানী - রাসূল (স.)-এর উপাধি
নাযারী - রাসূল (স.)-এর উপাধি
কুরাইশী - রাসূল (স.)-এর উপাধি
তেহামী - রাসূল (স.)-এর উপাধি
বিলকিস - রানী
রাইসা - রানী
শাবানা -
রাত্রিমধ্যে
রজনী - রাত
রজনী - রাত
শর্বরী - রাত
নরেন্দ্র - রাজা
শাহনাজ - রাজগর্ব
শাহানা - রাজকুমারী
সৌন্দর্য - রাওনাক
আসরার - রহস্যাবলী
ইসরার - রহস্য,গোপন কথা
রহমত - রহমত
আভা - রশ্মি
রজত - রুপালী
আনিকা - রূপসী
হুমায়রা - রূপসী
মালিহা - রূপসী
সাবিহা - রূপসী
যাহরা - রূপবতী ফুল
শাকিলা - রূপবতী
মনি - রত্ন
রুচি - রুচিশীল
আবির - রঙ
হামি আসলাম -
রক্ষাকারী হীরা
আবদুল হামি -
রক্ষাকারী সেবক
হামি আসাদ -
রক্ষাকারী সিংহ
হামি লায়েস -
রক্ষাকারী সিংহ
হামি মোসলেহ -
রক্ষাকারী সংস্কারক
হামি নাদিম -
রক্ষাকারী সংগী
হামি আসেব -
রক্ষাকারী যৌগ্য ব্যক্তি
হামি আশহাব -
রক্ষাকারী বীর
হামি আহবাব -
রক্ষাকারী বন্ধু
হামি খলিল -
রক্ষাকারী বন্ধু
হামি আজবাল -
রক্ষাকারী পাহাড়
হামি নকীব -
রক্ষাকারী নেতা
হামি আবরার -
রক্ষাকারী ন্যায়বান
হামি আবসার -
রক্ষাকারী দৃষ্টি
হামি মুশফিক -
রক্ষাকারী দয়ালু
হামি আনজুম -
রক্ষাকারী তীর
হামি আখতার -
রক্ষাকারী তারা
হামি লুকমান -
রক্ষাকারী জ্ঞানী ব্যক্তি
আসীম - রক্ষাকারী
হাফিজ - রক্ষক
আসেফ আমের -
যোগ্য শাসক
আতিক - যোগ্য ব্যাক্তি
আকমার আকতাব -
যোগ্য নেতা
সমর - যুদ্ধ
জেবা মালিয়াত -
যথার্থ সম্পদ
জেবা ফাওজিয়াহ -
যথার্থ সফল
জেবা তাহসিন -
যথার্থ সুন্দর
জেবা ওয়াসীমা -
যথার্থ সুন্দর
জেবা আনিকা -
যথার্থ সুন্দর
জেবা আতিকা -
যথার্থ সুন্দর
জেবা রেজওয়ান -
যথার্থ সন্তোষ
জেবা তাহিরা -
যথার্থ সতী
জেবা ফারিহা -
যথার্থ সুখী
জেবা আদিবা -
যথার্থ শিষ্টাচারী
জেবা রাহাত -
যথার্থ শান্তি
জেবা মুবাশশিরা -
যথার্থ শুভ সংবাদ
জেবা রাইসা -
যথার্থ রানী
জেবা শাহানা -
যথার্থ রাজকুমারী
জেবা মালিহা -
যথার্থ রূপসী
জেবা সাবিহা -
যথার্থ রূপসী
জেবা হোমায়রা যথার্থ রূপসী
জেবা মায়মুনা -
যথার্থ ভাগ্যবতী
আমীনুল হক -
যথার্থ বিশ্বস্ত
সাদিকুল হক -
যথার্থ প্রিয়
এনামুল হক -
যথার্থ পুরষ্কার
আহমাদুল হক -
যথার্থ প্রশংসিত
জেবা মুতাহরা -
যথার্থ পবিত্র
জেবা আফিয়া -
যথার্থ পুণ্যবতী
জেবা মাসুমা -
যথার্থ নিষ্পাপ
জেবা রামিসা -
যথার্থ নিরাপদ
জেবা আসিমা -
যথার্থ নারী
জেবা আতকিয়া -
যথার্থ ধার্মিক
জেবা সাজিদা -
যথার্থ ধার্মিক
জেবা মুনওয়ারা -
যথার্থ দীপ্তিমাপ
জেবা সামিহা -
যথার্থ দানশীল
জেবা রানা -
যথার্থ কমনীয়
জেবা - যথার্থ
যেবা - যথার্থ
শামা - মোমবাতি
আবদুল লতিফ -
মেহেরবানের গোলাম
লিয়াকত -
মেধা,যোগ্যতা
নাওশিন তাবাসসুম -
মিষ্টি হাসি
আফসাহ - মিষ্টভাষী
ইত্তেহাদ - মিত্রতা
আবদুল ওয়ারিছ -
মালিকের দাস
এ'যায - মান মর্যাদা
আদম - মাটির সৃষ্টি
আবদুর রাফি -
মহিয়ানের গোলাম
জালাল - মহিমা
আদুর রউফ -
মহাস্নেহশীলের গোলাম
আবদুল হক - মহাসত্যের গোলাম
আবদুল আযীম -
মহাশ্রেষ্ঠের গোলাম
আবদুল আযীয -
মহাশ্রেষ্ঠের গোলাম
আবদুল জাব্বার -
মহাশক্তিশালীর গোলাম
আবদুল হাকীম -
মহাবিচারকের গোলাম
আবদুল কুদ্দুছ - মহাপাক পবিত্রের গোলাম
আবদুল মোহাইমেন -
মহাপ্রহরীর গোলাম
আবদুল জলিল -
মহাপ্রতাপশালীর গোলাম
আবদুল আলি -
মহানের গোলাম
আল-খা - মহান সৃষ্টিকর্তা
আকবর আওসাফ -
মহান গুনাবলী
আকবর ফিদা -
মহান উৎসর্গ
মু'তাসিম ফুয়াদ - মহান অন্তর
জলীল - মহান
আবদুস সবুর -
মহাধৈর্যশীলের গোলাম
আবদুল ওয়াহাব -
মহাদানশীলের গোলাম
আবদুল মুতী -
মহাদাতার গোলাম
কিবরিয়া - মহাত্ম্য
আবদুল আলিম -
মহাজ্ঞানীর গোলাম
আবদুস ছাত্তার -
মহাগোপনকারীর গোলাম
আবদুল গাফফার -
মহাক্ষমাশীলের গোলাম
আবদুল হামিদ - মহা প্রশংসাভাজনের গোলাম
আবদুল কাহহার - মহা প্রতাপশালীর গোলাম
আবদুল হালিম - মহা ধৈর্যশীলের গোলাম
মাজেদা - মহতী
মুয়াজ্জমা - মহতী
নাফিসা মালিয়াত -
মুল্যবান সম্পদ
সামিন ইয়াসার -
মুল্যবান সম্পদ
নাফিসা রায়হানা -
মুল্যবান সুগন্ধী ফুল
নাফিসা আতেরা -
মুল্যবান সুগন্ধী
নাফিসা শামীম -
মুল্যবান সুগন্ধী
নাফিসা আয়মান -
মুল্যবান শুভ
নাফিসা শামা -
মুল্যবান মোমবাতী
নাফিসা গওহার -
মুল্যবান মুক্তা
নাফিসা লুবনা -
মুল্যবান বৃক্ষ
রুবী - মুল্যবান পাথর
নাফিসা রুম্মান -
মুল্যবান ডালিম
নাফিসা শাদাফ -
মুল্যবান ঝিনুক
নাফিসা ইয়াসমিন -
মুল্যবান জেসমিন ফুল
নাফিসা লুবাবা -
মুল্যবান খাঁটি
নাফিসা রুমালী -
মুল্যবান কবুতর
মাহফুজা সিমা -
মুল্যবান কপাল
নাফিসা আতিয়া -
মুল্যবান উপহার
নাফিসা নাওয়াল -
মুল্যবান উপহার
তাহমিনা - মূল্যবান
নাফীসা - মুল্যবান
ফাখেরা - মর্যাদাবান
মুস্তাফা বখতিয়ার -
মনোনীত সৌভাগ্যবান
মুস্তাফা মাসুদ -
মনোনীত সৌভাগ্যবান
মুস্তাফা আসাদ -
মনোনীত সিংহ
মুস্তাফা আমজাদ -
মনোনীত সম্মানিত
মুস্তাফা তালিব -
মনোনীত সুপুরুষ
মুস্তাফা ফাতিন -
মনোনীত সুন্দর
মুস্তাফা বাশির -
মনোনীত সুংসবাদ বহনকারী
মুস্তাফা আমের -
মনোনীত শাসক
মুস্তাফা শাহরিয়ার মনোনীত রাজা
মুস্তাফা তাজওয়ার -
মনোনীত রাজা
মুস্তাফা আসেফ -
মনোনীত যোগ্যব্যক্তি
মুস্তাফা আকবর -
মনোনীত মহান
মুস্তাফা আশহাব -
মনোনীত বীর
মুস্তাফা গালিব -
মনোনীত বিজয়ী
মুস্তাফা মনসুর -
মনোনীত বিজয়ী
মুজতবা আহবাব -
মনোনীত বন্ধু
মুস্তাফা আহবাব -
মনোনীত বন্ধু
মুস্তাফা রফিক মনোনীত বন্ধু
মুস্তাফা ওয়াদুদ -
মনোনীত বন্ধু
মুস্তাফা নাদের -
মনোনীত প্রিয়
মুস্তাফা হামিদ -
মনোনীত প্রশংসাকারী
মুস্তাফা রাফিদ -
মনোনীত প্রতিনিধি
মুস্তাফা মোরশেদ -
মনোনীত পথপ্রদর্শক
মুস্তাফা আবরার -
মনোনীত ন্যায়বান
মুস্তাফা আখতার -
মনোনীত তারা
মুস্তাফা আনজুম -
মনোনীত তারা
মুস্তাফা মাহতাব -
মনোনীত চাঁদ
মুস্তাফা ওয়াসিফ -
মনোনীত গুনবর্ণনাকারি
মুস্তাফা মুজিদ -
মনোনীত আবিষ্কার
মুজতবা মনোনীত
মুখতার - মনোনীত
মুমতাজ - মনোনীত
শাফিয়া -
মধ্যস্হতাকারিনী
মুতাওয়াসসিত -
মধ্যপন্থী
ইবতিসাম - মুচকি হাসি দেওয়া
রাথী - মঙ্গল কাজ
ইহফাজ - মুখস্থ করা,রক্ষা করা
গওহার মুক্ত
তাজ - মুকুট
উষা - ভোর, প্রভাত
নাযীর ভীতি প্রদর্শক
আদিব আখতাব -
ভাষাবিদ বক্তা
খাতীব - ভাষণদাতা
অনুরাগ -
ভালোবাসা
মমতা - ভালবাসা
হাফিজাহ - ভাল স্বরণশক্তি
রিফাহ তাসফিয়া -
ভাল বিশুদ্ধকারী
রাফাহ জাকীয়াহ -
ভাল বিশুদ্ধ
রিফাহ সানজীদাহ -
ভাল বিবেচক
রিফাহ তাসনিয়া -
ভাল প্রসংসা
রিফাহ সাজিদা -
ভাল ধার্মিক
রিফাহ নানজীবা -
ভাল উন্নত
রিফাহ রাফিয়া -
ভাল উন্নত
রিফাহ তামান্না -
ভাল ইচ্ছা
মায়মুনা - ভাগ্যবতী
নিয়তি - ভাগ্য
ভোলা - ভ্রমন করা
হালিম - ভদ্র
নাবীলাহ - ভদ্র
নাজীব - ভদ্র
নাজীবাহ - ভত্র গোত্রে
পতাকা - বৈজয়ন্তী
তাসনিম - বেহশতী ঝর্না
আবদুল মুহীত -
বেষ্টনকারী গোলাম
আনতারা মাসুদা -
বীরাঙ্গনা সৌভাগ্যবতী
আনতারা মুকাররামা -
বীরাঙ্গনা সম্মানীতা
আনতারা আজিজাহ -
বীরাঙ্গনা সম্মানিতা
আনতারা ফায়রুজ বীরাঙ্গনা সমৃদ্ধিশালী
আনতারা আনিকা -
বীরাঙ্গনা সুন্দরী
আনতারা হোমায়রা -
বীরাঙ্গনা সুন্দরী
আনতারা আসীমা -
বীরাঙ্গনা সতীনারী
আনতারা বিলকিস -
বীরাঙ্গনা রানী
আনতারা রাইসা -
বীরাঙ্গনা রানী
আনতারা শাহানা -
বীরাঙ্গনা রাজকুমারী
আনতারা মালিহা -
বীরাঙ্গনা রূপসী
আনতারা সাবিহা -
বীরাঙ্গনা রূপসী
আনতারা রাশিদা -
বীরাঙ্গনা বিদূষী
আনতারা ফাহমিদা বীরাঙ্গনা বুদ্ধিমতী
আনতারা হামিদা -
বীরাঙ্গনা প্রশংসাকারিনী
আনতারা মুরশিদা -
বীরাঙ্গনা পথ প্রদর্শিকা
আনতারা রাইদাহ -
বীরাঙ্গনা নেত্রী
আনতারা সামিহা -
বীরাঙ্গনা দানশালী
আনতারা লাবিবা -
বীরাঙ্গনা জ্ঞানী
আনতারা আনিসা -
বীরাঙ্গনা কুমারী
আনতারা শাকেরা -
বীরাঙ্গনা কৃতজ্ঞ
আনতারা খালিদা -
বীরাঙ্গনা অমর
আশহাব আসাদ -
বীর সিংহ
আশহাব আওসাফ -
বীর গুনাবলী
আবদুল বাছেত -
বিস্তৃতকারীর গোলাম
আমিনাহ বিশ্বাসী
দীনা - বিশ্বাসী
মুমিন - বিশ্বাসী
ইত্কান - বিশ্বাস
ইয়াকীন - বিশ্বাস
আমিন - বিশ্বস্ত
আমিন - বিশ্বস্ত
আলমগীর - বিশ্বজয়ী
শুহরাহ -
বিশ্বখ্যাতি
আলম - বিশ্ব
তাসফিয়াহ -
বিশুদ্ধকারিনী
অমল - বিশুদ্ধ সাদা
তাহির আবসার -
বিশুদ্ধ দৃষ্টি
মুনতাকা - বিশুদ্ধ
যাকীয়াহ - বিশুদ্ধ
নাদিরাহ - বিরল
সানজীদাহ -
বিবেচক
মুনীব - বিনীত
বিনি - বিনা
অনু - বিন্দু কনা
কনা - বিন্দু
ফারজানা ফাইজা -
বিদুষী বিজয়িনী
রাশীদা - বিদূষী
আলিম - বিদ্যান
গালিবা বিজয়ীনি
মুনসুর নাদিম -
বিজয়ী সঙ্গী
ফাতেহ - বিজয়ী
গালিব - বিজয়ী
আবদুল ফাত্তাহ -
বিজয়কারীর গোলাম
আজফার - বিজয়
গালিব - বিজয়
দাইয়ান - বিচারক
ফয়সাল - বিচারক
আকীল -
বিচক্ষন,জ্ঞানী
আদিল আখতাব -
বিচক্ষন বক্তা
মুনিফ মুজীদ -
বিখ্যাত আবিষ্কারক
তিলক - বাহু
বেনু - বাশি
বিনত - বালিকা
সহেলী - বান্ধবী
ইনকিয়াদ - বাধ্যতা
কালাম - বাণী
উসামা - বাঘ
রাবিয়াহ - বাগান
উদয়ন - বাগান
নাতিক - বাকশক্তি সম্পন্ন
মুসতারী - বৃহস্পতি গ্রহ
মুযযাম্মিল - বস্ত্রাবৃত
বাদল - বর্ষা কাল
তুষার - বরফের কনা
ওমর - বয়স
আবদুল মাজিদ -
বুযুর্গের গোলাম
নাযীম - ব্যবস্থাপক
নাদিম - বন্ধু, সাথী
আনিসা - বন্ধু সুলভ
হাবীব - বন্ধু
খলীল - বন্ধু
মনিস - বন্ধু
রফিক - বন্ধু
ছাহেব - বন্ধু
ওয়াদুদ - বন্ধু
কাসিম - বন্টনকারী
কানন - বন
হিশাম - বদান্যতা
ফাহিম আসাদ -
বুদ্ধিমান সিংহ
ফাহিম শাকিল -
বুদ্ধিমান সুপুরুষ
ফাহিম মোসলেহ -
বুদ্ধিমান সংস্কারক
ফাহিম শাহরিয়ার -
বুদ্ধিমান রাজা
ফাহিম আশহাব -
বুদ্ধিমান বীর
ফাহিম ফয়সাল -
বুদ্ধিমান বিচারক
ফাহিম হাবিব -
বুদ্ধিমান বন্ধু
ফাহিম মুরশেদ -
বুদ্ধিমান প্রথপ্রদর্শক
ফাহিম আনিস -
বুদ্ধিমান নেতা
ফাহিম আবরার -
বুদ্ধিমান ন্যায়বান
ফাহিম ফুয়াদ -
বুদ্ধিমান অন্তর
ফাহিম আহমাদ -
বুদ্ধিমান অতিপ্রশংসনীয়
ফাহিম আজমল -
বুদ্ধিমান অতি সুন্দর
জারীফ - বুদ্ধিমান
শায়িরা - বুদ্ধিমান
আকিলাহ - বুদ্ধিমতী
ফাহমিদা - বুদ্ধিমতী
ফাহমিদা ফাইজা -
বুদ্ধিমতি বিজয়িনী
জাকি - বুদ্ধিমতি
ইদরাক - বুদ্ধি দৃষ্টি
ফাততাহ - বড় বিজয়ী
জাফর বড় নদী
জাফর - বড় নদী
কবীর - বড়
রাদ শাহামাত - বজ্র সাহসিকতা
লুবনা - বৃক্ষ
আখতাব - বক্তৃতা দানে বিশারদ
বকুল - ফুলের নাম
করবী - ফুলের নাম
কেয়া - ফুলের নাম
নার্গিস - ফুলের নাম
পলাশ - ফুলের নাম
টগর - ফুলের নাম
অপু - ফুল
চাপা - ফুল
গুল - ফুল
পুষ্পা - ফুল
ইবলাগ - পৌছানো
ইয়াতীম -
পিতৃমাতৃহীন
নাহলা - পানি
ফিরোজা - পাথর
রাহিলা - পাত্রী
কেকা - পাখির নাম
কাকলি - পাখির ডাক
কাজরী - পাখি
পাখি - পাখি
রাসূল - প্রেরিত
ইসরাল - প্রেরন করা
আশিক - প্রেমিক
আবদুল ওয়াদুদ -
প্রেমময়ের গোলাম
মাহবুবা -
প্রেমপাত্রী
মুকাত্তার ফুয়াদ -
পরিশোধিত অন্তর
মুবতাসিম ফুয়াদ -
পরিশোধিত অন্তর
হাবীবা - প্রিয়া
নাদের নেহাল -
প্রিয় চারা গাছ
নাজির - পরিদর্শক
নিয়ায - প্রার্থনা
ফারহানা - প্রান চঞ্চল
জীবন - প্রান
আবদুল কাহহার -
পরাত্রুমশীলের গোলাম
সালমা তাবাসসুম -
প্রশান্ত হাসি
সালমা মাসুদা -
প্রশান্ত সৌভাগ্যবতী
সালমা সাবা -
প্রশান্ত সুবাসী বাতাস
সালমা ফাওজিয়া -
প্রশান্ত সফল
সালমা আনিকা -
প্রশান্ত সুন্দরী
সালমা মালিহা -
প্রশান্ত সুন্দরী
সালমা ফারিহা -
প্রশান্ত সুখী
সালমা সাবিহা -
প্রশান্ত রূপসী
সালসা নাবীলাহ -
প্রশান্ত ভদ্র
সালমা নাওয়ার -
প্রশান্ত ফুল
সালমা আফিয়া -
প্রশান্ত পূণ্যবতী
সালমা মাহফুজা -
প্রশান্ত নিরাপদ
সালমা আনজুম -
প্রশান্ত তারা
সালমা - প্রশান্ত
সাব্বীর আহমেদ -
প্রশংসিত সাহায্যকারী
সুলতান আহমদ -
প্রশংসিত সাহায্যকারী
খলীল আহমদ -
প্রশংসিত সাহায্য প্রাপ্ত
শাকীল আহমদ -
প্রশংসিত সাফল্য
আলী আহমদ -
প্রশংসিত সূর্য
খুরশিদ আহমদ -
প্রশংসিত সুন্দর
মাজহারুল ইসলাম -
প্রশংসিত সুন্দর
তোফায়েল আহমদ -
প্রশংসিত সুদর্শন
ফারুক আহমেদ -
প্রশংসিত মাধ্যম
মেছবাহ উদ্দীন -
প্রশংসিত ভয় প্রদর্শক
সৈয়দ আহমদ -
প্রশংসিত ভয় প্রদর্শক
আমীর আহমদ -
প্রশংসিত বিশ্বস্ত
আমির আহমদ -
প্রশংসিত বিশ্বস্ত
হারিস আহমদ -
প্রশংসিত বিশ্বস্ত
ফরীদ আহমদ -
প্রশংসিত বাদশাহ
হুসাইন আহমদ -
প্রশংসিত বাদশাহ
নাজির আহমদ প্রশংসিত বন্ধু
আমিন আহমদ প্রশংসিত বক্তা
কালীম আহমদ -
প্রশংসিত প্রিয়
মুশতাক আহমেদ -
প্রশংসিত প্রভেদকারী
আজীজ আহমদ -
প্রশংসিত নেতা
মুনীর আহমদ -
প্রশংসিত নির্বাচিত
মুক্তার আহমদ -
প্রশংসিত কৃষক
মুনছুর আহমদ -
প্রশংসিত আলো বিচ্ছুক্ষনকারী
নাছির আহমেদ -
প্রশংসিত আকাঙ্ক্ষিত
আহমেদ - প্রশংসিত
মাহমুদ - প্রশংসিত
মাহমুদা প্রশংসিত
হামিদ বখতিয়ার -
প্রশংসাকারী সৌভাগ্যবান
হামিদ বাশীর -
প্রশংসাকারী সুসংবাদ বহনকারী
হামিদ মুত্তাকী -
প্রশংসাকারী সংযমশীল
হামিদ আমের -
প্রশংসাকারী শাসক
হামিদ শাহরিয়ার -
প্রশংসাকারী রাজা
হামিদ তাজওয়ার -
প্রশংসাকারী রাজা
হামিদ আসেফ -
প্রশংসাকারী যোগ্যব্যক্তি
হামিদ রইস -
প্রশংসাকারী ভদ্রব্যক্তি
হামিদ আসহাব -
প্রশংসাকারী বীর
হামিদ জাফর -
প্রশংসাকারী বিজয়
হামিদ আনিস -
প্রশংসাকারী বন্ধু
হামিদ আবরার -
প্রশংসাকারী ন্যায়বান
হামিদ মুবাররাত -
প্রশংসাকারী ধার্মিক
হামিদ ইয়াসির -
প্রশংসাকারী ধনবান
হামিদ মাহতাব -
প্রশংসাকারী চাঁদ
হামিদ আজিজ -
প্রশংসাকারী ক্ষমতাসীন
হামিদ জাকের -
প্রশংসাকারী কৃতজ্ঞ
হামিদ আদিব -
প্রশংসাকারী ইবাদতকারী
হামিদ -
প্রশংসাকারী
হামিদা -
প্রশংসাকারিনী
ইত্তেসাফ -
প্রশংসা,গুণ বর্ণনা
তাসনিয়া - প্রশংসা
বোরহান - প্রমান
হুজ্বাত - প্রমান
রেযাহ্ - পরমানু
ইছবাত - প্রমাণ করা
সুবাহ - প্রভাত
সাহিরা - পর্বত
ফারহান আলমাস -
প্রফুল্ল হীরা
নুজহাত তাবাসসুম -
প্রফুল্ল হাসি
ফারহান বাসিম -
প্রফুল্ল হাস্যোজ্ব্যল
ফারহান মাসুদ -
প্রফুল্ল সৌভাগ্যবান
ফারহান হাসিন প্রফুল্ল সুন্দর
ফারহান সাদিক -
প্রফুল্ল সত্যবান
ফারহান নাদিম -
প্রফুল্ল সঙ্গী
ফারহান ইশরাক -
প্রফুল্ল সকাল
ফারহান আমের -
প্রফুল্ল শাসক
ফারহান তাজওয়া -
প্রফুল্ল রাজা
ফারহান মনসুর - প্রফুল্ল বিজয়ী
ফারহান আনিস -
প্রফুল্ল বন্ধু
ফারহান খলিল -
প্রফুল্ল বন্ধু
ফারহান রফিক -
প্রফুল্ল বন্ধু
ফারহান লাবিব -
প্রফুল্ল বুদ্ধিমান
ফারহান মুহিব -
প্রফুল্ল প্রেমিক
ফারহান মাশুক -
প্রফুল্ল প্রেমাস্পদ
ফারহান লতিফ -
প্রফুল্ল পবিত্র
ফারহান আখতার -
প্রফুল্ল নেতা
ফারহান আতেফ -
প্রফুল্ল দয়ালু
ফারহান আবসার -
প্রফুল্ল তারা
ফারহান আনজুম -
প্রফুল্ল তারা
ফারহান মাহতাব -
প্রফুল্ল চাঁদ
ফারহান আখইয়ার -
প্রফুল্ল চমৎকার মানুষ
ফারহান তানভীর -
প্রফুল্ল আলোকিত
ফারহান ইহসাস -
প্রফুল্ল অনুভূতি
ফারহান ফুয়াদ প্রফুল্ল অন্তর
ফারহান - প্রফুল্ল
রাকা - পূর্নিমা
আজমাইন ইনকিশাফ -
পূর্ন সূর্যগ্রহন
আজমাইন ইনকিয়াদ -
পূর্ন বাধ্যতা
আজমাইন মাহতাব -
পূর্ন চাঁদ
আজমাইন ইকতিদার -
পূর্ন ক্ষমতা
দিওয়ান - প্রধান
সিরাজ - প্রদীপ
আউয়াল - প্রথম
হাক্ক - প্রতিষ্ঠিত সত্য
কায়িম - প্রতিষ্ঠিত
আরশী - প্রতিবেশী
নায়ীব - প্রতিনিধি
ইকো - প্রতিধ্বনি
ইকো - প্রতিধবনি
নিত্য - প্রতিদিন
আবদুল শাকুর -
প্রতিদানকারীর গোলাম
মোসাদ্দেক হাবীব -
প্রত্যয়নকারী বন্ধু
হাকীম - প্রজ্ঞাময়
মুনীরা -
প্রজ্জ্বলিতা
মুনাওয়ার মেসবাহ্ -
প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ
বাতেন - প্রচ্ছন্ন
রেনু - পরগ
আবদুল মুবীন -
প্রকাশের দাস
ইশয়াত - প্রকাশ করা
যাহের - প্রকাশ
মুমিনুল হক -
প্রকৃত সৌভাগ্যবান
মুঈনুল হক - প্রকৃত সৌন্দর্য্য
আসাদুল হক -
প্রকৃত সিংহ
বজলুল হক -
প্রকৃত সাহায্যকারী
মানসুরুল হক -
প্রকৃত সাহায্য প্রাপ্ত
ইমদাদুল হক -
প্রকৃত সাহায্য
ইহতেরামুল হক -
প্রকৃত সম্মান
একরামুল হক -
প্রকৃত সম্মান
মাসুদুল হক -
প্রকৃত সত্যবাদী
জাহিদুল হক -
প্রকৃত সংযমী
আনীসুল হক -
প্রকৃত মহব্বত
শামসুল হক -
প্রকৃত ভাস্কর
এনায়েতুল হক -
প্রকৃত বা ন্যায্য দান
ইহতেশামুল হক -
প্রকৃত বা ন্যায্য দান
আসীরুল হক -
প্রকৃত বন্দী
আজিজুল হক প্রকৃত প্রিয় পাত্র
ইরফানুল হক -
প্রকৃত পরিচয় যথার্থ ব্যয়
এরশাদুল হক -
প্রকৃত পথপ্রদর্শক
আমীরুল হক -
প্রকৃত নেতা
জামিলুল হক -
প্রকৃত ন্যায়নিষ্ঠ
উবায়দুল হক -
প্রকৃত নগণ্য গোলাম
এসানুল হক -
প্রকৃত দয়া
সাইফুল হক -
প্রকৃত তরবারী
নুরুল হক - প্রকৃত জ্যোতি
জিয়াউল হক -
প্রকৃত জ্যোতি
সফিকুল হক -
প্রকৃত গোলাম
ফজলুল হক -
প্রকৃত আশ্রয়স্থল
সিরাজুল হক -
প্রকৃত আলোকবর্তিকা
মনীরুল হক -
প্রকৃত আলো প্রদানকারী
আনোয়ারুল হক -
প্রকৃত আলো
আলাউল হক -
প্রকৃত অস্ত্র
এজাজুল হক -
প্রকৃত অলৌকিকতা
মঞ্জুরুল হক -
প্রকৃত অনুমোদিত
আরিফ আলমাস -
পবিত্র হীরা
নাফিসা তাবাসসুম -
পবিত্র হাসি
আরিফ বখতিয়ার -
পবিত্র সৌভাগ্যবান
আরিফ রায়হান -
পবিত্র সুগন্ধীফুল
আরিফ ফয়সাল -
পবিত্র বিচারক
আরিফ আসমার -
পবিত্র ফলমুল
আরিফ রমিজ -
পবিত্র প্রতিক
আরিফ জাওয়াদ -
পবিত্র দানশীল
আরিফ আবসার - পবিত্র দৃষ্টি
নাফিসা আনজুম -
পবিত্র তারা
আরিফ আখতার - পবিত্র তারকা
আরিফ আনজুম -
পবিত্র তারকা
আরিফ আনওয়ার -
পবিত্র জ্যোতিমালা
তারিফ মাহতাব পবিত্র চাঁদ
আরিফ আওসাফ -
পবিত্র গুনাবলী
আরিফ গওহর -
পবিত্র গুনাবলী
আরিফ হাসনাত -
পবিত্র গুনাবলী
আরিফ নেসার - পবিত্র উৎসর্গ
আরিফ আরমান -
পবিত্র ইচ্ছা
আরিফ ইশতিয়াক -
পবিত্র ইচ্ছা
আরিফ জামাল - পবিত্র ইচ্ছা
আরিফ আজমল -
পবিত্র অতি সুন্দর
নাজীফা - পবিত্র
তাহের - পবিত্র
তায়্যেব - পবিত্র
জিয়া পবিত্র
সায়ীদা - পুন্যবতী
ফাহীম -
পন্ডিত,বুদ্ধিমান
লিলি - পদ্ম
নলিনী - পদ্ম
নীলূফার - পদ্ম
সরোজ - পদ্ম
ধরিত্রী - পৃথিবী
মেদিনী - পৃথিবী
আবদুল হাদী -
পথপ্রর্দশকের গোলাম
ইরশাদ - পথপ্রদর্শন করা
মুরশীদা - পথ প্রদর্শিকা
মোরশেদ - পথ প্রদর্শক
আনাম - পতাকা
মুতাহহার - পূত-পবিত্র
আফিয়া আফিফা -
পুণ্যবতী সাধ্বী
আফিয়া মুবাশশিরা -
পুণ্যবতী সুসংবাদ বহনকারী
আফিয়া মুকারামী -
পুণ্যবতী সম্মানিতা
আফিয়া আজিজাহ -
পুণ্যবতী সম্মানিত
আফিয়া আয়েশা -
পুণ্যবতী সমৃদ্ধিশালী
আফিয়া আসিমা পুণ্যবতী সতী নারী
আফিয়া আদিবা -
পুণ্যবতী শিষ্টাচারী
আফিয়া আয়মান -
পুণ্যবতী শুভ
আফিয়া বিলকিস -
পুণ্যবতী রানী
আফিয়া শাহানা -
পুণ্যবতী রাজকুমারী
আফিয়া হুমায়রা -
পুণ্যবতী রূপসী
আফিয়া মালিহা -
পুণ্যবতী রূপসী
আফিয়া যয়নাব -
পুণ্যবতী রূপসী
আফিয়া মাজেদা -
পুণ্যবতী মহতি
আফিয়া আনতারা -
পুণ্যবতী বীরাঙ্গনা
আফিয়া আমিনা -
পুণ্যবতী বিশ্বাসী
আফিয়া জাহিন -
পুণ্যবতী বিচক্ষন
আফিয়া সাহেবী -
পুণ্যবতী বান্ধবী
আফিয়া আকিলা পুণ্যবতী বুদ্ধিমতী
আফিয়া ফাহমিদা -
পুণ্যবতী বুদ্ধিমতী
আফিয়া নাওয়ার -
পুণ্যবতী ফুল
আফিয়া মাহমুদা -
পুণ্যবতী প্রশংসিতা
আফিয়া হামিদা -
পুণ্যবতী প্রশংসাকারিনী
আফিয়া মাদেহা -
পুণ্যবতী প্রশংসাকারিনী
আফিয়া মুতাহারা -
পুণ্যবতী পবিত্র
আফিয়া মুরশিদা -
পুণ্যবতী পথ প্রদর্শিকা
আফিয়া মাসুমা -
পুণ্যবতী নিষ্পাপ
আফিয়া আদিলাহ -
পুণ্যবতী ন্যায়বিচারক
আফিয়া মুনাওয়ারা -
পুণ্যবতী দিপ্তীমান
আফিয়া আনজুম -
পুণ্যবতী তারা
আফিয়া সাইয়ারা -
পুণ্যবতী তারা
আফিয়া আনিসা -
পুণ্যবতী কুমারী
আফিয়া ইবনাত -
পুণ্যবতী কন্যা
আফিয়া আবিদা -
পুণ্যবতী ইবাদতকারিনী
মুরতাযা - পছন্দীয়
আমীর - নেতা
নাকীব - নেতা
বা-র -
নেককার
নীলা - নীল রং
নীলোৎপল - নীল পদ্ম
নীলিমা - নীল আকাশ
নাহি -
নিষেধকারী
মাসুম লাতীফ -
নিষ্পাপ পবিত্র
মাসুম মুশফিক -
নিষ্পাপ পবিত্র
অয়না - নিষ্পাপ
মাসুম - নিষ্পাপ
মাসুমা - নিষ্পাপ
ইনা - নিশ্চয়
মাহফুজা রিমা -
নিরাপদ হরিণ
মাহফুজা মাসুদা -
নিরাপদ সৌভাগ্যতী
রামিস রাওনাক -
নিরাপদ সৌন্দর্য
রামিস মুবাশশিরা নিরাপদ সুসংবাদ
মাহফুজা মালিয়াত -
নিরাপদ সম্পদ
রামিস মালিয়াত নিরাপদ সম্পদ
রওশান মালিয়াত -
নিরাপদ সম্পদ
মাহফুজা মালিহা -
নিরাপদ সুন্দরী
মাহফুজা আনিকা -
নিরাপদ সুন্দরী
রামিসা মালিহা -
নিরাপদ সুন্দরী
মাহফুজা আসিমা -
নিরাপদ সতী নারী
মাহফুজা মায়িশা -
নিরাপদ সুখী জীবন যাপনকারিনী
মাহফুজা ফারিহা -
নিরাপদ সুখী
রামিসা ফারিহা -
নিরাপদ সুখী
রামিস ফারিহা -
নিরাপদ সুখী
মাহফুজা রাহাত -
নিরাপদ শান্তি
রামিস তাহিয়া -
নিরাপদ শুভেচ্ছা
রামিস বাশারাত -
নিরাপদ শুভসংবাদ
মাহফুজা বিলকিস -
নিরাপদ রানী
রামিমা বিলকিস -
নিরাপদ রানী
মাহফুজা শাহানা -
নিরাপদ রাজকুমারী
মাহফুজা সাদাফ -
নিরাপদ রূপসী
মাহফুজা আনান -
নিরাপদ মেঘ
রামিসা আনান -
নিরাপদ মেঘ
রামিস আনান -
নিরাপদ মেঘ
মাহফুজা গওহার -
নিরাপদ মুক্তা
রামিসা গওহর - নিরাপদ মুক্তা
মাহফুজা লুবনা -
নিরাপদ বৃক্ষ
রামিস লুবনা -
নিরাপদ বৃক্ষ
মাহফুজা নাওয়ার -
নিরাপদ ফুল
রামিস যাহরা -
নিরাপদ ফুল
রামিস সালমা -
নিরাপদ প্রশান্ত
রামিস নুজহাত -
নিরাপদ প্রফুল্ল
মাহফুজা মুতাহারা -
নিরাপদ পবিত্র
মাহফুজা মাসুমা -
নিরাপদ নিষ্পাপ
মাহফুজা আনজুম -
নিরাপদ তারা
রামিশা আনজুম -
নিরাপদ তারা
রামিস আনজুম -
নিরাপদ তারা
আসলাম আনজুম -
নিরাপদ তারকা
মাহফুজা সাদাফ -
নিরাপদ ঝিনুক
রামিস তারাননুম -
নিরাপদ গুঞ্জরন
মাহফুজা আনিসা -
নিরাপদ কুমারী
মাহফুজা রুমালী -
নিরাপদ কবুতর
রামিস আতিয়া -
নিরাপদ উপহার
রামিস নাওয়াল -
নিরাপদ উপহার
রামিস মুনিয়াত -
নিরাপদ ইচ্ছা
আসলাম জলীল -
নিরাপদ আশ্রয়স্থান
আমান - নিরাপদ
আসলাম - নিরাপদ
মাহফুজা - নিরাপদ
রামিসা - নিরাপদ
সালাম - নিরাপত্তা
আয়মান আওসাফ -
নির্ভীক গুনাবলী
মুস্তাফা - নির্বাচিত
আ-মের - নির্দেশদাতা
মাহি -
নিবারনকারী
আজমল আফসার -
নিখুঁত দৃষ্টি
আজমল আওসাফ -
নিখুঁত গুনাবলী
আজমল ফুয়াদ -
নিখুঁত অন্তর
আজমাল আহমাদ -
নিখুঁত অতিপ্রশংসনীয়
আসমা - নামসমূহ
রুনু - নাম
কোমল - নরম আরামদায়ক
আবরার -
ন্যায়বান,গুণাবলী
আবরার ফাহাদ -
ন্যায়বান সিংহ
আবরার নাসির -
ন্যায়বান সাহায্যকারী
আবরার আমজাদ -
ন্যায়বান সম্মানিত
আবরার শাকিল -
ন্যায়বান সুপুরুষ
আবরার হাসিন -
ন্যায়বান সুন্দর
আবরার নাদিম -
ন্যায়বান সঙ্গী
আবরার শাহরিয়ার -
ন্যায়বান রাজা
আবরার তাজওয়ার -
ন্যায়বান রাজা
আবরার হাফিজ -
ন্যায়বান রক্ষাকারী
আবরার হামি -
ন্যায়বান রক্ষাকারী
আবরার আখইয়ার -
ন্যায়বান মানুষ
আবরার জলীল -
ন্যায়বান মহান
আবরার জামিল -
ন্যায়বান মহান
আবরার রইস -
ন্যায়বান ভদ্রব্যক্তি
আবরার ফসীহ -
ন্যায়বান বিশুদ্ধভাষী
আবরার গালিব -
ন্যায়বান বিজয়ী
আবরার জাহিন -
ন্যায়বান বিচক্ষন
আবরার হামিম -
ন্যায়বান বন্ধু
আবরার খলিল -
ন্যায়বান বন্ধু
আবরার ফাহিম -
ন্যায়বান বুদ্ধিমান
আবরার হামিদ -
ন্যায়বান প্রশংসাকারী
আবরার আজমল -
ন্যায়বান নিখুঁত
আবরার হানীফ -
ন্যায়বান ধার্মিক
আবরার ইয়াসির -
ন্যায়বান ধনী
আবরার জাওয়াদ -
ন্যায়বান দানশীল
আবরার ফাইয়াজ -
ন্যায়বান দাতা
আবরার করীম -
ন্যায়বান দয়ালু
আবরার মাহির -
ন্যায়বান দক্ষ
আবরার আখলাক -
ন্যায়বান চরিত্র
আবরার হাসানাত -
ন্যায়বান গুনাবলী
আবরার মোহসেন -
ন্যায়বান উপকারী
আবরার হাসান -
ন্যায়বান উত্তম
আদিল - ন্যায়বান
আবরার ওয়াদুদ -
ন্যায়পরায়ন বন্ধু
আদিল আহনাফ -
ন্যায়পরায়ন ধার্মিক
আবরার ফুয়াদ -
ন্যায়পরায়ন অন্তর
আদেল - ন্যায়পরায়ন
আবরার ফয়সাল -
ন্যায় বিচারক
আদীব - ন্যায় বিচারক
আবরার আওসাফ -
ন্যায় গুনাবলী
আবতাহী - নবী-(স-এর উপাধি
ত্বা-হা - নবী-(স-এর উপাধি
ইয়াসীন - নবী-(স-এর উপাধি
হা-মীম - নবী (স-এর উপাধি
তা-সীন - নবী (স এর উপাধি
মোহনা - নদীর মিলন স্থান
বিপাশা - নদী
ফগ্লু - নদী
রেবা - নদী
সাইদা - নদী
তারিক নক্ষত্রের নাম
আতকিয়া বাসিমা -
ধার্মিক হাস্যোজ্জ্বল
আতকিয়া সাদিয়া -
ধার্মিক সৌভাগ্যবতী
আতকিয়া বাশীরাহ -
ধার্মিক সুসংবাদদানকারীনী
আতকিয়া আজিজাহ -
ধার্মিক সম্মানিত
আতকিয়া মুকাররামা -
ধার্মিক সম্মানিত
আতকিয়া আয়েশা -
ধার্মিক সমৃদ্ধিশালী
আতকিয়া ফাইরুজ -
ধার্মিক সমৃদ্ধিশালী
আতকিয়া ফাওজিয়া -
ধার্মিক সফল
আতকিয়া ফারিহা -
ধার্মিক সুখী
আতকিয়া আদিবা -
ধার্মিক শিষ্টাচারী
আতকিয়া ফান্নানা -
ধার্মিক শিল্পী
আতকিয়া বুশরা -
ধার্মিক শুভ নিদর্শন
আতকিয়া আয়মান -
ধার্মিক শুভ
আতকিয়া বিলকিস -
ধার্মিক রানী
তকী তাজওয়ার -
ধার্মিক রাজা
আতকিয়া আনিকা -
ধার্মিক রূপসী
আতকিয়া জামিলা -
ধার্মিক রূপসী
আতকিয়া মালিহা -
ধার্মিক রূপসী
আতকিয়া জালিলাহ -
ধার্মিক মহতী
আতকিয়া ফাখেরা -
ধার্মিক মর্যাদাবান
আতকিয়া মায়মুনা -
ধার্মিক ভাগ্যবতী
আতকিয়া আনতারা -
ধার্মিক বীরাঙ্গনা
আতকিয়া আমিনা -
ধার্মিক বিশ্বাসী
আতকিয়া মোমেনা -
ধার্মিক বিশ্বাসী
আতকিয়া ফারজানা -
ধার্মিক বিদূষী
আতকিয়া গালিবা -
ধার্মিক বিজয়ীনি
আতকিয়া ফাইজা -
ধার্মিক বিজয়ীনি
আতকিয়া হামিনা -
ধার্মিক বান্ধবী
আতকিয়া সাহেবী -
ধার্মিক বান্ধবী
আতকিয়া ফাহমিদা -
ধার্মিক বুদ্ধিমতি
আতিয়া আকিলা -
ধার্মিক বুদ্ধমতী
আতকিয়া মাহমুদা -
ধার্মিক প্রশংসিতা
আতকিয়া মুরশিদা -
ধার্মিক প্রশংসিতা
আতকিয়া হামিদা -
ধার্মিক প্রশংসাকারিনী
আতকিয়া মাদেহা -
ধার্মিক প্রশংকারিনী
তকী তহমিদ -
ধার্মিক প্রতিনিয়ত
আতিয়া আফিয়া -
ধার্মিক পুণ্যবতী
আতকিয়া সাঈদা -
ধার্মিক পুণ্যবতী
আতকিয়া মাসুমা -
ধার্মিক নিষ্পাপ
আতকিয়া আদিলা -
ধার্মিক ন্যায় বিচারক
তকী ইয়াসির -
ধার্মিক ধন্য
আতকিয়া মুনাওয়ারা -
ধার্মিক দীপ্তিমান
আতকিয়া সামিহা -
ধার্মিক দানশীলা
আতকিয়া আতিয়া -
ধার্মিক দানশীল
আতকিয়া আনজুম -
ধার্মিক তারা
আতকিয়া লাবিবা -
ধার্মিক জ্ঞানী
আতকিয়া আনিসা -
ধার্মিক কুমারী
আতকিয়া আসিমা -
ধার্মিক কুমারী
তকী যাকের - ধার্মিক কৃতজ্ঞ
আতকিয়া আবিদা -
ধার্মিক ইবাদতকারিনী
আতকিয়া আফলাহ -
ধার্মিক অধিক কল্যাণকর
আহনাফ আহমাদ -
ধার্মিক অতি প্রশংসনীয়
আতকিয়া ফাবলীহা -
ধার্মিক অত্যন্ত ভাল
হানিফ - ধার্মিক
রশিদ - ধার্মিক
সাজেদা - ধার্মিক
রুপা - ধাতু
ইমাম - ধর্মীয় নেতা
মুজাহিদ ধর্মযোদ্ধা
আহনাফ -
ধর্মবিশ্বাসে অতিখাঁটি
আহনাফ আনসার -
ধর্মবিশ্বাসী সাহায্যকারী
আহনাফ মুইয -
ধর্মবিশ্বাসী সম্মানিত
আহনাফ শাকিল ধর্মবিশ্বাসী সুপুরুষ
আহনাফ আমের -
ধর্মবিশ্বাসী শাসক
আহনাফ শাহরিয়ার ধর্মবিশ্বাসী রাজা
আহনাফ তাজওয়ার -
ধর্মবিশ্বাসী রাজা
আহনাফ হাবিব -
ধর্মবিশ্বাসী বন্ধু
আহনাফ ওয়াদুদ -
ধর্মবিশ্বাসী বন্ধু
আহনাফ হামিদ -
ধর্মবিশ্বাসী প্রশংসাকারী
আহনাফ তাহমিদ -
ধর্মবিশ্বাসী প্রতিনিয়ত আল্লাহর প্রশংসাকারী
আহনাফ মনসুর -
ধর্মবিশ্বাসী প্রত্যয়নকারী
আহনাফ মোসাদ্দেক -
ধর্মবিশ্বাসী প্রত্যয়নকারী
আহনাফ মুরশেদ -
ধর্মবিশ্বাসী পথপ্রদর্শক
আহনাফ রাশিদ -
ধর্মবিশ্বাসী পথ প্রদর্শক
আহনাফ আদিল -
ধর্মবিশ্বাসী ন্যায়পরায়ন
আহনাফ মুজাহিদ -
ধর্মবিশ্বাসী ধর্মযোদ্ধা
আহনাফ মুত্তাকী -
ধর্মবিশ্বাসী ধর্মযোদ্ধা
আহনাফ আতেফ -
ধর্মবিশ্বাসী দয়ালু
আহনাফ আকিফ -
ধর্মবিশ্বাসী উপাসক
আহনাফ মোহসেন -
ধর্মবিশ্বাসী উপকারী
আহনাফ হাসান -
ধর্মবিশ্বাসী উত্তম
আহনাফ আবিদ -
ধর্মবিশ্বাসী ইবাদতকারী
মুবাল্লিগ - ধর্মপ্রচারক
ইমারত - ধনী হওয়া
ইয়াসীর - ধনী
অতনু - দেহহীন
আনন্দময়ী - দেবীদূর্গা
অন্নপূর্না - দেবি বগবতি
ইন্দ্র - দেবরাজ
মুনাওয়ার আখতার -
দীপ্তিমান তারা
মুনাওয়ার মাহতাব -
দীপ্তিমান
মুনাওয়ার মাহতাব -
দীপ্তিমান
সাকিব সালিম -
দীপ্ত স্বাস্থ্যবান
মুনীর - দিপ্তীমান
দিশা - দিক, পথ
আতিয় আনিসা -
দালশীলা কুমারী
আতিয়া আদিবা -
দালশীল শিষ্টাচারী
সামীহা - দানশীলা
আতিয়া মাসুদা দানশীল সৌভাগ্যবতী
আতিয়া আফিফা -
দানশীল সাধবী বান্ধবী
আতিয়া আজিজা -
দানশীল সম্মানিত
আতিয়া ফিরুজ -
দানশীল সমৃদ্ধিশীলা
আতিয়া আয়েশা -
দানশীল সমৃদ্ধিশালী
আতিয়া ওয়াসিমা -
দানশীল সুন্দরী
আতিয়া তাহিরা -
দানশীল সতী
আতিয়া বিলকিস -
দানশীল রানী
আতিয়া শাহানা -
দানশীল রাজকুমারী
আতিয়া যয়নব -
দানশীল রূপসী
আতিয়া সাহেবী -
দানশীল রূপসী
আতিয়া সানজিদা -
দানশীল বিবেচক
আতিয়া রাশীদা -
দানশীল বিদূষী
আতিয়া হামিনা -
দানশীল বান্ধবী
আতিয়া মাহমুদা দানশীল প্রসংসিতা
আতিয়া হামিদা -
দানশীল প্রশংসাকারিনী
আতিয়া আফিয়া -
দানশীল পূর্নবতী
আতিয়া ইবনাত -
দানশীল কন্যা
আতিয়া শাকেরা -
দানশীল কৃতজ্ঞ
আবদুল কারীম -
দানকর্তার গোলাম
আবদুল ওয়াহহাব -
দাতার দাস
আবসার - দৃষ্টি
আবদুজ জাহির -
দৃশ্যমানের গোলাম
আল-বা -
দর্শনকারী
দৃষ্টি - দর্শন
চপল - দ্রুত
আবদুর রাহিম দয়ালুর গোলাম
আলতাফ - দয়ালু, অনুগ্রহ
আতেফ বখতিয়ার -
দয়ালু সৌভাগ্যবান
আতেফ আসাদ -
দয়ালু সিংহ
আতেফ আরহাম -
দয়ালু সংবেদনশীল
আতেফ আমের -
দয়ালু শাসক
মুমিন শাহরিয়ার - দয়ালু রাজা
মুমিন তাজওয়ার - দয়ালু রাজা
আতেফ আকবার -
দয়ালু মহান
আতেফ আশহাব -
দয়ালু বীর
আতেফ আহবাব দয়ালু বন্ধু
আতেফ আনিস -
দয়ালু বন্ধু
আতেফ আবরার -
দয়ালু ন্যয়বান
আতেব আবসার - দয়ালু দৃষ্টি
আতেফ আজিজ -
দয়ালু ক্ষমতাবান
আতেফ আরমান -
দয়ালু ইচ্ছা
আতেফ আকরাম -
দয়ালু অতিদানশীল
আতেফ আহমাদ দয়ালু অতি প্রশংসনীয়
আফজাল আহবাব -
দয়ালু অতি উত্তম বন্ধু
গফুর - দয়ালু
মুনেম - দয়ালু
রাহীম - দয়ালু
রহিমা - দয়ালু
রাহমান - দয়ালু
শফিক - দয়ালু
মাসুদুর রহমান -
দয়াময়ের সৌভাগ্য
আতাউর রহমান -
দয়াময়ের সাহায্য
সাজেদর রহমান -
দয়াময়ের সামনে মস্তক অবনমিতকারী
মাকসুদুর রহমান -
দয়াময়ের সুর্য্য
ফয়জুর রহমান -
দয়াময়ের সম্মানী
সাদেকুর রহমান -
দয়াময়ের সত্যবাদী
ফজলুর রহমান -
দয়াময়ের সত্যবাদ
হাবিবুর রহমান -
দয়াময়ের সংরক্ষিত
হাফীজুর রহমান -
দয়াময়ের সংরক্ষিত
মাহবুবুর রহমান -
দয়াময়ের মন প্রিয়
নুরুর রহমান -
দয়াময়ের বিনয়ী
আলতাফুর রহমান -
দয়াময়ের বন্ধু
আনিসুর রহমান -
দয়াময়ের বন্ধু
আশেকুর রহমান -
দয়াময়ের পাগল
হিফজুর রহমান -
দয়াময়ের প্রিয়
নজীবুর রহমান -
দয়াময়ের প্রশংসিত
দলীলুর রহসান -
দয়াময়ের প্রমান
হাদিসুর রহমান -
দয়াময়ের নবসৃষ্টি
খলীলুর রহমান -
দয়াময়ের নগন্য দাস
মুখলিছুর রহমান -
দয়াময়ের ধন্য
মুস্তাফিজুর রহমান - দয়াময়ের ধন্য
গোলামুর রহমান -
দয়াময়ের দাস
জিয়াউর রহমান -
দয়াময়ের দান
লৎফুর রহমান -
দয়াময়ের দয়া
মতিউর রহমান -
দয়াময়ের দয়া
জিল্লুর রহমান -
দয়াময়ের ছায়া
আজিজুর রহমান -
দয়াময়ের উদ্দেশ্য
হামিদুর রহমান -
দয়াময়ের আলো
শামসুদুর রহমান -
দয়াময়ের আলো
ওবায়দুর রহমান -
দয়াময়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু
এনায়েতুর রহমান -
দয়াময়ের অনুগ্রহ
ফুতফ - দয়া
পারভীন দ্বীপ্তিময় তারা
আমীনুদ্দীন -
দ্বীনের সৌন্দর্য্য
গিয়াসুদ্দীন -
দ্বীনের সৌন্দর্য্য
রঈসুদ্দীন - দ্বীনের সাহায্যকারী
হেমায়েত উদ্দীন -
দ্বীনের সাহায্য
সলীমুদ্দীন - দ্বীনের সাহায্য
জামালু্দ্দীন -
দ্বীনের সাধক
সাইফুদ্দীন - দ্বীনের সূর্য্য
শফীউদ্দীন- দ্বীনের সূর্য্য
ইমামুদ্দীন - দ্বীনের সরদার
রুকুনদ্দীন - দ্বীনের স্ফুলিঙ্গ
কফীলুদ্দীন -
দ্বীনের সুপারিশকারী
রফিউদ্দীন - দ্বীনের সুগন্ধী ফুল
মহিউদ্দীন - দ্বীনের সংশোধনকারী
নাজমুদ্দীন - দ্বীনের সংশোধনকারী
ইমাদুদ্দীন - দ্বীনের শৃখংলা
আলীমুদ্দীন -
দ্বীনের শৃংখলা
তাহেরুদ্দীন -
দ্বীনের রাহবার
বোরহানুদ্দীন -
দ্বীনের রক্ষক
হামিদ উদ্দীন -
দ্বীনের যিম্মাদার
কমরুদ্দীন - দ্বীনের যিন্দাকারী
তাকীউদ্দীন -
দ্বীনের মেধাবী
আফতাবুদ্দীন - দ্বীনের মহান ব্যক্তিত্ব
নেছারউদ্দীন -
দ্বীনের মর্যাদা
আজীমুদ্দীন -
দ্বীনের মুকুট
কামালুদ্দীন -
দ্বীনের ভিত্তি
সালাউদ্দীন -
দ্বীনের ভদ্র
ছিদ্দিক আহমদ -
দ্বীনের বিশ্বস্ত
রায়হানুদ্দীন -
দ্বীনের বিজয়ী
জহিরুদ্দীন - দ্বীনের বন্ধু
মঈনুদ্দীন - দ্বীনের বক্ষ
হানিফুদ্দীন -
দ্বীনের ফুল
বশীরুদ্দীন - দ্বীনের পরহেজগার
শরীফুদ্দীন - দ্বীনের প্রশংসিত
মুসলেহ উদ্দীন -
দ্বীনের প্রমান
ইরশাদুদ্দীন -
দ্বীনের পূর্নতা
হুসাইনুদ্দীন -
দ্বীনের পবিত্র
আলাউদ্দীন -
দ্বীনের নেতা
জকীউদ্দীন -
দ্বীনের নিরপেক্ষ
মুসলিমুদ্দীন -
দ্বীনের ধারকবাহক
ফখরুদ্দীন - দ্বীনের ধ্রুব তারা
হারিছুদ্দীন -
দ্বীনের তারকা
শিহাবুদ্দীন -
দ্বীনের তরবারী
সদরুদ্দীন - দ্বীনের জ্ঞাত
নিজামুদ্দীন -
দ্বীনের চোখ
বদরুদ্দীন - দ্বীনের চাঁদ
মহসিনুদ্দীন -
দ্বীনের চাঁদ
তাজুদ্দীন - দ্বীনের চন্দ্র
হিলালুদ্দীন -
দ্বীনের কান্ডারী
কুতুব উদ্দীন -
দ্বীনের কল্যান
ওয়াকিলুদ্দীন -
দ্বীনের ওয়াকেফহাল
বাহাউদ্দীন -
দ্বীনের একজন বিশিষ্ট্য ব্যক্তি
হাফিজুদ্দীন -
দ্বীনের উৎসর্গ
খবীরুদ্দীন - দ্বীনের উন্নতী প্রদানকারী
আলিউদ্দীন -
দ্বীনের উজ্জ্বলতা
সামছুদ্দীন - দ্বীনের উচ্চতর
আইনুদ্দীন - দ্বীনের আলো
ফিরোজ আহমদ -
দ্বীনের আলো
জিয়াউদ্দীন -
দ্বীনের আলো
নাঈমুদ্দীন - দ্বীনের আত্মসমর্পনকারী
মাহতাবুদ্দীন -
দ্বীনের অমূল্য রত্ন
খাইরুদ্দীন - দ্বীনের অনুগ্রহ
গুলবুদ্দীন - দ্বীনের অংহকার
নুরুদ্দিন - দ্বীনের
জগৎ - দুনিয়া
ইহরাম দৃঢ় সংকল্প
দারা - দৃঢ়
মাহির মোসলেহ - দক্ষ সংস্কারক
মাহির আমের - দক্ষ শাসক
মাহির জসীম - দক্ষ শক্তিশালী
মাহির শাহরিয়ার - দক্ষ রাজা
মাহির তাজওয়ার - দক্ষ রাজা
মাহির আসেফ - দক্ষ যোগ্যব্যক্তি
মাহির আশহাব - দক্ষ বীর
মাহির দাইয়ান - দক্ষ বিচারক
মাহির ফয়সাল - দক্ষ বিচারক
মাহির লাবিব - দক্ষ বুদ্ধিমান
মাহির আবসার - দক্ষ দৃষ্টি
মাহির আজমল - দক্ষ অতি সুন্দর
নিবাল - তীর
যাকী মুজাহিদ -
তীক্ষবুদ্ধি সম্পন্ন সৈনিক
হামযাহ্ - তীক্ষন
লতীফ - তীক্ষ দৃষ্টিকোন
নক্ষত্র - তারা
স্বাতী - তারা
যুন্নার - তাবিজ
ওয়াহিদ তওসীম -
তুলনাহীন প্রশংসা
অতুল - তুলনাহীন
সাইফ - তরবারী
আকমল - ত্রুটিহীন
আকমল - ত্রুটিহীন
লহরী - তরঙ্গ
সাগরিকা - তরঙ্গ
উর্মী - ঢেউ
রুম্মান - ডালিম
টুসি - টোসা
ফুল্কি - ঝলক
প্রলয় - ঝড়
ইয়াসমীন - জেসমিন ফূল
ইভা - জীবন
ইহতেশাম - জাঁকজমক
শিশির - জল বিন্দু
আনওয়ার -
জ্যোতির্মালা
উপল - জ্যোতিময়
নুর - জ্যোতি
মুজাফফার লাতীফ -
জয়দীপ্ত পবিত্র
আরিফ মুইয -
জ্ঞানী সম্মানিত
আরিফ শাকিল -
জ্ঞানী সুপুরুষ
আরিফ সাদিক -
জ্ঞানী সত্যবাদী
আরিফ মোসলেহ -
জ্ঞানী সংস্কারক
আরিফ আমের - জ্ঞানী শাসক
আরিফ শাহরিয়ার জ্ঞানী রাজা
আরিফ আশহাব -
জ্ঞানী বীর
আরিফ মনসুর - জ্ঞানী বিজয়ী
আরিফ হামিম -
জ্ঞানী বন্ধু
আরিফ আকতাব -
জ্ঞানী নেতা
আরিফ হানিফ -
জ্ঞানী ধার্মিক
আরিফ মাহির - জ্ঞানী দক্ষ
আরিফ সালেহ জ্ঞানী চরিত্রবান
আরিফ ফুয়াদ -
জ্ঞানী অন্তর
আরিফ আকরাম -
জ্ঞানী অতিদানশীল
আকিল - জ্ঞানী
লাবীবা - জ্ঞানী
লোকমান - জ্ঞানী
রাইম - ছন্দ
আঁখি - চোখ
লোচনা - চোখ
নয়ন - চোখ
আরাফ - চেনার স্থান
আসার - চিহ্ন
ইরতিসাম - চিহ্ন
বাকী - চিরস্থায়ী
খালেদ - চিরস্থায়ী
আতওয়ার - চাল-চলন
নিশাত আফাফ -
চারিত্রিক শুদ্ধতা
আখলাক - চারিত্রিক গুনাবলী
জ্যোৎস্না - চাঁদের আলো
ভূ-দেব - চাঁদ
দীপেন্দু - চাঁদ
ইন্দু - চাঁদ
মাহতাব - চাঁদ
মৃগাঙ্ক - চাঁদ
চন্দ্র - চাদ
সামীম - চরিত্রবান
তালাল ওয়াসিম -
চমৎকার সুন্দর গঠন
অনীক - চঞ্চল
আওলা - ঘনিষ্ঠতর
কারীব - ঘনিষ্ঠ
আবীদ - গোলাম
সারাফ আতিকা -
গানরত সুন্দরী
সারাফ ওয়াসিমা -
গানরত সুন্দরী
সারাফ ওয়ামিয়া -
গানরত বৃষ্টি
সারাফ নাওয়ার -
গানরত ফুল
সারাফ আনজুম -
গানরত তারা
সারাফ আনিস -
গানরত কুমারী
সারাফ রুমালী -
গানরত কবুতর
ইফতিখার - গর্ব
মহাদয়ালু - গফুর
ধারা - গতি
আমানাত - গচ্ছিত ধন
তাকি - খোদাভীরু
বিমল - খাঁটি
লুবাবা - খাঁটি
ইবতিদা - কোন কাজ আরম্ভ করা
আবদুল গফুর -
ক্ষমাশীলের গোলাম
গোফরান - ক্ষমা
আবদুল কাদির -
ক্ষমতাবানের গোলাম
আজিজ - ক্ষমতাবান
আসগর - ক্ষুদ্রতম
আবদুর রহমান করুনাময়ের গোলাম
আজরা মাসুদা -
কুমারী সৌভাগ্যবতী
আজরা সাদিয়া -
কুমারী সৌভাগ্যবতী
আজরা আফিফা -
কুমারী সাধবী
আজরা শাকিলা -
কুমারী সুরূপা
আজরা মুকাররামা -
কুমারী সম্মানিত
আজরা আতিকা -
কুমারী সুন্দরী
আজরা হোমায়রা -
কুমারী সুন্দরী
আজরা জামীলা -
কুমারী সুন্দরী
আজরা আসিমা -
কুমারী সতী নারী
আজরা তাহিরা -
কুমারী সতী
আজরা রায়হানা -
কুমারী সুগন্ধী ফুল
আজরা আদিবা -
কুমারী শিষ্টাচার
আজরা শার্মিলা -
কুমারী লজ্জাবতী
আজরা বিলকিস -
কুমারী রানী
আজরা সাবিহা -
কুমারী রূপসী
আজরা মুমতাজ -
কুমারী মনোনীত
আজরা মায়মুনা -
কুমারী ভাগ্যবতী
আজরা আনতারা -
কুমারী বীরাঙ্গনা
আজরা রাশীদা -
কুমারী বিদুষী
আজরা গালিবা -
কুমারী বিজয়ীনি
আজরা আকিলা -
কুমারী বুদ্ধিমতী
আজরা ফাহমিদা -
কুমারী বুদ্ধিমতী
আজরা মাবুবা -
কুমারী প্রিয়া
আজরা মাহমুদা -
কুমারী প্রশংসিতা
আজরা হামিদা -
কুমারী প্রশংসাকারিনী
আজরা সাদিকা -
কুমারী পুন্যবতী
আজরা আফিয়া -
কুমারী পুণ্যবতী
আজরা মালিহা -
কুমারী নিষ্পাপ
আজরা আদিলা -
কুমারী ন্যায় বিচারক
আজরা সাজিদা -
কুমারী ধার্মিক
আজরা সামিহা -
কুমারী দালশীলা
আজরা আতিয়া - কুমারী দানশীল
আজরা রুমালী -
কুমারী কবুতর
আনিসা ইবনাত -
কুমারী কন্যা
আজরা আবিদা -
কুমারী ইবাদতকারিনী
আজরা - কুমারী
তরুন - কমলা
মুদদাচ্ছির -
কম্বলপরিহিত
রানা গওহার - কমনীয় মুক্তা
রানা আনজুম -
কমনীয় তারা
কবি - কবিতা লেখক
আবদুল মুজিব -
কবুলকারীর গোলাম
ইজাব - কবুল করা
রুমা কবুতর
রুমালী কবুতর
সীমা - কপাল
নীপা - কদম্ব
শাকুর - কৃতজ্ঞ
সাকেরা - কৃজ্ঞতা প্রকাশকারী
ইজতিনাব - এড়াইয়া চলা
মানালী - একপ্রকার পাখী
ইত্তেফাক -
একতা,মিলন
হাশির - একত্রকারী
চূর্নী - একটির নদীর নাম
যমুনা - একটি নদীর নাম
হুযাইফা - একজন সাহাবীর নাম
আহদাম - একজন বুজুর্গ ব্যক্তির নাম
ইস্রাফীল - একজন ফেরেশ্তার নাম
আইউব - একজন নবীর নাম
ইব্রাহীম - একজন নবীর নাম
ইলিয়াস - একজন নবীর নাম
ইসহাক - একজন নবীর নাম
ইসমাইল - একজন নবীর নাম
আবদুল ওয়াহেদ -
এককের গোলাম
আখফাশ - এক বিজ্ঞ ব্যক্তি
চম্পা - এক প্র্রকার ফুল
চামেলি - এক প্রকার ফুল
মৌবনী - এক প্রকার ফুল
শেফালী - এক প্রকার ফুল
দুর্বা - এক প্রকার ঘাস
নেসার - উৎসর্গ
আবেদ - উপাসক
আলাল - উপারি
উপায়ন - উপহার
মযাক্কের - উপদেষ্টা
ওয়ায়েয -
উপদেশদাতা
নাসেহা -
উপদেশকারিনী
মাহবুব - উপকারী
মোহসেন - উপকারী
ইফাজ - উপকার করা
ইহসান উপকার করা
রাফিয়া - উন্নত
নাফিস ফুয়াদ -
উত্তম অন্তর
আসিল - উত্তম
নাফিস - উত্তম
আযহা - উজ্জল
জুহায়ের ওয়াসিম -
উজ্জ্বল সুন্দরগঠন
জুহায়ের আনজুম -
উজ্জ্বল তারা
শিহাব শারার -
উজ্জ্বল তারকা বলয়
জুহায়ের মাহতাব -
উজ্জ্বল চাঁদ
অহনা - উজ্জ্বল
রওশান - উজ্জ্বল
শারীকা - উজ্জ্বল
জুহায়ের আখতার -
উজ্জ্ব তারা
আলি আওসাফ -
উচ্চগুনাবলী
আলী আফসার - উচ্চ দৃষ্টি
আলি আরমান - উচ্চ ইচ্ছা
তাজুল ইসলাম -
ইসলামের সৌন্দর্য্য
মমতাজুল ইসলাম -
ইসলামের সাহায্যকারী
শামসুল ইসলাম -
ইসলামের সাহায্যকারী
নুরুল ইসলাম -
ইসলামের সূর্য্য
ফয়জুল ইসলাম -
ইসলামের মহত্ব
রফিকুল ইসলাম -
ইসলামের মহত্ত্ব
জামালুল ইসলাম -
ইসলামের মুফীজ
ইরশাদুল ইসলাম -
ইসলামের মুকুট
সিরাজুল ইসলাম -
ইসলামের বিশিষ্ট ব্যক্তি
মুহিববুল ইসলাম -
ইসলামের বাতী
বাশরাতুল হাসান -
ইসলামের বসন্তকাল
রবীউল হাসান -
ইসলামের বসন্তকাল
আশিকুল ইসলাম -
ইসলামের বন্ধু
মফিজুল ইসলাম -
ইসলামের বন্ধু
মমতাজুদ্দীন -
ইসলামের পাগল
মুনীরুল ইসলাম -
ইসলামের প্রিয়
সাইফুল ইসলাম -
ইসলামের প্রিয়
শফিকুল - ইসলামের প্রিয়
শফীকুল ইসলাম -
ইসলামের পথপ্রদর্শক
খাইরুল ইসলাম -
ইসলামের নেতা
নজরুল ইসলাম -
ইসলামের নির্দশন
কামরুল ইসলাম -
ইসলামের তরবারী
মাজীদুল ইসলাম -
ইসলামের জ্যোতি বিচ্চুণকারী
আমিরুল ইসলাম -
ইসলামের জ্যোতি
জিয়াউল ইসলাম -
ইসলামের জ্যোতি
আমীলুন ইসলাম -
ইসলামের চাঁদ
আজীজুল ইসলাম -
ইসলামের কল্যাণ
মঈনুল ইসলাম -
ইসলামের অনুকম্পা
সম্পদ - ইয়াসীর
তামন্না - ইচ্ছা
আরমানী - আশাবাদী
কালীম -
আলোচনাকারী
ইসফার - আলোকিত হওয়া
তানভির আনজুম -
আলোকিত তারা
তানভির মাহতাব -
আলোকিত চাঁদ
তানভীর - আলোকিত
উজ্জল - আলোকিত
বাহা - আলো
বিভা - আলো
দীপ - আলো
দীপা - আলো
কিরন - আলো
নূর - আলো
রোশনী - আলো
সুদ্বীপ - আলো
ইসরাইল - আল্লাহর বান্দা
আউলিয়া - আল্লাহর বন্ধু
আবদুল্লাহ - আল্লাহর দাস
শাফি - আরোগ্য দাতা
শেফা আরোগ্য
আলিফ - আরবী অক্ষর
মিম - আরবী অক্ষর
দর্পনা - আয়না
কাশশাব - আবিষ্কার
শাদমান শাকীব -
আনন্দিত উজ্জ্বল
আনিস - আনন্দিত
নন্দিতা - আনন্দময়ী
শিরিন - আনন্দকর
নিশাত রিমা -
আনন্দ সাদা হরিণ
নিশাত রাবাব -
আনন্দ সাদা মেঘ
নিশাত সাইয়ারা -
আনন্দ সুস্থ
নিশাত মালিয়াত -
আনন্দ সম্পদ
নিশাত রায়হানা -
আনন্দ সুগন্ধী ফূল
নিশাত আনবার - আনন্দ সুগন্ধী
নিশাত আনান -
আনন্দ মেঘ
নিশাত গওহার - আনন্দ মুক্তা
নিশাত নাবিলাহ -
আনন্দ ভদ্র
নিশাত সালসাবিল -
আনন্দ বেহেশতী ঝর্ণা
নিশাত রাবিয়াহ -
আনন্দ বাগান
নিশাত লুবনা -
আনন্দ বৃক্ষ
নিশাত নাওয়ার -
আনন্দ ফুল
নিশাত সালমা -
আনন্দ প্রশান্ত
নিশাত সুবাহ -
আনন্দ প্রভাত
নিশাত নুজহাত -
আনন্দ প্রফুল্ল
নিশাত শামা -
আনন্দ প্রদীপ
নিশাদ সাইদা - আনন্দ নদী
নিশাত মুনাওয়ারা -
আনন্দ দিপ্তীমান
নিশাত আনজুম -
আনন্দ তারা
নিশাত রুম্মান -
আনন্দ ডালিম
নিশাত শাদাফ -
আনন্দ ঝিনুক
নিশাত ওয়ামিয়া -
আনন্দ জেসমিন ফূল
নিশাত তারাননুম -
আনন্দ গুঞ্জরণ
নিশাত সিমা - আনন্দ কপাল
নিশাত ফরহাত -
আনন্দ উল্লাস
নিশাত মাশিয়াত -
আনন্দ উল্লাস
ফারাহা উলফাত -
আনন্দ উপহার
নিশাত আতিয়া -
আনন্দ উপহার
নিশাত নাওয়াল -
আনন্দ উপহার
নিশাত উলফাত -
আনন্দ উপহার
নিশাত তাফাননুম -
আনন্দ উচ্ছাস
নিশাত তামান্না -
আনন্দ ইচ্ছা
নিশাত নায়েলা -
আনন্দ অর্জনকারিনী
নিশাত তাহিয়াত -
আনন্দ অভিবাদন
ফাবীহা লামিসা -
আনন্দ অনুভূতি
নিশাত আফলাহ -
আনন্দ অধিক কল্যাণকর
ফারহাত - আনন্দ
খুশি - আনন্দ
খুশি - আনন্দ
মুসারাত - আনন্দ
নিশাত - আনন্দ
তাফাননুম - আনন্দ
জয় - আধিপত্য, বিজয়
সুফিয়া -
আধ্যাত্মিক সাধনাকারী
ইসলাম - আত্মসমর্পন
গানী - আত্মনির্ভর
আহরার - আজাদী প্রাপ্তদান
মুস্তাক নাদিম -
আগ্রহী সঙ্গী
মুস্তাক শাহরিয়ার -
আগ্রহী রাজা
মুশতাক আনিস -
আগ্রহী বন্ধু
মুস্তাক ওয়াদুদ -
আগ্রহী বন্ধু
মুস্তাক মুজাহিদ -
আগ্রহী ধর্মযোদ্ধা
মুশতাক আবসার -
আগ্রহী দৃষ্টি
মুশতাক লুকমান -
আগ্রহী জ্ঞানী ব্যক্তি
মুস্তাক মুতাদ্দীদ -
আগ্রহী চিন্তাশীল
মুশতাক হাসানাত -
আগ্রহী গুনাবলী
মুশতাক ফুয়াদ - আগ্রহী অন্তর
মুশতাক - আগ্রহী
নছীব - আগন্তক
অনল - আগুন
কৃশানু - আগুন
পাবক - আগুন
আকাশ - আকাশ, দিগন্ত
নীলাম্বর - আকাঁশ
একাম্বর - আকাশ
গগন - আকাশ
রাগীব আখলাক -
আকাঙ্গ্ক্ষীত চারিত্রিক গুনাবলি
রাগীব বরকত -
আকাঙ্গ্ক্ষিত সৌভাগ্য
রাগীব হাসিন -
আকাঙ্গ্ক্ষিত সুন্দর
রাগীব আমের -
আকাঙ্গ্ক্ষিত শাসক
রাগীব আশহাব -
আকাঙ্গ্ক্ষিত বীর
রাগীব আনসার -
আকাঙ্গ্ক্ষিত ব্ন্ধু
রাগীব আনিস -
আকাঙ্গ্ক্ষিত বন্ধু
রাগীব আবিদ -
আকাঙ্গ্ক্ষিত এবাদতকারী
রাগীব আসেব -
আকাঙ্গ্ক্ষি যোগ্যব্যক্তি
রাগীব আখইয়ার -
আকাঙ্গ্ক্ষি চমৎকার মানুষ
রাগীব রওনক -
আকাঙ্ক্ষিত সৌন্দর্য
রাগীব ইয়াসার -
আকাঙ্ক্ষিত সম্পদ
রাগীব শাকিল -
আকাঙ্ক্ষিত সুপরুষ
রাগীব ইশরাক -
আকাঙ্ক্ষিত সকাল
রাগীব নাদিম -
আকাঙ্ক্ষিত সংগী
রাগীব সাহরিয়ার -
আকাঙ্ক্ষিত রাজা
রাগীব মুহিব -
আকাঙ্ক্ষিত প্রেমিক
রাগীব নাদের -
আকাঙ্ক্ষিত প্রিয়
রাগীব মুবাররাত -
আকাঙ্ক্ষিত ধার্মিক
রাগীব আবসার -
আকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি
রাগীব রহমত -
আকাঙ্ক্ষিত দয়া
রাগীব আখতার -
আকাঙ্ক্ষিত তারা
রাগীব আনজুম -
আকাঙ্ক্ষিত তারা
রাগীব নিহাল -
আকাঙ্ক্ষিত চারা গাছ
রাগীব মাহতাব -
আকাঙ্ক্ষিত চাঁদ
রাগীব মোহসেন -
আকাঙ্ক্ষিত উপকারী
রাগীব নূর -
আকাঙ্ক্ষিত আলো
আরজু - আকাঙক্ষা
মুরাদ - আকাংক্ষা
গৌরব - অহঙ্কার
রাকীব -
অশ্বারোহী
ইজাজ - অলৌকিক
ইজাজ অলৌকিক
নায়লা -
অর্জনকারিনী
খালিদা - অমর
তসলীম - অভিবাদন
আবদুস সামাদ -
অভাবহীনের গোলাম
লাজিম খলিল -
অপরিহার্য বন্ধু
আযহার - অপরিস্ফুট ফুল
অনামিকা - অপরিচিতা
অনুলেখা - অনুস্বরন
আনাস - অনুরাগ
আনাস - অনুরাগ
ইহসাস - অনুভূতি
ফরিদা - অনুপমা
ফরিদ হামিদ -
অনুপম প্রশংসাকারী
ফরিদ - অনুপম
আবাদ - অনন্ত কাল
ফুয়াদ - অন্তর
আখের - অন্ত
ফযলু - অনুগ্রহ
মতিন - অনুগত
মুতি - অনুগত
জিত - অধিপত্য
জিনা - অধিপত্য
আশরাফ - অধিক সম্মানী
আশফাক আহবাব -
অধিক স্নেহশীল বন্ধু
আশফাক - অধিক স্নেহশীল
আরকাম - অধিক লেখক
আহমার - অধিক লাল
আরিক - অধিক উজ্জ্বল
ওয়াহীদ - অদ্বিতীয়
আজরফ আমের -
অতিবুদ্ধিমান শাসক
আহনাফ আবরার -
অতিপ্রশংসনীয় ন্যায়বান
আকমার আমের -
অতিদানশীল শাসক
আকরাম -
অতিদানশীল
জাওয়াদ -
অতিদানশীল
আজওয়াদ আহবাব -
অতিউত্তম বন্ধু
আজওয়াদ আবরার -
অতিউত্তম ন্যায়বান
আকমার আহমার -
অতিউজ্জ্বল লাল
আকমার আবসার -
অতিউজ্জ্বল দৃষ্টি
আকমার আনজুম -
অতিউজ্জ্বল তারকা
আকমার আজমাল -
অতিউজ্জ্বল অতিসুন্দর
আস-আদ - অতি সৌভাগ্যবান
আরশাদ আলমাস -
অতি স্বচ্ছ হীরা
আজমাল - অতি সুন্দর
মুহাম্মদ - অতি প্রশংসিত
আতহার আশহাব -
অতি প্রশংসনীয় বীর
আহমাদ আওসাফ -
অতি প্রশংসনীয় গুনাবলী
আতহার জামাল -
অতি পবিত্র সৌন্দর্য
আতহার ইশরাক -
অতি পবিত্র সকাল
আতহার মুবারক -
অতি পবিত্র শুভ
আতহার শাহাদ -
অতি পবিত্র মধু
আতহার সিপার -
অতি পবিত্র বর্ম
আতহার মেসবাহ -
অতি পবিত্র প্রদীপ
আতহার মাসুম -
অতি পবিত্র নিষ্পাপ
আতহার আনওয়ার - অতি পবিত্র জ্যোতির্মালা
আতহার ফিদা -
অতি পবিত্র জ্যোতির্মালা
আরিফ জুহায়ের - অতি পবিত্র উজ্জ্বল
আতহার ইশতিয়াক -
অতি পবিত্র ইচ্ছ
আতহার নূর -
অতি পবিত্র আলো
আতহার শিহাব -
অতি পবিত্র আলো
আতহার ইহসাস -
অতি পবিত্র অনুভূতি
আতাহার - অতি পবিত্র
আকবার - অতি দানশীল
হান্নান - অতি দয়ালু
গাফফার - অতি ক্ষমাশীল
আফজাল - অতি উত্তম
আকরাম আনওয়ার -
অতি উজ্জ্বল গুনাবলী
আসমা তাবাসসুম -
অতুলনীয় হাসি
আসমা মাসুদা - অতুলনীয় সৌভাগ্যবতী
আসমা সাদিয়া -
অতুলনীয় সৌভাগ্যবতী
আসমা আতিকা -
অতুলনীয় সুন্দরী
আসমা হোমায়রা -
অতুলনীয় সুন্দরী
আসমা ইয়াসমিন -
অতুলনীয় সুন্দর জেসমিন ফুল
আসমা রায়হানা -
অতুলনীয় সুগন্ধী ফুল
আসমা আতেরা -
অতুলনীয় সুগন্ধী
আসমা সাহানা -
অতুলনীয় রাজকুমারী
আসমা আনিকা -
অতুলনীয় রূপসী
আসমা মালিহা -
অতুলনীয় রূপসী
আসমা সাবিহা -
অতুলনীয় রূপসী
আসমা ওয়াসিমা -
অতুলনীয় রূপসী
আসমা গওহার - অতুলনীয় মুক্তা
আসমা সাহেবী -
অতুলনীয় বান্ধবী
আসমা আকিলা -
অতুলনীয় বুদ্ধিমতী
আসমা নাওয়ার -
অতুলনীয় ফুল
আসমা আফিয়া -
অতুলনীয় পুণ্যবতী
আসমা আতিয়া -
অতুলনীয় দানশীল
আসমা তারাননুম -
অতুলনীয় গুন গুন শব্দ
আসমা আনিসা -
অতুলনীয় কুমারী
আসমা উলফাত -
অতুলনীয় উপহার
আয়মান - অত্যন্ত শুভ
আহকাম - অত্যন্ত শক্তিশালী
ফারহা আতেরা -
অত্যন্ত ভাল সুগন্ধী
ফাবীহা আনবার -
অত্যন্ত ভাল শুভ সংবাদ
ফাবীহা বুশরা -
অত্যন্ত ভাল শুভ নিদর্শন
ফারহা আফিয়া -
অত্যন্ত ভাল পুন্যবতী
ফাবীহা আফাফ -
অত্যন্ত ভাল চারিত্রিক শুদ্ধতা
সাবেক - অগ্রগামী
ইত্তেসাম - অংকন করা
আনছারুল হক -
অন্তরা জাহিমা -
বখতিয়ার মাদীহ -

Post a Comment

0 Comments