মৃত ব্যক্তির সমালোচনা ইসলাম কী বলে ?

# মৃত_ব্যক্তির_সমালোচনা ; # ইসলাম_কী_বলে ? ----------------------------------------------------------- ইসলামে মৃত ব্যক্তির গুণাবলী আলোচনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তির দোষ চর্চা বা তার ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমি এ সম্পর্কে নিজের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু বলবো না। কুরআন সুন্নাহর কিছু উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি। তা থেকে সহজেই অনুমান করা যাবে যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের করণীয় কী? আর আমরা করছি কী? ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﻥَّ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﺛْﻢٌ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠَﺴَّﺴُﻮﺍ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻐْﺘَﺐ ﺑَّﻌْﻀُﻜُﻢ ﺑَﻌْﻀًﺎ ﺃَﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥ ﻳَﺄْﻛُﻞَ ﻟَﺤْﻢَ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﻣَﻴْﺘًﺎ ﻓَﻜَﺮِﻫْﺘُﻤُﻮﻩُ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻮَّﺍﺏٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ হে মু’মিনগণ! তোমরা বেশীরভাগ ধারণা হতে বিরত থাক। (কারণ) কতক ধারণা পাপের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না, একে অন্যের অনুপস্থিতিতে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো সেটাকে ঘৃণাই করে থাক। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ খুব বেশি তাওবাহ কবূলকারী, অতি দয়ালু। সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত নম্বর: ১২ ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ـ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ـ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ " ﻻَ ﺗَﺴُﺒُّﻮﺍ ﺍﻷَﻣْﻮَﺍﺕَ ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻗَﺪْ ﺃَﻓْﻀَﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﺎ ﻗَﺪَّﻣُﻮﺍ " হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মৃত ব্যক্তিদের গালমন্দ কর না। কারণ তারা যা করেছে তার প্রতিফল পাওয়ার স্থানে পৌঁছে গেছে। সহীহুল বুখারী, হাদীস নম্বর: ১৩৯৩ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻌَﻼَﺀِ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔُ ﺑْﻦُ ﻫِﺸَﺎﻡٍ، ﻋَﻦْ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﺑْﻦِ ﺃَﻧَﺲٍ ﺍﻟْﻤَﻜِّﻲِّ، ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀٍ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ " ﺍﺫْﻛُﺮُﻭﺍ ﻣَﺤَﺎﺳِﻦَ ﻣَﻮْﺗَﺎﻛُﻢْ ﻭَﻛُﻔُّﻮﺍ ﻋَﻦْ ﻣَﺴَﺎﻭِﻳﻬِﻢْ " হযরত আবদুল্লাহ বিন উমার রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস নং : ৪৯০০ অন্য একটি হাদীসে এসেছে- ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : " ﻣَﻦْ ﺳَﺘَﺮَ ﻣُﺴْﻠِﻤًﺎ ﺳَﺘَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ". হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে বান্দা অন্য বান্দার দোষত্রুটি এ পার্থিব জীবনে গোপন রাখবে, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।’ মুসলিম শরীফ, হাদীস নম্বর:২৫৪৪ রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেন, ‘আমার সব উম্মতের গুনাহ মাফ হবে। কিন্তু দোষত্রুটি প্রকাশকারীর গুনাহ মাফ হবে না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছেন: ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﻠِﻲُّ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦُ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻓُﻀَﻴْﻞُ ﺑْﻦُ ﻏَﺰْﻭَﺍﻥَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔُ ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺧَﻄَﺐَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻨَّﺤْﺮِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺃَﻱُّ ﻳَﻮْﻡٍ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺄَﻱُّ ﺑَﻠَﺪٍ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺑَﻠَﺪٌ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺄَﻱُّ ﺷَﻬْﺮٍ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺷَﻬْﺮٌ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺈِﻥَّ ﺩِﻣَﺎﺀَﻛُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻋْﺮَﺍﺿَﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﻛَﺤُﺮْﻣَﺔِ ﻳَﻮْﻣِﻜُﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻓِﻲ ﺑَﻠَﺪِﻛُﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻓِﻲ ﺷَﻬْﺮِﻛُﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻓَﺄَﻋَﺎﺩَﻫَﺎ ﻣِﺮَﺍﺭًﺍ ﺛُﻢَّ ﺭَﻓَﻊَ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻫَﻞْ ﺑَﻠَّﻐْﺖُ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻫَﻞْ ﺑَﻠَّﻐْﺖُ ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻓَﻮَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻟَﻮَﺻِﻴَّﺘُﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻪِ ﻓَﻠْﻴُﺒْﻠِﻎْ ﺍﻟﺸَّﺎﻫِﺪُ ﺍﻟْﻐَﺎﺋِﺐَ . হযরত ইব্নে আব্বাস রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর দিন লোকদের উদ্দেশে একটি খুৎবাহ দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল ! আজকের এ দিনটি কোন্ দিন? সকলেই বললেন, সম্মানিত দিন। অতঃপর তিনি বললেনঃ এ শহরটি কোন শহর? তাঁরা বললেন, সম্মানিত শহর। অতঃপর তিনি বললেনঃ এ মাসটি কোন মাস? তাঁরা বললেন, সম্মানিত মাস। তিনি বললেনঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইযযত-সম্মান তোমাদের জন্য তেমনি সম্মানিত , যেমন সম্মানিত তোমাদের এ দিনটি , তোমাদের এ শহর এবং তোমাদের এ মাস। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। পরে মাথা উঠিয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ ! আমি কি (আপনার পয়গাম) পৌঁছিয়েছি ! হে আল্লাহ ! আমি কি পৌঁছিয়েছি? ইব্নু আব্বাস (রাঃ) বলেন, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ , নিশ্চয়ই এ কথাগুলো ছিল তাঁর উম্মতের জন্য অসীয়ত। [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ] উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৭৩৯) অন্য হাদীসে এসেছে, ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺯَﻳْﺪٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻰ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﺍﻻِﺳْﺘِﻄَﺎﻟَﺔَ ﻓِﻲ ﻋِﺮْﺽِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣَﻖٍّ " . হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের মানসম্মানে হস্তক্ষেপ করা ব্যাপকতর সুদের অন্তর্ভুক্ত (মহাপাপ)। আর সুদ হলো ছত্রিশ বার যেনার মতো জঘন্য পাপ। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৭৬ আরেকটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ـ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ـ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﻣَﻦْ ﺳَﻠِﻢَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﻟِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻭَﻳَﺪِﻩِ ، হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্নে ‘আমর রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ: আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সে-ই মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১০ অথচ আজকাল আমাদের ঈমান আমলের পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, আমাদের যবান আর হাত থেকে জীবিত ব্যক্তিরা তো বটেই এমনকি মৃত ব্যক্তিরাও নিরাপদ নয়। আর যা-ই হোক এটা কোনো মুসলমানের আচরণ হতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে হিফাজত করুন। আমীন।।

Post a Comment

0 Comments