মৃত_ব্যক্তির_নামে_কুরবানী করা যাবে কি?

# মৃত_ব্যক্তির_নামে_কুরবানী ; # শরীয়ত_কী_বলে ? -------------------------------------- শরীয়তের বিধান মতে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী, বা অন্য কোন দান-সাদাকাহ্ করা জায়েয আছে। মৃত ব্যক্তির ন্যায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামেও কুরবানী করা শুধু জায়েয নয় বরং উত্তম। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ওয়াজাহাত: -------------------- মৃত ব্যক্তিদের জন্য কুরবানী করা জায়েয ও একটি সওয়াবের কাজ। মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী একটি সাদাকাহ্। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সাদাকাহ্ করা যায় তেমনি তার নামে কোরবানিও দেয়া যায়। মৃতব্যক্তি এর দ্বারা উপকৃত হবে, ইনশাআল্লাহ! উপরন্তু, মৃতব্যক্তি এ ধরনের পূণ্যকর্মের মুখাপেক্ষীও থাকে। যেমন, মৃত ব্যক্তির জন্য সাদাকার বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ـ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ـ . ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼً، ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﺍﻓْﺘُﻠِﺘَﺖْ ﻧَﻔْﺴُﻬَﺎ، ﻭَﺃَﻇُﻨُّﻬَﺎ ﻟَﻮْ ﺗَﻜَﻠَّﻤَﺖْ ﺗَﺼَﺪَّﻗَﺖْ، ﻓَﻬَﻞْ ﻟَﻬَﺎ ﺃَﺟْﺮٌ ﺇِﻥْ ﺗَﺼَﺪَّﻗْﺖُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ " ﻧَﻌَﻢْ ." হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমার মা হাঠাৎ ইন্তিকাল করেছেন। আমার মনে হয় তিনি কোনো কথা বলতে পারলে সাদাকাহ্ করতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সাদাকাহ্ করি তাতে কি তার সওয়াব হবে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। (সহিহ বুখারি, হাদীস নম্বর: ১৩৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদীস নম্বর: ১০০৪)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও নিজের ও উম্মতের সকলের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন মর্মে সহীহ হাদীস শরীফে এসেছে। অথচ তখন উম্মাহর অনেকে শাহাদাত বরণ করেছেন, আবার অনেকে স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছেন। অতএব মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী নিষেধের প্রশ্নই উঠে না। নিম্নোল্লেখিত হাদীস শরীফটি একটু ভালো করে পড়ে দেখি.... ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻭَﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳُﻀَﺤِّﻲَ ﺍﺷْﺘَﺮَﻯ ﻛَﺒْﺸَﻴْﻦِ ﻋَﻈِﻴﻤَﻴْﻦِ ﺳَﻤِﻴﻨَﻴْﻦِ ﺃَﻗْﺮَﻧَﻴْﻦِ ﺃَﻣْﻠَﺤَﻴْﻦِ ﻣَﻮْﺟُﻮﺀَﻳْﻦِ ﻓَﺬَﺑَﺢَ ﺃَﺣَﺪَﻫُﻤَﺎ ﻋَﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻪِ ﻟِﻤَﻦْ ﺷَﻬِﺪَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺑِﺎﻟﺘَّﻮْﺣِﻴﺪِ ﻭَﺷَﻬِﺪَ ﻟَﻪُ ﺑِﺎﻟْﺒَﻼَﻍِ ﻭَﺫَﺑَﺢَ ﺍﻵﺧَﺮَ ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻦْ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ . হযরত আয়েশা ও আবূ হুরায়রাহ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানির ইচ্ছা করলে দু’টি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও খাসি করা মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মাতের যারা আল্লাহ্র একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াফাতের পর হযরত আলী রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু নিয়মিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে কুরবানী করতেন। আর বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করতে ওসিয়্যাত করেছিলেন। ﻋَﻦْ ﺣَﻨَﺶٍ، ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻋَﻠِﻴًّﺎ ﻳُﻀَﺤِّﻲ ﺑِﻜَﺒْﺸَﻴْﻦِ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻣَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻭْﺻَﺎﻧِﻲ ﺃَﻥْ ﺃُﺿَﺤِّﻲَ ﻋَﻨْﻪُ ﻓَﺄَﻧَﺎ ﺃُﺿَﺤِّﻲ ﻋَﻨْﻪُ . তাবিঈ হযরত হানাশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি ‘আলী রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু-কে দু’টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কি (দু’টি কেন)? তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ওয়াসিয়্যাত করেছেন, আমি যেন তার পক্ষ হতে কুরবানী করি। তাই তার পক্ষ হতেও কুরবানী করছি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৭৯০) ইমদাদুল ফাতাওয়া খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা নং ৫৩২- তে মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন: ﺟﺎﺋﺰ ﮨﮯ ؛ ﮐﯿﻮﻧﮑﮧ ﺣﯽ ﺍﻭﺭ ﻣﯿﺖ ﮐﯽ ﻃﺮﻑ ﺳﮯ ﻗﺮﺑﺎﻧﯽ ﮐﺎ ﺣﮑﻢ ﺍﯾﮏ ﮨﮯ۔ অতএব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে অথবা অন্য কোনো বুযুর্গ ব্যক্তি বা মৃত আত্মীয় স্বজনের নামে কুরবানী করতে কোনো অসুবিধা নেই। শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয তো নয়ই বরং সাওয়াবের কাজ। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।।

Post a Comment

0 Comments