ভুল সংশোধনের ভুল পদ্ধতি।

ভুল সংশোধনের ভুল পদ্ধতি: ------------------------------------------- কেহ ভুল করে ফেললে সংশোধন করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কোন মুমিন ভাই ভুল করলে তাকে সংশোধন করা অন্য মুমিনের দায়িত্ব। "আদদ্বীনু আন নাসীহাহ্"..... কিন্তু কী হবে সেই সংশোধনের পদ্ধতি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে বিষয়ে ইরশাদ করেছেন, ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦُ ﻣِﺮْﺁﺓُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦُ ﺃَﺧُﻮ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻳَﻜُﻒُّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺿَﻴْﻌَﺘَﻪُ ﻭَﻳَﺤُﻮﻃُﻪُ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺋِﻪِ " . হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভাই। তারা একে অপরের ক্ষতি করা হতে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯১৮) উপরোল্লেখিত হাদিস শরীফটিতে নসীহতকারীব্যক্তিদের বিষয়ে তিনটি দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক. কোন মুমিন অপর মুমিনের দোষ-ত্রুটি দেখলে সংশোধনের জন্য শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই বলবে। অন্যদের কাছে তা চর্চা করে বেড়াবে না। তাকে মানুষের সামনে অপমান অপদস্ত করবে না। দুই. এমন ভাষায় বলবে যাতে সে কষ্ট না পায়। যেমন আয়না কারো চেহারার দোষ শুধু তাকেই দেখায়, অন্যকে নয়। এমনভাবে যে আয়না দেখনেওয়ালা কষ্ট পায় না। তিন. এক মুমিন অপর মুমিনের কোন দোষ ত্রুটি দেখলে তাকে অবশ্যই স্মরণ করিয়ে দিবে। তবে একাকী, সবার অগোচরে। যেমন আয়না কারো চেহারায় ত্রুটি থাকলে তা অবশ্যই তাকে ধরিয়ে দেয়। গোপন রাখে না। তবে একাকী, অগোচরে। ভুল সংশোধনের সময় তার সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। তার মান সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে একজন মুসলমানের মানসম্মান অপর মুসলমানের জন্য হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছেন: ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﻠِﻲُّ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦُ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻓُﻀَﻴْﻞُ ﺑْﻦُ ﻏَﺰْﻭَﺍﻥَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔُ ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺧَﻄَﺐَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻨَّﺤْﺮِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺃَﻱُّ ﻳَﻮْﻡٍ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺄَﻱُّ ﺑَﻠَﺪٍ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺑَﻠَﺪٌ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺄَﻱُّ ﺷَﻬْﺮٍ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺷَﻬْﺮٌ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺈِﻥَّ ﺩِﻣَﺎﺀَﻛُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻋْﺮَﺍﺿَﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻛَﺤُﺮْﻣَﺔِ ﻳَﻮْﻣِﻜُﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻓِﻲ ﺑَﻠَﺪِﻛُﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻓِﻲ ﺷَﻬْﺮِﻛُﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻓَﺄَﻋَﺎﺩَﻫَﺎ ﻣِﺮَﺍﺭًﺍ ﺛُﻢَّ ﺭَﻓَﻊَ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻫَﻞْ ﺑَﻠَّﻐْﺖُ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻫَﻞْ ﺑَﻠَّﻐْﺖُ ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻓَﻮَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻮَﺻِﻴَّﺘُﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻪِ ﻓَﻠْﻴُﺒْﻠِﻎْ ﺍﻟﺸَّﺎﻫِﺪُ ﺍﻟْﻐَﺎﺋِﺐَ . হযরত ইব্নে আব্বাস রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর দিন লোকদের উদ্দেশে একটি খুৎবাহ দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল ! আজকের এ দিনটি কোন্ দিন? সকলেই বললেন, সম্মানিত দিন। অতঃপর তিনি বললেনঃ এ শহরটি কোন শহর? তাঁরা বললেন, সম্মানিত শহর। অতঃপর তিনি বললেনঃ এ মাসটি কোন মাস? তাঁরা বললেন, সম্মানিত মাস। তিনি বললেনঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইযযত-সম্মান তোমাদের জন্য তেমনি সম্মানিত , যেমন সম্মানিত তোমাদের এ দিনটি , তোমাদের এ শহর এবং তোমাদের এ মাস। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। পরে মাথা উঠিয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ ! আমি কি (আপনার পয়গাম) পৌঁছিয়েছি ! হে আল্লাহ ! আমি কি পৌঁছিয়েছি? ইব্নু আব্বাস (রাঃ) বলেন, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ , নিশ্চয়ই এ কথাগুলো ছিল তাঁর উম্মতের জন্য অসীয়ত। [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ] উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৭৩৯) অন্য হাদীসে এসেছে, ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺯَﻳْﺪٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻰ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﺍﻻِﺳْﺘِﻄَﺎﻟَﺔَ ﻓِﻲ ﻋِﺮْﺽِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣَﻖٍّ " . হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের মানসম্মানে হস্তক্ষেপ করা ব্যাপকতর সুদের অন্তর্ভুক্ত (মহাপাপ)। আর সুদ হলো ছত্রিশ বার যেনার মতো জঘন্য পাপ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৭৬ হাদিসের মান: সহিহ ) # আমরা_যা_করি : কোন মানুষ আমাদের ধারণা মতে ভুল করলে তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে শুরু করে দেই। আরম্ভ হয় গীবতের আড্ডা। এখানে সেখানে চলে তার নিন্দা। গীবত থেকে তা অপবাদ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায়। এর অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক ভিত্তি ছাড়া শুধু কুধারণা নির্ভর হয়ে এসব করে থাকি আমরা। অথচ আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﻥَّ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﺛْﻢٌ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠَﺴَّﺴُﻮﺍ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻐْﺘَﺐ ﺑَّﻌْﻀُﻜُﻢ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﺃَﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥ ﻳَﺄْﻛُﻞَ ﻟَﺤْﻢَ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﻣَﻴْﺘًﺎ ﻓَﻜَﺮِﻫْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻮَّﺍﺏٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত, আয়াত নম্বর: ১২) গীবত এতো বড় মারাত্মক গুনাহ যাকে যেনার চেয়ে বেশি মারাত্মক বলা হয়েছে। "আল গীবাতু আশাদ্দু মিনায যিনা" প্রসিদ্ধ হাদীস,যা (আমল না থাকলেও) সবারই জানা আছে। এটা হলো ভুল সংশোধনের ভুল পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সংশোধন তো হয়ই না। বরং এতে ভুলকারী ব্যক্তির চেয়ে গীবতে লিপ্ত সমালোচকদের ক্ষতিই বেশী। কারণ দুনিয়াতে যাই হোক, আখেরাতে ঐ ব্যক্তির ক্ষমা করা ছাড়া সমালোচকদের জান্নাতের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। মাফ না করলে নিজের কষ্টার্জিত আমলগুলো দিয়ে তার ভুল বশত করা গুনাহের বোঝা নিজের কাঁধে নিয়ে জাহান্নামের পথে রওয়ানা দিতে হবে। আল্লাহ তা'আলা আপনাকে আমাকে সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন।।

Post a Comment

0 Comments